বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড)/৭০

শিরোনাম সূত্র তারিখ
মুসলিম লীগবিরোধী যুক্তফ্রণ্টের প্রচার পুস্তিকা যুক্তফ্রণ্ট পার্টি ৪ঠা মার্চ, ১৯৫৪

জালেম-শাহীর ছয় বৎসর

প্রচার বিভাগ

যুক্তফ্রণ্ট কেন্দ্রীয় দফতর

 মুসলীম লীগের জাঁদরেল নেতা সরদার আবদুল রব নিশতার বলিয়াছেনঃ

 “মুসলিম লীগ এখন সরকারের আজ্ঞাবহ”

 কায়েদে আজম চাহিয়াছিলেন সরকারকে মুসলিম লীগের আজ্ঞাবহ করিতে। সববময় কর্তৃত্বসম্পন্ন সে মুসলিম লীগ মরিয়া গিয়াছে। এখন গোলাম লীগের সৃষ্টি হইয়াছে। সেই গোলাম এখন জালেমের ভূমিকা গ্রহণ করিয়া জনগণকে কিভাবে শাসনের নামে শোষণ ও দমন করিতেছে তাহা জানা প্রয়োজন, তাই আমরা মজলুম জনগণের হাতে মুসলিম লীগের জালিম-শাহীর ছয় বৎসর তুলিয়া দিলাম।

-যুক্তফ্রণ্ট প্রচার দফতর

 কায়েদে আজমের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সংগ্রাম করিয়া ভারতের দশ কোটি মুসলমান পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করিয়াছে। বিরাট ঐতিহ্যসম্পন্ন একটি মহান জাতির ধর্ম ও সংস্কৃতির হেফাজতের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য ছিল। কাজেই অতি স্বাভাবিকভাবেই নূতন রাষ্ট্রের মাধ্যমে সেই মহান জাতি পূর্ণ আজাদী লাভ করিবে বলিয়া আশা করা গিয়াছিল। কিন্তু আফসোসের বিষয়, জাতির পিতা কায়েদে আজমের এমেত্মকালের পর দেশের নেতৃত্বভার এমন ব্যক্তিদের হাতে চলিয়া গেল, যাহারা নেতা হওয়ার সম্পূর্ণ অযোগ্য। পাকিস্তান অর্জনের সংগ্রামে যাহারা অগ্রনায়ক ছিলেন, কায়েমী স্বার্থবাদীদের চক্রামেত্ম তাহারা রাজনৈতিক কর্ম্মক্ষেত্র হইতে অপসারিত হইলেন অথবা নানা প্রকার অত্যাচার ও নির্যাতন ভোগ করিয়া তাঁহাদের কণ্ঠ রুদ্ধ হইয়া গেল এবং কলুষিত চরিত্র ব্যক্তিগণ, যাহাদের এই রাষ্ট্র গঠনে কোন প্রকার ত্যাগ ও পরিশ্রম স্বীকার করিতে হয় নাই, তাহারা রাষ্ট্রের কর্ণধাররূপে রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে অবতীর্ণ হইলেন। ইহার স্বাভাবিক পরিণতিস্বরূপ পাকিস্তানের পুণ্যভূমি কলুষিত হইল এবং পাকিস্তানের কোটি কোটি জনগণের ভাগ্যে চরম বিপর্যয় দেখা দিল।

লীগ নেতৃত্বের স্বরূপ

 পাকিস্তানের বর্তমান নেতাগণের চরিত্র বিশ্লেষণ করিলে দেখা যাইবে যে ইহাদের পশ্চাতে কোন ত্যাগ নাই। জনগণের জন্য দরদ নাই এবং ইহাদের ধর্ম ও ঈমানের সঙ্গে তাহাদের অনুসৃত নীতি ও কার্যাবলীর কোন সম্পর্ক নাই। অথচ ইহারা দরিদ্র ও অশিক্ষিত দেশবাসীগণকে প্রতারিত করিবার জন্য মুখে ঘন ঘন ইসলামের নাম উচ্চারণ করিতেছেন, খলিফাদের সহিত নিজেদের তুলনার স্পর্ধা দেখাইতেছেন এবং ইহাদের কুকীর্তির সমালোচনা করিলে সমালোচকদের ইহারা রাষ্ট্রদ্রোহী, কমুনিষ্ট এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী বলিয়া অভিহিত করিয়া নানা রকম বেআইনী আইনের কবলে ফেলিয়া তাহাদের কণ্ঠ স্তব্ধ করিয়া দিতেছেন। কিন্তু প্রকৃত অবস্থা বিশ্লেষণ করিলে দেখা যাইবে যে, ইহারা ইসলামকে পাকিস্তান হইতে নির্বাসিত করিতে বদ্ধপরিকর। ঈমানের নাম করিয়া ইহারা বে-ঈমানীর চরম পরাকাষ্ঠা দেখাইতেছে, জনগণকে মিথ্যা সেত্মাক দিয়া দুঃখ ভোগের প্ররণা দিতেছে, অথচ নিজেরা ভোগবিলাসে মত্ত থাকার প্রয়োজনে নানা অসদুপায়ে নিজেদের ধন-দৌলত বৃদ্ধি করিয়া কিসমৎ ফিরাইতেছে।

জাল মুসলিম লীগ

 মুসলিম লীগ পাকিস্তান আনয়ন করিয়াছে কিন্তু সেই মুসলিম লীগ আর বর্তমান মুসলিম লীগ সম্পূর্ণ পৃথক দুইটি প্রতিষ্ঠান। পাকিস্তান অর্জন করিয়াছিল নিখিল ভারত মুসলিম লীগ কিন্তু পাকিস্তান অর্জনের পর সে মুসলিম লীগের অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু লীগের নাম ভাঙ্গাইয়া যাহাতে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করা চলে এবং পাকিস্তানকে শাসন ও শোষণ করিবার কায়েমী স্বার্থ বজায় থাকে তজ্জন্য একদল স্বার্থপর, ক্ষমতালিপ্সু ও দুর্নীতিবাজ লোকের চেষ্টায় পাকিস্তান মুসলিম লীগের গোড়াপত্তন হয়। ইহারা মুসলিম লীগের পুরাতন গৌরবের উত্তরাধিকারী সাজিয়া নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের কাজে নির্লজ্জের মতো প্রচার করিতেছে যে, মুসলিম লীগ কায়েদে আজমের আমানতস্বরূপ এবং কায়েদে আজম ইহাদের হাতেই লীগকে আমানত রাখিয়া গিয়াছেন। জনসাধারণ ইহাদের ধাপ্পাবাজীতে গত বৎসর ধরিয়া প্রতারিত হইয়াছে। কায়েদে আজম ঈমান, একতা ও শৃঙ্খলা এই তিনটি মূলমন্ত্র আমাদিগকে দিয়া গিয়াছেন। কিন্তু তথাকথিত জাতীয় প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ এই তিনটি মূলমন্ত্র অদ্ভুতভাবে তাহাদের কাজে লাগাইতেছে। তাহারা জনসাধারণকে শোষণ করিতেছে, প্রতিবাদ করিলে একতা ও শৃঙ্খলার দোহাই পাড়িতেছে।

