প্রান্তিক/১১
১১
কলরবমুখরিত খ্যাতির প্রাঙ্গণে যে আসন
পাতা হয়েছিল কবে, সেথা হতে উঠে এসো, কবি,
পূজা সাঙ্গ করি দাও চাটুলুব্ধ জনতা-দেবীরে
বচনের অর্ঘ্য বিরচিয়া। দিনের সহস্র কণ্ঠ
ক্ষীণ হয়ে এল; যে প্রহরগুলি ধ্বনি-পণ্যবাহী
নোঙর ফেলেছে তারা সন্ধ্যার নির্জন ঘাটে এসে।
আকাশের আঙিনায় শান্ত যেথা পাখির কাকলী
সুরসভা হতে সেথা নৃত্যপরা অপ্সরকন্যার
বাষ্পে-বোনা চেলাঞ্চল উড়ে পড়ে, দেহ ছড়াইয়া
স্বর্ণোজ্জ্বল বর্ণরশ্মিচ্ছটা। চরম ঐশ্বর্য নিয়ে
অস্তলগনের, শূন্য পূর্ণ করি এল চিত্রভানু,
দিল মোরে করস্পর্শ, প্রসারিল দীপ্ত শিল্পকলা
অন্তরের দেহলিতে, গভীর অদৃশ্যলোক হতে
ইশারা ফুটিয়া পড়ে তুলির রেখায়। আজন্মের
বিচ্ছিন্ন ভাবনা যত, স্রোতের সেঁউলি-সম যারা
নিরর্থক ফিরেছিল অনিশ্চিত হাওয়ায় হাওয়ায়,
রূপ নিয়ে দেখা দেবে ভাঁটার নদীর প্রান্ত তীরে
অনাদৃত মঞ্জরীর অজানিত আগাছার মতো,—
কেহ শুধাবে না নাম, অধিকারগর্ব নিয়ে তার
ঈর্ষা রহিবে না কারো, অনামিক স্মৃতি-চিহ্ন তারা
খ্যাতিশূন্য অগোচরে র’বে যেন অস্পষ্ট বিস্মৃতি।
শান্তিনিকেতন
১৮।১২।৩৭