মিলন

জীবন -মরণের স্রোতের ধারা
যেখানে এসে গেছে থামি’
সেখানে মিলেছিনু সময়-হারা
একদা তুমি আর আমি।
চ’লেছি আজ একা ভেসে
কোথা যে কত দূর দেশে,
তরণী দুলিতেছে ঝড়ে;—
এখন কেন মনে পড়ে
যেখানে ধরণীর সীমার শেষে
স্বর্গ আসিয়াছে নামি’
সেখানে একদিন মিলেছি এসে
কেবল তুমি আর আমি॥

সেখানে ব’সেছিনু আপনা-ভোলা
আমরা দোঁহে পাশে পাশে।
সেদিন বুঝেছিনু কিসের দোলা
দুলিয়া উঠে ঘাসে ঘাসে।

কিসের খুসি উঠে কেঁপে
নিখিল চরাচর ব্যেপে,
কেমনে আলোকের জয়
আঁধারে হ’লো তারাময়;
প্রাণের নিশ্বাস কী মহা-বেগে
ছুটেছে দশদিক্-গামী,
সেদিন বুঝেছিনু যেদিন জেগে
চাহিনু তুমি আর আমি॥


বিজনে ব’সেছিনু আকাশ চাহি’
তোমার হাত নিয়ে হাতে।
দোঁহার কারো মুখে কথাটি নাহি,
নিমেষ নাহি আঁখি-পাতে।
সেদিন বুঝেছিনু প্রাণে
ভাষার সীমা কোন্‌খানে,
বিশ্ব-হৃদয়ের মাঝে
বাণীর বীণা কোথা বাজে,
কিসের বেদনা সে বনের বুকে
কুসুমে ফোটে দিন যামী,
বুঝি, যবে দোঁহে ব্যাকুল সুখে
কাঁদিনু তুমি আর আমি॥

বুঝিনু কী আগুনে ফাগুন হাওয়া
গোপনে আপনারে দাহে;—
কেন যে অরুণের করুণ চাওয়া
নিজেরে মিলাইতে চাহে;
অকূলে হারাইতে নদী
কেন যে ধায় নিরবধি;
বিজুলি আপনার বাণে
কেন যে আপনারে হানে;
রজনী কী খেলা যে প্রভাত সনে
খেলিছে পরাজয়-কামী,
বুঝিনু যবে দোঁহে পরাণ-পণে
খেলিনু তুমি আর আমি॥


জুলিয়ো চেজারে জাহাজ, ৯ জানুয়ারী, ১৯২৫।