বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড)/৯১

শিরোনাম সূত্র তারিখ
শরণার্থীদের পশ্চিম বংগের বাইরে পাঠানোর জন্য কেন্দ্রের প্রতি মন্ত্রিসভার দাবী। ‘যুগান্তর’ ৫ জুন, ১৯৭১

প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাজ্য মন্ত্রিসভা দাবী করবেন-

শরণার্থীদের পশ্চিমবঙ্গের বাইরে পাঠাতে হবে

(স্টাফ রিপোর্টার)

 কলকাতা, ৪ঠা জুন- প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দ্রিরা গান্ধীর কাছে পঃ বঙ্গ মন্ত্রিসভার সদস্যরা আগামীকাল যৌথভাবে দাবি জানাবেন: বাংলাদেশ থেকে আগত প্রায় অর্ধ কোটি শরণার্থীর রক্ষনাবেক্ষণের পূর্ণ দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারকে নিতে হবে। রাজ্য সরকার তার সামগ্রিক সামর্থ্য নিয়োগ করেও শরণার্থী আগমনজনিত সমস্যার মোকাবেলা করতে পারছে না। ভারতের অন্যান্য রাজ্যে তাদের তজন্য শিবির স্থাপন করে তাদের স্থানান্তরিত করতে হবে।

 স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ জয়নাল আবেদিন বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার যদি শরণার্থীদের সম্পূর্ণ দায়িত্ব না নেয় তবে রাজ্য সরকারকে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহনের কথা ভাবতে হবে। ত্রাণ দপ্তরে রাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী আনন্দমোহন বিশ্বাসও বলেছেন, শরণার্থীদের বিষয়ে যে গুরুত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া উচিত ছিল তা তাঁরা দেননি।

 মুখ্যমন্ত্রী ও উপ-মুখ্যমন্ত্রী দুজনেই আজ সাংবাদিকদের বলেছেনঃ শরনার্থীরা এখন ও ত্রাণের জন্য ক্রমশঃই শহরের দিকে এগিয়ে আসছে। সীমান্ত জেলাগুলিতে স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে শরণার্থীদের সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে, যার ফলে আইন শৃংখলার প্রশ্ন দেখা দিতে পারে।

 মুখ্যমন্ত্রী বলেছেনঃ কোন কোন জায়গায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেনঃ শরণার্থীদের মধ্যে কলেরা এবং মহামারী ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। মুখ্যমন্ত্রী শ্রী অজয় মুখার্জী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাজভবনে তাঁর বৈঠকে সরাসরি বলবেন: শরণার্থীদের বিভিন্ন রাজ্যে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করুন। বিভিন্ন রাজ্যে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করুন। বিভিন্ন রাজ্য সরকারের উপর চাপ দিন। নচেৎ পঃ বঙ্গের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়বে।

 উপ-মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বিজয় সিং নাহার সাংবাদিকদের বলেছেনঃ এখন পঃ বঙ্গের সমস্ত উন্নয়ন কাজ বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে। “ওদের আশ্রয় দিতে পারছি না, খেতে দিতে পারছি না।” ওদের সম্পূর্ণ আলাদাভাবে রাখা দরকার।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিবরণ

 রাজ্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ জয়নাল আবেদিন আজ সাংবাদিকদের জানান যে কলেরা ও অন্যান্য রোগে পীড়িত দেড় লক্ষ শরনার্থীকে এ পর্যন্ত সরকারী ব্যবস্থায় চিকিৎসা করা হয়েছে। হাসপাতাল ও আশ্রয় শিবিরে ৮৯৪ জন শরনার্থী শিবিরে মারা গেছেন। বাইরে আরও অনেকে মারা গেছেন, এটা ধরে নেওয়া যায়।

 রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর সাড়ে পনের লক্ষ শরণার্থীকে টিকা এবং সাড়ে এগার লক্ষ শরনার্থীকে বসন্তের টিকা দিয়েছেন।

 ডাঃ আবেদিন বলেন, এ পর্যন্ত সাধ্যমত সব কিছুই করা হয়েছে। কিন্তু যেভাবে আজ পর্যন্ত আশ্রয়প্রার্থীরা আসছেন তাতে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ উজাড় করে সবাই এখানে চলে আসবেন। রাজ্য প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দপ্তরের এই অবস্থার মোকাবেলার সাধ্য নাই বলে তিনি মনে করেন। পরিস্থিতি এখন যা দাঁড়িয়েছে তাতে তাঁর মনে হয়, অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে বসেছে।

 কেন্দ্রীয় সরকার সমস্ত শক্তি নিয়ে এবং রাজ্যগুলি তাদের সামর্থ্য নিয়ে আশ্রয়প্রার্থীদের সাহায্যে এই মুহুর্তে এগিয়ে না এলে পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

 কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলি এই বিষয়ে কার্যকরী উপযুক্ত তৎপরতা না দেখালে রাজ্য সরকারকে অন্য পন্থা নেবার কথা ভাবতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

ত্রাণমন্ত্রীর অভিযোগ

 রাজ্য ত্রাণ দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী আনন্দমোহন বিশ্বাস অভিযোগ করেন এই সংকট মুহূর্তে কেন্দ্রের যতটা তৎপর হওয়া ছিল তা দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে রাজ্য সরকারী কর্মচারীদের একাংশও একই মনোভাব দেখাচ্ছেন। ফলে গণতান্ত্রিক কোয়ালিশন মন্ত্রিসভা যত দ্রুত ও সুষ্ঠুভাবে আশ্রয়প্রার্থীদের সাহায্য করতে চাইছেন, তা সম্ভব হচ্ছে না।

সল্ট লেকে আশ্রয়

 কলকাতা অভিমুখী শরণার্থীদের সল্ট লেক এলাকায় অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেবার ব্যবস্থা হয়েছে। উপ মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ওদের ওখান থেকে সরিয়ে নেওয়া দরকার।