 মুসলিম লীগের নামে বর্তমান শাসক সম্প্রদায় জনগণকে বিভ্রান্ত করার যে শ্রেষ্ঠতম কৌশল আবিষ্কার করিয়াছে, তাহাতে আমাদের ধর্ম ও সস্কৃতি বিপন্ন হইতে চলিয়াছে। আজ যদি ধর্ম্মের অবমাননাকারীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা আইনে থাকিত, তাহা হইলে বর্তমান রাষ্ট্রনেতাদের অনেককেই ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিতে অথবা কারাগারে পচিয়া মরিতে হইত। আল্লাহ ও ইসলামের নাম করিয়া ইহারা এমন কাজ করিয়া থাকে, যাহাতে আল্লার অবমাননা এবং ইসলামের অমর্যাদা করা হয় আমরা প্রথমে বর্তমান লীগের শাহীর ধর্ম্ম-বিরোধী কার্যকলাপের যে পরিচয় দান করিব, তাহাতে দেখা যাইবে যে ইহাদের হাতে শাসন ক্ষমতা থাকিলে পাকিস্তানে ইসলামী হুকুমত কোন কালে কায়েম হইবে না, এমনকি মুসলমান ধর্মের অস্তিত্ব ইহাদের দ্বারা বিপন্ন হইবে। ইহা বুঝিতে পারিয়াই মৌলনা আতাহার আলীর নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তান জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নায়িাছেন। জনদরদী শেরেবাংলা ও দেশপ্রেমিক ভাষানী মওলানা হাতে হাত ও কাঁধে কাঁধ মিলাইয়াছেন। মুসলিম লীগ নেতাদের ইসলাম প্রীতির বিষয় লইয়া আলাপে আসিবার পূর্বে খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে খলিফাদের সঙ্গে বর্তমান মুসলিম লীগ খলিফাদের জীবনযাত্রা প্রণালীর একটু তুলনামূলক আলোচনা করা যাক।

খলিফাদের ত্যাগ ও লীগের নেতাদের অর্থলোভ

 ইসলামী রাষ্ট্র অথবা খোলাফায়ে রাশেদীনের সময় যে বেতন রাষ্ট্রনায়কেরা লইতেন, তাহার সহিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রনায়কদের বেতনের এক তুলনামূলক হিসাব নিম্নে দেখানো হইলঃ

 ১ম ও দ্বিতীয় খলিফা হজরত আবুবকর ও হজরত আবুবকর ও হজরত ওমর (রাঃ) মাসিক ২২৫ দেরহাম বেতন লইতেন। তাঁহারা খলিফা কার্যভার গ্রহণের পূর্বে ব্যক্তিগত সম্পত্তির এক পূর্ণ তালিকা সরকারে পেশ কয়িয়াছিলেন। ইহার উদ্দেশ্য ছিল যে, খলিফার কার্যভার ত্যাগের পর তাঁহাদের সম্মত্তি নিজেদের পদাধিকারের সুযোগ বৃদ্ধি করিয়াছেন কিনা, তাহা দেখাইবার সুযোগ জনসাধারণকে দান করা। তৃতীয় খলিফা হজরত ওসমান (রাঃ) সরকারী কোষাগার হইতে আদৌ কোন বেতন গ্রহণ করেন নাই। চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রাঃ) বৎসরে ৫শত দেরহাম বেতন গ্রহণ করিতেন।

কায়েদে আজমের পর

 পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর রাষ্ট্রপতি হিসাবে কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সরকারী তহবিল হইতে কোন বেতন গ্রহণ করেন নাই।

কায়েদে আজমের এন্তেকালের পর বৃটিশ সরকারের অনুগ্রহপুষ্ট স্যার নজিমুদ্দীন যখন পাকিস্তানের বড়লাট নিযুক্ত হন, তখন হইতেই পাকিস্তানের হৃদয়মূলে প্রথম আঘাত হানা শুরু হয়। তিনি আজাদীর জন্য কোন ত্যাগ স্বীকার করেন নাই, অথচ আজাদীর পর তিনি কায়েদে আজমের শূন্য আসন দখল করিলেন। পাকিস্তানের এই নয়া খলিফার মাসিক বেতন ১২,৫০০ টাকা নির্ধারিত হইল। বার্ষিক ভাতা হিসাবে তিনি ৫০,০০০ টাকা এবং সরকারী ব্যায়ে সজ্জিত ২০০০ টাকা মাসিক ভাড়ার বিরাট প্রসাদ বিনা খরচে ভোগ করিতে লাগিল। তাহার সফরের ব্যয় রাষ্ট্রকেই বহন করিতে হইত এবং তাঁহার নিজস্ব বিমান চালনার ব্যয় প্রতি মাইল১০০ টাকা। তাঁহার পোষাকের ব্যয় হিসাব বার্ষিক ৩,০০০ টাকা সরকার হইতে দেওয়া হইত। অর্থাৎ তাঁহার সকল ব্যয় রাষ্ট্র হইতে বহন করিয়াছিল এবং বৎসরে তাঁহার আড়াই লক্ষ টাকা সঞ্চিত হয়।

 কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী মাসিক ৪ হাজার টাকা বেতন এবং বার্ষিক ৩ হাজার টাকা পোষাকের খরচ হিসাবে গ্রহণ করেন। তাঁহার বাড়ী, গাড়ী, বিমান, ট্রেন ও তৈজসপত্র, ভৃত্য, সব খরচই সরকার হইতে বহন করা হয়। কেন্দ্রের অন্যান্য মন্ত্রীগণও সকলে এই সুযোগ পাইয়া থাকেন।

 প্রাদেশিক প্রধান মন্ত্রীগণ-পূর্ববঙ্গেও প্রধানমন্ত্রীর বেতন- ১,৮০০ টাকা

ভাতা ১,২০০ টাকা

 বাড়ী, গাড়ী এবং চাকর-বাকরের ব্যয় সরকারী কোষাগার হইতে বহন করা হয়। তিনি ৬ বৎসর ওজারতী করিয়া ঢাকা ও ময়মনসিংহে কয়েকখানা প্রাসাদ নির্ম্মান করিয়াছেন। এক এক খানি প্রাসাদেও নির্মাণ ব্যয় ৩ লক্ষ টাকা। এখানে উল্লেখযোগ্য যে লীগ শাহীর পূর্বে তিনি ময়মনসিংহের একজন সামান্য উকিল ছিলেন।

