বিদ্যাসাগর জননী ভগবতী দেবী/বিবাহ ও বধূজীবন

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ॥ বিবাহ ও বধূজীবন

 ১৭৩৫ শকে হুগলী জেলার অন্তঃপাতী বনমালিপুর গ্রামের ‘ভুবনেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের পৌত্র এবং রামজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের জ্যেষ্ঠ পুত্র, ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহিত ভগবতী দেবীর শুভপরিণয় কার্য্য সমাধা হইল। তখন ঠাকুরদাসের বয়ঃক্রম তেইশ কি চব্বিশ বৎসর; ভগবতী দেবী নবম বর্ষে পদার্পণ করিয়াছেন।

 আমরা এস্থলে ভগবতী দেবীর শ্বশুরকুলের সংক্ষিপ্ত পরিচয় পাঠকবর্গের অবগতির জন্য লিপিবদ্ধ করিলাম।

 ভুবনেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় সঙ্গতিসম্পন্ন ও সংস্কৃত শাস্ত্রে সুপণ্ডিত ছিলেন। তাঁহার পাঁচ পুত্র; সকলেই সংস্কৃত ভাষায় পণ্ডিত ছিলেন। তৃতীয় পুত্রের নাম রামজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। ইনিই ভগবতী দেবীর শ্বশুর। রামজয় ঘাটাল মহকুমার অতঃপাতী বীরসিংহ গ্রামবাসী বিখ্যাত পণ্ডিত উমাপতি তর্কসিদ্ধান্তের দুর্গানাম্নী কনিষ্ঠা কন্যার পাণিগ্রহণ করেন। কালক্রমে রামজয়ের দুইটি পুত্র ও চারিটি কন্যা জন্মিয়াছিল। পত্রদ্বয়ের মধ্যে জ্যেষ্ঠের নাম ঠাকুরদাস, কনিষ্ঠের নাম কালিদাস। কন্যা চারিটির নাম—মঙ্গলা, কমলা, গোবিন্দময়ী ও অন্নপূর্ণা। ভুবনেশ্বর বার্দ্ধক্যনিবন্ধন মানবলীলা সম্বরণ করিলে পর, তাঁহার পুত্রগণের বিষয়বিভাগ উপলক্ষে পরস্পর বিষম মনান্তর ঘটে। রামজয় ধার্ম্মিক ও উদারস্বভাব ছিলেন। তিনি অকিঞ্চিৎকর বিষয়ের জন্য, প্রাণসম সোদরবর্গের সহিত বিরোধ করা অতি গর্হিত কর্ম্ম বিবেচনা করিয়া, দুইটি পুত্র ও চারিটি কন্যা রাখিয়া, কাহাকেও কোন কথা প্রকাশ না করিয়া, সন্ন্যাসীর বেশে তীর্থপর্য্যটনে প্রস্থান করেন। রামজয় তর্কভূষণ দেশত্যাগী হইলেন; তদীয় পত্নী দুর্গাদেবী পুত্রকন্যা লইয়া বনমালিপুরের বাটীতে অবস্থিতি করিতে লাগিলেন! অল্পদিনের মধ্যেই দুর্গাদেবীর লাঞ্ছনাভোগ ও তদীয় পুত্রকন্যাদের উপর কর্ত্তৃপক্ষের অযত্ন ও অনাদর, এতদূর পর্য্যন্ত হইয়া উঠিল যে, দুর্গাদেবী পুত্রদ্বয় ও কন্যাচতুষ্টয়কে লইয়া, পিতৃভবন বীরসিংহে আগমন করিলেন। তাঁহার পিতা উমাপতি তর্কসিদ্ধান্ত, সমাদরপূর্বক নিরাশ্রয়া দুহিতা ও তাঁহার সন্তানগণকে স্বীয় সদনে আশ্রয় দিলেন। তৎকালে তাঁহার জ্যেষ্ঠ দৌহিত্র ঠাকুরদাসের বয়ঃক্রম দশ বৎসর ও কনিষ্ঠ কালিদাসের প্রায় সাত বৎসর। তর্কসিদ্ধান্ত উভয় দৌহিত্রের লেখাপড়া শিক্ষার নিমিত্ত বীরসিংহনিবাসী গ্রহাচার্য্য পণ্ডিত কেনারাম বাচস্পতিকে নিযুক্ত করিলেন। আচার্য্য মহাশয় তৎকালে ঐ প্রদেশের মধ্যে জ্যোতিষ শাস্ত্রে অদ্বিতীয় পণ্ডিত ছিলেন। তিনি স্বল্প দিবসের মধ্যেই ভ্রাতৃদ্বয়কে বাঙ্গলা ভাষা, শুভঙ্করী অঙ্ক ও জমিদারী সেরেস্তার কাগজ প্রভৃতি শিক্ষা দিয়া পরে সংক্ষিপ্তসার ব্যাকরণ অধ্যয়ন করাইতে প্রবৃত্ত হইলেন। উমাপতি তর্কসিদ্ধান্ত অতিশয় বৃদ্ধ হইয়াছিলেন; এজন্য সংসারের কত্তৃত্ব তদীয় পুত্র রামসুন্দর ভট্টাচার্য্যের হস্তে ন্যস্ত ছিল। উক্ত রামসুন্দর ভট্টাচার্য্যের পত্নীর সহিত দুর্গাদেবীর মনোমালিন্য ঘটিল। দুর্গাদেবী পরিশেষে বৃদ্ধপিতা তর্কসিদ্ধান্তকে সবিশেষ অবগত করিলেন। তিনি বলিলেন, আমি সকলই বিশেষরূপ অবগত আছি। অতঃপর উহাদের সহিত তোমার একত্র সদ্ভাবে বাস করা চলিবে না। পৃথক্ স্থানে বাস করা নিতান্ত আবশ্যক। দুর্গাদেবী তাহাতে সম্মত হইলেন। পরদিন তর্কসিদ্ধান্ত গ্রামস্থ ভদ্রলোকদিগকে আহ্বান করিয়া বলিলেন যে, রামসুন্দরের ও বধূমাতার সহিত দুর্গার এক গৃহে বাস করা দুরূহ, অতএব আমি স্বতন্ত্র স্থানে ইহার গৃহ নির্ম্মাণ করিয়া দিব স্থির করিয়াছি। তাহাতে গ্রামস্থ ভদ্রলোকগণও সম্মত হইলেন। অনন্তর বার্ষিক নয় টাকা পাঁচ আনা জমায় কিঞ্চিৎ ভূমি লইয়া, তাহাতে গৃহ নির্ম্মাণ করিয়া দিলেন; পরে জমিদারকে বলিয়া ও অনুরোধ করিয়া উক্ত জমি লাখরাজ করিয়া দিবেন স্থির করেন। ইতিমধ্যে তর্কসিদ্ধান্ত ইহজগৎ পরিত্যাগ করিয়া লোকান্তর গমন করিলেন। সুতরাং এই নূতন বাস্তু আর লাখরাজ হইল না। এই বাস্তুর বার্ষিক কর জমিদরকে দিতে হইল। দুর্গাদেবীর সংসার নির্ব্বাহের উপায়ান্তর ছিল না। তৎকালে বিলাতী সার আমদানি হয় নাই; এ প্রদেশের নিরুপায় অনেক স্ত্রীলোকেই টেকুয়া ও চরকায় সূতা কাটিয়া, সেই সূতা বিক্রয় করিয়া অতিকষ্টে সংসারযাত্রা নির্ব্বাহ করিত। আত্মীয়বর্গের উপদেশানুসারে দুর্গাদেবীও অগত্যা একটি চরকা ক্রয় করিয়া সূতা কাটিতে আরম্ভ করিলেন। সূতা বিক্রয় করিয়া অল্পই আয় হইত। তাদৃশ স্বল্প আয় দ্বারা আপনার, দুই পুত্রের ও চারি কন্যার ভরণ পোষণ সম্পন্ন হওয়া সম্ভবপর নহে। সুতরাং তাঁহাদের আহারাদি সর্ব্ববিষয়ে ক্লেশের সীমা ছিল না। এক্ষণে ঠাকুরদাসের বয়ঃক্রম চতুর্দ্দশ বৎসর অতীতপ্রায়; পড়াশুনা অধিক দিন করিলে সংসার চলা দুষ্কর। আত্মীয়বর্গ এই উপদেশ দেন যে, সংস্কৃত অধ্যয়ন বন্ধ করিয়া, যাহাতে শীঘ্র উপার্জ্জন করিতে সমর্থ হন, এরূপ বিদ্যাশিক্ষা করা অত্যাবশ্যক। ঠাকুরদাস জননীর অসহ্য যন্ত্রণা দর্শনে নিরতিশয় কাতর হইয়া অর্থোপার্জ্জনের আকাঙ্ক্ষায় জননীর অনুমতি লইয়া গৃহত্যাগ করিয়া কলিকাতায় যাত্রা করিলেন।

