বঙ্গ সাহিত্য পরিচয় (প্রথম খণ্ড)/ভাগবত/ভবানন্দ সেনের ভাগবত

ভবানন্দ সেনের ভাগবত।

(ভাগবত—ভবানন্দ সেন—১৮শ শতাব্দী।)

ঘুঘু-চরিত্র।

বাং ১২১১ সালের (১৮০৩ খৃঃ) হস্তলিখিত পুথি হইতে উদ্ধৃত হইল।

শ্রীকৃষ্ণের বিরহ-বিলাপ।

কহ কহ ওরে পক্ষ[১] ব্রজের বারতা।
কেমনে আছেন মোর যশোমতী মাতা॥
কেমনে আছেন মোর পিতা নন্দঘোষ।
বিবরিয়া কহ পক্ষ চিত্তের সন্তোষ॥
ধবলী শ্যামলী মোর আর যে পিউলী।
কেমনে আছেন মোর রাধা চন্দ্রাবলী॥
কেমনে আছেন মোর সুবল আদি সখা।
কেমনে আছেন মোর ললিতা বিশাখী॥

ব্রজ-বিবরণ। পক্ষ বলে শুন প্রভু মোর নিবেদন।
বিবরিয়া কি কহিব ব্রজের কথন॥
তুমি ব্রজের জীবন ব্রজেন্দ্র-নন্দন।
জীবন ছাড়িলে তনু কোন প্রয়োজন॥
মৃত তনু পড়্যা আছে যত গোপীগণ।
তব মাতা পিতা আছয়ে অন্ধ-সম॥
শাঙলী ধবলী গাই বহু ক্ষীরবতী।
তোমার বিহনে দুগ্ধ না দেয় এক রতি॥
রাধিকার বার্ত্তা জিজ্ঞাসিলে ঘন কালা।
সতত তোমার নাম তাহার জপমালা॥
রাধিকার কিবা গুণা হইলা দেব হরি।
কি লাগিয়া তাহারে আইলা পরিহরি॥
ভবানন্দ সেন বলে প্রভূ-পদতলে।
বৃন্দাবন ছাড়ি কেনে মথুরায় রহিলে॥

রাধার অবস্থা। এত যদি জান হরি ছাড় কেন কিশোরী
কিবা দোষ হইল রাধার।
শুন ওহে ঘনশ্যাম সদা জপে অবিশ্রাম
তব নামে অস্থিচর্ম্ম-সার॥
জল বিনে যেন মীন সদা হয় অতি ক্ষীণ
শেষ বিনে যেমন সংসার।
কাম বিনে যেন রতি সদা কান্দে দিবা রাতি
তোমা বিনে রাধার কে আর॥
সীতার শোকে রঘুনাথ বানর লইয়া সাথ
পাঠাইলা বীর হনূমানে।
যাইয়া পবন-সুত রণ কৈল অদভুত
মারিল বহুত চরগণে॥
কনক-লঙ্কা ছারখার রাক্ষস করে হাহাকার
কান্দে রাজা শিব শিব স্মরি।
সেই মত গোপ-নারী কান্দিয়া আকুল হরি
ছারখার হইল ব্রজ-পুরী॥
দৈত্যকুলে বলি রাজা তোমায় করিল পূজা
তারে নিলে পাতাল-ভুবন।
তোমার শরণ লয় তার দশা এই হয়
কি করিব ব্রজ-নারীগণ॥
নল পুণ্য-শ্লোক রাজা ত্রিভূবনে মহা-তেজা
তারে তুমি কৈলে বনচারী।
যে জন শরণ লয় তার দশা এই হয়
কান্দাইলে যত গোপনারী॥
সমুদ্র-মথন-কালে দেব দৈত্যে সুধা তুলে
বিভাগ চাহিলা দৈত্যগণ।
হয়্যা তুমি মোহিনী সভার হরিলা প্রাণী
মধ্যস্থ করিল আচরণ॥
দেবতা সহায় হরি দৈত্যগণে পরিহরি
দেবে সুধা দিলে শ্রীনিবাস।
বিশ্বাসঘাতকী করি দেবেতে[২] অমর করি
দৈত্যগণে করিলে নৈরাশ॥

সুধা দিয়া সভা তুণ্ডে রাহু-দৈত্যের কাট মুণ্ডে
তুমি কর ব্যাধের আচার।
পঞ্চম বরষ কালে পূতনা বধিলে হেলে
নারী-বধের কি ভয় তোমার॥
শঙ্খাসুরের নারী পতিব্রতা সুন্দরী
তাহারে হরিলে ছল করি।
মারিয়া তাহার পতি মস্তকে রাখিলে সতী
সকল পার আপনি শ্রীহরি॥
তোমায় চিনে রাহু শনি পর্ব্বত কাট গুণমণি
সেই বটে তোমার * * *
যুক্তি করে যত নারী যদি না আইসে হরি
শনির করিব আরাধন॥
তাহারে বশ করি দুঃখ দিবেক হরি
তবে পূরে মনের বাসনা।
যে যার শরণ লয় তাহারে এমন হয়
অবিরত কান্দে ব্রজাঙ্গনা॥
সদা কান্দে ব্রজনারী যমুনায় পড়ে বারি
সবে ক্ষীণ প্রবল যমুনা।
তোমারে জান্যাছি দঢ় কাল-বরণ খল বড়
কত কব তব গুণকথা।
ভবানন্দ সেনে কয় বলিতে উচিত হয়
কহিবারে মনে পাই ব্যথা॥


  1. পাখী।
  2. দেবতাদিগকে।