বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড)/১৯
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের সাংগঠনিক প্রচারপত্র | পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ | ১৯৪৭ |
পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ
আপনি সদস্যভূক্ত হইয়াছেন কি?
প্রত্যেক পরাধীন জাতির মুক্তি সংগ্রামে ছাত্রসমাজ এক অপরিহার্য্য অংশ গ্রহণ করিয়া থাকেন। পাকিস্তান হাসেলের পথে ছাত্রদের বলিষ্ঠ তৎপরতা, একনিষ্ঠ সাধনা, ত্যাগ ও প্রেরণা আজ ইতিহাসের বস্তু। জাতির ইতিহাস কিন্তু জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের মধ্যেই থাকিয়া যায় না। বস্তুতঃ “দেওয়ানী আজাদী” লাভের ভিতর দিয়াই নূতন ইতিহাস গড়িয়া উঠে। আর প্রত্যেক নাগরিককেই এই ঐতিহাসিক দায়িত্বভার বহন করিতে হয়। আমাদের অগ্রগামীদের মধ্যে স্বার্থের সংঘাত ও ইনটেলিজেনশিয়ার অভাববশতঃ ছাত্রসমাজের উপরেই আজ এই দায়িত্ব বর্ত্তাইয়াছে। একটা শিক্ষা-স্বাস্থ্যসম্পন্ন বলিষ্ঠ জাতি গঠন আমাদেরই দায়িত্ব।
একটা রাষ্ট্রের পত্তন যত না কঠিন, তাহার চেয়েও কঠিন সেই রাষ্ট্রকে গড়িয়া তোলা। তাহার জন্য চাই সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও দৃঢ় সংগঠন। সুষ্ঠ পরিকল্পনা এবং দৃঢ় সংগঠনও সামর্থ্যের অভাবে ব্যর্থ হইয়া যায়। তাই সকল সমস্যার গোড়ার কথা হইতেছে সংগঠন। এক কথায় সংগঠনই শক্তি।
পূর্ব পাকিস্তানের গোটা শিক্ষাব্যবস্থা আজ ভাঙ্গনের মুখে। ছাত্র আছে ছাত্রাবাস নাই, স্কুল-কলেজ আছে শিক্ষক নাই, শিক্ষা দপ্তর আছে শিক্ষা প্রসারের চেষ্টা নাই। বরং শিক্ষা সঙ্কোচের উৎসাহে সরকারী মহলে সাজ সাজ রব পড়িয়াছে। আজাদীর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষাপদ্ধতির আমূল পরিবর্তন দূরের কথা, শিক্ষাব্যবস্থায় গতানুগতিকতার প্রসার যেন বাড়িয়াই চলিয়াছে। যে অল্পসংখ্যক শিক্ষক আছেন, তাঁহাদেরও আবার জীবন ধারণের মত বেতন নাই। যে কয়েকটি স্কুল-কলেজ তাহারও আবার কিছু অংশ সরকারী কাজে ব্যবহৃত হইতেছে। তাহার উপর দেশের অন্নবস্ত্র স্বাস্থ্য সংকট আজ গোটা সমাজকে বিশেষ করিয়া ছাত্রসমাজকে প্রচণ্ড আঘাত হানিতেছে।
এই সংকটে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র-ছাত্রীদের সাড়া দিতেই হইবে। সংহতির আহবান জানাইয়া পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রাবাসের ব্যবস্থা ও প্রদেশের বিভিন্ন ছাত্র সমস্যার সমাধানে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের সুসংহত বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আজ ছাত্র সমাজের আস্থা অর্জন করিয়াছে। কিন্তু সমস্যা সকলের, কাজেই সহযোগিতাও সকলেরই চাই। আসুন আমরা সকলে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের পতাকাতলে জমায়েত হইয়া ছাত্রসমাজের দাবী-দাওয়া আদায়ের জন্য সক্রিয়া হইয়া উঠি।
আগামী ১০ই ডিসেম্বর বেলা ২ ঘটিকায় ছাত্রলীগের নিজস্ব অফিস ১৫০ নং মোগলটুলীতে ঢাকা সিটি কমিটির নির্বাচন হইবে। আপনারা ৫ই ডিসেম্বরের মধ্যে আপনাদের নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাইমারী ইউনিট গঠন করিয়া ছাত্রলীগকে সুদৃঢ় করুন। আমাদের স্মরণ রাখিতেই হইবে যে, ঢাকা পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী বিধায় প্রদেশের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী আজ রাজধানীতে শিক্ষালাভের জন্য জমায়েত হইয়াছেন। গোটা পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র সমস্যা আজ রাজধানীতে পুঞ্জীভূত হইয়া দেখা দিয়াছে। আসুন আমরা আজ সকলে এই নির্বাচনী অভিযানকে সফল করিয়া ছাত্রলীগের পতাকাতলে জড় হই এবং ক্ষতদুষ্ট দলীয় রাজনীতির উর্ধ্বে থাকিয়া ছাত্রসমাজের তথা গোটা সমাজের বৃহত্তর মঙ্গল সাধনে ঐক্যবদ্ধবাবে অগ্রসর হই। আবার বলি, চলার পথে সংগঠনের প্রয়োজন, সংগঠনই শক্তি।
আজীজ আহমদ
চেয়ারম্যান, ঢাকা সিটি সংগঠনী কমিটি
আবদুল ওয়াদুদ
ভাইস চেয়ারম্যান, ঢাকা সিটি সংগঠনী কমিটি
নুরুল কবীর
ও
কাজী গোলাম মাহবুব
যুগা আহবায়ক, সংগঠনী কমিটি