 ঠাকুরদাস কলিকাতায় আগমনের পর কিরূপ কষ্টে দিনযাপন করিয়া অবস্থার উন্নতিসাধন করিয়াছিলেন, সে সম্বন্ধে বিদ্যাসাগর মহাশয় স্বরচিত আত্মচরিতে যাহা উল্লেখ করিয়াছেন, পাঠকবর্গের অবগতির জন্য তাহার কিয়দংশ এস্থানে উদ্ধৃত করিয়া দিলাম। “সভারাম বাচস্পতি নামে আমাদের এক সন্নিহিত জ্ঞাতি কলিকাতায় বাস করিয়াছিলেন। তাঁহার পুত্র, জগন্মোহন ন্যায়ালঙ্কার, সুপ্রসিদ্ধ চতুভুর্জ ন্যায়রত্নের নিকট অধ্যয়ন করেন। ন্যায়ালঙ্কার মহাশয়, ন্যায়রত্ন মহাশয়ের প্রিয়শিষ্য ছিলেন; তাঁহার অনুগ্রহে ও সহায়তায়, কলিকাতায় বিলক্ষণ প্রতিপন্ন হয়েন। ঠাকুরদাস, এই সন্নিহিত জ্ঞাতির আবাসে উপস্থিত হইয়া, আত্মপরিচয় দিলেন, এবং কিজন্যে আসিয়াছেন, অশ্রুপুর্ণলোচনে তাহা ব্যক্ত করিয়া, আশ্রয় প্রার্থনা করিলেন। ন্যায়ালঙ্কার মহাশয়ের সময় ভাল, অকাতরে অন্ন ব্যয় করিতেন; এমন স্থলে, দুর্দ্দশাপন্ন আসন্ন জ্ঞাতিসন্তানকে অন্ন দেওয়া দুরূহ ব্যাপার নহে। তিনি, সাতিশয় দয়া ও সবিশেষ সৌজন্য প্রদর্শন পূর্ব্বক ঠাকুরদাসকে আশ্রয়প্রদান করিলেন।

 ঠাকুরদাস, প্রথমতঃ বনমালিপুরে, তৎপরে বীরসিংহে, সংক্ষিপ্তসার ব্যাকরণ পড়িয়াছিলেন। এক্ষণে তিনি, ন্যায়ালঙ্কার মহাশয়ের চতুষ্পাঠীতে, রীতিমত সংস্কৃত বিদ্যার অনুশীলন করিবেন, প্রথমতঃ এই ব্যবস্থা স্থির হইয়াছিল, এবং তিনিও তাদৃশ অধ্যয়ন বিষয়ে, সবিশেষ অনুরক্ত ছিলেন। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে, তিনি কলিকাতায় আসিয়াছিলেন, সংস্কৃতপাঠে নিযুক্ত হইলে, তাহা সম্পন্ন হয় না। তিনি, সংস্কৃত পড়িবার জন্য, সবিশেষ ব্যগ্র ছিলেন, যথার্থ বটে; এবং সর্ব্বদাই মনে মনে প্রতিজ্ঞা করিতেন, যত কষ্ট, যত অসুবিধা হউক না কেন, সংস্কৃতপাঠে প্রাণপণে যত্ন করিব। কিন্তু, জননীকে ও ভাইভগিনীগুলিকে কি অবস্থায় রাখিয়া আসিয়াছেন, যখন তাহা মনে হইত, তখন সে ব্যগ্রতা ও সে প্রতিজ্ঞা, তদীয় অন্তঃকরণ হইতে একেবারে অপসারিত হইত। যাহা হউক, অনেক বিবেচনার পর, অবশেষে ইহাই অবধারিত হইল, যাহাতে তিনি শীঘ্র উপার্জ্জনক্ষম হন, সেইরূপপড়াশুনা করাই কর্ত্তব্য।

 এই সময়ে, মোটামুটি ইঙ্গরেজী জানিলে, সওদাগর সাহেবদিগের হৌসে, অনায়াসে কর্ম্ম হইত। এজন্য, সংস্কৃত না পড়িয়া, ইঙ্গরেজী পড়াই, তাঁহার পক্ষে পরামর্শসিদ্ধ স্থির হইল। কিন্তু, সে সময়ে ইঙ্গরেজী পড়া সহজ বাপার ছিল না। তখন, এখনকার মত, প্রতি পল্লীতে ইঙ্গরেজী বিদ্যালয় ছিল না। তাদৃশ বিদ্যালয় থাকিলেও, তাঁহার ন্যায় নিরুপায় দীন বালকের তথায় অধ্যয়নের সুবিধা ঘটিত না। ন্যায়ালঙ্কার মহাশয়ের পরিচিত এক ব্যক্তি কার্য্যোপযোগী ইঙ্গরেজী জানিতেন। তাঁহার অনুরোধে, ঐ ব্যক্তি ঠাকুরদাসকে ইঙ্গরেজী পড়াইতে সম্মত হইলেন। তিনি বিষয়কর্ম্ম করিতেন; সুতরাং দিবাভাগে, তাঁহার পড়াইবার অবকাশ ছিল না। এজন্য, তিনি ঠাকুরদাসকে সন্ধ্যার সময়, তাঁহার নিকট যাইতে বলিয়া দিলেন। তদনুসারে, ঠাকুরদাস প্রত্যহ সন্ধ্যার পর তাঁহার নিকটে গিয়া ইঙ্গরেজী পড়িতে আরম্ভ করিলেন।

