বাংলা বানানের নিয়ম

একাধিক লেখক
বাংলা বানানের নিয়ম

বাংলা বানানের নিয়ম

[ তৃতীয় সংস্করণ ]

কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রকাশিত

১৯৩৭

মূল্য দুই আনা

PRINTED AND PUBLISHED BY BHUPENDRALAL BANERJEE

AT THE CALCUTTA UNIVERSITY PRESS, SENATE HOUSE, CALCUTTA.

Reg No. 511R.—June, 1937.—1000

ভূমিকা

 বাংলা ভাষায় প্রচলিত শব্দসমূহের মধ্যে যেগুলি সংস্কৃত ভাষা হইতে অপরিবর্তিত ভাবে আসিয়াছে তাহাদের বানান প্রায় সুনির্দিষ্ট। কিন্তু যে সকল শব্দ সংস্কৃত নহে, অর্থাৎ যেগুলি দেশজ বা অজ্ঞাতমূল, বিদেশাগত, অথবা সংস্কৃত বা বিদেশী শব্দের অপভ্রংশ, তাহাদের বানানে বহুস্থলে বিভিন্নতা দেখা যায়। ইহার ফলে লেখক, পাঠক, শিক্ষক ও ছাত্র—সকলকেই কিছু-কিছু অসুবিধা ভোগ করিতে হয়। বাংলা বানানের একটা বহুজনগ্রাহ্য নিয়ম দশ-বিশ বৎসরের মধ্যে যে আপনা হইতেই গড়িয়া উঠিবে এমন লক্ষণ দেখা যাইতেছে না। বাংলা ভাষার লেখকগণের মধ্যে যাঁহারা শীর্ষস্থানীয় তাঁহাদের সকলের বানানের রীতিও এক নহে। সুতরাং মহাজন-অনুসৃত পন্থা কোন্‌টি তাহা সাধারণের বুঝিবার উপায় নাই।

 কিছুকাল পূর্বে রবীন্দ্রনাথ চলিত বাংলা ভাষার বানানের রীতি নির্দিষ্ট করিয়া দিবার জন্য কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুরোধ করেন। গত নভেম্বর মাসে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বানানের নিয়ম-সংকলনের জন্য একটি সমিতি গঠিত করেন। সমিতিকে ভার দেওয়া হয়—যে সকল বানানের মধ্যে ঐক্য নাই সে সকল যথাসম্ভব নির্দিষ্ট করা এবং যদি বাধা না থাকে তবে কোন কোন স্থলে প্রচলিত বানান সংস্কার করা। প্রায় দুই শত বিশিষ্ট লেখক ও অধ্যাপকের অভিমত আলোচনা করিয়া সমিতি বানানের নিয়ম সংকলন করিয়াছেন। বলা বাহুল্য, যাঁহাদের অভিমত সংগৃহীত হইয়াছে তাঁহাদের মধ্যে যেরূপ কতকগুলি বিষয়ে মতভেদ আছে, সেইরূপ মতভেদ সমিতির সদস্যগণের মধ্যেও আছে। বিভিন্ন পক্ষের যুক্তি-বিচারের পর সদস্যগণের মধ্যে যতটা মতৈক্য ঘটিয়াছে তদনুসারেই বানানের প্রত্যেক বিধি রচিত হইয়াছে। ব্যবস্থার ফলে যে নিয়মাবলী সংকলিত হইয়াছে তাহা দেখিয়া হয়তো কেহ কেহ মনে করিবেন—বানানের যথেষ্ট সংস্কার হয় নাই, কেহ-বা ভাবিবেন—প্রচলিত রীতিতে অযথা হস্তক্ষেপ করা হইয়াছে। বানান-নির্ধারণের প্রথম চেষ্টায় এইরূপ মধ্যপন্থা অবলম্বন করা ভিন্ন অন্য উপায় নাই।

 সুখের বিষয়, বহু ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই চেষ্টায় আগ্রহ প্রকাশ করিয়াছেন। যদি সাধারণে সংকলিত নিয়মাবলী গ্রহণ করেন তবেই অনেক বাংলা শব্দের বিভিন্ন রূপ অপসৃত হইবে এবং তাহার ফলে বাংলা ভাষাশিক্ষার পথ কিছু সুগম হইবে। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রকাশিত ও অনুমোদিত পাঠ্যপুস্তকাদিতে ভবিষ্যতে এই নিয়মাবলী-সম্মত বানান গৃহীত হইবে। আবশ্যক হইলে ইহা সংশোধিত ও পরিবর্ধিত হইতে পারিবে।

কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
৮ মে ১৯৩৬

শ্রীশ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়

দ্বিতীয় সংস্করণের ভূমিকা

 এই পুস্তিকার প্রথম প্রচারের পর বিশিষ্ট লেখক ও অধ্যাপকগণের নিকট হইতে যে অভিমত পাওয়া গিয়াছে তাহা বিচার করিয়া বানান-সংস্কার-সমিতি কয়েকটি নিয়মের কিছু কিছু পরিবর্তন করিয়াছেন। এই সংস্করণে সংশোধিত নিয়মাবলী দেওয়া হইল।

কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
২ অক্টোবর ১৯৩৬

শ্রীশ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়

তৃতীয় সংস্করণের ভূমিকা

 এই পুস্তিকার দ্বিতীয় সংস্করণ মুদ্রণের পর আরও কয়েকটি অভিমত পাওয়া গিয়াছে। গত ফেব্রুয়ারী মাসে চন্দননগরে বঙ্গীয় সাহিত্য-সম্মিলনের অধিবেশনে বাংলা বানান-সম্বন্ধে আলোচনা হইয়াছে, এবং সম্প্রতি রবীন্দ্রনাথও কয়েকটি শব্দ সম্বন্ধে তাঁহার মত জানাইয়াছেন। এই সকল অভিমত বিচার করিয়া নিয়মাবলীর সংশোধন করা হইল।

 ছাত্রগণের নূতন বানানে অভ্যস্ত হইতে সময় লাগিবে। প্রথম প্রথম কয়েক বৎসর পুরাতন বানান লিখিলেও চলিবে।

কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
২০ মে ১৯৩৬

শ্রীশ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়

বাংলা বানানের নিয়ম

 গত নভেম্বর মাসে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বানানের নিয়ম-সংকলনের জন্য একটি সমিতি নিযুক্ত করেন। এই সমিতি বিশিষ্ট লেখক ও অধ্যাপকগণের নিকট একটি প্রশ্নপত্র পাঠাইয়া তাঁহাদের অভিমত সংগ্রহ করিয়াছেন। প্রায় দুই শত উত্তর পাওয়া গিয়াছে। কতকগুলি বিষয়ে প্রায় সকল উত্তরদাতাই একমত। কোন কোন স্থলে বহুপ্রচলিত বানান কিঞ্চিৎ বদলাইয়া সরল করিতে কাহারও আপত্তি নাই। আবার কতকগুলি বিষয়ে প্রবল মতভেদ দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নিযুক্ত সমিতি সমস্ত অভিমত বিচার করিয়া বাংলা বানানের যে নিয়ম গ্রহণযোগ্য মনে করিয়াছেন তাহা নিম্নে বর্ণিত হইল।

 বানান যথাসম্ভব সরল ও উচ্চারণসূচক হওয়া বাঞ্ছনীয়, কিন্তু উচ্চারণ বুঝাইবার জন্য অক্ষর বা চিহ্নের বাহুল্য এবং প্রচলিত রীতির অত্যধিক পরিবর্তন উচিত নয়। অতিরিক্ত অক্ষর বা চিহ্ন চালাইলে লাভ যত হইবে তাহার অপেক্ষা লেখক, পাঠক ও মুদ্রাকরের অসুবিধা অধিক হইবে। ভাষাতত্ত্ব-বিষয়ক গ্রন্থে বা শব্দকোষে উচ্চারণ-নির্দেশের জন্য বহু চিহ্নের প্রয়োগ অপরিহার্য, কিন্তু সাধারণ লেখায় তাহা ভারস্বরূপ। প্রচলিত শব্দের উচ্চারণ লোকে অর্থ হইতেই বুঝিয়া লয়। আমাদের ভাষার বহু শব্দের বানানে ও উচ্চারণে মিল নাই, যথা—‘গণ, বন, ঘন; জলখাবার, জলযোগ; আষাঢ়, গাঢ়; সহিত, গণিত; অশ্বতর, হ্রস্বতর; একদা, একটা; অচেনা, অদেখা’। এই প্রকার শব্দের বানান-সংস্কার করিতে কেহই চান না, প্রদেশভেদে উচ্চারণের কিঞ্চিৎ ভেদ হইলেও ক্ষতি হয় না। সুপ্রচলিত শব্দের বানান-সংস্কার যদি করিতে হয় তবে, বানানের জটিলতা না বাড়াইয়া সরলতা-সম্পাদনের চেষ্টাই কর্তব্য।

 নবাগত বা অল্পপরিচিত বিদেশী শব্দ-সম্বন্ধে বিশেষ বিচার আবশ্যক। এই প্রকার শব্দের বাংলা বানান এখনও সর্বজনগৃহীত-রূপে নির্ধারিত হয় নাই, অতএব সাধারণের যথেচ্ছতার উপর নির্ভর না করিয়া বানানের সরল নিয়ম গঠন করা কর্তব্য।

 অসংখ্য সংস্কৃত বা তৎসম শব্দ বাংলা ভাষার অঙ্গীভূত হইয়া আছে এবং প্রয়োজনমত এইরূপ আরও শব্দ গৃহীত হইতে পারে। এই সকল শব্দের বানান সংস্কৃত ব্যাকরণ অভিধানাদির শাসনে সুনির্দিষ্ট হইয়াছে, সেজন্য তাহাতে হস্তক্ষেপ অবিধেয়।

