বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড)/২৪
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
---|---|---|
২৪। বিভিন্ন সেক্টরে চিকিৎসা তৎপরতা | বাংলাদেশ একাডেমীর দলিলপত্র | ১৯৭১ |
সাক্ষাৎকারঃ কর্নেল মোহাম্মাদ শামসুল হক
১৭-৯-১৯৭৩
৩রা মে আমি ঢাকা ত্যাগ করি এবং দেশের বাড়িতে যাই (মতলব থানা কুমিল্লা জেলা)। ওখানে আমরা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের নিয়ে এক সংক্ষিপ্ত রাইফেল ট্রেনিংয়ের ব্যাবস্থা করি। ওখান থেকে আমি লোক পাঠালাম আগরতলায়। মেসেঞ্জার এসে খবর দিল যে, সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের খুবই প্রয়োজন।
আমি আমার পরিবারকে গ্রামে রেখে মে মাসের দ্বিতীয় আগরতলার উদ্দেশ্যে রওনা হই। আগরতলায় পৌঁছে বাংলাদেশের অফিস কৃষ্ণনগরে আমার উপস্থিতি জানাই। ঐ দিন সন্ধ্যায় মেজর জিয়াউর রহমানের সাথে আমার দেখা হয়। ঐ দিন রাত জিয়াউর রহমানের সাথে ১নং সেক্টরের হরিনাতে যাই এবং ১ নং সেক্টরের মেডিকেল অফিসারের দায়িত্ব গ্রহণ করি। ১নং সেক্টরের বিভিন্ন সাব সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করি। কিছু ছেলেদের ফার্স্ট এইড ট্রেনিং দিই। তারপর আমাকে আগরতলায় নিয়ে আসা হয়। এবং ইস্টার্ন সেক্টরের মেডিকেল সার্ভিসেস এর সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব দেয়া হয়। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আমাকে মুজিবনগরে ডাইরেক্টর জেনারেল, মেডিকেল সার্ভিসেস, বাংলাদেশ ফোর্স এর দায়িত্ব দেয়া হয়। আমার দায়িত্ব ছিল ১০টি সেক্টরে এবং তিনটি ব্রিগেড মেডিকেল অফিসার নার্সিং ও ঔষধপত্র প্রভৃতি পাঠানো। ভারতের বিভিন্ন সমাজসেবামূলক সংগঠন এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী থেকে ঔষধপত্র পেতাম।
আমাদের বিশ্রামগঞ্জে একটি বাংলাদেশ হাসপাতাল ছিল। এখানে প্রায় ২৮০টি বেড ছিল। বাকি সমস্ত সেক্টরে এবং সাব সেক্টরে অগ্রবর্তী ড্রেসিং স্টেশন প্রতিষ্টা করা হয়। এ সকল প্রতিষ্টানের কাজ ছিল আহত এবং অসুস্ত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রয়োজনীয় জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা করে তাদের ভারতীয় সেনাবাহিনীর ফিল্ড হাসপাতাল অথবা বেসামরিক হাসাপাতালে পাঠিয়ে দেয়া। এ ব্যাপারে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ফিল্ড হাসপাতাল এবং বেসামরিক হাসপাতালগুলো আমাদের পুরোপুরি সাহায্য করেছে।
বাংলাদেশ ফোর্সের হাসপাতাল যেটা বিশ্রামগঞ্জে ছিল সেই হসপিটাল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে লণ্ডনের বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন ঔষধপত্র যন্ত্রপাতি টাকা পয়সা এবং ডাক্তার দিয়েও সাহায্য করেছেন। ডাক্তার জাফর উল্লাহ চৌধুরী, ডাক্তার মোমেনের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ডিসেম্বরে পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হওয়ায় আমাদের মনোবল বেড়ে গেল। আমরা বুঝতে পারলাম যে, কিছু দিনের মধ্যে আমাদের বাংলাদেশের ভিতরে যেতে হবে। তাই প্রত্যেক সেক্টরে নির্দেশ দিয়ে দিলাম মেডিকেল অফিসার এবং স্টাফদের তারা যেন ঔষধপত্র যন্ত্রপাতি সবকিছু নিয়ে প্রত্যেক সেক্টরের নিকটবর্তী সি-এম-এইচ এ রিপোর্ট করে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পনের পূর্বে বাংলাদেশের সমস্ত সি-এম এইচগুলোর (ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, রংপুর, যশোর) তোষক, কম্বল প্রভৃতি সব পুড়িয়ে দিয়ে যায়।
বাংলাদেশে আসার পর বিভিন্ন এলাকার পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃপক্ষ পরিত্যক্ত ঔষধপত্র ও অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রী আমরা সংগ্রহ করি।
বিভিন্ন সেক্টরে সামরিক বাহিনীর মোট দশজন ডাক্তার ছিলেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের যে সমস্ত ছাত্র ভারতে গিয়েছিল তাদের মধ্য থেকে বিভিন্ন সেক্টরে এবং সাবসেক্টরে মেডিকেল এ্যাসিট্যাণ্ট নিয়োগ করা হয়। প্রত্যেকটা সেক্টরে অন্ততপক্ষে যদি একজন করে সামরিক বাহিনীর ডাক্তার থাকত তাহলে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা আরো সুষ্ঠুভাবে হত।