 “ন্যায়ালঙ্কার মহাশয়ের বাটীতে, সন্ধ্যার পরেই, উপরিলোকের আহারের কাণ্ড শেষ হইয়া যাইত। ঠাকুরদাস, ইঙ্গরেজী পড়ার অনুরোধে, সে সময় উপস্থিত থাকিতে পারিতেন না;.... এইরূপে নক্তন্তন আহারে বঞ্চিত হইয়া তিনি দিন দিন শীণ ও দুর্ব্বল হইতে লাগিলেন।” পরিশেষে তাঁহার শিক্ষকের পরামর্শানুসারে তাঁহার আশ্রয় গ্রহণ করিলেন। এই সদাশয় দয়ালু মহাশয়ের দয়া ও সৌজন্য যেরূপ ছিল, আয় সেরূপ ছিল না। কোনও কোনও দিন কার্য্যবশতঃ তিনি দিবাভাগে বাসায় আসিতে পারিতেন না। সেই সেই দিন, ঠাকুরদাসকে সমস্ত দিন উপবাসী থাকিতে হইত।

 “কিছুদিন পরে, ঠাকুরদাস আশ্রয়দাতার সহায়তায়, মাসিক দুই টাকা বেতনে, কোনও স্থানে নিযুক্ত হইলেন। এই কর্ম্ম পাইয়া, তাঁহার আর আহ্লাদের সীমা রহিল না। পূর্ব্ববৎ আশ্রয়দাতার আশ্রয়ে থাকিয়া, আহারের ক্লেশ সহ্য করিয়াও বেতনের দুইটি টাকা, যথা নিয়মে জননীর নিকট পাঠাইতে লাগিলেন। তিনি বিলক্ষণ বুদ্ধিমান ও যারপরনাই পরিশ্রমী ছিলেন, এবং কখনও কোনও ওজর না করিয়া সকল কর্ম্মই সুন্দররূপে সম্পন্ন করিতেন; এজন্য, ঠাকুরদাস যখন যাঁহার নিকট কর্ম্ম করিতেন, তাঁহারা সকলেই তাঁহার উপর সাতিশয় সন্তুষ্ট হইতেন।

 “দুই তিন বৎসরের পরেই, ঠাকুরদাস মাসিক পাঁচ টাকা বেতন পাইতে লাগিলেন। তখন তাঁহার জননীর ও ভাইভগিনীগুলির, অপেক্ষাকৃত অনেক অংশে, কষ্ট দূর হইল।”

 এদিকে রামজয় তীর্থস্থানে থাকিয়া স্বপ্ন দেখেন যে, তুমি পরিবারবর্গকে কষ্ট দিয়া তীর্থক্ষেত্রে ভ্রমণ করিতেছ, ইহাতে তোমার অধর্ম্ম হইতেছে। একারণ পাঁচ বৎসরের পরে দেশে আগমনপূর্ব্বক বনমালিপুরে আসিয়া দেখিলেন যে, সহোদরেরা পৃথক হইয়াছেন এবং শুনিলেন যে, তাঁহার পত্নী বীরসিংহের পিত্রালয়ে অবস্থিতি করিতেছেন। সতরাং রামজয় পরিবারবর্গকে আনয়ন করিবার জন্য বীরসিংহে গমন করিলেন। গৈরিকবসন পরিধান করিয়া, হিন্দুস্থানী সন্ন্যাসীর বেশে শ্বশুরবাটীতে সমুপস্থিত হইলেন। প্রথমতঃ কাহাকেও আত্মপরিচয় না দিয়া, গ্রামের মধ্যে ইতস্ততঃ পরিভ্রমণ করিতে লাগিলেন। তাঁহার কনিষ্ঠা কন্যা অন্নপূর্ণা দেবী পিতাকে চিনিতে পারিয়া, ‘বাবা’ বলিয়া উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিয়া উঠিলেন। তখন রামজয় আত্মপরিচয় দিলেন। কয়েক দিবস বীরসিংহে অবস্থিতি করিয়া পরিবারবর্গকে বনমালিপুরে লইয়া যাইবার উদ্যোগ করিলেন। কিন্তু তাঁহার পত্নী বনমালিপুরে যাইতে সম্মত হইলেন না। যেহেতু তাঁহার ভ্রাতৃবর্গ অসদ্ব্যবহার করিয়াছেন; এতাবৎকালের মধ্যে তাঁহাদের কোন সংবাদ গ্রহণ করেন নাই; সুতরাং রামজয় অগত্যা বীরসিংহে পরিবারবর্গকে রাখিতে বাধ্য হইলেন।

 রামজয় অতি বুদ্ধিমান্, বলশালী, সাহসী, তেজস্বী ও স্বাধীনচেতা পুরুষ ছিলেন। নীরবে কাহারও নিকটে কোন অবমাননা সহ্য করা তাঁহার প্রকৃতিবিরুদ্ধ ছিল। চিরজীবন তিনি নিজ অভিপ্রায়ের অনুবর্ত্তী হইয়া চলিয়াছেন। কাহারও নিকট কোন উপকার প্রত্যাশায় হীনতা স্বীকার করা অপেক্ষা মৃত্যুই তিনি শ্রেয়ঃকল্প বলিয়া মনে করিতেন। তিনি অতিশয় অমায়িক ও সদাশয় লোক ছিলেন। সকলকে তিনি সমভাবে দেখিতেন এবং সকলের প্রতি সস্নেহ ব্যবহার করিতেন; এবিষয়ে তাঁহার উচ্চ নীচ প্রভেদজ্ঞান ছিল না। তিনি একাহারী, নিরামিষাশী ও নিষ্ঠাবান ও নৈমিত্তিক কর্ম্মে সবিশেষ অবহিত ছিলেন বলিয়া সকলে তাঁহার প্রতি যোগীর ন্যায় ভক্তি প্রকাশ করিত।

