বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড)/৯০
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
---|---|---|
আওয়ামী লীগ প্রচারিত মুসলিম লীগ বিরোধী বক্তব্য | পাকিস্তান অবজারভার | জুন, ১৯৫৫ |
সালতামামী
মুসলিম লীগের ৭ বৎসরের শাসনকালে খতিয়ান
- তথাকথিত নিরাপত্তা আইনে মওলানা ভাসানীসহ শত-সহস্র দেশদরদী, ছাত্র, যুবক ও কর্মীকে বিনা বিচারে কারাগারে নিক্ষেপ।
- নিজেদের দলীয় ব্যবসায়ীদের দ্বারা কৃত্রিম উপায়ে লবণ সঙ্কট সৃষ্টি করিয়া জনসাধারণকে ১৬ টাকা সের দরে লবণ ক্রয় করিতে বাধ্য করা।
- কেন্দ্রীয় শাসক গোষ্ঠীর নিকট আত্মসমর্পণ করিয়া পূর্ব্ব পাকিস্তানের জনগণের ন্যায় দাবী-দাওয়া বিকাইয়া দেওয়া।
- আরবী হরফে বাংলা ভাষা লিখিবার উদ্ভট পরিকল্পনা করা।
- পূর্ব্ব পাকিস্তানের প্রাণের দাবী বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবীকে নস্যাৎ করা।
- বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীদার জাগ্রত ছাত্র-জনতার উপর নৃশংস গুলি চালনা ও হত্যা।
- কৃত্রিম উপায়ে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করিয়া খুলনায় লক্ষ লক্ষ লোককে মৃত্যুর কবলে ঠেলিয়া দেওয়া।
- উর্ধ্বতন পার্ট ব্যবসায়ীদের সহিত ষড়যন্ত্র করিয়া পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র সম্পদ পাটকে নূন্যতম দরে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা।
- দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন।
- নিজেদের দলীয় লোকদের মধ্যে পারমিট, লাইসেন্স প্রভৃতি বিতরণ।
- ৭ বৎসর পর্যন্ত অসংখ্য উপ-নির্বাচন বন্ধ রাখা।
- পরাজিত হওয়ার ভয়ে ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় পুলিশী জুলুম চালাইয়া অসংখ্য দেশদরদী কর্মীদের হাজতবাসে বাধ্য করা।
- পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূর্ব্ব পাকিস্তানের সম্পদে সৃষ্ট ও পুষ্ট কলিকাতা নগরীকে বিনা বাধায় হিন্দুস্থানের নিকট ছাড়িয়া দিয়া রাতারাতি চলিয়া আসা।
- চাকুরী-বাকুরী, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প প্রভৃতি ক্ষেত্রে পূর্ব্ব পাকিস্তানের জনগণকে বঞ্চিত করিয়া কেন্দ্রীয় শাসক গোষ্ঠীর নিকট আত্মসমর্পণ।
যুক্তফ্রণ্টের ১৪ মাসের শাসনের খতিয়ান
- ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্ব্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয় লাভ করিবার পর পরাজিত ও পর্যুদস্ত মুসলিম লীগ যখন জনগণের বিজয়কে নস্যাৎ করিবার জন্য ৯২ (ক) ধরা জারী করিয়া ১৫শত দেশ কর্মীকে হাজতে পাঠাইয়াছিল, মওলানা ভাসানীর উপর নির্বাসন আদেশ জারী করিয়াছিল, দেশদরদী নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা রুজু করিয়াছিল, ষড়যন্ত্র করিয়া আদমজী মিলে দাঙ্গা বাধাইয়া শত শত গরীব চাকুরীজীবিকে হত্যা করিয়াছিল, সেই কুখ্যাত মুসলিম লীগের নিকট আত্মসমর্পণ করিয়া মন্ত্রীত্ব গ্রহণ।
- পূর্ব্ব বাংলার প্রাণের দাবী ২১ দফাকে ঘরোয়া বলিয়া উহাকে কার্যে পরিণত করিতে অস্বীকার করা।
- পূর্ব্ব পাকিস্তানের উপর দুই-দুইবার বন্যার প্লাবন হওয়া সত্ত্বেও উহা প্রতিরোধের কোন ব্যবস্থা না করা।
