ব্যঙ্গকৌতুক/ডেঞে পিঁপ্ড়ের মন্তব্য
ডেঞে পিঁপ্ড়ের মন্তব্য
দেখো দেখো, পিঁপ্ড়ে দেখো! ক্ষুদে ক্ষুদে রাঙা রাঙা সরু সরু সব আনাগোনা করিতেছে—ওর সব পিঁপ্ড়ে যা’কে সংস্কৃত ভাষায় বলে পিপীলিকা। আমি হচ্চি ডেঞে, সমুচ্চ ডাঁইবংশসম্ভূত, ঐ পিঁপ্ড়েগুলোকে দেখলে আমার অত্যন্ত হাসি আসে!
হা হা হা, রকম দেখো, চল্চে দেখো, যেন ধূলোর সঙ্গে মিশিয়ে গেচে; আমি যখন দাঁড়াই তখন আমার মাথ আকাশে ঠেকে; সূর্য্য যদি মিছ্রির টুক্রে। হ’তো আমার মনে হয় আমি দাঁড়া বাড়িয়ে ভেঙে ভেঙে এনে আমার বাসায় জমিয়ে রাখ্তে পারতুম। উঃ, আমি এতো বড়ো একটা খড় এতোখানি রাস্তা টেনে এনেচি, আর ওরা দেখে কী ক’রচে—একটা মরা ফড়িং নিয়ে তিন জনে মিলে টানাটানি ক’রচে! আমাদের মধ্যে এতো ভয়ানক তফাৎ! সত্যি ব’ল্চি আমার দেখতে ভারি মজা লাগে!
আমার পা দেখো আর ওদের পা দেখো—যতোদূর চেয়ে দেখি আমার পায়ের আর অন্ত দেখিনে—এতো বড়ো পা। পদ-মর্য্যাদা এর চেয়ে আর কী আশা করা যেতে পারে! কিন্তু পিঁপ্ড়েরা আপনাদের ক্ষুদে ক্ষুদে প। নিয়েই সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট আছে! দেখে আশ্চর্য্য বোধ হয়! হাজার হোক, পিঁপ্ড়ে কি না!
ওরা একে ক্ষুদ্র,তাতে আবার আমি বিস্তর উঁচু থেকে দেখি—ওদের সবটা আমার নজরে আসে না্। কিন্তু আমি আমার অতি দীর্ঘ ছ’পায়ের উপরে দাঁড়িয়ে কটাক্ষে দৃকপাত ক’রে আন্দাজে ওদের আগাগোড়াই বুঝে নিয়েচি। কারণ পিঁপ্ড়ে এতো ক্ষুদ্র যে ওদের দেখে ফেল্তে অধিকক্ষণ লাগে না। পিঁপ্ড়েজাতি সম্বন্ধে আমি ডাঁই ভাষায় একটা কেতাব লিখ্বো এবং বক্তৃতাও দেবো।
পিঁপ্ড়ে সমাজ সম্বন্ধে আমার বিস্তর অনুমানলব্ধ অভিজ্ঞতা আছে। ডেঞেদের সন্তানস্নেহ আছে অতএব পিঁপ্ড়েদের তা কখনই থাক্তে পারে না, কারণ তারা পিঁপ্ড়ে, কেবলমাত্র পিঁপ্ড়ে, পিঁপ্ড়ে ব্যতীত আর কিছুই নয়। শােনা যায়, পিঁপড়েরা মাটিতে বাসা বানাতে পারে―স্পষ্টই বােধ হ’চ্চে তা’রা ডেঞে জাতির কাছে থেকে স্থপতি বিদ্যা শিক্ষা ক’রেচে—কারণ তারা পিঁপ্ড়ে—সামান্য পিঁপ্ড়ে, সংস্কৃত ভাষায় যাকে বলে পিপীলিকা।
পিঁপ্ড়েদের দেখে আমার অত্যন্ত মায়া হয়—ওদের উপকার করবার প্রবৃত্তি আমার অত্যন্ত বলবর্তী হ’য়ে উঠে। এমন কি আমার ইচ্ছা করে, সভ্য ডেঞেসমাজ কিছুদিনের জন্য ছেড়ে, দলকে-দল ডেঞে ভ্রাতৃবৃন্দকে নিয়ে পিঁপ্ড়েদের বাসার মধ্যে বাসস্থাপন করি এবং পিঁপ্ড়েসংস্কার কার্য্যে ব্রতী হই—এতদূর পর্যন্ত ত্যাগস্বীকার কর্ত্তে আমি প্রস্তুত আছি। তাদের শর্করকণা গলাধঃকরণ ক’রে এবং তাদের বিবরের মধ্যে হাত পা ছড়িয়ে কোনােক্রমে আমরা জীবনযাপন ক’র্তে রাজি আছি, যদি এতেও তা’রা কিছুমাত্র উন্নত হয়!