 তিনি লৌহযষ্টি হস্তে লইয়া সর্ব্বত্র ভ্রমণ করিতেন, কাহাকেও ভয় করিতেন না। এক সময়ে বীরসিংহ হইতে মেদিনীপুর যাইতেছেন, পথিমধ্যে এক ভল্লুক দেখিতে পাইলেন। ভল্লুক দেখিয়া ভয় না পাইয়া এক বৃক্ষের অন্তরালে দণ্ডায়মান হইলে, ভল্লুক তাঁহাকে আক্রমণ করিবার জন্য বৃক্ষের চতুর্দ্দিকে তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ ঘূর্ণমাণ হওয়ায় তিনিও অগ্রে অগ্রে ঘুরিতে লাগিলেন। কিয়ৎক্ষণ পরে ভল্লুক দুই হস্ত প্রসারণপূর্ব্বক বৃক্ষটি বেষ্টন করিয়া তাঁহাকে ধরিবার চেষ্টা করিল; ঐ সময় রামজয় বৃক্ষের অপর পার্শ্ব হইতে ভল্লুকের দুই হস্ত ধরিয়া বৃক্ষে ঘর্ষণ করিতে আরম্ভ করিলেন। তাহাতে ভল্ল্লুক মৃতপ্রায় হইলে, ছাড়িয়া দিলেন। ভল্লুক মৃতকল্প ভূপতিত দেখিয়া, তিনি প্রস্থান করিতে উদ্যোগী হইলেন। এমন সময়, ভল্লুক উঠিয়া দ্রুতবেগে দৌড়িয়া গিয়া রামজয়ের পষ্ঠে নখাঘাত করিল, তখন পৃষ্ঠে শোণিত ধারা বিগলিত দেখিয়া ক্রোধভরে লৌহদণ্ড প্রহারে তিনি ভল্লুকের প্রাণ বিনাশ করিলেন। ভল্লুকের পাঁচটি নখাঘাতের ক্ষতে প্রায় মাসাধিক কষ্ট পাইয়া পরে আরোগ্য লাভ করেন।

 বীরসিংহের বাস্তুবাটীর ভূস্বামী, রামজয়কে নিষ্কর ব্রহ্মোত্তর করিয়া দিবেন মানস করিয়াছিলেন; কিন্তু রামজয় দান গ্রহণ করিতে সম্মত হন নাই। গ্রামের অনেকেই লাখরাজ করিবার জন্য তাঁহাকে অনেক উপদেশ দিয়াছিলেন, কিন্তু তিনি কাহারও অনুরোধ রক্ষা করেন নাই। তদবধি বাস্তুভূমির নয় টাকা পাঁচ আনা কর আদায় হইয়া আসিতেছে, রামজয়ের মনোগত ভাব এই যে, নিষ্করে বাস করিলে, ভূস্বামী পুণ্যের অংশ গ্রহণ করিতে পারিবেন এবং তিনি আজন্মকাল মনে মনে অহঙ্কার করিতে পারিবেন যে, আমি উহাকে চিরকালের জন্য বাসস্থান দান করিয়াছি; একারণ নিষ্করে বাস করিতে সম্মত হইলেন না।

 “বীরসিংহে কতিপয় দিবস অতিবাহিত করিয়া, তর্কভূষণ মহাশয় জ্যেষ্ঠ পুত্র ঠাকুরদাসকে দেখিবার জন্য কলিকাতা প্রস্থান করিলেন। ঠাকুরদাসের আশ্রয়দাতার মুখে তদীয় কষ্টসহিষ্ণুতা প্রভৃতির প্রভূত পরিচয় পাইয়া, তিনি যথেষ্ট আশীর্ব্বাদ ও সবিশেষ সন্তোষ প্রকাশ করিলেন। বড়বাজারের দরমহাটায় [দয়েহাটায়] উত্তররাঢ়ীয় কায়স্থ ভাগবতচরণ সিংহ নামে এক সঙ্গতিসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। এই ব্যক্তির সহিত তর্কভূষণ মহাশয়ের বিলক্ষণ পরিচয় ছিল। সিংহ মহাশয় অতিশয় দয়াশীল ও সদাশয় মনুষ্য ছিলেন। তর্কভূষণ মহাশয়ের মুখে তদীয় দেশত্যাগ অবধি যাবতীয় বৃত্তান্ত অবগত হইয়া, প্রস্তাব করিলেন, আপনি অতঃপর ঠাকুরদাসকে আমার বাটীতে রাখুন, আমি তাহার আহার প্রভৃতির ভার লইতেছি; সে যখন স্বয়ং পাক করিয়া খাইতে পারে, তখন আর তাহার কোনও অংশে অসুবিধা ঘটিবে না।

 “এই প্রস্তাব শুনিয়া, তর্কভূষণ মহাশয়, সাতিশয় আহ্লাদিত হইলেন; এবং ঠাকুরদাসকে সিংহ মহাশয়ের আশ্রয়ে রাখিয়া বীরসিংহে প্রতিগমন করিলেন। এই অবধি, ঠাকুরদাসের আহারক্লেশের অবসান হইল। যথা সময়ে আবশ্যকমত, দুইবেলা আহার পাইয়া তিনি পুনর্জন্ম জ্ঞান করিলেন। এই শুভঘটনা দ্বারা, তাঁহার যে কেবল আহারের ক্লেশ দূর হইল, এরপ নহে; সিংহ মহাশয়ের সহায়তায় মাসিক আট টাকা বেতনে এক স্থানে নিযুক্ত হইলেন। ঠাকুরদাসের আট টাকা মাহিয়ানা হইয়াছে, এই সংবাদ শুনিয়া তদীয় জননী দুর্গাদেবীর আহ্লাদের সীমা রহিল না।” এই সময়ে তর্কভূষণ মহাশয় ঠাকুরদাসের বিবাহ দিলেন।

 ইহার কিয়ৎকাল পরে, একদিন রামজয়, ঠাকুরদাসকে বলিলেন, “তুমি এক্ষণে কর্ম্মক্ষম হইয়াছ, ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করিবেন, আমি ঈশ্বরের আরাধনাভিলাষী; পুনর্ব্বার তীর্থ-পর্য্যটনে যাত্রা করিতেছি।” এই কথা শুনিয়া ঠাকুরদাস অত্যন্ত দুঃখিত হইলেন। তিনি এ সংবাদ বাটীতে লিখিলেন।

 ভগবতী দেবী যৌবনসীমায় পদার্পণ করিবার পূর্ব্বেই শ্বশুরালয়ে আগমন করিলেন। মাতুলালয়ের স্বচ্ছল সংসারের সুখস্বচ্ছন্দতায় আর তাঁহার মন পরিতৃপ্ত করিতে পারিল না। তিনি স্বীয় পতির আত্মসম্মানকে এতদূর মুল্যবান মনে করিলেন যে, সন্তুষ্টচিত্তে মাতুলগৃহ ত্যাগ করিয়া পতিগৃহে নিতান্ত সাংসারিক অস্বচ্ছলতার মধ্যে বাস করিয়াও সুখে দিনযাপন করিতে লাগিলেন। সেই সময়ে, তিনি অনন্যমনে পতির চিত্তানুবর্ত্তন করিতেন, প্রত্যহ স্বহস্তে গৃহমার্জ্জনা, মৃত্তিকা দ্বারা উপলেপন, গহোপকরণ ভোজন পাত্রাদির সংস্কার, রন্ধন, যথাসময়ে ভোজ্যসামগ্রীর দান ও সাবধানে সমস্ত দ্রব্য রক্ষা করিতেন। তিরস্কার বাক্য মুখে আনিতেন না। গুরুজনের নিকটে উচ্চ আসনে উপবেশন বা উচ্চকথা কহিতেন না। সকলের প্রতি অনুকূলতা দেখাইতেন, আলস্যশূন্য হইয়া কালযাপন করিতেন, কখনও অতিহাস্য বা অপরিস্কৃত স্থানে বাস করিতেন না এবং কখনও ক্রোধের বশীভূত হইতেন না। শ্বশুর ও স্বজনের প্রতি ভক্তি দেখাইতেন, দেবর, ননন্দার প্রতি মায়া মমতা প্রদর্শন এবং পরিবারস্থ লোকদিগকে বিনয়নম্র ব্যবহারে পরিতুষ্ট করিতেন। তিনি অতি অল্প বয়সেই এই সমুদায় সুগৃহিণীর ধর্ম্ম অবগত হইয়াছিলেন। এক কথায় বলতে গেলে, তিনি সেই দুঃখদারিদ্র্যময় সংসারে দগ্ধ হৃদয়ের শান্তিদাত্রী, নিরাশয়ের আশাদায়িনী, বিপদে বন্ধু, কৌতুকে সখী, রন্ধনে পাচিকা, ভোজনে জননী, সেবায় পরিচারিকাস্বরূপা ছিলেন। পতিসেবায়, দয়া দাক্ষিণ্যে ও গুরুভক্তিতে তিনি এক আদর্শ হিন্দুরমণী ছিলেন।