 প্রদেশের অন্যান্য মন্ত্রীদেও মাসিক বেতন ১,৫০০ টাকা। ইহাদিগকে সুসজ্জিত প্রাসাদ এবং গাড়ীর ভাতা দেওয়া হয়। বিশেষ করিয়া পূর্ববঙ্গে কয়েকজন ব্যাধিগ্রস্ত ও অকর্মণ্য মন্ত্রীকে অনর্থক বসাইয়া বেতন দেওয়া হয়। এইসব ব্যাধিগ্রস্ত অপদার্থ মন্ত্রী বাহাদুররা মাসের পর মাস সরকারী খরচে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকিয়াছেন। মন্ত্রীদেও স্বাস্থ্য ভাল করিতেই সরকারী তহবিলের বিরাট অংশ ব্যয়িত হইত। অবশ্য এই সব বেতন ও খরচপত্রাদি মজলুম দেশবাসী বহন করিয়া থাকে।

বিদেশের দূতাবাসের মদের প্লাবন

 বিদেশে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসাবে এক শ্রেণীর লোকদিগকে পাঠানো হইয়া থাকে, ইহাদেরও অনেকে বিদেশে পাকিস্তানের ইজ্জতের এবং ইসলামের সুনামে কলঙ্ক লেপন করিতেছেন। দূতাবাসসমূহে মদেও জন্য যে অর্থ ব্যয় করা হয় তাহাতে একটি প্রদেশের কোন এক বিভাগীয় ব্যয় সম্পন্ন হইতে পারে।

 খেলাফত যুগের রাষ্ট্রনায়কদের বেতন এবং অন্যান্য ব্যয়ের সহিত নয়া ইসলামী রাষ্ট্র- পাকিস্তানের রাষ্ট্রনায়কদের ব্যয় ও বেতনের এই তুলনামূলক হিসাব দেখিলে স্পষ্ট প্রতীয়মান হইতে যে ইহারা ইসলামকে বরবাদ করার জন্যই যেন ঘন ঘন ইসলামী জিগির তুলিতেছে।

 পাকিস্তানের সহিত অন্যান্য অমুসলমান রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রীদের তুলনামূলক আয়-ব্যয়ের হিসাব নিম্নে প্রদত্ত হইলঃ

চীন

 চীনা গণ-সরকার প্রধানমন্ত্রী মাও সে তুং ও অন্যান্য খরচ বাবদ মাসিক ৫০০ টাকা ও অন্যান্য মন্ত্রীরা মাসিক ২০০ টাকা পাইয়া থাকেন। ইহাদের গাড়ী, বাড়ীর খরচ নিজেদেরই বহন করিতে হয়।

ভারত

 বৃটিশ আমলে বড়লাটের বেতন ছিল মাসিক ২৫,০০০ টাকা।

 স্বাধীন ভারতের রাষ্ট্রপতির বেতন ধার্য্য হয় ১২,৫০০ টাকা। প্রথম রাষ্ট্রপতি শ্রীরাজা গোপালচারী মাসিক ৭০০ টাকা রাষ্ট্র দান করিতেন, ২,৫০০ টাকা দরিদ্র ছাত্রদের তহবিলে দিতেন এবং নিজে লইতেন মাসিক ৩,০০০ টাকা।

 মাদ্রাজের প্রধানমন্ত্রী হইয়াও রাজ্য গোপালচারী এখনও রিকশা চড়িয়া বেড়ান। নাজিমদ্দিন ও রাজা গোপালচারীর মধ্যে পার্থক্য এই যে নাজিমুদ্দিন চিরকাল বৃটিশের দালালী করিয়াছেন। আর রাজাজী আজাদীর সংগ্রামে চিরকাল নির্যাতিত হইয়াছেন।

 বড় লাট হিসাবে বিদায়কালীন ভাতা পাইয়াছেন রাজা গোপালাচারী মাসিক ১,০০০ টাকা এবং নাজিমউদ্দিন মাসিক ২,০০০।

ইসলামী রাষ্ট্রে মদ ও জুয়া

 পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পূর্বে পূর্ববঙ্গে যে পরিমাণ মদ বিক্রয় হইত, পাকিস্তান হওয়ার পর তাহা যে কতগুণ বাড়িয়া গিয়াছে, তাহার হিসাব করা যায় না। পাকিস্তান হওয়ার পূর্বে কেবলমাত্র ঢাকা ক্লাবে মাসে ৭০ হইতে ৮০ গ্যালন মদ বিক্রয় হইত। পাকিস্তান হওয়ার পর আইন করিয়া মদ্যপান নিষিদ্ধ করা হইয়াছে। অথচ এক ঢাকা ক্লাবেই মাসে ৭০০ গ্যালন মদ বিক্রয় হয়। ইহা ছাড়াও জনাব নূরুল আমীন সাহেবের মেহেরবানীতে ঢাকা শহরের বুকে আরও ৬টি মদের দোকান খোলা হইয়াছে এবং তাহাতেও বিপুল পরিমাণে মদ বিক্রয় হয়।

 ইসলামী আইন অনুসারে লাট সাহেবেরা খলিফাদের শামিল। অথচ সেই খলিফাদের বাসভবনে মদ মওজুদ রাখা নেহায়েত জরুরী ব্যাপার। অনেক সময় লাট প্রাসাদে কক্টেল্ পার্টি এবং মেয়েদের কোমর ধরিয়া নাচ (বল নাচ) হইয়া থাকে। ইসলামী বিধানের কোথাও এইরূপ কক্টেল্ পার্টি ও বল নাচের হদিস পাওয়া যায় নাই।

দেউলিয়া পাকিস্তান

 পাকিস্তান হওয়ার পর আমাদের আর্থিক অবস্থা ছিল, পরের কয়েক বৎসরে তাহার বিরূপ শোচনীয় হইয়াছে, অনেকেই তাহা অবগত নন। কাজেই তাহার হিসাব সংক্ষেপে দেওয়া প্রয়োজন।

 ১৯৪৮-৪৯ সালে পাকিস্তানের মওজুদ তহবিলে ১০৮ কোটি টাকার সোনা বাড়তি হইয়াছিল। কিন্তু ১৯৫০-৫১ সালে পাকিস্তানের দেনা হয় ৬৮ কোটি টাকা। বিদেশ হইতে বিলাতী মদ, নখের রং, মুখের পালিশ, ঠোঁটের রং এবং পুতুল কিনিতে রাষ্ট্রের তহবিল উজাড় করিয়া দেওয়া হয়। অথচ এই সকল জিনিষ গরীবের কোন কাজে লাগে না। বড়লোক এবং ইঙ্গ-বঙ্গ সমাজের খেয়াল মিটাইবার জন্য গরীব দেশের কোটি কোটি টাকা ব্যয় করিয়া দেশকে ফতুর করা হইয়াছে।

শাসনতন্ত্র কোথায়?

