রিজিয়া

হা বিধি, অধীর আমি! অধীর কে কবে,
এ পোড়া মনের জ্বালা জুড়াই কি দিয়া?
হে স্মৃতি, কি হেতু যত পূর্ব্বকথা কয়ে,
দ্বিগুণিছ এ আগুন, জিজ্ঞাসি তোমারে।
কি হেতু লো বিষদন্ত ফণিরূপ ধরি,
মুহুর্মুহু দংশে আজি জর্জ্জরি হৃদয়ে?
কেমনে, লো দুষ্টা নারি, ভুলিলি নিষ্ঠুরে
আমায়? সে পূর্ব্ব সত্য, অঙ্গীকার যত,
সে আদর, সে সোহাগ, সে ভাব কেমনে
ভুলিল ও মন তোর, কে কবে আমারে?
হায় লো সে প্রেমাঙ্কুর কি তাপে শুকাল?
এ হেন সুবর্ণ-দেহে কি সুখে রাখিলি
এ হেন দুরন্ত আত্মা, রে দুরাত্মা বিধি!
এ হেন সুবর্ণময় মন্দিরে স্থাপিলি
এ হেন কু-দেবতারে তুই কি কৌতুকে?
কোথা পাব হেন মন্ত্র যার মহাবলে
ভুলি তোরে, ভূত কাল, প্রমত্ত যেমতি
বিস্মরে (সুরার তেজে, যা কিছু সে করে)
জ্ঞানোদয়ে? রে মদন, প্রমত্ত করিলি
মোরে প্রেম-মদে তুই; ভুলা তবে এবে,
ঘটিল যা কিছু, যবে ছিনু জ্ঞান-হীনে।
এ মোর মনের দুঃখ কে আছে বুঝিবে?
বন্ধুমাত্র মোর তুই, চল্‌ সিন্ধুদেশে,
দেখিব কি থাকে ভাগ্যে! হয়ত মারিব,

এ মনাগ্নি নিবাইব ঢালি লহু-স্রোতে,
নতুবা, রে মৃত্যু, তোর নীরব সদনে
ভুলিব এ মহাজ্বালা—দেখিব কি ঘটে!
কি কাজ জীবনে আর! কমল বিহনে
ডুবে অভিমানে জলে মৃণাল, যদ্যপি
হরে কেহ শিরোমণি, মরে ফণী শোকে।
চূড়াশূন্য রথে চড়ি কোন্‌ বীর যুঝে?
কি সাধ জীবনে আর? রে দারুণ বিধি,
অমৃত যে ফলে, আজ বিষাক্ত করিলি
সে ফলে? অনন্ত আয়ুদায়িনী সুধারে
না পেয়ে, কি হলাহল লভিনু মথিয়া
অকূল সাগরে, হায় হিয়া জ্বালাইতে?
হা ধিক্‌! হা ধিক্ তোরে নারীকুলাধমা!
চণ্ডালিনী ব্রহ্মকুলে তুই পাপীয়সী,
আর তোর পোড়া মুখ কভু না হেরিব,
যত দিন নাহি পারি তোর যমরূপে
আক্রমিতে রণে তোরে বীরপরাক্রমে!
ভেবেছিনু লয়ে তোরে সোহাগে বাসরে
কত যে লো ভালবাসি কব তোর কানে,
বায়ু যথা ফুলদলে সায়ংকালে পেয়ে
কাননে। সে প্রেমাশায় দিনু জলাঞ্জলি।
সে সুবর্ণ আশালতা তুই লো নিষ্ঠুরা
দাবানল-শিখারূপে নিষ্ঠুরে পোড়ালি!
পশ্ রে বিবরে তোর, তুই কাল ফণী।