 শুনিয়াছি, মহারাজ দুষ্মন্তের পত্নী শকুন্তলা পতিগৃহে গমন কালে মহর্ষি কন্ব তাঁহাকে উপদেশ দিয়াছিলেনঃ—

‘শুশ্রূষষ্ব গুরূন্ কুরুপ্রিয়সখীবৃত্তিং সপত্নীজনে
ভর্ত্তবিপ্রকৃতাপি রোষণতয়া মাস্ম প্রতীপং গমঃ।
ভুয়িষ্ঠং ভব দক্ষিণা পরিজনে ভোগেষ্বনুৎসেকিনী।
যান্ত্যেবং গৃহিণীপদং যুবতয়ো বামাঃ কুলস্যাধয়ঃ॥”

তুমি এস্থান হইতে পতিগৃহে গমন করিয়া শ্বশ্রূ প্রভৃতি গুরুজনকে সেবা করিবে, সপত্নীজনের প্রতি প্রিয়সখীর ন্যায় ব্যবহার করিবে, স্বামী অবমাননা করিলেও ক্রোধবশতঃ তাঁহার প্রতিকূলাচরণ করিও না। পরিজনের প্রতি অত্যন্ত অনুকূল হইবে। অভ্যুদয়ে অহঙ্কৃত হইও না। যুবতীগণ এইরপে গৃহণী পদ প্রাপ্ত হইয়া থাকে; প্রতিকূলচারিণীগণ গহের যন্ত্রণাস্বরূপ। জানি না, ভগবতী দেবীরও পতিগৃহে আগমন সময়ে, তাঁহার মাতুল মহাত্মা রাধামোহন বিদ্যাভূষণ মহাশয়, তাঁহাকে এরূপ কোন সরবান উপদেশ দিয়াছিলেন কি না!

 ভগবতী দেবীর বাল্যকালের সেবাধর্ম্ম, দীনতা, তেজস্বিতা প্রভৃতি সদগুণসমুহ যৌবনকালীন অপরাপর ইন্দ্রিয়গণের স্ফূর্ত্তি সঙ্গে সঙ্গে যেন নুতন মূর্ত্তি পরিগ্রহ করিয়াছিল। সাংসারিক কোন বিষয়ের অস্বচ্ছলতা হইলে, তিনি প্রাণান্তেও প্রতিবেশীর দ্বারস্থ হইতেন না। তিনি যেন মনে করিতেন, হিতৈষিতা বা কল্যাণ, প্রকৃতির উদ্দেশ্য সত্য; কিন্তু যতবার উপকৃত হইব, ততবার উপকারীর নিকট আনুগত্য ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করিতে হইবে এবং এই আনুগত্য ও কৃতজ্ঞতা চিরজীবন অক্ষুণ্ন রাখিতে হইবে। যিনি ভূয়িষ্ঠপরিমাণে অন্যের হিতসাধন করিতে পারেন, তিনিই যথার্থ গরীয়ান্। যে কখন অন্যের উপকার করে না, কেবল অপরের হিতাস্পদ হয়, তাহার ন্যায় নিকৃষ্টস্বভাব জঘন্যকর্ম্মা লোক আর জগতে নাই; অন্যের নিকট উপকার গ্রহণ করা, অথচ অন্যের উপকার না করাই বিশ্বমধ্যে অতিহীন কর্ম্ম। উপকারীর প্রত্যুপকার করা প্রায় জগৎ মধ্যে ঘটিয়া উঠে না, কিন্তু উপকৃত হইলে, তৃতীয় জনের হিতসাধনার দ্বারা তাহা পূর্ণমাত্রায়, বিন্দু বিসর্গ পর্য্যন্ত পরিশোধ করতেই হইবে। জীবনের ঋণ মুক্তহস্তে পরিশোধ করিয়া যাওয়াই সর্ব্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ধর্ম্ম।

 কিন্তু প্রতিবেশীদিগের মধ্যে কেহ সদিচ্ছাপ্রণোদিত হইয়া কোন দ্রব্য দিলে, ভগবতী দেবী তাহা কখনও প্রত্যাখ্যান করিতেন না, দেবপ্রসাদ ভাবিয়া সাদরে গ্রহণ করিতেন। ফলতঃ তিনি প্রতিবেশীদিগের সহিত অচ্ছেদ্য প্রীতিবন্ধনে আবদ্ধ থাকিতে সতত যত্ন করিতেন। তাঁহার শ্বশ্রূদেবীর সহিত কাহারও কখন মনোমালিন্য ঘটিবার উপক্রম হইলে, তিনি তাঁহাকে অতি বিনীত ভাবে বলিতেন, “মা, প্রভাতে উঠিয়া যাহাদিগের মুখ দেখিতে হইবে বা যাহাদিগকে মুখ দেখাইতে হইবে, তাহাদিগের সামান্য ত্রুটি তুচ্ছজ্ঞান করিয়া তাহাদিগের সহিত সদ্ভাব রক্ষা করিতে যদি সতত আপনি যত্নবতী না হন, তাহা হইলে লোকে আপনার দেবীচরিত্রে নিশ্চয়ই দোষারোপ করিবে। আর মা, আপনি দিবারাত্রি আমাদের কত দৌরাত্ম্য সহ্য করিতেছেন, প্রতিবেশীদিগের একটি দৌরাত্ম্য কি আপনি সহ্য করিতে পারিবেন না?” দুর্গাদেবী বধমাতার মুখনিঃসৃত এই সকল অমৃতময় বাক্য শ্রবণ করিয়া কোন প্রতিবাদ করিতেন না। ঈষৎ হাস্য করিয়া হৃষ্টচিত্তে ভগবতী দেবীকে আশীর্ব্বাদ করিতেন।

