বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড)/৬৯
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের লক্ষ্যে ঐক্য প্রচেষ্টা | দৈনিক পাকিস্তান | ২৭ নভেম্বর, ১৯৬৮ |
ঐক্য প্রচেষ্টা আলোচনা
মওলানা ভাসানী সকাশে মীজানুর রহমান
গণআন্দোলন তথা জনসাধারণের দাবী-দাওয়া আদায়ের ব্যাপারে সংগ্রামের জন্য বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ঐক্য স্থাপনের ব্যাপারে মওলানা ভাসানীর সাথে গতকাল বুধবার ৬- দফাপন্থী আওয়ামী লীগের অস্থায়ী সম্পাদক জনাব মীজানুর রহমান চৌধুরী এক বৈঠকে মিলিত হন।
ন্যাপপ্রধান গতকাল রংপুর থেকে ঢাকা এসে পৌঁছেছেন। তিনি আজ বৃহস্পতিবার সুন্দরবন এক্সপ্রেসে সরিষাবাড়ী সফর করবেন।
ইতিমধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানে ব্যাপক ছাত্র-বিক্ষোভ ও ধরপাকড়ের ফলে দেশে যে পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে তার প্রেক্ষিতে আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ঐক্য সাধনের জন্য বৈঠক অনুষ্ঠানের প্রস্তাব দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান রিকুইজেশন ন্যাপ- এর পক্ষে থেকে মওলানা ভাসানীর কাছে গতকাল ১টি পত্র পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। সৈয়দ আলতাফ হোসেন স্বাক্ষরিত অনুরূপ পত্র ৬- দফাপন্থী আওয়ামী লীগ ও পিডিএম-এর নিকট প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এই বৈঠকের স্থান ও তারিখ সম্পর্কে পত্রে কোনকিছু উল্লেখ হয়নি।
মওলানা ভাসানী গতকাল এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বলেন যে, বিরোধী দলগুলির মধ্যে ঐক্য স্থাপনের পথ সব সময় খোলা রয়েছে। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি এ ব্যাপারে ইতিপূর্বেও সকল দলের নিকট আলাপ আলোচনার জন্য বৈঠকে মিলিত হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। ন্যাপ এখনও এ ধরনের আলোচনায় বসতে রাজী আছে।
এয়ার মার্শাল আজগর খান ও পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক প্রধান বিচারপতি জনাব এস,এম, মুর্শেদের রাজনীতিতে প্রবেশের ফলে বিরোধীদলীয় ঐক্য জোরদার হবে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা কোন রাজনৈতিক দলের লোক নন। রাজনীতি ক্ষেত্রে এরূপ কতিপয় অরাজনৈতিক ব্যক্তির আর্বিভাবে রাজনীতিতে এমন কি পরিবর্তন সূচিত হতে পারে?
বর্তমান সরকার নিজেই নিজের সর্বনাশের পথ খোলাসা করেছেন। ছ’দফাপন্থী পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের অস্থায়ী সাধারণ সম্পাদক জনাব মীজানুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে মওলানা ভাসানীর যে আলোচনা হয়েছে সে সম্পর্কে জানা গেছে যে, জনাব মীজানুর রহমান চৌধুরী জনসাধারণের দাবী-দাওয়া আদায়ের প্রশ্নে গণআন্দোলনের ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচী গ্রহণে তার দল সম্মত আছে বলে জানিয়েছেন। নির্বাচনের ব্যাপারে কোন যুক্তফ্রণ্ট গঠনে তারা রাজী নন। আগামী ১লা ডিসেম্বর ৬- দফাপন্থী আওয়ামী লীগের কার্য-নির্বাহক কমিটির বৈঠকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হবে। এই আলোচনার ফলাফল তারা মওলানা ভাসানীকে জানাবেন বলে জানিয়েছেন।
জনাব মীজানুর রহমান চৌধুরী রিকুইজেশন পন্থী ন্যাপকে আমন্ত্রণ না করায় ইতিপূর্বে মওলানা ভাসানীর ঐক্যের আহবানে সাড়া দিতে পারে না বলে গতকাল মওলানা ভাসানীকে জানান। মওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগের উভয় গ্রুপকে একত্রিত করার জন্য জনাব মীজানুর রহমান চৌধুরীকে পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
ন্যাপপ্রধান আগামীকাল শুক্রবার সরিষাবাড়ীতে পূর্ব পাকিস্তান কৃষক সমিতির আয়োজিত এক জনসভায় ভাষণ দেবেন। তিনি ৩০শে নভেম্বর শনিবার ঢাকায় ফিরে আসবেন।
মওলানা ভাসানী সম্প্রতি বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, জামালপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, সৈয়দপুর, ঠাকুরগাঁও, ডোমার, হোতনাই, শঠিবাড়ী, গুড়ড়বাড়ী, কাউনিয়া, কাকিনা, তুষাভাণ্ডার, হাতীবান্ধা ইত্যাদি অঞ্চল সফর করেছেন। তিনি তাঁর এইসব অঞ্চলে সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, সর্বত্রই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। জিনিসপত্রের দাম জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
তিনি জনসাধারণের নিদারুন আর্থিক সংকটের উল্লেখ করে বলেন, ৫টি গ্রাম ঘুরেও তিনি ৫০ টাকার ১টি নোট ভাঙ্গাতে পারেননি।
উত্তর বঙ্গের বিভিন্ন নদী পলিতে ভরাট হয়ে যাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এতে নৌ-পরিবহন নিদারুণভাবে বিঘ্নিত হবে বলে তিনি জানান।