বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড)/৪৪

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পাকিস্তান যুদ্ধ বাধালে ভারতের সৈন্যরা দখল করা পাকিস্তানী এলাকা ছাড়বে না-প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা দৈনিক ‘যুগান্তর’ ১৮ অক্টোবর, ১৯৭১

পাকিস্তান যুদ্ধ বাধালে

ভারতের সৈন্যরা দখল করা পাক অঞ্চল ছাড়বে না

-জগজীবন

 জলন্ধর, ১৭ই অক্টোবর (পিটিআই ও ইউএনআই)-প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রী জগজীবন রাম আজ পাকিস্তানকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন যে, ভারতের উপর যদি যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয় তাহলে যা ঘটুক না কেন, ভারতীয় সৈন্য বাহিনী পাকিস্তানের যে অঞ্চল দখল করবে সেখান থেকে তারা সরে আসবে না। আমরা সেখান থেকে সৈন্যবাহিনী অপসারণ করবো না।

 শিয়ালকোট ও লাহোর থেকে জনসাধারণ অন্যত্র চলে যাচ্ছে এই মর্মে সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের উল্লেখ করে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানী সামরিক জান্তা আমাদের উপর যদি যুদ্ধ চাপিয়ে দেয় তাহলে আমাদের সেনাবাহিনী এগিয়ে গিয়ে এই সব শহর দখল করবে এবং পাকিস্তানের দখলীকৃত অঞ্চল থেকে এবার আমরা সরে আসবো না, তাতে যাই ঘটুক না কেন।

 প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরো বলেন যে, বাংলাদেশ প্রসঙ্গে অমীমাংসিত থাকা পর্যন্ত সীমান্ত থেকে ভারত তার সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করবে না।

 এখান থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে কর্পুরতলায় এক জনসভায় ভাষণ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী এ ব্যাপারে যে কোনো আন্তর্জাতিক চাপ প্রতিরোধে ভারতের দৃঢ় সংকল্প ঘোষণা করেন।

 শ্রীরাম বলেন যে, ভারতের আঞ্চলিক অখণ্ডতার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের যে কোন দুরভিসন্ধির উপযুক্ত জবাব দেওয়ার জন্য বর্তমান প্রস্তুতি অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, পাক প্রেসিডেণ্ট ইয়াহিয়া খানের যুদ্ধ হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রস্তুতি প্রয়োজন। ইয়াহিয়া খান বলেছেন যে, বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনী কোন অঞ্চল দখল করলে, পাকিস্তান ভারতের উপর তার প্রতিশোধ গ্রহণ করবে।

 শ্রীরাম বলেন, সময় যতো অতিবাহিত হবে, মুক্তিবাহিনী ততই অগ্রগতি হবে এ বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই এবং অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ একটি স্বধীন দেশে পরিণত হবে।

 নাশকতামূলক কাজের জন্য ভারত পূর্ব বঙ্গে অনুপ্রবেশকারীদের পাঠিয়েছে বলে পাকিস্তান যে অভিযোগ করেছে তিনি তাকে ভিত্তিহীন ও খেলো বলে বর্ণনা করেন।

 শ্রীরাম বলেন যে, পাকিস্তান নিজের অপকর্মের জন্য ভারতকে দোষারোপ করতে যাচ্ছে। জনসভায় প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে পাঞ্জাবের বীরত্ব ও সাহসিকতার প্রতীক একখানি তরবারি উপহার দেয়া হয়। শ্রীরাম উপহার গ্রহণ করে, পাকিস্তান যদি ভারত আক্রমণের সাহস করে থাকে তাহলে পাকিস্তানকে পরাভূত করার আশ্বাস দিয়ে বলেন যে তিনি চিরদিন গান্ধীজীর আদর্শে বিশ্বাসী কিন্তু দেশের অখণ্ডতার সঙ্গে কোন প্রকার আপোষ হতে পারে না।

 তিনি বলেন, শরণার্থীরা একদিন তাদের নিজ গৃহে ফিরে যাবে, কিন্তু ইয়াহিয়া খানের পাকিস্তানে নয়। মুজিবের বাংলাদেশে।

 শ্রী জগজীবন রাম বলেন যে, পাকিস্তানের প্রায় অর্ধাংশের বিলুপ্তি হয়েছে এবং ভারতের যুদ্ধ করতে নাও হতে পারে। ইয়াহিয়া খান এখন বুঝতে পারছেন যে, বাংলাদেশে মুক্তিবাহিনীর শক্তি বাড়ছে এবং বিশ্বের জনমত ক্রমশ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য মুক্তিবাহিনী শুধু এক ঘা দেওয়া প্রয়োজন।

 শ্রী রাম বলেন যে, সীমান্তের নিকটবর্তী গ্রামবাসীদের তিনি অন্যত্র সরে যেতে বলবেন না কারণ তিনি জানেন যে, তাঁদের মনোবল অটুট আছে এবং সাহসের সঙ্গেই তারা যে কোনো বিপদের সম্মুখীন হতে পারবেন।

শ্রী বিদ্যাচরণ শুক্লের ভাষণ

 রায়পুর, ১৭ই অক্টোবর (পিটিআই)-প্রতিরক্ষা উৎপাদন দফতরের মন্ত্রী শ্রী বিদ্যাচরণ শুক্ল গত রাত্রে এখানে এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন যে, সীমান্ত এলাকায় পাকিস্তানী সৈন্য সমাবেশের সংবাদ সম্পর্কে ভারত সম্পূর্ণ অবগত।

 তিনি বলেন, পাক সৈন্য অথবা যে কোনো শত্রুপক্ষের আক্রমণের মোকাবিলার জন্য আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত এবং আমরা আমাদের শত্রুপক্ষকে আমাদের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি জানিয়ে দিতে চাই।