তা’রা উন্নতি চায় না—তা’রা নিজের শর্করা নিজে খেতে এবং নিজের বিবরে নিজে বাস ক’র্তে চায়—তা’র কারণ, তা’রা পিঁপ্ড়ে, নিতান্তই পিঁপড়ে! কিন্তু আমরা যখন ডেঞে, তখন আমরা তাদের উন্নতি দেবােই, এবং তাদের শর্করা আমরা খাবো ও তাদের বিবরে আমরা বাস ক’র্বো! আমরা এবং আমাদের ভাইপাে, ভাগ্নে, ভাইঝি ও শ্যালকবৃন্দ।
যদি জিজ্ঞাসা কর তাদের শর্করা আমরা কেন খাবো এবং তাদের বিবরে কেন বাস ক’র্বো। তবে তা’র প্রধান কারণ এই দেখাতে পারি যে তা’রা পিঁপড়ে এবং আমরা ডেঞে। দ্বিতীয়, আমরা নিঃস্বার্থ ভাবে পিঁপড়েদের উন্নতিসাধনে ব্রতী হ’য়েচি, অতএব আমরা তাদের শর্করাডেঞে পিঁপ্ড়ের মন্তব্য
খাবো। এবং বিবরেও বাস ক’র্বো। তৃতীয়, আমাদের প্রিয় ডাঁই ভূমি ত্যাগ ক’রে আস্তে হবে, সেইজন্য সেই দুঃখ-নিবারণের জন্য শর্করা কিছু অধিক পরিমাণে খাওয়া আবশ্যক। চতুর্থ, বিদেশে বিজাতির মধ্যে বিচরণ ক’র্তে হবে, নানা রোগ হ’তে পারে—তা’হলে বোধ করি, আমরা বেশি দিন বাঁচ্বো না—হায় আমাদের কী শোচনীয় অবস্থা! অতএব শর্করা পেতেই হবে, এবং বিবরেও যতটা স্থান আছে সমস্ত আমরা এবং আমাদের শ্যালকেরা মিলে ভাগাভাগি ক’রে নেবো।
পিঁপড়েরা যদি আপত্তি করে—তবে তাদের ব’ল্বো অকৃতজ্ঞ। যদি তা’রা শর্করা খেতে এবং বিবরে স্থান পেতে চায় তবে ডাঁই ভাষায় তাদের স্পষ্ট ব’ল্বো তোমরা পিঁপড়ে, ক্ষুদ্র, তোমরা পিপীলিকা। চেয়ে আর প্রবল যুক্তি কী আছে!
তবে পিঁপড়েরা খাবে কী? তা জানিনে। হয়তো আহার এবং বাসস্থানের অকুলান হ’তেও পারে, কিন্তু এটা তাদের ধৈর্য্য ধ’রে বিবেচনা করা উচিত যে, আমাদের দীর্ঘপদস্পর্শে ক্রমে তাদের পদবৃদ্ধি হবার সম্ভাবনা আছে। শৃঙ্খলা এবং শান্তির কিছুমাত্র অভাব থাক্বে না। তা’রা ক্রমিক উন্নতি লাভ করুক্ এবং আমরা ক্রমিক শর্করা খাই, এম্নি এক্টা বন্দোবস্ত থাক্লে তবেই শৃঙ্খলা এবং শান্তিরক্ষা হবে, না হ’লে তুমুল বিবাদের আটক কী? মাথায় গুরুভার প’ড়লে এতোই বিবেচনা ক’রে চল্তে হয়!
শর্করাভাবে এবং অতিরিক্ত শান্তি ও শৃঙ্খলার ভারে যদি পিঁপড়েজাতি মারা পড়ে? তা হলে আমরা অন্যত্র উন্নতি প্রচার কর্তে যাবো—কারণ আমরা ডেঞে জাতি; উচ্চ পদের প্রভাবে অত্যন্ত উন্নত।