বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত/উপক্রমণিকা
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।
উপক্রমণিকা।
দেশ-বিদেশের অনেক কৃতবিদ্য মহানুভব ব্যক্তি, সাধারণের নিকট যশস্বী হইবার মানসে—বিদ্যোৎসাহী, দেশহিতৈষী, অবলাবন্ধু, দয়াময়, আজন্ম-বিশুদ্ধচরিত, পূজ্যপাদ জ্যেষ্ঠাগ্রজ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জীবনচরিত লিখিতে প্রবৃত্ত হইয়াছেন শুনিয়া, স্বল্পমতি আমিও, ঐ সকল যশস্বী লেখকগণের ন্যায় জীবনচরিত লিখিতে প্রবৃত্ত হইলাম। এবিষয়ে আমি নিশ্চয়ই সাধারণের নিকট উপহাসাষ্পদ হইব। অথবা পাঠকবর্গ আমাকে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের তৃতীয় সহোদর বলিয়া জানিতে পারিলে, অবজ্ঞা না করিতেও পারেন। আমি বাল্যকাল হইতেই অগ্রজ মহাশয়ের নিতান্ত অনুগত ছিলাম। তাঁহার জন্মভূমির কীর্ত্তিস্তম্ভম্বরূপ বীরসিংহবিদ্যালয়, বালিকাবিদ্যালয়, রাখালস্কুল, দাতব্য-চিকিৎসালয় ও বৃত্তিভোগী নিরুপায় দরিদ্রলোকদিগের মাসহরা বিলি, বিধবাবিবাহাদি কার্য্যসমূহ, এবং সন ১২৭২।৭৩ সালের বিষম দুর্ভিক্ষসময়ে প্রত্যহ সহস্ৰাধিক দরিদ্র লোকের প্রাণরক্ষাদি কার্য্য আমার তত্ত্বাবধানে ছিল। আমি বাল্যকাল হইতে পিতামহী, মাতামহী ও জননীদেবীর প্রমুখাৎ তাঁহার বাল্যকালের যে সকল আচার-ব্যবহার, রীতিনীতি বিশিষ্টরূপ অবগত হইয়াছি, অদ্যাপি সেই সকল কথা আমার স্মৃতিপথে জাজ্জ্বল্যমান রহিয়াছে। অগ্রজ মহাশয় কাশীধামে বৃদ্ধ পিতৃদেবের শেষাবস্থায় তাঁহার শুশ্রষ্যাদি কার্য্যে প্রায় ৬/৭ বৎসর আমায় নিযুক্ত রাখিয়াছিলেন। তথায় পিতৃদেবের প্রমুখাৎ এবং আমি যৎকালে সংস্কৃত-কলেজে অধ্যয়ন করি, তৎকালে কলেজের ব্যাকরণের অধ্যাপক পূজ্যপাদ গঙ্গাধর তর্কবাগীশ, সাহিত্যা ধ্যাপক জয়গোপাল তর্কালঙ্কার, অলঙ্কারের অধ্যাপক প্রেমচন্দ্র তর্কবাগীশ, বেদান্তের অধ্যাপক শম্ভুচন্দ্র বাচস্পতি, দর্শনের অধ্যাপক নিমচাঁদ শিরোমণি ও জয়নারায়ণ তর্কপঞ্চানন মহাশয়গণের প্রমুখাৎ দাদার বাল্যকালের পাঠ্যাবস্থার যে সকল বৃত্তান্ত শ্রবণ করিয়াছি, তাহা আমার হৃদয়পটে অঙ্কিত রহিয়াছে। এজন্য আশা করি, পাঠকবর্গ আমার লিখিবার রীতি-নীতি বিষয়ে যে সকল দোষ অবলোকন করিবেন, তাহা বিদ্যাসাগর মহাশয়ের অনুগত ভৃত্য ও সহোদর বলিয়া, আমার সেই সকল দোষ ক্ষমা করিতে পারেন, এই সাহসে প্রোৎসাহিত হইয়া এই দুস্তর কার্য্যে প্রবৃত্ত হইলাম।
