বনলতা সেন/সুরঞ্জনা
সুরঞ্জনা
সুরঞ্জনা, আজো তুমি আমাদের পৃথিবীতে আছ;
পৃথিবীর বয়সিনী তুমি এক মেয়ের মতন;
কালাে চোখ মেলে ঐ নীলিমা দেখেছ;
গ্রীক হিন্দু ফিনিশিয় নিয়মের রূঢ় আয়ােজন
শুনেছ ফেনিল শব্দে তিলােত্তমা নগরীর গায়ে
কী চেয়েছে? কী পেয়েছে?—গিয়েছে হারায়ে।
বয়স বেড়ে ঢের নরনারীদের;
ঈষৎ নিভেছে সূর্য নক্ষত্রের আলাে;
তবুও সমুদ্র নীল; ঝিনুকের গায়ে আলপনা;
একটি পাখির গান কী রকম ভালাে।
মানুষ কাউকে চায়—তার সেই নিহত উজ্জ্বল
ঈশ্বরের পরিবর্তে অন্য কোনাে সাধনার ফল।
মনে পড়ে কবে এক তারাভরা রাতের বাতাসে
ধর্মাশােকের ছেলে মহেন্দ্রের সাথে
উতরােল বড় সাগরের পথে অন্তিম আকাঙক্ষা নিয়ে প্রাণে
তবুও কাউকে আমি পারিনি বােঝাতে
সেই ইচ্ছা সঙ্ নয় শক্তি নয় কর্মীদের সুধীদের বিবর্ণতা নয়,
আরাে আলাে: মানুষের তরে এক মানুষীর গভীর হৃদয়।
যেন সব অন্ধকার সমুদ্রের ক্লান্ত নাবিকেরা
মক্ষিকার গুঞ্জনের মতাে এক বিহুল বাতাসে
ভূমধ্যসাগরলীন দূর এক সভ্যতার থেকে
আজকের নব সভ্যতায় ফিরে আসে,—
তুমি সেই অপরূপ সিন্ধু রাত্রি মৃতদের রােল
দেহ দিয়ে ভালােবেসে, তবু আজ ভােরের কল্লোল।