 পাকিস্তান কায়েম হইয়াছে প্রায় সাত বৎসর পূর্বে, কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে এই রাষ্ট্রের কোন শাসনতন্ত্র রচিত হয় নাই। ইংরেজের গড়া শাসনতন্ত্র লইয়া এই রাষ্ট্র পরিচালিত হইতেছে, অথচ ভারত স্বাধীনতা পাওয়ার মাত্র এক বৎসর পরেই তাহার নূতন শাসনতন্ত্র রচনা শেষ করিয়াছে। আমেরিকার মত একটি দেশের শাসনতন্ত্র রচনা করিতে মাত্র নয় মাস সময় লাগিয়াছে। ভারতের শাসনতন্ত্র রচনা এবং গৃহীত হইতে মোট ব্যয় হইয়াছে ৯ লক্ষ টাকা, আমেরিকার ব্যয় হইয়াছিল ১৯ লক্ষ টাকা, অথচ পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র এখনও রচনা করা হয় নাই, কিন্তু, ইতিমধ্যে এই বাবদ ৯৬ কোটি টাকা ব্যয় হইয়া গিয়াছে। হায়রে গরীব রাষ্ট্র পাকিস্তান।

 গত ৬ বৎসর ধরিয়া পাকিস্তান গণ-পরিষদের সভাপতি মাসিক ৪ হাজার টাকা করিয়া বেতন এবং বাড়ী ও গাড়ী সরকারী খরচায় পাইতেছেন। গণ-পরিষদের সদস্যগণের যাতায়াতের ভাড়া ও করাচী অবস্থানের জন্য প্রত্যহ ৪২ টাকা হিসাবে ভাতা দেওয়া হইয়াছে। এই বিপুল অর্থ যে দরিদ্র জনসাধারণই দিয়াছে, একথা বলাই বাহুল্য।

ব্যক্তিস্বাধীনতা বিপনণ

 পাকিস্তানের নিজস্ব শাসনতন্ত্র না থাকয় এই রাষ্ট্রে ব্যক্তিস্বাধীনতা বিপন্ন হইয়াছে। সারা পাকিস্তানে দেড় হাজারের অধিক অধ্যাপক, উকিল, ছাত্র-ছাত্রী ও দেশপ্রমিক যুবকগণ জেলের মধ্যে বিনা বিচারে আটক ছিল, অথচ ইসলামের বিধান অনুসারে বিনা বিচারে কাহাকেও আটক রাখা যায় না। বন্দীদিগের প্রতি জেলে যে ব্যবহার করা হয়, তাহা মনুষ্যোচিত বলা যায় না। প্রথম শ্রেণীর রাজবন্দীদের জন্যে দৈনিক ১ টাকা ২ আনা ৫ পয়সা খাদ্যের বরাদ্দ করা আছে, কিন্তু মুসলীম লীগের পোষা কণ্ট্রাকটরদের চুরি করার পর বন্দীদের ভাগ্যে ৮ আনা হইতে ১০ আনার অধিক খাদ্য জোটে না।

খুনীর ভূমিকায় মুসলিম লীগ

 জার্মানীতে হিটলারের আমলে সামান্য কারণে বন্দীদিগকে যেভাবে হত্যা করা হইত, মুসলিম লীগ শাসনে পাকিস্তানে তাহা হুবহু অনুসৃত হইতেছে। ইহার ফলে বহু মেধাবী ছাত্র লীগ-শাহীর অত্যাচারে জ্ঞান দিয়াছে। রাজশাহী জেলে যে গুলীবর্ষণ করা হইয়াছিল, তাহাতে কয়েকজন হতাহত হয়। নিহতের মধ্যে ছিল খুলনা জেলার এক দরিদ্র বিধবার একমাত্র পুত্র আনোয়ার, সে দ্বিতীয় বার্ষিক বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিল।

 ঢাকায় ভাষা আন্দোলনের সময় নূরুল আমীন সরকার গুলী করিয়া কয়েকজন নওজোয়ানের জীবনলীলার অবসান করে। নিহত ব্যক্তিদের দাফন পর্যন্ত ইসলামী কানুন মত করা হয় নাই। তদানীন্তন মুসললিম লীগের মুখপত্র দৈনিক মিল্লাত (২৩ ফেব্রুয়ারী) ১৯৫২ সন এ সম্পর্কে পূর্ণ বিবরণ প্রকাশ করিয়াছিলেন।

 ঢাকার লালবাগের পুলিশ ব্যারাকে নূরুল আমীন সরকার গুলী চালাইয়া প্রায় তিনশত পুলিশকে হতাহত করেন বলিয়া প্রকাশ। ইহাদের কি দোষ ছিল, তাহা সরকার বলেন নাই। এবং গুলী চালনার ব্যাপারও বহুদিন গোপন রাখা হইয়াছে।

মুসলিমর লীগের অন্যতম অপকীর্তি করাচীতে ছাত্রদের উপর গুলী চালানো। ছাত্রদের অপরাধ ছিল যে তাহারা বেতন বৃদ্ধির প্রতিবাদ শোভাযাত্রা বাহির করিয়াছিল। এই সামান্য কারনে ১২ জন ছাত্রকে যে মুসলিম লীগ সরকার গুলী করিয়া মারিতে পারে, দেশ শাসনের কোন অধিকার তাহাদের থাকা উচিত নয়।

 চট্টগ্রামে বাঁধ কাটা লইয়া গুলীবর্ষণ ও নবীনগরে মসজিদের মধ্যে গুলীবর্ষণ লীগ-শাহীর অন্যতম অপকীর্তি হইয়া রহিল। সমগ্র পশ্চিম পাকিস্তানে আহমাদীয়া বিরোধী আন্দোলনের সময় সামরিক আইন জারী করিয়াও বহুসংখ্যক লোককে লীগ সরকার খুন করিয়াছে। বহুসংক্যক সম্মানিত উলামায়ে কেরামকে উলঙ্গ করিয়া বীভৎসভাবে প্রহার করিবার ইতিহাস লোকে মুখে মুখে প্রচারিত।

 মুসলিম লীগ সরকার জনগণের প্রয়োজন মিটাইতে পারে নাই, ফলে তাহাদের দাবী-দাওয়ার সম্পূর্ণ আইনসম্মত সংগ্রাম শক্তির দ্বারা দাবাইয়া রাখার জন্য পূর্ব পাকিস্তানের পুলিশী ব্যয় অসম্ভব রকম বৃদ্ধি করিয়াছে। যুক্ত বাংলার আমলে বাংলাদেশে একজন আই.জি. পুলিশের অধীনে মাত্র ৬ জন সহকারী আই, জি, থাকিতেন। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান সমগ্র বাংলার আয়তন অপেক্ষা অনেক কম হইলেও এখানে একজন আই,জি থাকিতেন। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান সমগ্র বাংলার আয়তন অপেক্ষা অনেক কম হইলেও এখানে আইজি, পুলিশের অধীনে কমপক্ষে ১১ জন ডি, আই, জি, বহাল করা হইয়াছে। অথচ অপরাধের সংখ্যা ছিল ৫৪৫৬৬, কিন্তু ১৯৫০ সালে এই অপরাধের সংখ্যা বৃদ্ধি হইয়া দাঁড়ায় ২১৮৬৭০। এই হিসাব হইতেই প্রমাণিত হইতেছে যে, মুসলিম লীগ দেশ শাসনের নামে অরাজকতার সৃষ্টি করিয়া চলিয়াছে। পুলিশ বিভাগকে ব্যয়বহুল করা সত্ত্বেও যখন অপরাধের সংখ্যা কমে নাই তখন বুঝিতে হইবে যে পুলিশ বিভাগে সচ্চরিত্র ও উপযুক্ত লোকদিগকে স্থান দেওয়া হয় নাই।

