পূরবী/পথিক/প্রাণ-গঙ্গা

প্রাণ-গঙ্গা

প্রতিদিন নদীস্রোতে পুষ্প পত্র করি’ অর্ঘ্য দান
পূজারীর পূজা অবসান।
আমিও তেমনি যত্নে মোর ডালি ভরি’
গানের অঞ্জলি দান করি’
প্রাণের জাহ্নবী-জলধারে,
পূজি আমি তারে॥

বিগলিত প্রেমের আনন্দ বারি সে যে,
এসেছে বৈকুণ্ঠধাম ত্যেজে।
মৃত্যুঞ্জয় শিবের অসীম জটা-জালে
ঘুরে ঘুরে কালে কালে
তপস্যার তাপ লেগে প্রবাহ পবিত্র হ’লো তা’র।
কত না যুগের পাপ-ভার
নিঃশেষে ভাসায়ে দিলো অতলের মাঝে।
তরঙ্গে তরঙ্গে তা’র বাজে
ভবিষ্যের মঙ্গল সঙ্গীত।
তটে তটে বাঁকে বাঁকে অনন্তের চ’লেছে ইঙ্গিত

দৈব-স্পর্শে তা’র
আমারে সে ধূলি হ’তে করিল উদ্ধার;

অঙ্গে অঙ্গে দিলে তা’র তরঙ্গের দোল;
কণ্ঠে দিলো আপন কল্লোল।
আলোকের নৃত্যে মোর চক্ষু দিলে ভরি’
বর্ণের লহরী।
খুলে গেলো অনন্তের কালো উত্তরীয়,
কত রূপে দেখা দিলো প্রিয়,
অনির্ব্বচনীয়॥

তাই মোর গান
কুসুম-অঞ্জলি-অর্ঘ্যদান
প্রাণ-জাহ্নবীরে।
তাহারি আবর্ত্তে ফিরে ফিরে
এ পূজার কোনো ফুল নাও যদি ভাসে চিরদিন,
বিস্মৃতির তলে হয় লীন,
তবে তা’র লাগি’, কহ
কার সাথে আমার কলহ?
এই নীলাম্বর-তলে তৃণ-রোমাঞ্চিত ধরণীতে,
বসন্তে বর্ষায় গ্রীষ্মে শীতে
প্রতিদিবসের পূজা প্রতিদিন করি’ অবসান
ধন্য হ’য়ে ভেসে যাক গান॥


জুলিয়াে চেজারে জাহাজ, ১৬ জানুয়ারী, ১৯২৫।