দোসর

দোসর আমার, দোসর ওগো, কোথা থেকে
কোন শিশুকাল হ’তে আমায় গেলে ডেকে।
তাই তো আমি চির-জনম এক্‌লা থাকি,
সকল বাঁধন টুট্‌লো আমার, একটি কেবল রইলো বাকি—
সেই তো তোমার ডাকার বাঁধন, অলখ ডোরে
দিনে দিনে বাঁধ্‌লো মোরে॥

দোসর ওগো, দোসর আমার, সে ডাক তব
কত ভাষায় কয় যে কথা নব নব।
চ’ম্‌কে উঠে ছুটি যে তাই বাতায়নে,
সকল কাজে বাধা পড়ে, বসে থাকি আপন মনে;—
পারের পাখী আকাশে ধায় উধাও গানে
চেয়ে থাকি তাহার পানে॥

দোসর আমার, দোসর ওগো, যে বাতাসে
বসন্ত তা’র পুলক জাগায় ঘাসে ঘাসে,
ফুল-ফোটানো তোমার লিপি সেই কি আনে?
গুঞ্জরিয়া মর্ম্মরিয়া কী ব’লে যায় কানে কানে,
কে যেন তা বোঝে আমার বক্ষতলে,
ভাসে নয়ন অশ্রুজলে॥

দোসর ওগো, দোসর আমার, কোন সুদূরে
ঘর-ছাড়া মোর ভাব্‌না বাউল বেড়ায় ঘুরে।
তা’রে যখন শুধাই, সে তো কয় না কথা,
নিয়ে আসে স্তব্ধ গভীর নীলাম্বরের নীরবতা।
একতারা তা’র বাজায় কভু গুণ্‌গুণিয়ে,
রাত কেটে যায় তাই শুনিয়ে॥

দোসর ওগো, দোসর আমার, উঠ্‌লো হাওয়া,—
এবার তবে হোক আমাদের তরী বাওয়া।
দিনে দিনে পূর্ণ হ’লো ব্যথার বোঝা,
তীরে তীরে ভাঙন লাগে, মিথ্যে কিসের বাসা খোঁজা।
একে একে সকল রসি গেছে খুলে,
ভাসিয়ে এবার দাও অকূলে॥

দোসর ওগো, দোসর আমার, দাওনা দেখা,
সময় হ’লো একার সাথে মিলুক একা।
নিবিড় নীরব অন্ধকারে রাতের বেলায়
অনেক দিনের দূরের ডাকা পূর্ণ করো কাছের খেলায়।
তোমায় আমায় নতুন পালা হোক না এবার
হাতে হাতে দেবার নেবার॥


আণ্ডেস্ জাহাজ, ২৮ অক্টোবর, ১৯২৪।