 সমস্ত বাংলা শব্দের বানান এককালে নিয়ন্ত্রিত করা সম্ভবপর নয়। নিয়ন্ত্রণ ক্রমে ক্রমে হওয়াই বাঞ্ছনীয়। এই প্রবন্ধে বানানের কয়েকটি মাত্র নিয়ম দেওয়া হইয়াছে। নিয়মগুলি সাধারণভাবে প্রযোজ্য, কিন্তু শব্দবিশেষে ব্যতিক্রম হইবে। কেবল নিয়ম রচনা দ্বারা সমস্ত বাংলা শব্দের বানান নির্দেশ অসম্ভব। নির্ধারিত বানান অনুসারে একটি শব্দতালিকা কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হইতে প্রকাশের ব্যবস্থা হইতেছে।

 বলা বাহুল্য, পদ্যরচনায় সকল ক্ষেত্রে নিয়ম অনুসারে বানান করা সম্ভবপর নয়।

 বানানের নিয়ম যাহাতে বর্তমান বাংলা ভাষার প্রকৃতির অনুকূল হয় সেই চেষ্টা করা হইয়াছে। বিশিষ্ট লেখকগণ অধিকাংশ শব্দ যে রীতিতে বানান করেন তদনুসারে ই ঈ উ ঊ জ ও-কার ং শ ষ স প্রভৃতি প্রয়োগের সাধারণ নিয়ম গঠিত হইয়াছে। কতকগুলি শব্দের প্রচলিত বানানে ব্যতিক্রম দেখা যায়। সামঞ্জস্যের জন্য এইগুলিকেও যথাসম্ভব সাধারণ নিয়মের অনুযায়ী করা হইয়াছে। পূর্বে কেবল ‘খুসী, সয়তান, সহর, পালিস, ক্লাশ’ প্রভৃতি বানান দেখা যাইত, কিন্তু আজকাল অনেকে মূল শব্দ-সম্বন্ধে অবহিত হইয়া ‘খুশী, শয়তান, শহর, পালিশ, ক্লাস’ লিখিতেছেন। এই রীতিতে সহজেই ‘নক্‌শা, শরবৎ, শরম, শেমিজ, জিনিস, সাশি’ প্রভৃতি নিয়মানুযায়ী বানান প্রচলিত হইতে পারিবে। অবশ্য, কতকগুলি শব্দে ব্যতিক্রম না করিলে চলিবে না, কিন্তু ব্যতিক্রম যত কম হয় ততই ভাল। বিকল্প বাঞ্ছনীয় নয়, তথাপি যেখানে দুই প্রকার বানানের পক্ষেই প্রবল অভিমত পাওয়া গিয়াছে সেখানে বিকল্পের বিধান করিতে হইয়াছে। পূর্বে ‘সঙ্ক্রান্তি, সঙ্খ্যা’ প্রভৃতি বানান দেখা যাইত, কিন্তু এখন কেবল ‘সংক্রান্তি, সংখ্যা’ চলিতেছে। এই রীতিতে ‘ভয়ঙ্কর, সঙ্গম’ প্রভৃতি স্থানে ‘ভয়ংকর, সংগম’ লিখিলে বানান সহজ হইবে। কালক্রমে সরলতর বানানই চলিবে এই আশায় এই প্রকার শব্দে বিকল্পের বিধান দেওয়া হইয়াছে। এই প্রকার শব্দের সংখ্যা অধিক নয়, সেজন্য যদি কিছু কাল দুই প্রকার বানানই চলে (যেমন এখন ‘অহঙ্কার, অহংকার’ চলিতেছে) তবে ক্ষতি হইবে না।

 নিয়মাবলীর পূর্বসংস্করণে সংস্কৃত বা তদ্‌ভব শব্দে অন্ত্য বিসর্গ ও হস্-চিহ্ন প্রয়োগের নিয়ম দেওয়া হইয়াছিল, কিন্তু বর্তমান সংস্করণে তাহা বর্জিত হইয়াছে। বাংলায় বহু শব্দে অন্ত্য বিসর্গ ও হস্-চিহ্ন লোপ পাইয়াছে, যথা—‘যশ, বিপদ’; আরও কতকগুলি শব্দে লোপের উপক্রম দেখা যাইতেছে, যথা— ‘শ্রেয়, সদ্য, ভগবান, সম্রাট’। এজন্য অনেকে মনে করেন যে এ সম্বন্ধে ধরাবাঁধা নিয়ম রচনার সময় এখনও আসে নাই।

 রেফের পর দ্বিত্ববর্জন এবং অ-সংস্কৃত শব্দে ণ বর্জন এই দুই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে আপত্তি হইয়াছে। এই দুই বিষয়ের আলোচনা কিঞ্চিৎ সবিস্তারে করা হইল।—