খাদ্য, বস্ত্র ও ঔষধ হইতে জনগণ বঞ্চিত

 ছয় বৎসরের মুসলিম লীগ শাসন পাকিস্তানকে খাদ্য, বস্ত্র ও ঔষধ হইতে বঞ্চিত করিয়াছে, পূর্ব পাকিস্তানকে ভিখারীর দেশে পরিণত করা হইয়াছে, লীগ সরকারের বন্ধ্যা নীতির ফলে ১৯৫১ সাল হইতে ৫৩ সাল পর্যন্ত খুলনা ও বরিশালে দুর্ভিক্ষ বর্তমান ছিল। এক খুলনা জেলায়ই প্রায় ২০ হাজার লোক দুর্ভিক্ষে মৃত্যুবরণ করে। সারা জেলা যখন কবরস্থানে পরিণত হইয়াছিল, তখনও মুসলিম লীগের নির্লজ্জ মন্ত্রীরা বালিয়া বেড়াইতেছিল যে দুর্ভিক্ষ আদতেই হয় নাই। মুসলিম লীগের অন্যতম চাঁই ও খুলনার এম এল এম, এ, সবুর তখন সংবাদপত্রে বিবৃতি দিয়া বলিয়াছিলেন যে, দুর্ভিক্ষে ২০ হাজার লোক মারিয়াছে এবং বহু লোক পাকিস্তান হইতে হিন্দুস্তানে হিজরত করিয়াছে। অবশ্য সেই সবুর সাহেবই এখন মুসলিম লীগের দালাল হইয়া নানাস্থানে বক্তৃতা করিয়া বেড়াইতেছেন।

লবণ সংকট

 ১৯৫১ সারের লবণ সঙ্কট মুসলিম লীগের অন্যতম অপকীর্তি। পূর্ব পাকিস্তানে লবণ তৈয়ারী হইয়া থাকে, কিন্তু মুসলিম লীগের মন্ত্রীদের কেহ কেহ নিজেদের আত্মীয় পোষণের জন্য পূর্ব পাকিস্তানের লবণ তৈয়ারীর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করান এবং আত্মীয়-স্বজনকে লবণ ব্যবসায়ের একচ্ছত্র সুযোগ দেন। তাহাদেরই চক্রান্তে ফলে দুই আনা মূল্যের লবণ ১৬ টাকা সের দরে পূর্ব পাকিস্থানীরা ক্রয় করিয়াছে। লীগ সরকারের দমননীতির ভয়ে জনগণ প্রতিবাদ করারও তেমন সাহস পায় নাই।

 পূর্ব পাকিস্তানে যখন খাদ্যভাবে মানুষ মরিতেছে, তখন মুসলিম লীগের নেতারা কিভাবে চাউলের ব্যবসা করিয়া লাভবান হইয়াছে, তাহার বিবরণ দেওয়া প্রয়োজন। পূর্ব পাকিস্তান সরকার করাচী হইতে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী পীরজাদা আবদুস সাত্তারের খামার হইতে ৮ টাকা মণ দরে চাউল ক্রয় করিয়া আনেন। সেই চাউল এখানে তাহারা ২০ টাকা মণ দরে, কোন কোন সময় ২১ টাকা ৪ আনা মণ দরে বিক্রয় করিয়া সরকারের কোষাগারে বিরাট অঙ্কের লাভ দেখাইয়া থাকেন। এবং এই লাভের টাকা দিয়া মন্ত্রী এবং সরকারী চাকুরিয়াদের জন্য গাড়ী কেনা হইয়া থাকে। দরিদ্রের ভাগ্য লইয়া এমন পরিহাস কেবলমাত্র মুসলিম লীগের পক্ষেই শোভা পায়।

 বস্ত্রের দিক দিয়া পূর্ব পাকিস্তানকে প্রায় উলঙ্গ করিয়া রাখা হইয়াছে। মুসলিম লীগ সরকার এদেশে নূতন বস্ত্রমিল প্রতিষ্ঠার কোন চেষ্টা করে নাই। অথচ পশ্চিম পাকিস্তানে গত কয়েক বৎসরে ৭/৮ টি নূতন মিল স্থাপন করা হইয়াছে। পূর্ব পাকিস্তানকে ব্যবসায়ী ও পুঁজিপতিদের শোষণের ক্ষেত্ররূপে ব্যবহার করা হইতেছে। ১৯৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তানে কাপড়ের দুর্ভিক্ষ মিটাইবার জন্য ওয়াহিদুজ্জামান নামক এক কুখ্যাত ব্যক্তিকে দুই কোটি টাকার ভারতীয় কাপড় আমদানীর লাইসেন্স দেওয়া হইয়াছিল। সেই কাপড়ের বেশীর ভাগ কলিকাতায় বিক্রী হয়। সামান্য কাপড় ঢাকায় আনিয়া কালোবাজারে চালান দেওয়া হইয়াছিল। পুলিশ এই চরম অসাধুতার বিষয়ে তদন্ত শুরু করার উজিরে আজম নুরুল আমীন উহা ধামাচাপা দিয়া রাখিয়াছেন। নুরুল আমীন সরকারের অবশ্যই জানা আছে যে ওয়াহিদুজ্জামান নামক এই ব্যক্তিটি অবিভক্ত বাংলায় কো-অপারেটিভ কেলেঙ্কারীর জন্য দায়ী। বাংলা বিভাগ হওয়ার ফলে সে আত্মরক্ষা করিতে সমর্থ হইয়াছে। বিভাগ পূর্ব বাংলায় পাকিস্তান আন্দোলনের সময় এই ব্যক্তিটি মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে কাজ করিয়াছিল। পূর্ব পাকিস্তানের নাকি সে এখন মুসলিম লীগের একজন বড় চাঁই।