হুগলি-জেলার অন্তঃপাতী তারকেশ্বরের পশ্চিম ও জাহানাবাদ মহকুমার পূর্ব্বে, প্রায় ৪ ক্রোশ অন্তরস্থিত বনমালিপুর গ্রামে ঁভুবনেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় বাস করিতেন। তিনি সঙ্গতিপন্ন ও সংস্কৃতশাস্ত্রে সুপণ্ডিত ছিলেন। তাঁহার পাঁচ পুত্র, সকলেই সংস্কৃতভাষায় পণ্ডিত ছিলেন। তৃতীয় পুত্রের নাম রামজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। রামজয়, ঘাঁটাল মহকুমার অন্তঃপাতী বীরসিংহগ্রামবাসী বিখ্যাত পণ্ডিত উমাপতি তর্কসিদ্ধান্তের দুর্গানাম্নী কনিষ্ঠা কন্যার পাণিগ্রহণ করেন। কালক্রমে রামজয়ের দুইটী পুত্র, ও চারিটী কন্যা জন্মিয়াছিল। পুত্রদ্বয়ের মধ্যে জ্যেষ্ঠের নাম ঠাকুরদাস, কনিষ্ঠের নাম কালিদাস। কন্যা চারিটির নাম মঙ্গলা, কমলা, গোবিন্দময়ী ও অন্নপূর্ণা। ভুবনেশ্বর, বাৰ্দ্ধক্যনিবন্ধন মানবলীলা সম্বরণ করিলে পর, তাঁহার পুত্রগণের বিষয়-বিভাগ-উপলক্ষে পরস্পর বিষম মনান্তর ঘটে। রামজয়, ধার্ম্মিক ও উদারস্বভাব ছিলেন। তিনি অকিঞ্চিৎকর বিষয়ের জন্য, প্রাণসম সোদরবর্গের সহিত বিরোধ করা অতি গর্হিত কর্ম্ম বিবেচনা করিয়া, দুইটী পুত্র ও চারিটী কন্যা রাখিয়া, কাহাকেও কোন কথা প্রকাশ না করিয়া, সন্ন্যাসীর বেশে তীর্থ-পর্য্যটনে প্রস্থান করেন। কিছু দিন পরে, তাঁহার পত্নী দুর্গাদেবীর বনমালিপুরে অবস্থিতি করা নিতান্ত অসহ্য হইয়া উঠিল; সুতরাং পুত্রদ্বয় ও কন্যা-চতুষ্টয়কে লইয়া, পিতৃভবন বীরসিংহায় আগমন করিলেন। তাঁহার পিতা উমাপতি তর্কসিদ্ধান্ত, সমাদরপূর্বক নিরাশ্রর দুহিতা ও তাঁহার সন্ততিগণকে স্বীয় সদনে রাখিলেন। তৎকালে তাঁহার জ্যেষ্ঠ দৌহিত্র ঠাকুরদাসের বয়ঃক্রম দশ বৎসর ও কনিষ্ঠ কালিদাসের বয়ঃক্রম সাত বৎসর। তর্কসিদ্ধান্ত, উভয় দৌহিত্রের লেখাপড়া শিক্ষার নিমিত্ত বীরসিংহনিবাসী গ্রহাচার্য্য পণ্ডিত কেনারাম বাচস্পতিকে নিযুক্ত করিলেন। আচার্য্য মহাশয় তৎকালে এপ্রদেশের মধ্যে জ্যোতিষ-শাস্ত্রে অদ্বিতীয় পণ্ডিত ছিলেন। তিনি স্বল্প দিবসের মধ্যে ভ্রাতৃদ্বয়কে বাঙ্গালী ভাষা, শুভঙ্করী অঙ্ক ও জমিদারী সেরেস্তার কাগজ শিক্ষা দিয়া, পরে সংক্ষিপ্তসার ব্যাকরণ অধ্যয়ন করাইতে প্রবৃত্ত হইলেন। উমাপতি তর্কসিদ্ধান্ত নিতান্ত অথর্ব্ব হইলে, সাংসারিক কার্য্যের ভার পুত্র রামসুন্দর ভট্টাচার্য্যের হস্তে অর্পণ করেন। উক্ত রামসুন্দর ভট্টাচার্য্যের পত্নীর সহিত দুৰ্গাদেবীর মনান্তর ও বাচসা হইতে লাগিল। রামসুন্দর অত্যন্ত স্ত্রৈণ ছিলেন। একদিবস তিনি ও তাঁহার স্ত্রী, দুৰ্গাদেবীকে বলেন যে, তোমার দুইটী পুত্র ও চারিটী কন্যাকে অতঃপর আমরা প্রতিপালন করিতে পারিব না, তুমি পথ দেখ। স্পষ্টাক্ষরে ইহা বলায়, দুৰ্গাদেবী নিতান্ত নিরুপায় হইয়া, কিছুই স্থির করিতে না পারিয়া, পরিশেষে বৃদ্ধ পিতা তর্কসিদ্ধান্তকে সবিশেষ অবগত করিলেন। তিনি বুলিলেন, আমি সকলই বিশেষরূপ অবগত আছি। অতঃপর উহাদের সহিত তোমার একত্র সদ্ভাবে বাস করা চলিবে না। পৃথক্ স্থানে বাস করা নিতান্ত আবশ্যক। দুৰ্গাদেবী তাহাতে সম্মত হইলেন। পরদিন তর্কসিদ্ধান্ত গ্রামস্থ ভদ্রলোকদিগকে আহ্বান করিয়া বলিলেন যে, রামসুন্দরের ও বধূমাতার সহিত দুর্গার এক গৃহে বাস করা দুষ্কর, অতএব আমি স্বতন্ত্র স্থানে ইহার গৃহ নির্ম্মাণ করিয়া দিব স্থির করিয়াছি। তাহাতে গ্রামস্থ লোকগণও সম্মত হইলেন। অনন্তর বার্ষিক ৯।