 বাংলার কয়েকটি বর্ণে রেফের পর দ্বিত্ব প্রচলিত আছে, সকল বর্ণে নাই, যথা—‘কর্ম্ম, সর্ব্ব’, কিন্তু ‘কর্ণ, সর্গ’। হিন্দী মারাঠী প্রভৃতি ভাষায় দ্বিত্ব হয় না। এই অনাবশ্যক দ্বিত্ব বর্জন করিলে বাংলায় প্রচলিত অসংখ্য শব্দের বানান অপেক্ষাকৃত সরল হইবে। যে দুই শত বিশিষ্ট লেখক ও অধ্যাপক বানান-বিষয়ক প্রশ্নপত্রের উত্তর দিয়াছেন তাঁহাদের দুই জন ব্যতীত সকলেই দ্বিত্ববর্জনের পক্ষে। কয়েকজন প্রবীণ লেখক বহুকাল হইতে তাঁহাদের লেখায় দ্বিত্ব পরিহার করিয়াছেন। আজকাল বঙ্গদেশে প্রকাশিত অনেক সংস্কৃত পুস্তকে দ্বিত্ব বর্জিত হইয়াছে।

 কেহ কেহ বলেন, বাংলা উচ্চারণে রেফাক্রান্ত বর্ণে অতিরিক্ত জোর পড়ে, সেজন্য দ্বিত্ব আবশ্যক; ‘সর্ব্ব’—‘সর্ + ব’ নয়, ‘সর্ + ব্ব’। এই যুক্তি নিতান্ত অসার, কারণ অন্যান্য যুক্তাক্ষরে যে জোর পড়ে, রেফাক্রান্ত বর্ণে তাহার অধিক পড়ে না। ‘ভক্তি’ ও ‘ভর্ত্তি’র উচ্চারণে জোরের তারতম্য নাই; অনুরূপ—‘স্বপ্ন, সর্ব্ব; কল্মষ, কর্ম্মঠ, উদ্বোধ, দুর্ব্বোধ; পল্‌তা, পর্দা’। ‘সর্গ, সর্প, সর্ব্ব’ শব্দে দ্বিত্ব থাকায় না-থাকায় জোরের ইতরবিশেষ হয় না; অনুরূপ—‘অর্থ, অর্দ্ধ; কর্পূর, কর্ব্বূর; গর্ভ, গর্ব্ব, নির্ঝর, নির্জ্জর’। অতএব ‘সর্ব, পর্দা, অর্ধ, গর্ব’ প্রভৃতি লিখিলে কিছুমাত্র ক্ষতি হইবে না। আর এক আপত্তি—অনেকে ‘কার্য্য’ শব্দের উচ্চারণ ‘কাইর্জ’ তুল্য করিয়া থাকেন; ‘কার্য’ লিখিলে ‘কার্জ’ উচ্চারণের আশঙ্কা আছে। ‘কাইর্জ’ বা ‘কার্জ’ কোন্ উচ্চারণ ভাল তাহার বিচার অনাবশ্যক। যাঁহারা ‘কাইর্জ’ উচ্চারণ করিয়া থাকেন য-ফলা বাদ দিয়া ‘কার্য’ লিখিলেও তাঁহারা অভীষ্ট উচ্চারণ করিতে পারিবেন। ‘কাল’ (সময়) এবং ‘কাল’ (কল্য) এই দুই শব্দের উচ্চারণ কলিকাতা অঞ্চলে সমান, কিন্তু বাংলা দেশের বহুস্থলে ‘কাল’ (কল্য) শব্দের উচ্চারণ ‘কাইল’ তুল্য। যাঁহারা শেষোক্ত উচ্চারণ করেন তাঁহাদের য-ফলা বা অন্য চিহ্নের প্রয়োজন হয় না, শব্দটি চিনিয়াই তাঁহারা অনায়াসে অভ্যস্ত উচ্চারণ করেন। অতএব, ‘কার্য’ লিখিলে অভীষ্ট উচ্চারণ আসিবে না, এই আশঙ্কা অমূলক। কেহ কেহ বলেন, যখন রেফের পর দ্বিত্ব করা বা না করা উভয়ই ব্যাকরণ সম্মত তখন বিকল্পের ব্যবস্থা রাখাই ভাল। অনেক সংস্কৃত শব্দের দুই প্রকার বানান অভিধানে আছে, যথা—‘ধরণী, ধরণি, মহী, মহি; ঊর্ণা, উর্ণা’। কিন্তু বাংলা প্রয়োগে এক প্রকার বানানই দেখা যায়, অন্যটি প্রায় অচল হইয়া আছে। রেফাক্রান্ত বর্ণের দ্বিত্ব বিকল্পে বিহিত হইলে অভ্যস্ত বানানই রহিয়া যাইবে এবং নিয়মরচনা নিষ্ফল হইবে। পক্ষান্তরে কেবল বর্জনের বিধি থাকিলে অসংখ্য শব্দের বানানে সরলতা আসিবে।

