বিদায়-আরতি/কোনো ধর্ম্মধ্বজের প্রতি

কোনো ধর্ম্মধ্বজের প্রতি

প্রেমের ধর্ম্ম করছ প্রচার কে গো তুমি সবুট লাথি নিয়ে,—
ডায়ার-মার্কা শিষ্টাচারের লাল-পেয়ালার শেষ তলানি পিয়ে!
কুশলে তো চল্‌ছে তোমার অর্দ্ধঘণ্টা ধর্ম্মোপদেশ দেওয়া,—
টিফিন্‌ এবং টি-এর ফাঁকে? জম্‌ছে ভালো খৃষ্ট-কথার খেয়া?
মুখোস খোলো, মুখস্থ বোল, বোলো না আর টিয়াপাখীর মত
মোট মাসহারার মোহে,— দোরোখা ঢং চালাবে আর কত?
বয়স গত; ক্ষ্যাপার মত কামড় দিতে এলে নকল দাঁতে?
বাঁধানে দাঁত উল্টে গিয়ে, আহা, শেষে লাগবে যে টাক্‌রাতে।
নিরীহ যে সত্যাগ্রহী—কি লাভ হ’ল তারে লাথি মেরে?
সে করেছে তোমায় ক্ষমা; তার চোখে আজ নাও দেখে খৃষ্টেরে।

 *   *   *

“অক্রোধে ক্রোধ জিন্‌তে হবে,”—সে শিক্ষা কি রইল শিকেয় তোলা,
ডিগ্রি নিয়েই ফুরিয়ে গেছে ডাগর-বৃলির যা কিছু বোল্‌বোলা?
উদর তন্ত্র উদারতা? ধর্ম্ম কেবল কথারই কাপ্তেনী?
ডঙ্কা-নাদের পিছন পিছন সত্য নিয়ে খেল্‌ছ ছেনিমেনি?
চেয়ে দ্যাখো কুশের পরে ক্ষুব্ধ কে ওই তোমার ব্যবহারে!
জীবন্তবৎ পাষাণ-মূ্রৎ!—হেটমাথা তাঁর লজ্জাতে ধিক্কারে।
কুড়ি শ’বৎসরের ক্ষত লাল হ’য়ে তাঁর উঠছে নতুন ক’রে।
দেখ্‌ছে জগৎ—পাথর ফেটে ফোঁটায় ফাঁটায় পড়ছে শোণিত ঝ’রে।
দাও ক্ষমাদাও,চোখমেলে চাও,—কি কাণ্ড হায় কর্‌ছ গজাল ঠুকে?
নিরীহদের নির্য্যাতনের সব ব্যথা কার বাজছে দ্যাখো বুকে।
 *   *   *

কিম্বা দ্যাখার নাই প্রয়োজন, তোমরা এখন সবাই বিজিগীষু,
‘জিঙ্গো’ আসল ইষ্ট সবার, তার আবরণ-দেবতা মাত্র যীশু!
ডায়ার-ডৌল্‌ জবরদস্তি,—তাতেই দেখি আজ তোমাদের রুচি।
গোবর-দস্ত আইন গ’ড়ে নিষ্ঠুরতায় নিচ্ছ ক’রে শুচি।
বীরত্বেরই বিজয়-মালা বর্ব্বরতার দিচ্ছ গলায় তুলে।
অমানুষের কর্‌ছ পূজা, সেরা মানুষ খৃষ্টদেবে ভুলে।
মরদ-মেয়ে ভুগছ সমান হূণ-বিজয়ের বড়াই-লালচ রোগে,
মানুষকে আর মানুষ ব’লেই চিনতে যেন চাইছ না, হায়, চোখে।
ঢাকের পিছে ট্যাম্‌টেমি-প্রায় টমির ধাঁচায় ট্যাঁশটোশ্‌ ও আজ ঘোরে।
শয়তানই যে হাওয়ায় হাঁটায় শূন্যে ওঠায় সে হুঁশ গেছে সঁরে।
নেইক খেয়াল, আত্মা বেচে জগং-জোড় কিন্‌ছে জমিদারী!
কে জানে ক’দিনের ঠিক, ঠিকাদাবের ঠ্যাকার কিন্তু ভারি।
ধিঙ্গি চলে জঙ্গী ঢালে, কুচ ক’রে লাল কাগজ-ওলা চলে,—
নাক তুলে যায় দালাল-ফোড়ে,
আজ দেখি হয় পাদ্‌রীও সেই দলে!

 *   *   *

যাও দ’লে যাও, ডঙ্কা বাজাও, অহঙ্কারের ছায়। ক্ষণস্থায়ী।
মিছাই ব্রতের বিঘ্ন ঘটাও অহঙ্কারের হুম্‌কি-ব্যবসায়ী!
আমরা তোমার চাই না শিক্ষা, চাই না বিদ্যা, হে বিদ্যা-বিক্রয়ী!
ধর্ম্ম-কথাও পণ্য যাদের তাদের পণ্য কিন্‌তে ব্যগ্র নহি।
মানুষ খুঁজে ফির্‌ছি মোরা,—মানুষ হবার রাস্তা যে বাৎলাবে।
তিক্ত হ’য়ে গেছে জীবন ঘরের পরের অমানুষের তাঁবে।
ফলিয়ে দেবে মর্ত্ত্যে যেজন বুদ্ধ-যীশুর স্বর্গ-সূচন বাণী,
শহীদ-কুলের হৃদ্য-শৌর্য্য হৃদয়ে যার পেতেছে রাজধানী,—
জাতিভেদের টিট্‌কারী যে পরকে শুধুই দ্যায় না নানান্‌ ছলে,—
জমিয়ে বুকে জিঙ্গোয়ানীর জবর জাতিভেদের হলাহলে,—

ষোলো-আনা মানুষ হবার নিমন্ত্রণ দেলে যে সব জনে,—
সেই মানুষে খুঁজছি মোরা, অহর্নিশি খুঁজছি ব্যাকুল মনে;
নিক্তি ধ’রে করলে তৌল ওজন সে যার ভজবে পুরাপুরি,
লোভের মোহের মন্ত্রণাতে ভাবের ঘরে কর্‌বে না যে চুরি,
পথ চেয়ে তার সই অনাচার দুঃখ অপার অনন্ত লাঞ্ছনা,
বেশ জানি, “আজ সয় যারা ক্লেশ তাদের তরেই স্বর্গীয় সান্ত্বনা
নিরীহ যেই ধন্য যে সেই ধৃত-ব্রত দৈব মশাল-ধারী
নিঃস্ব যারা তারাই হবে বিপুল ভবে রাজ্য অধিকারী।”