৴০ টাকা জমায় কিঞ্চিৎ ভূমি লইয়া, তাহাতে গৃহ নির্ম্মাণ করিয়া দেন; পরে জমিদারকে বলিয়া ও অনুরোধ করিয়া, নাখরাজ করিয়া দিবার স্থির করেন। ইতিমধ্যে তর্কসিদ্ধান্ত ইহজগৎ পরিত্যাগ করিয়া লোকান্তরিত হন। সুতরাং ঐ নূতন বাস্তু আর নাখরাজ হইল না। ঐ বাস্তুর বার্ষিক কর জমিদারকে দিতে হইল। দুৰ্গাদেবীর সংসার-নির্ব্বাহের উপায়ান্তর ছিল না। তৎকালে বিলাতি সুতার আমদানি হয় নাই; এ প্রদেশের নিরুপায় অনেক স্ত্রীলোকই সুতা প্রস্তুত করিয়া, তাহা বিক্রয় করিয়া কষ্ট্যেস্থষ্টে সংসারযাত্রা নির্ব্বাহ করিত। আত্মীয়বর্গের উপদেশানুসারে দুর্গাদেবীও অগত্যা একটি চরকা ক্রয় করিয়া সুতা কাটতেন; কখন কখন আস্নাসূতাও কাটিতেন। সুতা বিক্রয় করিয়া যাহা কিছু উপাৰ্জ্জন হইত, তাহাতেই কষ্টে সংসারযাত্রা নির্ব্বাহ করিতেন। এক্ষণে ঠাকুরদাসের বয়ঃক্রম চতুর্দ্দশ বৎসর অতীতপ্রায়; পড়াশুনা অধিক দিন করিলে সংসার চলা দুষ্কর। আত্মীয়বর্গ এই উপদেশ দেন যে, সংস্কৃত অধ্যয়ন বন্ধ করিয়া, যাহাতে শীঘ্র উপাৰ্জন করিতে সক্ষম হন, এরূপ বিদ্যাশিক্ষা করা অত্যাবশ্যক।
এদিকে রামজয়, তীর্থ স্থানে থাকিয়া স্বপ্ন দেখেন যে, তুমি পরিবারবর্গকে কষ্ট দিয়া তীর্থক্ষেত্রে ভ্রমণ করিতেছ, ইহাতে তোমার অধর্ম্ম হইতেছে। একারণ পাঁচ বৎসরের পর দেশে আগমনপূর্ব্বক বনমালিপুরে আসিয়া দেখেন যে, সহোদরেরা পৃথক হইয়াছেন, এবং শুনিলেন যে, তাহার পত্নী বীরসিংহায় পিত্রালয়ে অবস্থিতি করিতেছেন; সুতরাং রামজয়, পরিবারবর্গকে আনয়ন করিবার জন্য বীরসিংহায় গমন করিলেন। গৈরিক বসন পরিধান করিয়া, হিন্দুস্থানী সন্ন্যাসীর বেশে শ্বশুরবাটীতে সমুপস্থিত হইলেন। প্রথমতঃ কাহাকেও আত্মপরিচয় না দিয়া, গ্রামের মধ্যে ইতস্ততঃ পরিভ্রমণ করিতে লাগিলেন। তাঁহার কনিষ্ঠা কন্যা অন্নপূর্ণা দেবী, পিতাকে চিনিতে পারিয়া, বাবা বলিয়া উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিয়া উঠিলেন। তখন রামজয় আত্মপরিচয় দেন। কয়েক দিবস বীরসিংহায় অবস্থিতি করিয়া, পরিবারগণকে বনমালিপুরে লইয়া যাইবার উদেযাগ করিলেন। কিন্তু তাঁহার পত্নী বনমালিপুরে যাইতে সম্মত হইলেন না। যেহেতু তাহার ভ্রাতৃবর্গ অসদ্ব্যবহার করিয়াছেন; এতাবৎ কালের মধ্যে তাঁহাদের কোন সংবাদ লয়েন নাই; সুতরাং রামজয় অগত্যা বীরসিংহায় পরিবারগণকে রাখিতে বাধ্য হইলেন।