 তদ্‌ভব শব্দে অনেকে মূল অনুসারে ণ প্রয়োগ করেন, যথা— ‘কাণ, সোণা’। কিন্তু সকল শব্দে এই রীতি অনুসৃত হয় না, যথা— ‘বামুন, গিন্নী’। বাংলা ক্রিয়াপদেও ণত্ব হয় না, যথা— ‘শোনা, করেন, করুন’। বহু বিশিষ্ট লেখক ‘কান, সোনা’ প্রভৃতি লিখিয়া থাকেন এবং এই রীতি ক্রমে ক্রমে বিশেষ প্রচলিত হইতেছে। ‘কোরাণ, গভর্ণর’ প্রভৃতিতে ণত্ব করিবার কোনও হেতু নাই। যাঁহারা বানান-বিষয়ক প্রশ্নপত্রের উত্তর দিয়াছেন তাঁহাদের অধিকাংশ ণ বর্জনের পক্ষে। অ-সংস্কৃত শব্দে ণ বর্জন করিলে বানান সরল হইবে। ‘রাণী’ বানান অনেকেই রাখিতে চান, এজন্য এই শব্দে বিকল্প বিহিত হইয়াছে।

 অভ্যন্ত রীতির পরিবর্তনে অল্পাধিক অসুবিধা হইতে পারে, কিন্তু কেবল সেই কারণে নিশ্চেষ্ট থাকিলে কোনও বিষয়েরই সংস্কার সাধ্য হইবে না। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রকাশিত পুস্তকাদিতে নিয়মাবলী-সম্মত বানান গৃহীত হইলে ক্রমে ক্রমে তাহা সুপ্রচলিত হইবে। কিন্তু সাধারণের অভ্যস্ত হইতে সময় লাগিবে এবং ছাত্রগণও প্রথম প্রথম নিয়ম লঙ্ঘন করিবে। সেজন্য এখন কয়েক বৎসর বানানের নিয়ম-পালন-সম্বন্ধে কোনও প্রকার পীড়ন বাঞ্ছনীয় নয়।

সংস্কৃত বা তৎসম শব্দ

১। রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব

 রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হইবে না, যথা—‘অর্চনা, মূর্ছা, অর্জুন, কর্তা, কার্তিক, বার্তা, কর্দম, অর্ধ, বার্ধক্য, কর্ম, কার্য, সর্ব’।

 সংস্কৃত ব্যাকরণ-অনুসারে রেফের পর দ্বিত্ব বিকল্পে সিদ্ধ; না করিলে দোষ হয় না, বরং লেখা ও ছাপা সহজ হয়।

২। সন্ধিতে ঙ্‌ স্থানে অনুস্বার

 যদি ক খ গ ঘ পরে থাকে তবে পদের অন্তস্থিত ম্ স্থানে অনুস্বার অথবা বিকল্পে বিধেয়, যথা—‘অহংকার, ভয়ংকর, শুভংকর, সংখ্যা, সংগম, হৃদয়ংগম, সংঘটন’ অথবা ‘অহঙ্কার, ভয়ঙ্কর’ ইত্যাদি।

 সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম-অনুসারে বর্গীয় বর্ণ পরে থাকিলে পদের অন্তস্থিত ম্ স্থানে অনুস্বার বা পরবর্তী বর্গের পঞ্চম বর্ণ হয়, যথা— ‘সংজাত, স্বয়ংভূ’ অথবা ‘সঞ্জাত, স্বয়ম্ভূ’। বাংলায় সর্বত্র এই নিয়ম-অনুসারে ং দিলে উচ্চারণে বাধিতে পারে, কিন্তু ক-বর্গের পূর্বে অনুস্বার ব্যবহার করিলে বাধিবে না, বরং বানান সহজ হইবে।

অ-সংস্কৃত অর্থাৎ তদ্‌ভব, দেশজ ও বিদেশী শব্দ

৩। রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব

 রেফের পর ব্যঞ্জনবর্গের দ্বিত্ব হইবে না, যথা—‘কর্জ, শর্ত, পর্দা, সর্দার, চরি, ফর্মা, জার্মানি’।

৪। হস্‌-চিহ্ন

 শব্দের শেষে সাধারণতঃ হস্-চিহ্ন দেওয়া হইবে না, যথা—‘ওস্তাদ, কংগ্রেস, চেক, জঙ্গ, টন, টি-পট, ট্রাম, ডিশ, তছনছ, পকেট, মক্তব, হক, করিলেন, করিস’। কিন্তু যদি ভুল উচ্চারণের সম্ভাবনা থাকে তবে হস্-চিহ্ন বিধেয়। হ ও যুক্ত ব্যঞ্জনের উচ্চারণ সাধারণতঃ স্বরাস্ত, যথা—‘দহ, অহরহ, কাণ্ড, গল্প’। যদি হসন্ত উচ্চারণ অভীষ্ট হয় তবে হ ও যুক্ত ব্যঞ্জনের পর হস্‌-চিহ্ন আবশ্যক, যথা— শাহ্, তখ্‌ত্, জেম্‌স্, বণ্ড্‌’। কিন্তু সুপ্রচলিত শব্দে না দিলে চলিবে, যথা—‘আর্ট, কর্ক, গভর্নমেণ্ট, স্পঞ্জ’। মধ্য বর্ণে প্রয়োজন হইলে হস্-চিহ্ন বিধেয়, যথা—‘উল্‌কি, সট্‌কা’। যদি উপান্ত্য স্বর অত্যন্ত হ্রস্ব হয় তবে শেষে হস্-চিহ্ন বিধেয়, যথা—‘কট্‌কট্‌, খপ্, সার্‌’।

