পাতা:গল্পগুচ্ছ (প্রথম খণ্ড).djvu/১৪৮: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

JoyBot (আলোচনা | অবদান)
OCRed
(কোনও পার্থক্য নেই)

২২:০৯, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S88 গল্পগুচ্ছ হইবে । জীবরাজ্য হইতে আমি যে নির্বাসিত হইয়া আসিয়াছি— আমি যে আমার প্রেতাত্মা !" তাই যদি না হইবে তবে সে এই অধরাত্রে শারদাশংকরের স্বরক্ষিত অস্তঃপুর হইতে এই দুর্গম শ্মশানে আসিল কেমন করিয়া । এখনও যদি তার অস্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষ না হইয়া থাকে তবে দাহ করিবার লোকজন গেল কোথায়। শারদাশংকরের আলোকিত গৃহে তাহার মৃত্যুর শেষ মুহূর্ত মনে পড়িল, তাহার পরেই এই বহুদূরবর্তী জনশূন্য অন্ধকার শ্মশানের মধ্যে আপনাকে একাকিনী দেখিয়া সে জানিল, “আমি এই পৃথিবীর জনসমাজের আর কেহ নহি— আমি অতি ভীষণ, অকল্যাণকারিণী ; আমি আমার প্রেতাত্মা ? এই কথা মনে উদয় হইবামাত্রই তাহার মনে হইল, তাহার চতুর্দিক হইতে বিশ্বনিয়মের সমস্ত বন্ধন যেন ছিন্ন হইয়া গিয়াছে। যেন তাহার অদ্ভুত শক্তি, অসীম স্বাধীনতা— যেখানে ইচ্ছা যাইতে পারে, যাহা ইচ্ছা করিতে পারে। এই অভূতপূর্ব নূতন ভাবের আবির্ভাবে সে উন্মত্তের মতো হইয়া হঠাৎ একটা দমকা বাতাসের মতো ঘর হইতে বাহির হইয়া অন্ধকার শ্মশানের উপর দিয়া চলিল— মনে লজ্জা-ভয়-ভাবনার লেশমাত্র রহিল না । চলিতে চলিতে চরণ শ্রান্ত, দেহ দুর্বল হইয়া আসিতে লাগিল । মাঠের পর মাঠ আর শেষ হয় না— মাঝে মাঝে ধান্তক্ষেত্র, কোথাও বা এক-ইাটু জল দাড়াইয়া আছে । যখন ভোরের আলো অল্প অল্প দেখা দিয়াছে তখন অদূরে লোকালয়ের বঁাশঝাড় হইতে দুটো-একটা পাখির ডাক শুনা গেল। তখন তাহার কেমন ভয় করিতে লাগিল । পৃথিবীর সহিত জীবিত মঙ্গুষ্যের সহিত এখন তাহার কিরূপ নূতন সম্পর্ক দাডাইয়াছে সে কিছু জানে না। যতক্ষণ মাঠে ছিল, শ্মশানে ছিল, শ্রাবণরজনীর অন্ধকারের মধ্যে ছিল ততক্ষণ সে যেন নিৰ্ভয়ে ছিল, যেন আপন রাজ্যে ছিল । দিনের আলোকে লোকালয় তাহার পক্ষে অতি ভয়ংকর স্থান বলিয়া বোধ হইল। মানুষ ভূতকে ভয় করে, ভূতও মানুষকে ভয় করে ; মৃত্যুনদীর দুই পারে দুইজনের বাস ।