পাতা:গল্পগুচ্ছ (প্রথম খণ্ড).djvu/৭: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

JoyBot (আলোচনা | অবদান)
OCRed
(কোনও পার্থক্য নেই)

২১:৪৮, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘাটের কথা পাষাণে ঘটনা যদি অঙ্কিত হইত তবে কতদিনকার কত কথা আমার সোপানে সোপানে পাঠ করিতে পারিতে। পুরাতন কথা যদি শুনিতে চাও তবে আমার এই ধাপে বইস ; মনোযোগ দিয়া জলকল্পোলে কান পাতিয়া থাকে, বহুদিনকার কত বিস্মৃত কথা শুনিতে পাইবে । আমার আর-এক দিনের কথা মনে পড়িতেছে। সেও ঠিক এইরূপ দিন। আশ্বিন মাস পড়িতে আর দুই-চারি দিন বাকি আছে । ভোরের বেলায় অতি ঈষৎ মধুর নবীন শীতের বাতাস নিদ্রোথিতের দেহে নূতন প্রাণ আনিয়া দিতেছে। তরুপল্লব অমনি একটু একটু শিহরিয়া উঠিতেছে। ভর গঙ্গা । অামাব চারিটিমাত্র ধাপ জলের উপরে জাগিয়া আছে । জলের সঙ্গে স্থলের সঙ্গে যেন গলাগলি । তীরে আম্রকাননের নীচে যেখানে কচুবন জন্মিয়াছে সেখান পর্যন্ত গঙ্গার জল গিয়াছে। নদীর ওই বাকের কাছে তিনটে পুরাতন ইটের পাজ চারি দিকে জলের মধ্যে জাগিয়া রহিয়াছে। জেলেদের যে নৌকাগুলি ডাঙার বাবলাগাছের গুড়ির সঙ্গে বাধা ছিল সেগুলি প্রভাতে জোয়ারের জলে ভাসিয়া উঠিয়া টলমল করিতেছে— দুরস্তযৌবন জোয়ারের জল রঙ্গ করিয়া তাহাদের দুই পাশে ছল ছল আঘাত করিতেছে, তাহাদের কর্ণ ধরিয়া মধুর পরিহাসে নাড়া দিয়া বাইতেছে। ভরা গঙ্গার উপরে শরৎপ্ৰভাতের যে রৌদ্র পড়িয়াছে তাহার কাচা সোনার মতো রঙ, চাপা ফুলের মতো রঙ । রৌদ্রের এমন রঙ আর কোনো সময়ে দেখা যায় না। চড়ার উপরে কাশবনের উপরে রৌদ্র পড়িয়াছে। এখনও কাশফুল সব ফুটে নাই, ফুটিতে আরম্ভ করিয়াছে মাত্র । রাম-রাম বলিয়া মাঝির নৌকা খুলিয়া দিল। পাখিরা যেমন আলোতে পাখা মেলিয়া আনন্দে নীল আকাশে উড়িয়াছে, ছোটো ছোটো নৌকাগুলি তেমনি ছোটো ছোটো পাল ফুলাইয়া সূর্যকিরণে বাহির হইয়াছে। তাহাদের পাখি বলিয়া মনে হয় ; তাহার রাজহাসের মতো জলে ভাসিতেছে, কিন্তু আনন্দে পাখা দুটি আকাশে ছড়াইয়া দিয়াছে।