 বাংলার কতকগুলি শব্দের শেষে অ-কার উচ্চারিত হয়, যথা—‘গলিত, ঘন, দৃঢ়, প্রিয়, করিয়াছ, করিত, ছিল, এস’। কিন্তু অধিকাংশ শব্দের শেষের অ-কার গ্রস্ত অর্থাৎ শেষ অক্ষর হসন্তবৎ, যথা—‘অচল, গভীর, পাঠ, করুক, করিস, করিলেন’। এই প্রকার সুপরিচিত শব্দের শেষে অ-ধ্বনি হইবে কি হইবে না তাহা বুঝাইবার জন্য কেহই চিহ্ন প্রয়োগ করেন না। অধিকাংশ স্থলে অ-সংস্কৃত শব্দে অন্ত্য হস্-চিহ্ন অনাবশ্যক, বাংলাভাষার প্রকৃতি অনুসারেই হসন্ত-উচ্চারণ হইবে। অল্প কয়েকটি বিদেশী শব্দের শেষে অ উচ্চারণ হয়, যথা—‘বাই-ল’। কিন্তু প্রভেদ রক্ষার জন্য অপর বহু বহু শব্দে হস্‌-চিহ্নের ভার চাপান অনাবশ্যক। কেবল ভুল উচ্চারণের সম্ভাবনা থাকিলে হস্ চিহ্ন বিধেয়।

৫। ই ঈ উ উ

 যদি মূল সংস্কৃত শব্দে ঈ বা ঊ থাকে তবে তদ্‌ভব বা তৎসদৃশ শব্দে ঈ বা উ অথবা বিকল্পে ই বা উ হইবে, যথা—‘কুমীর, পাখী, বাড়ী, শীষ, ঊনিশ, চূন, পূব’ অথবা ‘কুমির, পাখি, বাড়ি, শিষ, উনিশ, চুন, পুব’। কিন্তু কতকগুলি শব্দে কেবল ঈ, কেবল ই অথবা কেবল উ হইবে, যথা ‘নীলা (নীলক), হীরা (হীরক); দিয়াশলাই (দীপশলাকা), খিল (কীল), পানি (পানীয়); চুল (চূল), তাড়্‌ (তর্দু), জুয়া (দ্যূত)’

 স্ত্রীলিঙ্গ এবং জাতি, ব্যক্তি, ভাষা ও বিশেষণ বাচক শব্দের অস্তে ঈ হইবে, যথা—‘কলুনী, বাঘিনী, কাবুলী, কেরানী, ঢাকী, ফরিয়াদী, ইংরেজী, বিলাতী, দাগী, রেশমী’। কিন্তু কতকগুলি শব্দে ই হইবে, যথা—‘ঝি, দিদি, বিবি; কচি, মিহি, মাঝারি, চল্‌তি’। ‘পিসী, মাসী’ স্থানে বিকল্পে ‘পিসি, মাসি’ লেখা চলিবে।

 অন্যত্র মনুষ্যেতর জীব, বস্তু, গুণ, ভাব ও কর্ম বাচক শব্দের এবং দ্বিরাবৃত্ত শব্দের অন্তে কেবল ই হইবে, যথা—‘বেঙাচি, বেজি, কাঠি, সুজি, কেরামতি, চুরি, পাগলামি, বাবুগিরি, তাড়াতাড়ি, সরাসরি, সোজাসুজি’।

 নবাগত বিদেশী শব্দে ঈ উ প্রয়োগ-সম্বন্ধে পরে দ্রষ্টব্য।

জ য

 এই সকল শব্দে য না লিখিয়া জ লেখা বিষেয়—‘কাজ, জাউ, জাঁতা, জাঁতি, জুঁই, জুত, জো, জোড়, জোড়া, জোত, জোয়াল’।

ণ ন

 অ-সংস্কৃত শব্দে কেবল ন হইবে, যথা—‘কান, সোনা, বামুন, কোরান, করোনার’। কিন্তু যুক্তাক্ষর ণ্ট, ণ্ঠ, ণ্ড, ণ্ঢ চলিবে, যথা— ‘ঘুণ্টি, লণ্ঠন, ঠাণ্ডা’।

 ‘রানী’ স্থানে বিকল্পে ‘রাণী’ চলিতে পারিবে।

৮। ও-কার ও ঊর্ধ্ব কমা প্রভৃতি

 সুপ্রচলিত শব্দের উচ্চারণ, উৎপত্তি বা অর্থের ভেদ বুঝাইবার জন্য অতিরিক্ত ও-কার, ঊর্ধ্ব কমা বা অন্য চিহ্ন যোগ যথাসম্ভব বর্জনীয়। যদি অর্থগ্রহণে বাধা হয় তবে কয়েকটি শব্দে অন্ত্য অক্ষরে ও-কার এবং আদ্য বা মধ্য অক্ষরে ঊর্ধ্ব কমা বিকল্পে দেওয়া যাইতে পারে, যথা—‘কাল, কালো; ভাল, ভালো; মত, মতো, পড়ো, প’ড়ো (পড়ুয়া বা পতিত)’।

 এই সকল বানান বিধেয়- ‘এত, কত, যত, তত; তো, হয়তো; কাল (সময়, কলা), চাল (চাউল, ছাত, গতি), ডাল (দাইল, শাখা)।

৯। ং ঙ

 ‘বাঙ্গলা, বাঙ্গালা, বাঙ্গালী, ভাঙ্গন’ প্রভৃতি এবং ‘বাংলা, বাঙলা, বাঙালী, ভাঙন’ প্রভৃতি উভয়প্রকার বানানই চলিবে। হসন্ত ধ্বনি হইলে বিকল্পে ং বা ঙ বিধেয়, যথা—‘রং, রঙ; সং, সঙ: বাংলা, বাঙলা’। স্বরাশ্রিত হইলে ঙ বিধেয়, যথা- ‘রঙের, বাঙালী, ভাঙন’।

ং ও ঙ-র প্রাচীন উচ্চারণ যাহাই হউক, আধুনিক বাংলা উচ্চারণ সমান, সেজন্য অনুস্বার স্থানে বিকল্পে ঙ লিখিলে আপত্তির কারণ নাই। ‘রং-এর’ অপেক্ষা ‘রঙের লেখা সহজ। ‘রঙ্গের লিখিলে অভীষ্ট উচ্চারণ আসিবে না, কারণ ‘রঙ্গ’ ও ‘রং'-এর উচ্চারণ সমান নয়, কিন্তু ‘রং’ ও ‘রঙ’ সমান।

১০। শ ষ স

 মূল সংস্কৃত শব্দ-অনুসারে তদ্ভব শব্দে শ, ষ বা স হইবে, যথা— ‘আঁশ (অংশ্য), আঁষ (আমিষ), শাঁস (শস্য), মশা (মশক), পিসী (পিতৃঃস্বসা)। কিন্তু কতকগুলি শব্দে ব্যতিক্রম হইবে, যথা— ‘মিন্‌সে’ (মনুষ্য), ‘সাধ’ (শ্রদ্ধা)।

 বিদেশী শব্দে মূল উচ্চারণ-অনুসারে s স্থানে স, sh স্থানে শ হইবে, যথা— ‘আসল, ক্লাস, খাস, জিনিস, পুলিস, পেনসিল, মসলা, মাসুল, সবুজ, সাদা, সিমেণ্ট, খুশি, চশমা, তক্তাপোশ, পশম, পোশাক, পালিশ, পেনশন, শখ, শৌখিন, শয়তান, শরবৎ, শরম, শহর, শার্ট, শেক্‌স্পিয়র। কিন্তু কতকগুলি শব্দে ব্যতিক্রম হইবে, যথা— ইস্তাহার ((ইশ্‌তিহার), গোমস্তা (গুমাশতাহ্‌), ভিস্তি (বিহিশ্‌তী), খ্রীষ্ট (Christ)’।

 শ ষ স এই তিন বর্ণের একটি বা দুইটি বর্জন করিলে বাংলা উচ্চারণে বাধা হয় না, বরং বানান সরল হয়। কিন্তু অধিকাংশ তদ্‌ভব শব্দে মূল-অনুসারে শ ষ স প্রয়োগ বহুপ্রচলিত, এবং একই শব্দের বিভিন্ন বানান প্রায় দেখা যায় না। এই রীতির সহসা পরিবর্তন বাঞ্ছনীয় নয়। বহু বিদেশী শব্দের প্রচলিত বাংলা বানানে মূল-অনুসারে শ বা স লেখা হয়, কিন্তু কতকগুলি শব্দে ব্যতিক্রম বা বিভিন্ন বানান দেখা যায়, যথা—‘সরবৎ, সরম; শহর, সহর; শয়তান, সয়তান; পুলিস, পুলিশ’। সামঞ্জস্যের জন্য যথাসম্ভব একই নিয়ম গ্রহণীয়।

 বিদেশী শব্দের s-ধ্বনির জন্য বাংলায় ছ অক্ষর বর্জনীয়। কিন্তু যেখানে প্রচলিত বাংলা বানানে ছ আছে এবং উচ্চারণেও ছ হয়, সেখানে প্রচলিত বানানই বজায় থাকিবে, যথা— ‘কেচ্ছা, ছয়লাপ, তছনছ, পছন্দ’।