রামজয় অতি বুদ্ধিমান, বলশালী ও সাহসী পুরুষ ছিলেন। লৌহযষ্টি হস্তে লইয়া সর্বত্র ভ্রমণ করিতেন, কাহাকেও ভয় করিতেন না। এক সময় বীরসিংহ হইতে মেদিনীপুর যাইতেছেন, পথিমধ্যে এক ভল্লুক দেখিতে পাইলেন। ভল্লুক দেখিয়া ভয় না পাইয়া, এক বৃক্ষের অন্তরালে দণ্ডায়মান হইলে, ভল্লুক তাঁহাকে আক্রমণ করিবার জন্য বৃক্ষের চতুর্দিকে তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ ঘূর্ণ্যমান হওয়ায়, তিনিও অগ্রে অগ্রে ঘুরিতে লাগিলেন। কিয়ৎক্ষণ পরে ভল্লুক দুই হস্ত প্রসারণপূর্ব্বক বৃক্ষটী আঁকড়াইয়া, তাহাকে ধরিবার চেষ্টা করিল; ঐ সময় রামজয়, বৃক্ষের অপর পার্শ্ব হইতে ভালুকের দুই হস্ত ধরিয়া বৃক্ষে ঘর্ষণ করিতে আরম্ভ করিলেন। তাহাতে ভল্লুক মৃতপ্রায় হইলে ছাড়িয়া দিলেন। ভল্লুককে মৃতকল্প ভূপতিত দেখিয়া, প্রস্থান করিতে উদ্যত হইলেন এমন সময় ভল্লুক উঠিয়া দ্রুতবেগে দৌড়িয়া গিয়া, রামজয়ের পৃষ্ঠে নখাঘাত করিল; তখন পৃষ্ঠে শোণিতধারা বিনিৰ্গত দেখিয়া, ক্রোধাভরে লৌহদণ্ডপ্রহারে ভল্লুকের প্রাণবিনাশ করিলেন। ভল্লুকের পাঁচটী নখাঘাতের ক্ষতে প্রায় মাসাধিক কষ্ট পাইয়া পরে আরোগ্যলাভ করেন।
বীরসিংহায় বাস্তু-বাটীর ভূস্বামী, রামজয়কে নিষ্কর ব্রহ্মোত্তর করিয়া দিবেন মানস করিয়াছিলেন; কিন্তু রামজয় দান গ্রহণ করিতে সম্মত হন নাই। গ্রামের অনেকেই নাখরাজ করিবার জন্য তাঁহাকে অনেক উপদেশ দিয়াছিলেন, কিন্তু কাহারও অনুরোধ রক্ষা করেন নাই। তদবধি বাস্তুভূমির ৯|৴০ টাকা কর আদায় হইয়া আসিতেছে। রামজয়ের মনোগত ভাব এই যে, নিষ্করে বাস করিলে, ভুস্বামী পুণ্যের অংশ গ্রহণ করিতে পরিবেন এবং তিনি আজন্মকাল মনে মনে অহঙ্কার করিতে পরিবেন যে, আমি উহাকে চিরকালের জন্য বাসস্থান দান করিয়াছি; একারণ নিষ্করে বাস করিতে সম্মত হইলেন না।
ঠাকুরদাসের বাঙ্গালা, শ্যাখতি ও জমিদারী কাগজ শিক্ষা হইয়াছে দেখিয়া, রামজয়, ঠাকুরদাসকে সমভিব্যাহাৱে লইয়া কলিকাতা যাত্রা করিলেন। তথায় বাগবাজারস্থ সঙ্গতিপন্ন জ্ঞাতি সভারাম বাচস্পতির ভবনে উপস্থিত হইলে, বাচস্পতি মহাশয় ঠাকুরদাসকে ব্যাকরণ শিক্ষা দিবার ব্যবস্থা করিলেন; কিন্তু রামজয় আশু অর্থকরী ইংরাজী-বিদ্যা শিক্ষার জন্য তাঁহাকে অনুরোধ করিলেন; যেহেতু তিনি পৈতৃক সম্পত্তি ভ্রাতৃবৰ্গকে প্রদান করিয়াছিলেন, তাঁহার কিছুমাত্র সম্পত্তি ছিল না। একারণ, যাহাতে পুত্রটী শীঘ্র উপায়ক্ষম হইতে পারে, এরূপ বিদ্যাশিক্ষার উপদেশ প্রদান করিলেন। তৎকালে কলিকাতায় কোনও ইংরাজী বিদ্যালয় ছিল না। বাচস্পতি মহাশয়, ইংরাজী শিক্ষা দিবার জন্য একজন দালালকে অনুরোধ করিলেন; দালাল, বাচস্পতি মহাশয়ের অনুরোধের বশবর্ত্তী হইয়া স্বয়ং শিক্ষা না দিয়া, ইংরাজীভাষায় সুশিক্ষিত জাহাজের সীপ্সরকার, জনৈক কায়স্থকে শিক্ষা দিবার জন্য অনুরোধ করেন। সীপ্সরকার, প্রাতে ও সন্ধ্যার পর রীতিমত ইংরাজী-ভাষা