বনলতা সেন/নদী নক্ষত্র মানুষ
নদী নক্ষত্র মানুষ
এখানে জলের পাশে বসবে কি? জলঝিরি এ নদীর নাম;
অপরূপ; আমি তবু ঝাউবনী বলি একে—আস্তে বললাম।
নদীর দুপারে ঢের উচু উঁচু ঝাউবন, নীড়—
চুপচাপ ঘাসের ওপরে বসে কিছুক্ষণ তারপরে আমরা দুজনে
কোনাে কথা খুঁজে তবু পেলাম না আর যেন—
নদী যেন ঢের দূরে—আমাদের মনে
এ মুহূর্ত এ আকাশ নেই আর আজ;
বিষন্নতা: তাও নেই—পাতা ঝরবার
স্বর শুনি, ঢেউ নড়বার শব্দ পাই;
এই পৃথিবীতে যেন কিছু নেই আর।
একদিন—জানি আমি সম্পূর্ণ আকাঙ্ক্ষা ছিল আমাদের মনে;
‘নক্ষত্রের নিচে শিশিরের গল্প শােনায়েছি শুনেছি দুজনে
চোখাচোখি বসে থেকে; হাতে হাত নিশ্বাসে নিশ্বাস
জানতে মিশে গেছে—যেমন মাটির গন্ধ হৃদয়ে ফোটাতে চায়, ঘাস,
ধান খই দূর্বাঘাসে যেমন মাটির ইচ্ছা নিজেকে রাখতে চায় ঢেকে
একদিন পৃথিবীর বিলােড়ন রৌদ্র রক্ত আহ্বানের থেকে
দূরে সরে প্রেম আর আকঙক্ষার ঘরে বসে আমাদের ব্যাপৃত হৃদয়
আকাশ ও এ মাটিকে পেয়েছিল এক তিলে—’ বললাম; আস্তে তখন
সে বললে’ শেষ সত্য নদী নয়,—মন—’
আমি তাকে: ‘হয়তাে নতুন কোনাে রূপে
আমাদের ভালােবাসা পথ কেটে নেবে এই পৃথিবীতে;—
আমরা দুজনে এই বসে আছি আজ—ইচ্ছাহীন;—
শালিক পায়রা মেঘ পড়বেলার এই দিন
চারিদিকে;
এখানে গাছের পাতা যেতেছে হলুদ হয়ে—নিঃশব্দে উল্কার মতাে ঝ’রে
একদিন তুমি এসে তবু এই হলুদ আঁচল রেখে ঘাসের ভিতরে
শান্তি পাবে; সন্ধ্যার জলের দিকে শূন্য চোখে রবেনাকো তাকিয়ে এমন
অস্পষ্ট সংকটে এসে—মুখে কথা ফুরােবে না—এখন যা গভীর গােপন
প্রাণের চারুণা পাবে অন্ধকারে; ব্যাপ্তি পাবে; যেইসব কথা
ভুলে গেছ—যে নিয়ম অনুভূতি কবেকার সহজ স্পষ্টতা
হারিয়েছে-নতুন জীবন পাবে তারা সব—' ব’লে মনে হল কোলাহল
মানুষের শােচনার শব্দ যেন;নদীদের অন্ধকার জল
জীবনকৈ স্থিরভাবে ব্যবহার করে নিতে বলে
প্রেমের নিকটে গিয়ে—কিন্তু অপ্রেমের ফলাফলে
নিজের জ্ঞানের গতির প্রবাহ থেকে চ্যুত হতে হয়:
যে রকম এই নদী আর এই নারী নিজ বাস্তবতা নিয়ে তন্ময়।