 দেশজ বা অজ্ঞাতমূল শব্দের প্রচলিত বানান হইবে, যথা—‘করিস, ফরসা, (ফরশা), সরেস (সরেশ), উসখুস (উশখুশ)’।

১১। ক্রিয়াপদ

 সাধু ও চলিত প্রয়োগে দম্ভ রূপে ‘করান, পাঠান’ প্রভৃতি অথবা বিকল্পে ‘করানো, পাঠানো’ প্রভৃতি বিধেয়।

 চলিত ভাষার ক্রিয়াপদের বিহিত বানানের কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হইল। বিকল্পে ঊর্ধ্বকমা বর্জন করা যাইতে পারে, এবং -লাম বিভক্তি স্থানে -লুম বা -লেম লেখা যাইতে পারে।

হ-ধাতু

 হয়, হন, হও, হ’স, হই। হচ্ছে। হয়েছে। হ’ক, হ’ন, হও, হ। হ’ল, হ’লাম। হ’ত। হচ্ছিল। হয়েছিল। হব (হবো), হবে। হ’য়ো, হ’স। হ’তে হ’য়ে, হলে, হবার, হওয়া।

খা-ধাতু

 খায়, খান, খাও, খাস, খাই। খাচ্ছে। খেয়েছে। খাক, খান, খাও, খা। খেলে, খেলাম। খেত। খাচ্ছিল। খেয়েছিল। খাব (খাবো), খাবে। খেয়ো, খাস। খেতে, খেয়ে, খেলে, খাবার, খাওয়া।

দি-খাতু

 দেয়, দেন, দাও, দিস, দিই। দিচ্ছে। দিয়েছে। দিক, দিন, দাও, দে। দিলে, দিলাম। দিত। দিচ্ছিল। দিয়েছিল। দেব (দেবো), দেবে। দিও, দিস। দিতে, দিয়ে, দিলে, দেবার, দেওয়া।

শু-ধাতু

 শোয়, শোন, শোও, শুস, শুই। শুচ্ছে। শুয়েছে। শুক, শুন, শোও, শো। শুল, শুলাম। শুত। শুচ্ছিল। শুয়েছিল। শোব (শোবো), শোবে। শুয়ো, শুস। শুতে, শুয়ে, শুলে, শোবার, শোয়া।

কর্‌-ধাতু

 করে, করেন, কর, করিস, করি। করছে। করেছে। করুক, করুন, কর, কর্‌। ক’রলে, ক’রলাম। করত। করছিল। করেছিল। করব (ক’রবো), ক’রবে। করো, করিস। ক’রতে, ক’রে, ক’রলে, করবার, করা।

কাট্-ধাতু

 কাটে, কাটেন, কাট, কাটিস, কাটি। কাটছে। কেটেছে। কাটুক, কাটুন, কাট, কাট্‌। কাটলে, কাটলাম। কাটত। কাটছিল। কেটেছিল। কাটব (কাটবো), কাটবে। কেটো, কাটিস। কাটতে, কেটে, কাটলে, কাটবার, কাটা।

লিখ্‌-খাতু

 লেখে, লেখেন, লেখ, লিখিস, লিখি। লিখছে। লিখেছে। লিখুক, লিখুন, লেখ, লেখ্‌। লিখলে, লিখলাম। লিখত। লিখছিল। লিখেছিল। লিখব (লিখবো), লিখবে। লিখো, লিখিস। লিখতে, লিখে, লিখলে, লেখবার, লেখা।

উঠ্‌-ধাতু

 ওঠে, ওঠেন, ওঠ, উঠিস, উঠি। উঠছে। উঠেছে। উঠুক, উঠুন, ওঠ, ওঠ্‌। উঠল, উঠলাম। উঠত। উঠছিল। উঠেছিল। উঠব (উঠবো), উঠবে। উঠো, উঠিস। উঠতে, উঠে, উঠলে, ওঠবার, ওঠা।

করা-ধাতু

 করায়, করান, করাও, করসি, করাই। করাচ্ছে। করিয়েছে। করাক, করান, করাও, করা। করালে, করালাম। করাত। করাচ্ছিল। করিয়েছিল। করাব (করাবো), করাবে। করিও, করাস। করাতে, করিয়ে, করালে, করাবার, করান (করানো)।

এই লেখাটি বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত কারণ এটির উৎসস্থল ভারত এবং ভারতীয় কপিরাইট আইন, ১৯৫৭ অনুসারে এর কপিরাইট মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। লেখকের মৃত্যুর ৬০ বছর পর (স্বনামে ও জীবদ্দশায় প্রকাশিত) বা প্রথম প্রকাশের ৬০ বছর পর (বেনামে বা ছদ্মনামে এবং মরণোত্তর প্রকাশিত) পঞ্জিকাবর্ষের সূচনা থেকে তাঁর সকল রচনার কপিরাইটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। অর্থাৎ ২০২৪ সালে, ১ জানুয়ারি ১৯৬৪ সালের পূর্বে প্রকাশিত (বা পূর্বে মৃত লেখকের) সকল রচনা পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত হবে।