রোগীর পথ্য ও ঔষধের অব্যবস্থা

 ঔষধের ব্যাপারেও পূর্ব পাকিস্তানে অসহায় অবস্থার সৃষ্টি হইয়াছে। দুইজন মন্ত্রী বেনামে ঔষধের আমদানীরপ্তানীর লাইসেন্সের সিংহ ভাগ পাইতেছেন এবং তাঁহাদের কল্যাণেই পূর্ব পাকিস্তানে ঔষধ পাওয়া যায় না, অথচ পাকিস্তান হইতে ভারতে ঔষধ চালান যায়। এখানে জেলাবোর্ড, মিউনিপ্যালিটি দাতব্য চিকিৎসাগুলিতে ঔষধ নাই; দরিদ্র রোগীর ঔষধের অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যাইতেছে। হাসপাতালে ঔষধের অভাবে রোগীর মৃত্যুসংখ্যা অসম্ভব রকম বৃদ্ধি পাইয়াছে। অথচ স্বাস্থ্য মন্ত্রী বাহার সাহেব কোন কাজ না করিয়া বসিয়া বসিয়া মোটা বেতন লইতেছেন। দরিদ্র দেশ বাসী যখন ঔষধ ও পথ্যাভাবে মৃত্যুবরণ করিতেছে, তখন সামান্য অসুখের অজুহাতে লীগের মন্ত্রীরা এবং নেতারা চিকিৎসা করাইবার জন্য লণ্ডন আমেরীকা, সুইজারল্যাণ্ড, ভিয়েনা প্রিভৃতি ইউরোপীয় মুলুকে পাড়ি দিতেছেন। জনগণের প্রতি বে-ঈমানির ইহা অপেক্ষা চূড়ান্ত পরিচয় আর কি থাকিতে পারে? এ সেদিনের কথা অর্থ সচিব চৌধুরী মোহাম্মদ আলী যখন বহু অর্থ ব্যয়ে ঢাকায় সরকারী খরচে চিকিৎসিত হইতেছিল, ঠিক সেই সময় মওলানা ভাষানীর স্ত্রী এক ফোঁটা ঔষধের অভাবে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হইতেছিলেন।

শিক্ষার বিরুদ্ধে জেহাদ

শিক্ষার বিরুদ্ধে মুসলিম লীগ যেন জেহাদ ঘোষণা করিয়াছে। মুসলিম লীগ ক্ষমতা দখলের পর পূর্ব পাকিস্তানকে সুপরিকল্পিত উপায়ে অশিক্ষিত রাখার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করিয়াছে। তাহার ফলে লীগ হুকুমতের প্রথম বৎসরেই পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় ৩০ হাজার প্রাইমারী স্কুল বন্ধ করিয়া দেওয়া হয়। যে স্কুলগুলি চলিতেছে, তাহা বন্ধ করার অভিপ্রায়ে শিক্ষকগণকে অপর্যাপ্ত বেতন অত্যন্ত অনিয়মিতভাবে দেওয়া হয়। স্কুলে আসবাবপত্রাদির নাম-গন্ধ নাই। উচ্চশিক্ষার জন্য লীগ সরকার মাঝে মাঝে মোটা বরাদ্দ করিয়া থাকেন, অথচ প্রাইমারী ও মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে তাঁহারা অত্যন্ত চতুরতার সহিত পঙ্গু করিয়া দিতেছেন। ইহার ফলে অদূরভষ্যিতে উচ্চশিক্ষার জন্য আর অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন হইবে না।

 নাজিমুদ্দিন-নরুল আমীন চক্র প্রদেশের শিক্ষা মন্ত্রীর মসনদে এমন এক অযোগ্য ব্যক্তিকে বসাইয়া রাখিয়াছেন যাহার পেটে বোমা মারিলেও শিক্ষার ব্যাপারে কোন বিজ্ঞতামূলক কথা বাহির হইবে নাই। ইহার উপর মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড নামক এমন এ অপূর্ব্ব চীজ সৃষ্টি করিয়া রাখা হইয়াছে, যাহার কোন ক্ষমতা নাই, অথচ শিক্ষা-ব্যবস্থা পণ্ড করার যোগ্যতা যথেষ্ট আছে এবং এই বোর্ডের প্রেসিডেণ্টরূপে এমন এক ব্যক্তিকে নিয়োগ করা হইয়ায়েছ তিনি কয় বৎসরে কেবলমাত্র নিজের ব্যবসায় বেনামে চালাইয়া ফুলিয়া ফাঁপিয়া ঢোল হইয়াছেন।

 পূর্ব পাকিস্তানের অযোগ্য মন্ত্রিসভা গত ছয় বৎসরে শিক্ষা ব্যাপারে কতটা অযোগ্যতার পরিচয় দিয়াছে, নিম্নে তাহার বিবরণ দেওয়া হইল।

পশ্চিম পাকিস্তানে আছে

বিশ্ববিদ্যালয়
মেডিকেল কলেজ
ইঞ্জিনিয়ারি কলেজ
টেক্সটাইল কলেজ
ফরেস্টারী কলেজ
হাসপাতাল

..
..
..
..
..
..

..
..
..
..
..
..

..
..
..
..
..
..

৪টি
৫টি
৩টি
৮টি
২টি
৯টি

পূর্ব পাকিস্তানে আছে

বিশ্ববিদ্যালয়
মেডিকেল কলেজ
ইঞ্জিনিয়ারি কলেজ

..
..
..

..
..
..

..
..
..

২টি
১টি
১টি

 অদ্যাবধি পূর্ব পাকিস্তানে একটিও সরকারী পাঠাগার বা ষ্টেট লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠিত হয় নাই। স্মরণ রাখিতে হইবে যে সারা পাকিস্তানের শতকরা ৫৬ ভাগ লোক পূর্ব পাকিস্তানে বাস করে।

 স্ত্রী শিক্ষার জন্য একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ কলেজ ও আধুনিক ছাত্রীনিবাস পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানীতে নাই। মহিলাদের কলেজ ও ছাত্রী নিবাসের জন্য বিরাট ইমারত প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল তাহা লীগ মন্ত্রিসভা নির্লজ্জের মত সেক্রেটারিয়েট ভবন হিসাবে ব্যবহার করিতেছেন।

 সরকারী বালিকা বিদ্যালয়গুলিতেও আত্মীয় পোষণ নীতি অনুসারে উজিরদের আত্মীয়স্বজনকে রাখা হইয়াছে। তাহার ফলে শিক্ষার মান যথেষ্ট কমিয়া গিয়াছে। ইহার উপর ছাত্রীদের বাসের ভাড়া ও বেতন বৃদ্ধি করিয়া বহু ছাত্রীকে পড়া ত্যাগে বাধ্য করা হইয়াছে।

 শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি এত ব্যাপকভাবে দেখা দিয়াছে যে পুস্তক নির্বাচন কমিটি ঘুষ ছাড়া কথা বলে না। অর্থ ব্যয় করিয়া অনেক অপাঠ্য পুস্তক করা যায় এ কথা পূর্ব পাকিস্তানের লীগ ওজারতের আমলেই সত্য বলিয়া প্রমাণিত হইল।

 পূর্ব্ব-পাকিস্তানের শিক্ষা উন্নয়নের জন্য ১৯৪৭ সালে শিক্ষা পুনর্গঠন কমিটি সুপারিশ করিয়াছিলেন যে প্রাথমিক স্তরে মাতৃভাষা ছাড়া অন্য কোন ভাষায় শিক্ষা দেওয়া হইবে না। কিন্তু বিদ্যাদিগগজ মন্ত্রীরা প্রাথমিক স্তরে উর্দ্দু ভাষাকে এদেশে বাধ্যতামূলক করিয়া প্রাথমিক শিক্ষার চরম সর্ব্বনাশ সাধন করিয়াছেন। পূর্ব্ব বঙ্গের প্রথমিক শিক্ষার জন্য কেন্দ্র হইতে বৎসরে ৫২ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সে কথা রক্ষিত হয় নাই। এবং পূর্ব্ব বঙ্গের অযোগ্য মন্ত্রীরা উহা আদায় করিতে পারেন নাই।

