পূরবী/পথিক/শেষ বসন্ত

শেষ বসন্ত

আজিকার দিন না ফুরাতে
হবে মোর এ আশা পূরাতে—
শুধু এবারের মতো
বসন্তের ফুল যত
যাবো মোরা দুজনে কুড়াতে।
তোমার কানন-তলে ফাল্গুন আসিবে বারম্বার,
তাহারি একটি শুধু মাগি আমি দুয়ারে তোমার॥

বেলা কবে গিয়াছে বৃথাই
এত কাল ভুলে ছিনু তাই।
হঠাৎ তোমার চোখে
দেখিয়াছি সন্ধ্যালোকে
আমার সময় আর নাই।
তাই আমি একে একে গণিতেছি কৃপণের সম
ব্যাকুল সঙ্কোচভরে বসন্ত-শেষের দিন মম॥

ভয় রাখিয়ো না তুমি মনে;
তোমার বিকচ ফুল-বনে
দেরি করিব না মিছে
ফিরে চাহিব না পিছে,
দিন শেষে বিদায়ের ক্ষণে।
চাবো না তোমার চোখে আঁখি জল পাবো আশা করি’,
রাখিবারে চিরদিন স্মৃতিরে করুণা রসে ভরি’॥

ফিরিয়া যেয়োনা, শোনো শোনো,
সূর্য্য অস্ত যায়নি এখনো।
সময় র’য়েছে বাকি;
সময়েরে দিতে ফাঁকি
ভাবনা রেখো না মনে কোনো।
পাতার আড়াল হ’তে বিকালের আলোটুকু এসে
আরো কিছুখন ধ’রে, ঝলুক তোমার কালো কেশে॥

হাসিয়ো মধুর উচ্চহাসে
অকারণ নির্ম্মম উল্লাসে,
বন-সরসীর তীরে
ভীরু কাঠ-বিড়ালীরে
সহসা চকিত কোরো ত্রাসে।
ভুলে-যাওয়া কথাগুলি কানে কানে করায়ে স্মরণ
দিব না মন্থর করি’ ওই তব চঞ্চল চরণ॥

তা’র-পরে যেয়ো তুমি চ’লে
ঝরা-পাতা দ্রুতপদে দ’লে
নীড়ে-ফেরা পাখী যবে
অস্ফুট কাকলী রবে
দিনান্তেরে ক্ষুব্ধ করি’ তোলে।
বেনুবনচ্ছায়া-ঘন সন্ধ্যায় তোমার ছবি দূরে
মিলাইবে গোধূলির বাঁশরীর সর্ব্বশেষ সুরে॥

রাত্রি যবে হবে অন্ধকার
বাতায়নে বসিয়ো তোমার।
সব ছেড়ে যাবো, প্রিয়ে,
সুমুখের পথ দিয়ে,
ফিরে দেখা হবে না তো আর।
ফেলে দিয়ে ভোরে-গাঁথা ম্লান মল্লিকার মালাখানি।
সেই হবে স্পর্শ তব, সেই হবে বিদায়ের বাণী॥


বুয়েনােস্ এয়ারিস্, ২২ নভেম্বর, ১৯২৪।