বনলতা সেন/অঘ্রাণ প্রান্তরে
অঘ্রাণ প্রান্তরে
‘জানি আমি তােমার দু-চোখ আজ আমাকে খোঁজে না
আর পৃথিবীর পরে—’
বলে চুপে থামলাম, কেবলি অশ্বথপাতা পড়ে আছে ঘাসের ভিতরে
শুকনাে মিয়ােনাে ছেড়া,—অঘ্রাণ এসেছে আজ পৃথিবীর বনে;
হেমন্ত এসেছে তবু; বললে সে, ‘ঘাসের ওপরে সব বিছানাে পাতার
মুখে এই নিস্তব্ধতা কেমন যে-সন্ধ্যার আবছা অন্ধকার
ছড়িয়ে পড়েছে জলে,—কিছুক্ষণ অঘ্রাণের অস্পষ্ট জগতে
হাঁটলামচিল উড়ে চলে গেছে—কুয়াশার প্রান্তরের পথে
দু-একটা সজারুর আসা যাওয়া; উচ্ছ্বল কলার ঝড়ে উড়ে
চুপে সন্ধ্যার বাতাসে
লক্ষ্মীপেঁচা হিজলের ফাক দিয়ে বাবলার আঁধার গলিতে নেমে আসে;
আমাদের জীবনের অনেক অতীত ব্যাপ্তি আজো যেন
লেগে আছে বহতা পাখায়
ঐ সব পাখিদের; ঐ সব দূর দূর ধানক্ষেতে ছাতকুড়ােমাখা
ক্লান্ত জামের শাখায়;
নীলচে ঘাসের ফুলে ফড়িঙের হৃদয়ের মতাে নীরবতা
ছড়িয়ে রয়েছে এই প্রান্তরের বুকে আজ...হেঁটে চলি...আজ কোনাে কথা
নেই আর আমাদের; মাঠের কিনারে ঢের ঝরা ঝাউফল
পড়ে আছে; শান্ত চোখে তার বিকেলের মতন অতল
কিছু আছে; খড়কুটো উড়ে এসে লেগে আছে শাড়ির ভিতরে,
সজনে পাতার গুড়ি চুলে বেধে গিয়ে নড়ে চড়ে;
পতঙ্গ পালক জল—চারিদিকে সূর্যের উজ্জ্বলতা নাশ;
আলেয়ার মতাে ঐ ধানগুলাে নড়ে শূন্যে কি রকম অবাধ আকাশ
হয়ে যায়; সময়ও অপার—তাকে প্রেম আশা চেতনার কণা
ধরে আছে বলে সে-ও সনাতন;—কিন্তু এই ব্যর্থ ধারণা
সরিয়ে মেয়েটি তার আঁচলের চোরকাঁটা বেছে
প্রান্তর নক্ষত্র নদী আকাশের থেকে স’রে গেছে।
যেই স্পষ্ট নির্লিপ্তিতে—তাইই ঠিক, —ওখানে স্নিগ্ধ হয় সব।
অপ্রেমে বা প্রেমে নয়—নিখিলের বৃক্ষ নিজ বিকাশে নীরব।