 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঋণগ্রস্ত থাকা সত্ত্বেও প্রথম কয়েক বৎসর কেন্দ্রের নিকট সাহায্য চাহিয়া বিফল মনোরথ হইয়াছে, অথচ সিন্ধুতে বিশ্ববিদ্যালয় থাকা সত্ত্বেও করাচীর জন্য আবার একটি ফেডারেল ইউনিভারসিটি করা হইয়াছে।

 এদেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সমত্মানরা যখন অর্থাভাব এবং সরকারী অব্যবস্থায় শিক্ষা লাভে বঞ্চিত হইতে চলিয়াছে, তখন ধনী এবং কায়েমী স্বার্থবাদীদের সমত্মানরা ইংরেজী ভাষার মাধ্যমে শিক্ষার জন্য পাবলিক স্কুল প্রতিষ্ঠিত হইতেছে। এক ভিকারুন্নিসা স্কুলেরর জন্যই সরকার এ পর্য্যন্ত ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয় করিয়াছেন। এই স্কুল তৃতীয় শ্রেণীর একটি ছাত্রীর বেতন ১৫।০ আনা। এই ব্যয়বহুল শিক্ষার কারণ সম্পর্কে মন্ত্রীরা বলেন যে এদেশের শাসক তৈয়ারীর জন্য এই ধরনের স্কুলের প্রয়োজন আছে। ইসলামী হুকুমতে শাসক ও শাসিত সম্প্রদায় সৃষ্টির বাসনা অত্যন্ত মারাত্মক। ইহাকে গায়েব ইসলামী কাণ্ড-কারখানা বলা যাইতে পারে।

 পূর্ব্ব বাংলায় সরকারী ও বেসরকারী স্কুলের পার্থক্য বজায় রাখিয়া শিক্ষার প্রসারের মূলে কুঠারাঘাত করা হইয়াছে। পূর্ব্ব-বাংলার মোট আদায়ী রাজস্ব ২৭ কোটি টাকার মধ্যে সাড়ে ১৩ কোটি টাকা সিভিল ও পুলিশ খাতে ব্যয় হয়। আর সরকারী স্কুল ও কলেজে যে খরচ করা হয়, তাহার অর্ধেকও বেসরকারী স্কুল ও কলেজের জন্য খরচ করা হয় না।

জমিদারী প্রথা বিলোপের ভাঁওতা

 মুসলিম লীগ যখন পাকিস্তান আন্দোলন আরম্ভ করিয়াছিল, তখন জনগণের নিকট ইহার অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল এই যে বিনা খেসারতে জমিদারী দখল করিয়া ভূমিহীন চাষীদের মধ্যে উহা বিতরণ করা হইবে। কিন্তু পাকিস্তার প্রতিষ্ঠার পর কায়েমী স্বার্থে দালালরূপে মুসলিম লীগ ৬০ কোটি টাকা খেসারত দিয় জমিদারী খরিদ করিল। এই টাকা যতদিন না শোধ হয়, ততদিন চক্রবৃদ্ধি হারে জমিদারকে সুদ দিতে হইবে। ইহাতে প্রায় ১২৫ কোটি টাকা মোট ক্ষতিপূরণ দিতে হইবে।

 জমিদারী ইতিহাস পর্যালোচনা করিলে দেখা যায় যে অনেক জমিদারীর নামমাত্র মূল্যে অথবা বিনা মূল্যে বৃটিশ শাসকের নিকট হইতে দেশদ্রোহিতার এনাম-স্বরূপ জমিদারী পাইয়াছিল। ইহারা হেষ্টিংসের আমল হইতে নাজিমুদ্দিনের আমল পর্যন্ত প্রজাদের নির্ম্মমভাবে শোষণ করিয়া নিজেরা ভোগ বিলাসের মত্ত থাকিত। ইহাদিগকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোন সঙ্গত কারণ থাকিতে পারে না, কিন্তু যেহেতু মুসলিম লীগ তাহার ঐতিহ্য ভুলিয়া জমিদার ও মহাজনের খবরদারী আরম্ভ করিয়াছে, সেহেতু পূর্ব্ব পাকিস্তানের জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ দ্বারা জমিদারদের ক্ষতিপূরণ দিতেছে। কাহারও সম্মত্তি বিনা খেসারতে জোর করিয়া ছিনাইয়া লওয়া ইসলাম বিরোধী, এইরূপ হাস্যকর যুক্তি তাহারা দিতেছেন।

পাট কেলেঙ্কারী

 দুনিয়ায় যত পাট উৎপন্ন হয়, তাহার শতকরা ৭৫ ভাগ পূর্ব্ব বাংলায় জন্মে। কিন্তু চাষীরা যেমন পাট উৎপাদন করিয়া তাহাদের ক্ষুধার অন্ন পায় না, তেমনি পাট ব্যবসায়ী যদি পূর্ব্ব পাকিস্তানী হয়, তাহারও অন্ন জোটা দায়। সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী ফজলুর রহমানের ষড়যন্ত্রে মাত্র ১৪টি কোম্পানী বিদেশে পাট চালান দেওয়ার অধিকার লাভ করিয়াছিল। তাহাদের মধ্যে মাত্র ১টি পূর্ব্ব পাকিস্তানী প্রতিষ্ঠান।

 চাষীদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হইয়াছে লীগ সরকারের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের ফলে। যখন পাট বাজারে উঠে, তখন সুকৌশলে বিদেশী ব্যবসায়ীরা পাট ক্রয় বন্ধ রাখে। ফলে যে এক মন পাট উৎপাদন করিতে চাষীর ১৯.০০ টাকা খরচ লাগে, সেই পাট তাজাকে ৩.০০ টাকা মন দরেও বিক্রয় করিতে হয়। অথচ যখনই সেই পাটচাষীর হাতছাড়া হইয়া ইস্পাহানী, আদমজী, রালী ব্রাদার্স প্রমুখ বড় বড় পুঁজিপতি ব্যবসায়ীদের হাতে গিয়া পড়ে তখনই পাটের দাম কমপক্ষে ৪০/৪৫ টাকা ওঠে। চাষীর এই অবস্থার সঙ্গে ইষ্ট-ইণ্ডিয়া কোম্পানীর আমলের নীল চাষীদের দুর্ভাগ্যের তুলনা করা যায়। নীলের ব্যবসায়ে বিদেশী বণিকেরা ধনকুবের হইত, আর দেশী চাষীরা শ্মশান-গোরস্তানের প্রতীক্ষা করিত। চাষীগণকে বাঁচাইবার ইচ্ছা যদি লীগ সরকারের থাকিত, তাহা হইলে পাট ব্যবসায় জাতীয়করণ করা হইত। কিন্তু কায়েমী স্বার্থের দালাল বলিয়া মুসলিম লীগ গণস্বার্থের খবরদারী করিতে পারে না। গণ দরদী দেশনায়কবৃন্দের যুক্তফ্রণ্টের নির্বাচনী ওয়াদার অন্যতম প্রধান ওয়াদা হইতেছে পাট ব্যবসায়কে জাতীয়করণের ওয়াদা।

