৭ পাঠ।

[ শিশুশিক্ষা হইতে উদ্ধৃত ]

সাত বার।

রবি, সােম, মঙ্গল, বুধ বৃহস্পতি,
শুক্র, শনি।

বার মাস।

বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ,
ভাদ্র, আশ্বিন, কার্ত্তিক, অগ্রহায়ণ,
পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন, চৈত্র,

ছয় ঋতু।

গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত, বসন্ত।

গ্রীষ্ম।

দ্বাদশ মাসের মধ্যে বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ দুই মাস গ্রীষ্মকাল। এই কালে সূর্য্যের তেজ বড় তীক্ষ্ণ হয়। জলাশয়ের জল শুকাইয়া যায়। দিনের বেলায়, রৌদ্রের জন্যে, ঘরের বাহির হওয়া যায় না। অনবরত শরীরে ঘর্ম্ম হয়। সর্ব্বদা পিপাসা পায়। শরীর জুড়াইবার জন্যে, সকল জীব জন্তু শীতল স্থানে বাস করিতে বাসনা করে। দক্ষিণ দিক হইতে বেগে বায়ু বহিতে থাকে। মধ্যে মধ্যে অপরাহ্নে ঝড়, জল, বজ্রাঘাত হয়। আম, জাম, কাঁঠাল প্রভৃতি নানাবিধ সুস্বাদু ফল পাকে। এই কালে দিন বাড়ে, রাত্রি ছোট হয়।

 হে বালকবালিকাগণ! তোমরা গ্রীষ্মকালে রৌদ্রের সময় ঘরের বাহির হইও না। বিকাল বেলায় যখন মাটী ও বায়ু শীতল হইয়াছে দেখিবে, তখন ঘরের বাহির হইয়া, খেলা করিবে ও বেড়াইবে।


বর্ষা।

আষাঢ় শ্রাবণ মাস বর্ষাকাল। এই কালে আকাশ প্রায় মেখে আচ্ছন্ন থাকে। সর্ব্বদা অতিশয় বৃষ্টি ও মেঘগর্জ্জন হয়। নদী, খাল, বিল, পুষ্করিণী প্রভৃতি জলাশয় জলে পরিপূর্ণ হইতে থাকে। পথে অতিশয় কর্দ্দম হয়। লোকের যাতায়াত করা কঠিন হইয়া উঠে।

 বর্ষাকালে ভেকগণের বড় আনন্দ। ইহারা, নূতন জল পাইয়া, নানা রঙ্গে খেলা করে ও উচ্চ স্বরে ডাকিতে থাকে। ময়ুর ময়ুরী, মেঘ দেখিয়া, আহ্লাদে মত্ত হইয়া, নাচিয়া বেড়ায়। কেতক ও কদম্ব পুষ্পের গন্ধে চারি দিক আমোদিত হয়। আতা, পিয়ারা, আনারস প্রভৃতি সুস্বাদু ফল সকল পাকিয়া উঠে। কৃষকেরা মাঠে ধান্য রোপণ করে।

 এই কালে, পূর্ব্ব দিক হইতে বায়ু বহিতে থাকে। হে শিশুগণ! ঐ বায়ু অত্যন্ত অহিতকারী। উহা শরীরে লাগাইলে, এবং বৃষ্টিতে ভিজিলে ও কাদায় বেড়াইলে, কফ, কাসী, জ্বর প্রভৃতি নানা রোগ জন্মিতে পারে।


শরৎ।

ভাদ্র অশ্বিন দুই মাস শরৎকাল। এই কালে আকাশমণ্ডল ও দিক সকল পরিস্কৃত হইতে থাকে। সূর্য্যের কিরণ খরতর হয়। পথের কর্দ্দম ও ভূমির জল শুকাইতে আরম্ভ হয়। নদীর জল নির্ম্মল হয়। চন্দ্র ও তারাগণের জ্যোতি উজ্জ্বল হওয়াতে, রাত্রিকালে আকাশের বড় শোভা হয়। পদ্ম, কুমুদ প্রভৃতি জলপুষ্প প্রস্ফ‌ুটিত হইয়া, জলাশয়ের শোভা করে। হংস, বক, চক্রবাক প্রভৃতি জলচর পক্ষী আনন্দে কেলি করিতে থাকে। তাল, লেবু, সুপারি, নারিকেল প্রভৃতি নানাবিধ ফল পক্ব হইয়া উঠে।

