পূর্ণতা

স্তব্ধরাতে একদিন
নিদ্রাহীন
আবেগের আন্দোলনে তুমি
ব’লেছিলে নতশিরে
অশ্রুনীরে
ধীরে মোর করতল চুমি’,—
“তুমি দূরে যাও যদি,
নিরবধি
শূন্যতার সীমাশূন্য ভারে
সমস্ত ভুবন মম
মরুসম
রুক্ষ্ম হ’য়ে যাবে একেবারে।
আকাশ-বিস্তীর্ণ ক্লান্তি
সব শান্তি
চিত্ত হ’তে করিবে হরণ,
নিরানন্দ নিরালোক
স্তব্ধশোক
মরণের অধিক মরণ”॥

শুনে, তোর মুখখানি
বক্ষে আনি’
ব’লেছিনু তোরে কানে কানে,—
“তুই যদি যাস দূরে
তোরি সুরে
বেদনা-বিদ্যুৎ গানে গানে
ঝলিয়া উঠিবে নিত্য,
মোর চিত্ত
সচকিবে আলোকে আলোকে।
বিরহ, বিচিত্র খেলা
সারা বেলা
পাতিবে আমার বক্ষে চোখে।
তুমি খুঁজে পাবে, প্রিয়ে,
দূরে গিয়ে
মর্ম্মের নিকটতম দ্বার,—
আমার ভুবনে তবে
পূর্ণ হবে
তোমার চরম অধিকার”॥

দু’জনের সেই বাণী,
কানাকানি,
শুনেছিলো সপ্তর্ষির তারা;
রজনী-গন্ধার বনে
ক্ষণে ক্ষণে
ব’হে গেলো সে বাণীর ধারা।
তা’র পরে চুপে চুপে
মৃত্যুরূপে
মধ্যে এলো বিচ্ছেদ অপার।
দেখা শুনা হ’লো সারা,
স্পর্শহারা
সে অনন্তে বাক্য নাহি আর।
তবু শূন্য শূন্য নয়,
ব্যথাময়
অগ্নিবাষ্পে পূর্ণ সে গগন।
একা-একা সে অগ্নিতে
দীপ্তগীতে
সৃষ্টি করি স্বপ্নের ভুবন।


হারুনা-মারু জাহাজ, ১লা অক্টোবর, ১৯২৪।