দিন পর্যন্ত ভাগীরথীতীরে সিরাজদ্দৌলার ধর্মবিশ্বাসের সাক্ষিরূপে দণ্ডায়মান ছিল। [১]কিন্তু আস্থাবান মুসলমান হইয়াও, সিরাজদৌলা তরুণীনে সঙ্গদোষে শাস্ত্রশাসন উল্লম্বন করিয়া সুপার অভ্যাস করিয়াছিলেন। সেই সঙ্গদোষেই সুয়াসহচরীদিগের তরল লাবণ্য তাঁহাকে বাল্যজীবনেই আত্মহারা করিয়া তুলিয়াছিল! আলিবর্দী সেই পাপ প্রবৃত্তি দমন করিবার জন্য এতদিন একবারও চেষ্টা করেন নাই। এখন অন্তিম সময় যতই নিকট হইতে লাগিল, সিরাজের পরিণাম চিন্তা করিয়া, আলিবর্দ্দী ততই ব্যাকুল হইয়া উঠিতে লাগিলেন। অবশেষে একদিন রুগ্নশয্যাপার্শ্বে সিরাজদ্দৌলাকে আহ্বান করিয়া, কোরাণ-শপথ পূর্বক ধর্ম্মপ্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ করিলেন; সেইদিন হইতে সিরাজদ্দৌলা চিরজীবনের জন্য সুরাপান পরিত্যাগ করিলেন! যে দুর্দমনীয় হৃদয় বেগের বশীভূত হইয়া, সিরাজদ্দৌলা আপন হাতে আপনার সমাধি-গন্ধয় খনন করিবার জন্ম, শৈশবেই সুরাপাত্র গ্রহণ করিয়াছিলেন, সেই তেজস্বী-হৃদয়ের বীর প্রতাপেই, একবারমাত্র মাতামহের অন্তিম শয্যা স্পর্শ করিয়া , চিরদিনের জন্য পাত্র চুর্ণ করিয়া ফেলিলেন। ইংলণ্ডেশ্বর দ্বিতীয় জেমস আমরণকাল দুর্নীতিপরায়ণ থাকিয়াও, ইতিহাসে ধর্ম্মপরায়ণ আদর্শ পতি বলিয়া প্রশংসালাভ করিয়াছেন, আর মোহান্ধ সিরাজদ্দৌল্লা অপরিণত জীবনে অতি অল্পদিনমাত্র পাপকুহকে আত্মবিসর্জন করিয়া, সময় থাকিতে বীরপ্রতাপে আত্মসংশোধনে কৃতকার্য্য হইয়াও, জগতের চক্ষে, ইতিহাসের চক্ষে, তাঁহার স্বদেশীয় হিন্দু-মুসলমানের চক্ষে 'সুরাপায়ী জঘন্য রুচির পরম-পাষন্ড' বলিয়া তিরষ্কৃত হইতেছেন-ইহারই নাম অদৃষ্ট-বিড়ম্বনা!
- ↑ H.Beveridge .c. s.