 পল্লীর সমবয়স্কা রমণীগণ তাঁহার সদ্ব্যবহারে ও স্নেহে এতদূর মুগ্ধ হইয়াছিলেন যে, প্রত্যেকে মনে করিতেন, তিনি প্রত্যেককেই অধিক ভালবাসেন। তিনি তাঁহাদের সুখদুঃখের সঙ্গিনী ছিলেন। তাঁহাদের মধ্যে কেহ পীড়িত হইলে, তিনি অনন্যমনে তাঁহার শুশ্রূষা করিতেন। মধ্যে মধ্যে পথ্যাদি গৃহ হইতে রন্ধন করিয়া লইয়া যাইতেন। তাঁহার স্নেহ ও মমতার এমনই এক আকর্ষণী শক্তি ছিল যে, গহপালিত জীবজন্তু পর্যন্ত তাঁহাকে দেখিলে, আনন্দে অধীর হইয়া পড়িত, তিনি তাহাদের যথাবিধি সেবা করিয়া পরম সন্তোষ লাভ করিতেন। ফলতঃ কি মহাপুরুষ, কি মহতী নারী সকলেই আপনাকে তৃণ হইতেও লঘু মনে করেন।

“তৃণাদপি নীচেন তরোরপি সহিষ্ণুনা।
অমানিনা মানদেন কীর্ত্তনীয়ঃ সদা হরিঃ॥”

এই মহাবাক্য তাঁহাদের হৃদয়ের মূল মন্ত্র। আত্মাভিমান তাঁহাদের কিছুই থাকে না। তাঁহারা মনে করেন, এ বিশ্ব তাঁহাদের এবং তাঁহারা এ বিশ্বের; সুতরাং সমত প্রাণিজগৎ তাঁহাদের প্রেমের বিষয়ীভূত। সেই জন্য, ইহসংসারে তাঁহাদের দ্বেষ্য কেহই থাকে না, সকলেই প্রিয় হয়।

 ভগবতী দেবী মনস্বিতা ও সাধুতা বিষয়ে একজন অগ্রগণ্য স্ত্রীলোক ছিলেন। রূপলাবণ্য এবং বিবিধ সদ্‌গুণে গৃহের শ্রীস্বরূপা ছিলেন, ফলতঃ তাঁহার চূর্ণকুন্তলের মুক্তকেশপাশ দেখিলে, স্নেহপাশ বলিয়াই মনে হইত। আকর্ণবিশ্রান্ত নেত্রদ্বয় কারুণ্যপূর্ণ ছিল, মুখমণ্ডলে যেন তাঁহার বিশ্বব্যাপী হৃদয়ের বিশ্বপ্রেম ফুটিয়া উঠিয়াছিল, তাঁহার ওষ্ঠদ্বয় দেখিলে, সত্য ও অমৃতের উৎস বলিয়াই মনে হইত, তাঁহার বাহুদ্বয় যেন সদা সেবাব্রতনিরত বলিয়া মনে হইত, তাঁহার সরলতাময় সৌন্দর্য্যে তরলতার চিহমাত্রও ছিল না, মাতৃভাবে পূর্ণ ছিল। এক কথায় বলিতে গেলে, তাঁহাকে দেখিলে মনে হইত, যেন সাক্ষাৎ অন্নপূর্ণা স্বর্গ হইতে মর্ত্তে অবতীর্ণ হইয়াছেন, এবং তাঁহার চরণারবিন্দে মস্তক অবলুণ্ঠিত করিয়া তাঁহার পদধুলিই গ্রহণ করিতে ইচ্ছা হইত।

 শাত্রে গৃহস্থাশ্রমের শ্রেষ্ঠতা প্রতিপাদিত হইয়াছে। মনু বলেনঃ—

যথা বায়ুং সমাশ্রিত্য বর্ত্তন্তে সর্ব্বজন্তবঃ।
তথা গহস্থমাশ্রিতা বর্ত্তন্তে সর্ব্ব আশ্রমাঃ॥
যস্মাৎ ত্রয়োহপ্যাশ্রমিণোজ্ঞানেনাম্নেন চান্বহম্।
গৃহস্থেনৈব ধার্য্যন্তে তস্মাজ্জ্যেষ্ঠাশ্রমো গৃহী॥

যেমন প্রাণবায়ুকে আশ্রয় করিয়া সমুদায় প্রাণী জীবিত রহিয়াছে, সেইরূপ গহস্থকে আশ্রয় করিয়া অপরাপর আশ্রমবাসিগণ জীবন ধারণ করিতেছেন। ব্রহ্মচারী, বানপ্রস্থ ও ভিক্ষু—তিন আশ্রমীই প্রতিদিন গহস্থকর্ত্তৃক বেদার্থব্যাখ্যান ও অন্নদানাদি দ্বারা প্রতিপালিত হইতেছেন, এ কারণ গহাস্থাশ্রম—সকল আশ্রম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। রমণীগণ এই সর্ব্বাশ্রমশ্রেষ্ঠ গহস্থাশ্রমের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। পরম কারুণিক পরমেশ্বর লজ্জা, বিনয়, নম্রতা ও সুশীলতা ইত্যাদি সদ্‌গুণে ভূষিত করিয়া ললনাগণকে সৃজন করিয়াছেন। তাঁহারা সমাজের লক্ষীস্বরূপা এবং দুঃখদারিদ্র্যপূর্ণ ও রোগশোকতাপময় সংসারে, সতত শান্তির অমৃতধারা বর্ষণ করিয়া থাকেন। শাস্ত্রকারেরা এ নিমিত্ত সুস্পষ্ট উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন, “শ্রীতে ও স্ত্রীতে কোনও প্রভেদ নাই।” ফলতঃ রমণীগণ মুর্ত্তিমতী দেবীর ন্যায় ইহসংসারে স্বর্গীয় সুখ বিতরণ করেন। সংসার ক্ষেত্রে ভারতরমণী পতিসেবায়, পতিভক্তিতে, সন্তান প্রতিপালনে, দয়াদাক্ষিণ্যে, গুরুভক্তিতে সর্ব্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠা। হিন্দু সমাজের সহিত হিন্দুরমণী শিক্ষায়, দীক্ষায়, সুখে দুঃখে শিরায় শিরায় ওতপ্রোত ভাবে বিজড়িত। আতিথ্য, দেবসেবা, শ্রাদ্ধ, তর্পণ প্রভৃতি হিন্দু শাস্ত্রকথিত কর্ম্মকাণ্ডগুলির ন্যায়, রমণীরত্নের কীর্ত্তিকলাপও হিন্দুসমাজের অঙ্গীভূত।

