কঙ্কাল

পশুর কঙ্কাল ওই মাঠের পথের এক পাশে
প’ড়ে আছে ঘাসে,
যে-ঘাস একদা তা’রে দিয়েছিলো বল,
দিয়েছিলো বিশ্রাম কোমল॥

প’ড়ে আছে পাণ্ডু অস্থিরাশি,
কালের নীরস অট্টহাসি।
সে যেন রে মরণের অঙ্গুলি-নির্দ্দেশ,
ইঙ্গিতে কহিছে মোরে, “একদা পশুর যেথা শেষ,
সেথায় তোমারো অন্ত, ভেদ নাহি লেশ।
তোমারে প্রাণের সুরা ফুরাইলে পরে
ভাঙা পাত্র প’ড়ে রবে অমনি ধূলায় অনাদরে।”

আমি বলিলাম, “মৃত্যু, করি না বিশ্বাস
তব শূন্যতার উপহাস।
মোর নহে শুধুমাত্র প্রাণ
সর্ব্ব বিত্ত রিক্ত করি’ যার হয় যাত্রা অবসান;
যাহা ফুরাইলে দিন
শূন্য অস্থি দিয়ে শোধে আহার-নিদ্রার শেষ ঋণ।

ভেবেছি জেনেছি যাহা, ব’লেছি, শুনেছি যাহা কানে,
সহসা গেয়েছি যাহা গানে
ধ’রেনি তা মরণের বেড়া-ঘেরা প্রাণে;
যা পেয়েছি, যা ক’রেছি দান
মর্ত্ত্যে তা’র কোথা পরিমাণ?

আমার মনের নৃত্য, কতবার জীবন মৃত্যুরে
লঙ্ঘিয়া চলিয়া গেছে চির-সুন্দরের সুর-পুরে।
চিরকাল তরে সে কি থেমে যাবে শেষে
কঙ্কালের সীমানায় এসে?
যে আমার সত্য পরিচয়
মাংসে তা’র পরিমাপ নয়;
পদাঘাতে জীর্ণ তা’রে নাহি করে দণ্ডপলগুলি,
সর্ব্বস্বান্ত নাহি করে পথপ্রান্তে ধুলি॥

আমি যে রূপের পদ্মে ক’রেছি অরূপ-মধু পান,
দুঃখের বক্ষের মাঝে আনন্দের পেয়েছি সন্ধান,
অনন্ত মৌনের বাণী শুনেছি অন্তরে,
দেখেছি জ্যোতির পথ শূন্যময় আঁধার প্রান্তরে
নহি আমি বিধির বৃহৎ পরিহাস,
অসীম ঐশ্বর্য্য দিয়ে রচিত মহৎ সর্ব্বনাশ॥


চাপাড্ মালাল্, ১৭ ডিসেম্বর, ১৯২৪।