করভার পীড়িত দরিদ্র চাষী

 পাটের চাষ করিয়া যে চাষী সর্ব্বস্বান্ত হইয়াছে, তাহার উপর যদি আরও করভার চাপাইয়া দেওয়া হয়, তাহা হইলে তাহার বাঁচিবার আশা কোথায়? চাষের ফসলে হইতে পয়সা পায় না, দুই চারিটি সুপারী গাছ আছে, সেই সুপারী বিক্রয় করিয়া হয়তো তাহার কয়েকদিন গুজরান হইতে পারে, কিন্তু তাহাও লীগ সরকারের সহ্য হইল না। সরকার চাষীর উপর সুপারী কর ধার্য্য করিলেন। এই কর তিন প্রকারে আদায় হইতেছে। প্রথমতঃ প্রতি সুপারীগাছে দু-আনা, প্রতি কুড়ি সুপারীর উপর ছয় পয়সা ও প্রতি মণে ১০ টাকা ২ আনা কর দিতে হয়।

 গরীবের উপায়ের আর একটি পথ তামাক বিক্রয়। কিন্তু তাহার উপরও ট্যাক্স ধার্য্য করা হইয়াছে। চাষী তার ক্ষেতে উৎপাদিত তামাকের উপর প্রতি সের ১২ আনা, প্রতি মণে ৩০ টাকা ১৪ আনা ট্যাক্স দিতেছে। ইহার উপর লাইসেন্সের ঝামেলা তো আছেই। বিনা লাইসেন্সে তামাক বিক্রয় করা যায় না অথচ লাইসেন্স লইতে গেলেও চাষীকে অর্থ ব্যয় করিতে হয়। ১৫০-৫১ সালের হিসাবে দেখা যায় যে ঐ বৎসরে রংপুরে প্রতি মণ তামাক ৪০ টাকা ৮ আনা হইতে ৪০ টাকা মন দরে বিক্রয় হইয়াছিল, কিন্তু চাষীরা পাইয়াছিল খরচা সমেত মাত্র ১০ টাকা ৮ আনা।

 পূর্ব্ব পাকিস্তানে নওগাঁ গাঁজা উৎপাদনের কেন্দ্র। এই গাঁজার পয়সায় চাষীরা সুখে কালাতিপাত করিতেছিল। কিন্তু মুসলিম লীগ সরকার গাঁজার প্রতিসেরে ৬৩। আনা ট্যাক্স বসাইয়া দেন। ইহার ফলে বিদেশে গাঁজা বিক্রয় বন্ধ হইয়াছে এবং চাষীরা অনাহারে মরিতেছে। সরকারেরও এই বাবদ কয়েক লক্ষ টাকা বার্ষিক লোকসান যাইতেছে। এইরূপে মুসলিম লীগ সরকারের ক্রমবর্ধমান খরচা পোষাইবার জন্য দেশবাসী একটির পর একটি নূতন করভোরে জর্জরিত হইতেছে।

বিচার বিক্রয়

 ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য লীগের চাঁইরা যখন চীৎকার করিতেছেন, তখন ইসলামী নিয়মে বিচারব্যবস্থা কায়েম না করিয়া বিচার বিক্রয় শুরু করিয়াছেন। ইসলামী হুকুমতে আসামী ও ফরিয়াদী কাজীর দরবারে হাজির হইলে বিনাব্যয়ে সুবিচার পাইত। কিন্তু আমাদের বর্ত্তমান সরকার কাজীর বিচার প্রবর্ত্তন তো দূরের কথা, কোর্ট ফীর হার শতকরা ৫০ টাকা হিসাবে বাড়াইয়া দিয়াছেন। ইহার ফলে গরীবের পক্ষে অত্যাচারিত হইয়াও বিচার পাওয়া আশা নাই।

মুখের ভাষা কাড়িয়া লওয়ার ষড়যন্ত্র

 সারা পাকিস্তানের শতকরা ৫৬ জন্য অধিবাসীর মুখের ভাষা বাংলা। মুসলিম লীগের জালেমরা এই ভাষাটুকুও কাড়িয়া লওয়ার ষড়যন্ত্র করিয়াছিল। গোপনে গোপনে তারা আরবী ও উর্দ্দু ভাষা চালাইবার জন্য চেষ্টা করিয়াছিল। আরবী ও উর্দ্দু ভাষার প্রতি পূর্ব্ব-পাকিস্তানীদের কোন বিদ্বেষ নাই এবং ছিল না। তথাপি কেন এই গোপন ষড়যন্ত্র? ইহার উদ্দেশ্য ছিল কেবলমাত্র উর্দ্দুকে রাষ্ট্রভাষা করা। পূর্ব্ব-পাকিস্তানের মুসলিম লীগ নেতারা এই ষড়যন্ত্রের সহিত জড়িত ছিল। তাই যখন পূর্ব্ব-পাকিস্তানের ছাত্ররা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষারূপে পাওয়ার দাবী জোরদার করিল, তখনই জালিম মুসলিম লীগের টনক নড়িল। লীগ-শাহীর পুলিশের গুলিতে ছাত্রদের বুকের রক্তে রাজপথ লালে লাল হইয়া গেল। শহীদ ছাত্র ও যুবকদের রক্তপান করিয়াও জালেমদের তৃপ্তি লাভ হইল না, তাহারা দেশভক্ত তরুণদের কম্যুনিষ্ট, রাষ্ট্রদ্রোহী প্রভৃতি আখ্যা দিয়া নিজেদের কলঙ্ক ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করিল।

 বর্ত্তমানে নির্ব্বাচনের সময় এই মুসলিম লীগ মন্ত্রীরা বাংলাদেশ রাষ্ট্রভাষা করা হইবে বলিয়া মিথ্যা সেত্মাক দিতেছে এবং জাগ্রত জনমতকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করিতেছে। কিন্তু জনগণ জানে যে, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার ইচ্ছা যদি নুরুল আমীন সরকারের থাকিত তাহা হইলে অনর্থক এতগুলি ছাত্র ও তরুণের রক্তপান করিয়া নুরুল আমীন তাহার রক্তপিপাসা মিটাইত না। আর তাছাড়া সদিচ্ছা তাহাদের থাকিলে তাহারা এতদিনে জাতির ইচ্ছা কার্যকরী করিতে পারিত, যেহেতু এতদিন তাহারাই পরিষদসমূহে নিরঙ্কুশ সংব্যক্তিত্বের সুবিধা ভোগ করিয়াছে।