 হিন্দুশাস্ত্রে কথিত আছে, ধর্ম্মচর্য্যার জন্য ভার্য্যার প্রয়োজন। হিন্দু রমণীগণ স্বামীর সহিত সর্ব্বথা ধর্ম্মকার্য্যে লিপ্ত থাকেন। ধর্ম্মপরিণীতা বনিতা যজ্ঞস্থানে উপস্থিত না হইলে গহস্থের যজ্ঞসমাপ্তি হয় না। এইজন্য তাঁহারা সহধর্ম্মিণী নামে অভিহিত হইয়া থাকেন। সংসাররূপ মহাযজ্ঞ সুসম্পন্ন করিতে হইলে, রমণীগণের ন্যায় অধিষ্ঠাত্রী দেবীরই প্রয়োজন। রঘুকুলতিলক গুণাভিরাম রামচন্দ্র সীতারপিনী অধিষ্ঠাত্রী দেবীর পাতিব্রত্য গুণে, অরণ্যবাসেও স্বর্গসুখ উপভোগ করিয়াছিলেন। মহাবীর পাণ্ডুনন্দনগণ কৃষ্ণারূপিণী অধিষ্ঠাত্রী দেবীর সেবায় মুগ্ধ হইয়া ভীষণ বনবাসরূপ অসহ্য ক্লেশ অনায়াসে সহ্য করিয়াছিলেন। দরিদ্র ঠাকুরদাসও তাঁহার পর্ণকুটীরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী পণ্যশীলা ভগবতী দেবীর— সদনুষ্ঠান ও সদাচারে মুগ্ধ হইয়াছিলেন বলিয়াই, প্রবাসবাস ও দখদারিদ্র্যজনিত অশেষ ক্লেশ, ক্ষণেকের জন্যও তাঁহার মনে অশান্তি উৎপাদন করিতে পারে নাই। এবং সন্ন্যাসিশ্রেষ্ঠ ভিখারি দেবাদিদেব মহাদেব অন্নপূর্ণা দেবীর সাহায্যে যেরূপ তাঁহার চিরদারিদ্র্যপূর্ণ সংসারেও সুখ শান্তি স্থাপন করিয়া ধনাধিপতি কুবেরেরও পুজ্য হইয়াছিলেন, সেইরূপ দরিদ্র ঠাকুরদাসও তাঁহার সহধর্ম্মিণী পুণ্যবতী ভগবতী দেবীর লোকসেবা, ধর্ম্মানুষ্ঠান ও মায়া মমতার সাহায্যে, তাঁহার ধনী নির্ধন সমস্ত আত্মীয় স্বজনের ভক্তি ও সম্মান লাভ করিয়াছিলেন।

 ভগবতী দেবী অতিশয় বুদ্ধিমতী এবং মিতব্যয় ও মিতাচারে অভ্যস্ত ছিলেন বলিয়া তাঁহার শ্বশ্রূদেবী গৃহের আয় ব্যয় সম্বন্ধীয় সকল কার্য্য নির্ব্বাহের ভার তাঁহার উপরেই অর্পণ করিয়াছিলেন। তিনি এই দরিদ্র সংসারেও অতি যত্ন সহকারে ও পবিত্রভাবে নিত্য নৈমিত্তিক ধর্ম্মানুষ্ঠানসকল সুসম্পন্ন করিতেন। ফলতঃ ভগবতী দেবীর গুণেই ঠাকুরদাসের পর্ণকুটীর শান্তিপূর্ণ পুণ্যাশ্রমে পরিণত হইয়াছিল। সংসারের শ্রীবৃদ্ধি সাধনের জন্য ভগবতী দেবী দিবারাত্রি সমভাবে পরিশ্রম করিতেও ক্লান্তিবোধ করিতেন না। নিশীথে যখন গৃহের প্রায় সকলেই নিদ্রার সুকোমল ক্রোড়ে বিশ্রামসুখ উপভোগ করিতেন, তখনও তিনি জাগরিত থাকিয়া পরিবারস্থ সকলের পরিধেয় বস্ত্র প্রস্তুত করিবার নিমিত্ত চরকায় সূতা কাটিতেন।

 ভগবান্ মনু তাঁহার ধর্ম্মশাস্ত্রে স্ত্রীজাতির প্রতি বিশেষ সমাদর প্রদর্শন করিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেনঃ—

“যত্র নার্য্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ।”

স্ত্রীগণ যেখানে সমাদৃত, সম্মানিত ও পূজাপ্রাপ্ত হন, সেখানে দেবতারাও সন্তুষ্ট হইয়া থাকেন। ভগবতী দেবীর বিবিধ সদ্‌গুণে মুগ্ধ হইয়া পরিবারস্থ সকলে সতত তাঁহার প্রতি পরম সমাদর ও যত্ন প্রদর্শন করিতেন। বোধ হয়, সেইজন্যই দেবাশীর্ব্বাদে, দিন দিন ঠাকুরদাসের দরিদ্র সংসারের শ্রীবৃদ্ধি হইতে লাগিল।

 পুরাকালে আর্য্যেরাও স্ত্রীজাতির সম্যক আদর ও গৌরব করিয়া গিয়াছেন। ধর্ম্মপত্র যুধিষ্ঠির আপনার কিঙ্করীকে ‘ভদ্রে’ বলিয়া সম্বোধন করিতেন। পরষ্পরের প্রতি কুশল প্রশ্ন জিজ্ঞাসার সময় অগ্রে স্ত্রীলোকের বিষয় জিজ্ঞাসিত হইত। ভরত বনবাসী রামচন্দ্রের নিকট উপস্থিত হইলে, রামচন্দ্র তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, “তুমি স্ত্রীলোকের প্রতি সম্মান দেখাইয়া থাক ত?” ধৃতরাষ্ট্রও এইরূপ এক সময়ে যুধিষ্ঠিরকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, “রাজ্যের দুঃখিনী অঙ্গনারা ত উত্তমরূপে রক্ষিত হইয়াছে? রাজবাটীর স্ত্রীলোকদিগের প্রতি সম্মান প্রদর্শিত হয় ত?” যে ব্যক্তি স্ত্রীলোকদিগের দ্রব্য অপহরণ, কি বিবাহিতা বা অবিবাহিতা নারীর বিশুদ্ধ চরিত্রে দোষারোপ করিত, সে গুরুদণ্ডে দণ্ডিত হইত। আবহমান কাল হইতেই ভারতে নারীপূজা প্রচলিত হইয়া আসিতেছে। এবং এই নারীপূজাই ভারতের এক অক্ষয়কীর্ত্তি।

 ভগবতী দেবীর বধূ জীবনের সেবাধর্ম্মের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এস্থলে উল্লেখ করিয়া আমরা এই অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি করিব।