শিক্ষা দিতে প্রবৃত্ত হইলেন। অল্পদিনের মধ্যেই ঠাকুরদাস এক প্রকার কাজের লোক হইলেন; তাহা দেখিয়া রামজয়, ঠাকুরদাসকে বলিলেন যে, ঈশ্বর তোমার ভাল করিবেন, আমি ঈশ্বরের আরাধনাভিলাষে পুনর্ব্বার তীর্থপর্য্যটনে যাত্রা করিতেছি। ইহাতে ঠাকুরদাস অত্যন্ত দুঃখিত হইলেন; তিনি এ সংবাদ বাটীতে লিখিলেন। কিছু দিন পরে শিক্ষক, ঠাকুরদাসকে অতি শীর্ণকায় দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি দিন দিন শীর্ণ হইতেছ কেন?” তাহাতে তিনি উত্তর করিলেন, “মহাশয়! দিবা দুই প্রহরের সময় ভোজন করি, রাত্রিতে ভোজন হয় না।” ইহার কারণ জিজ্ঞাসায় ঠাকুরদাস বলিলেন, “সন্ধ্যার অব্যবহিত পরেই বাচস্পতি মহাশয়ের ভবনে লোকের ভোজনের ব্যবস্থা শেষ হইয়া যায়। আমি রাত্রি দশটার পর আপনার বাটী হইতে তথায় যাই, সুতরাং আমার ভোজন হয় না। একারণ অনাহারে ক্রমশঃ দুর্বল হইতেছি।” তাহাতে শিক্ষক বলিলেন, “তুমি যদি পাক করিতে পার, তাহা হইলে আমার বাসায় অবস্থিতি কর।” তাহাতে ঠাকুরদাস সম্মত হইয়া, দয়ালু শিক্ষকের বাসায় অবস্থিতি করিয়া ইংরাজী শিখিতে লাগিলেন। মধ্যে মধ্যে এক এক দিন শিক্ষকের কার্য্যবাহুল্যপ্রযুক্ত বাসায় আসিতে অধিক রাত্রি হইত। ঠাকুরদাস ক্ষুধায় কাতর হইতেন। হাতে পয়সা একটীও নাই যে, ক্ষুধা পাইলে এক পয়সার জলপান খান; তাঁহার পুজির মধ্যে এক পিতলের থাল ও এক পিতলের জলপাত্র ছিল। মনে মনে স্থির করিলেন, ইহা বিক্রয় করিলে কিছু পয়সা হইবে; সময়ে সময়ে ক্ষুধা পাইলে, এক এক পয়সার জলপান ক্রয় করিয়া খাইলেও দিনপাত হইবে। এই স্থির করিয়া যোড়া-সাঁকোর নূতন বাজারে এক কাঁসারীর দোকানে ঐ থালা ও জলপাত্র বিক্রয় করিতে যান। কাঁসারী, থালা ও ঘটি ওজন করিয়া ১।০ মূল্য স্থির করেন; কিন্তু অপরিচিত ব্যক্তির নিকট পুরাতন দ্রব্য ক্রয় করিতে ভয় করিয়া বলিল যে, ইতিপূর্ব্বে এক বৃক্তির নিকট পুরাতন দ্রব্য ক্রয় করিয়া, আমরা বিষম বিপদে পড়িয়াছিলাম; তদবধি সকল দোকানদার প্রতিজ্ঞা করিয়াছি যে, অপরিচিত লোকের নিকট কখনও পুরাতন দ্রব্য ক্রয় করিব না। ইহা শুনিয়া ঠাকুরদাস হতাশ হইয়া থালা ও ঘটি লইয়া বাসায় ফিরিয়া আসিলেন। মধ্যে মধ্যে এক এক দিন শিক্ষক সীপ্সরকারের বাটী আসিতে অধিক রাত্রি হইত, ঠাকুরদাস ক্ষুধায় কাতর হইতেন। একদিন শিক্ষক প্রাতঃকাল হইতে কার্য্যের বাহুল্যপ্রযুক্ত বাসায় সমাগত না হওয়ায়, ঠাকুরদাস ক্ষুধায় ব্যাকুল হইয়া, সন্নিহিত এক বৃদ্ধার মুড়ীর দোকানের সম্মুখে কিয়ৎক্ষণ দণ্ডায়মান থাকিয়া বলিলেন, “একটুকু জল দিতে পার, আমার তৃষ্ণা পাইয়াছে।” তাহাতে বৃদ্ধ পিতলের রেকবে মুড়কী দিয়া পানীয় জল দিল; উহা খাইতে খাইতে ঠাকুরদাসের চক্ষে জল আসিল, তাহাতে বৃদ্ধ জিজ্ঞাসা করিল, “বাবা ঠাকুর, তুমি কাঁদ কেন?” তাহাতে তিনি উত্তর করিলেন, “মা! আজ সমস্ত দিন আমার ভোজন হয় নাই।” বৃদ্ধ জিজ্ঞাসা করিল, “কেন হয় নাই?” তিনি বলিলেন, “প্রাতঃকাল হইতে সরকার মহাশয় বাসায় আগমন করেন নাই।” ইহা শুনিয়া দয়াময়ী বৃদ্ধা, দধি ও মুড়কী মুড়ি দিয়া ফলাহার করাইল এবং বলিল, যেদিন তোমার ভোজন না হইবে, সেই দিন। এখানে আসিয়া ফলাহার করিবে। একদিন সরকার অধিক রাত্রিতে বাটী আসিয়া শুনিলেন যে, ঠাকুরদাসের সমস্ত দিবসের মধ্যে পাকাদি কার্য্য হয় নাই, ইহাতে অত্যন্ত দুঃখিত হইলেন এবং বলিলেন, “তোমার যাহা শিক্ষা হইয়াছে তাহাতে কার্যক্ষম হইয়াছ, অতঃপর আর তোমার এরূপ ক্লেশ-স্বীকারের প্রয়োজন নাই। অদ্য এক্ষণে আহারাদি সমাধা কর, কল্য প্রাতেই তোমার সম্বন্ধে যাহা কিছু বক্তব্য থাকে, তাহা বাচস্পতি মহাশয়কে বলিব।” পরদিন প্রাতে বাচস্পতি মহাশয়ের বাটী যাইয়া তাঁহাকে বলিলেন যে, “আপনার জ্ঞাতি ঠাকুরদাস কর্ম্মক্ষম হইয়াছেন, বাঙ্গালায় ও ইংরাজীতে হিসাব করিবার ভালরূপ ক্ষমতা হইয়াছে; আপনি কাহাকেও বলিয়া ইহাকে কর্ম্মে নিযুক্ত করিয়া দিন। ইহার চরিত্রও উত্তম।” বাড়িসাগ্রামে বাচস্পতির এক সন্ত্রান্ত কুটুম্ব ছিলেন। তিনি এক নাবালক পুত্র ও স্ত্রী রাখিয়া পরলোকগমন করেন। অন্য কেহ অভিভাবক না থাকায়, একজন কার্য্যদক্ষ বিশ্বাসী লোক রাখা আবশ্যক হইয়াছিল।
বাচস্পতি মহাশয়, ঠাকুরদাসকে বলিলেন, “তোমাকে অন্ততঃ এক বৎসরের জন্য তথায় অবস্থিতি করিয়া বিষয় রক্ষণাবেক্ষণ করিতে হইবে।” ঠাকুরদাস অগত্যা স্বীকার পাইয়া বড়িসায় কিছু দিন থাকিয়া, নাবালকের বিশিষ্টরূপ আদায় ও বন্দোবস্ত করিলেন। তজ্জন্য বাচস্পতি, ঠাকুরদাসের সাংসারিক ব্যয়-নির্ব্বাহার্থে রীতিমত টাকা পাঠাইয়া দিতে কাতর হন নাই। ঠাকুরদাসের জননী মাসে মাসে কিছু পাইতে লাগিলেন; তাহাতে কষ্টের অনেক লাঘব হইয়াছিল। এক বৎসর কাল বড়িসায় অবস্থিতি করিয়া, বাচস্পতি মহাশয়কে বলেন যে, “মহাশয়, অনেক কষ্টে ইংরাজী শিক্ষা করিয়াছি। আপনি আমাকে ইংরাজীর হিসাবের কার্য্য নির্ব্বাহ করিবার জন্য কাহাকেও অনুরোধ করিয়া নিযুক্ত করিয়া দিন।” বাচস্পতি মহাশয়, ঠাকুরদাসের কর্ম্মের শৃঙ্খলা ও সৌজন্য দর্শনে সন্তুষ্ট ছিলেন, একারণ বড়বাজার দোয়েহাটা-নিবাসী পরম দয়ালু ভাগবতসিংহের বাটীতে কার্য্যে নিযুক্ত করিয়া দিলেন। ভাগবতবাবু পরম ধার্ম্মিক ও দয়ালু ছিলেন; তাঁহার আফিসে ঠাকুরদাসকে দুই টাকা বেতনে নিযুক্ত করিলেন, এবং বাটীতে বাসা দিয়া খোরাক পোষাক দিতেন। ঠাকুরদাস ঐ ২৲ দুই টাকা জননীর সাংসারিক ক্লেশ নিবারণের জন্য বাটীতে পাঠাইয়া দিতেন। এইরূপ মাসে মাসে দুই টাকা পাইয়া দুৰ্গাদেবীর সাংসারিক ব্যয়নির্ব্বাহের সুবিধা হইল। ভাগবতবাবু, ঠাকুরদাসের কার্য্যদক্ষতা অবলোকন করিয়া, ক্রমশঃ রীতিমত বেতন বৃদ্ধি করিয়া দিতে লাগিলেন। ইহার কিছু দিন পরে ভাগবতবাবু বলেন, “ঠাকুরদাস, তোমার কনিষ্ঠ ভ্রাত কালিদাসকে আনাইয়া কাছে রাখিয়া ইংরাজী শিক্ষা দিলে, তাহাকেও আফিসে নিযুক্ত করা তইবে। দুই সহোদরে কর্ম্ম করিলে সংসারের কষ্ট নিবারণ হইবে।” একারণ, কালিদাসকে আনাইয়া ভাগবতবাবু বাটীতে রাখিলেন। ইহার কিছুদিন পরে ভাগবতসিংহ কালগ্রাসে নিপতিত হইলে, তাহার পুত্র জগদ্দুর্লভ সিংহ ও তৎপরিবারবর্গ ঠাকুরদাসকে পূর্ব্বাপেক্ষা ভাল বাসিতে লাগিলেন। কনিষ্ঠ ভ্রাতা কর্ম্মে পারগ হইলে, কিছুদিন ঠাকুরদাস কাশীজোড়া ও মণ্ডলঘাটে অবস্থিতি করিয়া, রেশমের ব্যবসায়ে প্রবৃত্ত হন; তৎপরে দেশে অবস্থিতি করিয়া কাঁসার বাসনের ব্যবসা করেন। এইরূপ নানা প্রকার ব্যবসা দ্বারা সাংসারিক কষ্ট নিবারণ ও কিছু সঞ্চয় করিলেন। এদিকে কলিকাতায় তাহার ভ্রাতা তাহার কর্ম্মে থাকিয়া নানা প্রকার বিশৃঙ্খলা ঘটান; এজন্য জগদ্দুর্লভ সিংহ বলেন, তোমার ভ্রাতার দ্বারা আমার কার্য্যের বিস্তর ক্ষতি হইতেছে; অতএব তুমি নিজে আসিয়া কার্য্য কর। বিশেষতঃ পিতা মৃত্যুকালে তোমাকে বিশ্বাস করিয়া আমার বাটীর ও আফিসের সকল ভার দিয়াছেন। একারণ, ঠাকুরদাস ব্যবসা পরিত্যাগ করিয়া, পুনর্ব্বার সিংহমহাশয়ের বাটীতে বিষয়কর্ম্মে নিযুক্ত হইলেন। ১৭৩৫ শকে খানাকুল কৃষ্ণনগরের পশ্চিম পাতুলগ্রামনিবাসী পঞ্চানন বিদ্যাবাগীশের দৌহিত্রী ও রামকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের দুহিতা ভগবতী দেবীর সহিত ঠাকুরদাসের পাণিগ্রহণ-বিধি সমাধা হইল।
রামকান্ত চট্টোপাধ্যায় জাহানাবাদ মহকুমার পশ্চিম গোঘাট গ্রামে বাস করিতেন। ইনি সংস্কৃত-ভাষায় সুপণ্ডিত ছিলেন। বাটীতেই তাঁহার চতুষ্পাঠী ছিল। ছাত্রগণকে অন্ন দিয়া শিক্ষা দিতেন। তন্ত্রশাস্ত্রে ইঁহার অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও ভক্তি ছিল। তিনি রামজীবনপুরের অতি সন্নিহিত করঞ্জী গ্রামে মাতামহাশ্রয়ে অবস্থিতি করিয়া, প্রায় প্রতি অমাবস্যার রাত্রিতে শব-সাধন করিয়া সিদ্ধপুরুষ হন; শেষাবস্থায় কাহারও সহিত কথা কহিতেন না, মধ্যে মধ্যে “মঞ্জুর” এই শব্দটি বলিতেন। পাতুল গ্রামের পঞ্চানন বিদ্যাবাগীশ অদ্বিতীয় পণ্ডিত ছিলেন। ইঁহার বাটীতে টোল ছিল; বিদ্যাবাগীশ প্রত্যহ অতিথি ও অভ্যাগত লোক সমূহকে ভোজন করাইতেন। দেশের সকল লোকেই বিদ্যাবাগীশকে শ্রদ্ধা ও ভক্তি করিত। ইহার চারিটী পুত্র ছিল। জ্যেষ্ঠ রাধামোহন বিদ্যাভূষণ, মধ্যম রামধন তর্কবাগীশ, তৃতীয় গুরুপ্রসাদ শিরোমণি, কনিষ্ঠ বিশ্বেশ্বর তর্কালঙ্কার। সকলেই গুণবান্ ও দয়ালু ছিলেন। বিদ্যাবাগীশের দুই কন্যা ছিল। জ্যেষ্ঠা গঙ্গামণি দেবী, দ্বিতীয়া তারাসুন্দরী দেবী। জ্যেষ্ঠা গঙ্গামণির গর্ভে দুই কন্যা জন্মে। জ্যেষ্ঠার