- পূর্ব্ব পাকিস্তানের প্রকৃত খাদ্য ঘাটতি অস্বীকার করিয়া আওয়ামী লীগের পুনঃ পুনঃ সতর্ক বাণীকে উপেক্ষা করিয়া দুর্ভিক্ষের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না করা।
- পরাজিত হওয়ার ভয়ে ১৪ মাস কাল পর্য্যন্ত বিভিন্ন উপ-নির্বাচন ঠেকাইয়া রাখা।
- দেড় বৎসর কাল পর্য্যন্ত সভা আহ্বান না করিয়া জনগণের নির্ব্বাচিত প্রতিনিধিদের একত্রে বসিয়া দেশের সমস্যাদি আলোচনা ও সমাধানের সুযোগ না দেওয়া।
- নিজেদের দলীয় লোকদের মধ্যে জনগণের জন্য সংগৃহীত ৩৩ লক্ষ মণ চাউল নামমাত্র মূল্যে বিতরণ করিয়া স্বজনপ্রীতির পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন।
- পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র রচনায় পূর্ব্ব পাকিস্তানের ন্যায্য স্বার্থ বিসর্জন দেওয়া।
- ২১ দফার খেলাফ করিয়া এক হাজার টাকার ঊর্ধ্বে মন্ত্রিগণের বেতন গ্রহণ করা।
- পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়ন খাতে ১২০০ কোটি টাকা দিয়া এবং পূর্ব্ব পাকিস্তানকে মাত্র ২শত কোটি টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করিয়া পূর্ব্ব পাকিস্তানকে বঞ্চিত করা।
- ২১ দফা ওয়াদাকে খেলাফ করিয়া শত শত দেশকর্ম্মকে বিনা বিচারে কারাগারে নিক্ষেপ করা।
- নিজেদের দলীয় কোনদের মধ্যে লাইসেন্স, পারমিট এবং অন্যান্য সর্ব্বরকম সুবিধা বিতরণ করিয়া দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি প্রদর্শন করা।
আওয়াম লীগ কোয়ালিশন সরকারের আড়াই মাস কাল শাসনের খতিয়ান
১। মন্ত্রীত্ব গ্রহণের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সকল রাজবন্দীদের মুক্তিদান ও নিরাপত্তা আইনে শাস্তিপ্রাপ্ত বা মোকদ্দমায় জড়িত সমস্ত রাজবন্দীদের খালাস দান।
২। শাসনভার গ্রহণের মাত্র ১১ দিনের মধ্যে আইন পরিষদের অধিবেশন আহ্বান, বাজেট পাস ও নিরাপত্তা আইন বাতিল।
৩। পাটের লাইসেন্স ফি উঠাইয়া দেওয়া।
৪। বকেয়া খাজনা সুদ সমেত মওকুফ।
৫। সার্টিফিকেট প্রথা উচ্ছেদ।
৬। কৃষিঋণ সুদসহ মওকুফ।
৭। প্রতি ইউনিয়নে লঙ্গরখানা খোলার আদেশ দেওয়া।
৮। লক্ষ লক্ষ মণ চাউল গরীব জনসাধারনের মধ্যে বিতরণ।
৯। গুরু, বাছুর ও কৃষির অন্যান্য সরঞ্জাম ক্রয় করিবার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা কৃষিঋণ মঞ্জুর।
১০। খালবিল খনন, রাস্তাঘাট প্রস্তুত, মেরামত ও জলাভূমির পানি নিষ্কাশনের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা টেষ্ট রিলিফ বাবদ মঞ্জুর।
১১। নির্ব্বাচনের সময় মন্ত্রীদের সফরকালে সরকারী অর্থ ব্যয় ও যানবাহন ব্যবহার না করিবার আদেশ।
১২। অল্প বেতনভোগী কর্ম্মচারী ও শিক্ষকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের আদেশ।
১৩। প্রদেশের সমস্ত মেডিকেল স্কুলগুলিকে উন্নীত করিয়া ৫টি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
১৪। কোর্ট ফি ও রেফ কাগজের দান কমান।
১৫। দুর্নীতি, ঘুষ প্রভৃতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন বিভাগের মারফত সংগ্রাম ঘোষণা।
১৬। ঘাটতি এলাকায় দ্রুত খাদ্য পাঠাইবার জন্য বিমানযোগে খাদ্য নিক্ষেপ।