 একদিন দিবা অবসানপ্রায়, এমন সময়ে ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় শুষ্ককণ্ঠ এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ গৃহে অভ্যাগত হইলেন। সেদিন গৃহে অত্যন্ত অস্বচ্ছল অবস্থা। রাত্রে সন্তানগণ অর্দ্ধাশনে এবং পরদিন অনশনে দিবাযাপন করিবে, এইরূপই ব্যবস্থা হইয়া রহিয়াছে। ক্ষুধাতুর, তৃষ্ণাতুর ব্রাহ্মণ অতিথি গৃহে আগত, উপায় কি? কিছুক্ষণ পরে ভগবতীর শ্বশ্রূদেবী দরবিগলিতনেত্রে করযোড়ে অতিথিকে নিবেদন করিলেন, ‘মহাশয়, আমি অতি হতভাগিনী। আমি গৃহস্থ আশ্রমে থাকিয়া গার্হস্থ্যধর্ম্ম পালন করিতে পারিলাম না। অভ্যাগতের পরিচর্য্যায় বিমুখ হইলাম। আমার অরণ্যবাসই শ্রেয়ঃ। আমার সন্ততিগণ অনশনে নিশাযাপন করিবে, এইরূপ অবস্থা, আমি কিরূপ করিয়া অতিথি সৎকার করিব ভাবিয়া আকুল হইতেছি। দয়া করিয়া আমার অপরাধ গ্রহণ করিবেন না।” ভগবতী দেবী অন্তরাল হইতে এই কথা শুনিয়া অশ্রু সম্বরণ করিতে পারিলেন না। শ্বশ্রূদেবী সমীপে ধীরে ধীরে গমন করিয়া মৃদস্বরে বলিলেন,—“মা, এরূপ ক্ষুধাতুর ও তুষ্ণাতুর অতিথিকে কখন প্রত্যাখ্যান করা হইবে না। যে কোন উপায়ে ইঁহার সৎকার করতেই হইবে। আপনি ইঁহাকে বসিতে আসন ও পাদ্যার্ঘ দিউন।” এই কথা বলিয়া তিনি হস্তে পরিহিত একগাছি পিত্তলের পৈঁছা উন্মোচন করিয়া একজন প্রতিবেশিনীর নিকট বন্ধক রাখিলেন এবং তদ্বিনিময়ে একসের তণ্ডুল গ্রহণ করিলেন। পরে সেই তণ্ডুলের একপুয়া নিকটস্থ কোন মুদীর দোকানে প্রেরণ করিয়া একপুয়া দাউল আনাইলেন। পরিশেষে, সেই দাউল ভাতে ভাত রাঁধিয়া অতিথি সৎকার করিলেন। বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ ভগবতী দেবীর শ্রদ্ধা, ভক্তি ও পরিচর্য্যায় এরপ সন্তুষ্ট হইয়াছিলেন যে, সেই ‘ডালভাতে ভাত’ পরম পরিতোষপূর্ব্বক ভোজন করিলেন। ব্রাহ্মণের ভোজনান্তে, ভগবতী শ্বশ্রূদেবীকে বলিলেন, “মা, আমাদের ত একখানি কুটীর মাত্র সম্বল। এখন কোন প্রতিবেশীর গৃহে ইঁহার শয়নের ব্যবস্থা করিয়া দিয়া আসুন।” শ্বশ্রূদেবীও বধূর কথামত কার্য্য করিলেন। পরদিবস প্রভাতে শয্যা পরিত্যাগপূর্ব্বক প্রাতঃকৃত্য সমাপন করিয়া ব্রাহ্মণ দুর্গাদেবীর গহপ্রাঙ্গণে আসিয়া উপস্থিত হইলেন এবং উপবীত দ্বারা হস্তদ্বয় সংবদ্ধ করিয়া কৃতাঞ্জলিপুটে বলিতে লাগিলেন,—“হে সবিতৃদেব! তুমি জগল্লোচন। জগতের ধর্ম্ম, অধর্ম্ম, পাপ, পুণ্য সমস্তই তুমি নিরীক্ষণ করিতেছ। এই বালিকা বধূর হৃদয়ে সেবাধর্ম্ম, দয়াদাক্ষিণ্য, স্নেহ, মমতা, অন্তঃসলিলা ফল্গুনদীর ন্যায় স্বতঃ প্রবাহিত হইতেছে, এ সমুদয় বিষয় তুমি সম্পূর্ণ পরিজ্ঞাত আছ, ইনি যেন ধনে বংশে শ্রীবদ্ধি লাভ করেন।” এই কথা বলিয়া ব্রাহ্মণ তথা হইতে প্রস্থান করিলেন।

 আহা! সামান্য দরিদ্রের পর্ণকুটীরে যে আতিথেয়তা, উদারতা, যে সহানুভূতি ও প্রেম প্রত্যক্ষ করা যায়, তাহার তুলনা অতুল ঐশ্বর্য্যপূর্ণ রাজপ্রাসাদেও নাই! এখনও এই হতভাগ্য দেশের অতি সামান্য নিভৃত কুটীরে নীরবে প্রত্যহ যে মহান্ পবিত্র কর্ম্মের অনুষ্ঠান হইতেছে, তাহার তুলনা কোথায়? ঐশ্বর্য্যের আগার ইন্দ্রভবনতুল্য ধনীর ভোগবিলাসপূর্ণ উত্তুঙ্গ সৌধমালা দরিদ্রের শূন্য পর্ণকুটীরের বিমল পুণ্যময় জ্যোতিতে চিরনিষ্প্রভ হইয়া রহিয়াছে। দরিদ্রের পর্ণকুটীরে ঐশ্বর্য্যের কিছুই নাই সত্য, কিন্তু সেখানে হৃদয় আছে, দুঃখীর দুঃখে সহানুভূতি প্রকাশ ও দঃখ-মোচন করিবার জন্য সরল প্রাণে চেষ্টা করিবার লোক আছে। হৃদয়বান্ দরিদ্র ব্যক্তি তাঁহার জীর্ণ-পর্ণকুটীরে ক্ষণেকের মধ্যে যে মহৎ পুণ্যানুষ্ঠান করিয়া থাকেন, তাহা যে ধনীর ঐশ্বর্য্যগর্ব্বে গতি সুবৃহৎ অট্টালিকাতে নাই, কে না তাহা স্বীকার করিবেন? ভারতীয় আর্য্যপর্ণকুটীরের অতুল মাহাত্ম্যে, আমরা এখনও জীবিত রহিয়াছি।

 প্রয়াগের পর্ণকুটীরে বন্যফলমুলাশী কৌপীনধারী ভরদ্বাজ মনি স্বীয় তপঃপ্রভাবে রামমাতা কৌশল্যা, রামানুজ ভরত, শত্রুঘ্ন ও অযোধ্যাবাসিগণের সৎকারের জন্য এই মর্ত্তে যে বিপুল স্বগীয় সুখ ও ঐশ্বর্য্যের অবতারণা করিয়াছিলেন, কুরুক্ষেত্রনিবাসী উঞ্ছবৃত্তিপরায়ণ, অনশনক্লিষ্ট দরিদ্র ব্রাহ্মণের পর্ণকুটীবে সামান্য শক্তুপ্রস্থদানে যে মহাযজ্ঞের অনুষ্ঠান হইয়াছিল, যে পবিত্র যজ্ঞভূমিতে লুণ্ঠিতকায় নকুলের অর্দ্ধাঙ্গ দিব্যকাঞ্চনময় রূপ ধারণ করিয়াছিল, যে যজ্ঞের অতুল মহিমা মহারাজ যুধিষ্ঠিরের যজ্ঞকেও নিষ্প্রভ করিয়াছিল, বজ্রনির্ঘোষে মহারাজ যুধিষ্ঠিরের বিরাট সভায় নকুল যে যজ্ঞের মহিমা কীর্ত্তন করিয়া সভাস্থ সকলকে স্তম্ভিত করিয়াছিল, ভারতভাগ্যে এখনও সেই পুণ্য ও তপঃপ্রভাব বিলপ্ত হয় নাই। দরিদ্রের পর্ণকুটীর মাহাত্ম্য এখনও ভারতকে সজীব রাখিয়াছে!