 শরৎকালে সমুদয় মাঠ ধানের গাছে পরিপূর্ণ দেখিয়া, নয়নের বড় প্রীতি হয়। হে শিশুগণ! সকালে বিকালে যদি মাঠের দিকে বেড়াইতে যাও, ধানের শোভা দেখিয়া বড় আহ্লাদ পাইবে। শরৎকালের রৌদ্র প্রচণ্ড ও অপকারক কদাচ শরীরে লাগাইও না, লাগাইলে নিশ্চিত পীড়া হইবেক।


হেমন্ত।

কার্তিক অগ্রহায়ণ দুই মাস হেমন্ত। এই কালে উত্তর দিক হইতে অল্প অল্প শীতল বায়ু বহিতে আরম্ভ হয়, এবং অল্প অল্প শীত অনুভব হইতে থাকে। রাত্রিকালে এত হিম পড়ে যে, প্রভাতে বোধ হয় যেন বৃষ্টি হইয়াছে।

 হেমন্তকালে মনুষ্যেরা শীতবস্ত্র ব্যবহার করিতে আরম্ভ করে। দিনের পরিমাণ অল্প হইতে থাকে, এবং রাত্রির পরিমাণ ক্রমে ক্রমে অধিক হয়। রৌদ্রের তেজ হ্রাস হইয়া যায়। এই কালে ক্ষেত্রের ধান্য পাকিয়া উঠে।

 হেমন্তকালের হিম শরীরে লাগিলে, বড় পীড়া হয়, অতএব শীতবস্ত্র দ্বারা সর্ব্বদা শরীর ঢাকিয়া রাখা কর্তব্য।


শীত।

পৌষ মাঘ দুই মাস শীতকাল। উত্তরের বায়ু, যত বেগে বহিতে থাকে, ততই শীতের বৃদ্ধি হয়। রাত্রিকালে, মনুষ্যেরা শীতনিবারণের জন্যে লেপ, কাঁথা, কম্বল ব্যবহার করিয়া থাকে। দিবসেও শাল, বনাত, লুই, পাছুড়ি প্রভৃতি শীতবস্ত্র গায়ে না দিলে শীত ভাঙ্গে না। কোনও ব্যক্তিই জলের নিকটে যাইতে চায় না। শীতকালে কেবল আগুনের তাপ ও রৌদ্রের উত্তাপ ভাল লাগে।

 রাত্রিকালে, আকাশমণ্ডল ধূমে ও হিমে আচ্ছন্ন হইয়া থাকে। চন্দ্র ও তারাগণ মলিন দেখায়। শীতকালে রাত্রি অনেক বড় হয়, দিন অনেক ছোট হইয়া যায়। মুগ, মটর, সরিষা প্রভৃতি শস্য সকল শিশিরের জল পাইয়া পাকিয়া। উঠে। পদ্ম আদি জলপুষ্প এক বারে নষ্ট হইয়া যায়। মধ্যে মধ্যে প্রাতঃকালে কুজ্বাটিকা হইয়া থাকে। শীতকালে, সকল লোকেই অতিশয় পরিশ্রম করতে পারে।


ফাল্গুন চৈত্র এই দুই মাস বসন্তকাল। এই কালে দক্ষিণ দিক হইতে মন্দ মন্দ বায়ু বহিতে থাকে। আকাশমণ্ডল নির্ম্মল হয়। সূর্য্যের তেজ তীক্ষ হইতে আরম্ভ হয়। চন্দ্র ও তারাগণের আলোক উজ্জ্বল হয়। সমুদয় তরু ও লতার শ্রীবৃদ্ধি হয়। কাহারও নূতন পল্লব, কাহারও মুকুল, কাহারও মঞ্জরী, কাহারও ফুল, কাহারও ফল উৎপন্ন হইতে থাকে। পুষ্পের মধু পান করিবার অভিলাষে ভ্রমর ও মধুমক্ষিকা এক পুষ্প হইতে উড়িয়া অন্য পুষ্পে বসিতে থাকে। পক্ষিগণ বৃক্ষের শাখায় বসিয়া আহ্লাদে মধুর স্বরে গান করে।

 বসন্তকাল সকল কাল অপেক্ষা উত্তম। এই কালে শীত, গ্রীষ্ম, বৃষ্টি, শিশির কিছুই থাকে না। এজন্য সকলপ্রকার জীব জন্তু আনন্দে কালযাপন করে।

সম্পূর্ণ

PRINTED BY PITAMBARA VANDYOPADHYAYA,

AT THE SANSKRIT PRESS.

62, AMHERST STREET 1876.