নাম লক্ষ্মীমণি দেবী, কনিষ্ঠার নাম ভগবতী দেবী। রামকান্ত প্রায় প্রতি রাত্রিতে শ্মশানে বসিয়া জপ করিতেন ও সংসারের সকল বিষয়ে ঔদাস্যাবলম্বন করিয়াছিলেন। জামাতা রামকান্ত শব-সাধন করিয়া মৌনাবম্বন করিয়াছেন, এই সংবাদ শ্রবণ করিয়া, তাহার শ্বশুর উক্ত পাতুলগ্রামনিবাসী বিদ্যাবাগীশ মহাশয়, করঞ্জীগ্রাম হইতে জামাতা রামকান্ত, কন্যা গঙ্গামণি ও তাহার দুইটী কন্যাকে পাতুলগ্রামে আনয়ন করেন। পঞ্চানন বিদ্যাবাগীশ ও রাধামোহন বিদ্যাভূষণ প্রভৃতি ইহাদিগকে আন্তরিক স্নেহ করিতেন; তাহাদেরই যত্নে বীরসিংহনিবাসী ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহিত ভগবতীদেবীর বিবাহকার্য্য সম্পন্ন হইয়াছিল। ইতিপূর্ব্বে রামজয়, (পুত্র ঠাকুরদাস লেখাপড়া ভালরূপ শিখিয়াছেন, বিষয়কর্ম্মে লিপ্ত হইয়া পরিবারবর্গের কষ্ট নিবারণ ও ভরণপোষণাদি কার্য্য নির্ব্বাহ করিতে পারিবেন দেখিয়া) জন্মের মত ঈশ্বরারাধনায় তীর্থক্ষেত্রপর্য্যটনে প্রস্থান করেন। এই সুদীর্ঘকালের মধ্যে তাঁহার পরিবারগণের কোন সংবাদ পান নাই। রামজয় একদিবস (কেদার পাহাড়ে) নিশীথসময়ে স্বপ্ন দেখেন যে, রামজয়! তুমি বৃথা কেন ভ্রমণ করিতেছ? স্বদেশে যাও, তোমার বংশে এক সুপুত্র জন্মগ্রহণ করিয়াছেন, তিনি তোমার বংশের তিলক হইবেন। তিনি সাক্ষাৎ দয়ার সাগর ও অদ্বিতীয় পণ্ডিত হইয়া, নিরন্তর বিদ্যাদান ও নিরুপায় লোকদিগের ভরণপোষণাদির ব্যয়নির্ব্বাহ দ্বারা তোমার বংশের অনন্তকালস্থায়িনী কীর্ত্তি স্থাপন করিবেন। রামজয়, পাহাড়ের মধ্যে নিশীথসময়ে এরূপ অসম্ভব স্বপ্ন-দর্শন করিয়া চিন্তা করিতে লাগিলেন যে, আমি বহুদিন অতীত হইল সংসারাশ্রমে জলাঞ্জলি দিয়া, নিভৃত স্থানে ঈশ্বরারাধনায় মনপ্রাণ সমর্পণ করিয়া কালাতিপাত করিতেছি। এক্ষণে তাহারা কি করিতেছে ও কে আছে না আছে, তাহাও জানি না। এবম্বিধ চিন্তায় নিমগ্ন হইয়া পুনর্ব্বার নিদ্রাভিভূত হইলে, কে যেন বলিয়া দিল, তুমি পরিবারগণের নিকট প্রস্থান কর, আর বিলম্ব করিও না; তোমার প্রতি ঈশ্বর সদয় হইয়াছেন। নিদ্রাভঙ্গ হইলে, নানা প্রকার ভাবিয়া চিন্তিয়া, রামজয় স্বদেশাভিমুখে যাত্রা করিলেন। অনবরত ৬ মাস পদব্রজে গমন করিয়া, বীরসিংহায় সমুপস্থিত হইয়া শুনিলেন, তাঁহার পুত্র ঠাকুরদাস কলিকাতায় বিষয়কর্ম্মে নিযুক্ত থাকিয়া সংসার প্রতিপালন করিতেছেন। জ্যেষ্ঠপুত্র ঠাকুরদাসের ও কনিষ্ঠ কালিদাসের বিবাহ কার্য্য সম্পন্ন হইয়াছে এবং জ্যেষ্ঠপুত্র ঠাকুরদাসের পত্নী গর্ভবতী হইয়া অবধি উন্মাদগ্রস্তা হইয়াছেন। অনন্তর রামজয় দেশে আগমন করিয়াছেন, এ সংবাদ কলিকাতায় পুত্রদ্বয়কে লেখা হইল। সংবাদ-প্রাপ্তিমাত্রেই বহুকালের পর পিতৃসন্দর্শনার্থে ঠাকুরদাস ও কালিদাস কলিকাতা হইতে বীরসিংহায় আগমন করিলেন।