ভূমিকা

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ হিসেবে জলবায়ুর পরিবর্তনকেই প্রধানত দায়ী করা হয়। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খড়া, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে বিশ্বের সকল মানুষ। বাংলাদেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং ব্যাপক বন্যা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ুর পরিবর্তনের আলামত হিসেবে অনেকে মনে করে থাকেন। জলবায়ুর পরিবর্তন বৈশ্বিক বিষয় হলেও বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশগুলো এর পরিণতি বেশি মাত্রায় ভোগ করে থাকে। এক হিসাবে বলা হয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা সামান্য বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ উপকূলীয় অঞ্চল পানিতে তলিয়ে যাবে। কোটি কোটি মানুষ হবে পরিবেশ শরণার্থী। ক্ষতি হবে ফসলের, বৃদ্ধি পাবে খাদ্যাভাব ও রোগশোক, বাধাগ্রস্ত হবে উন্নয়ন উদ্যোগ।

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য বা MDG অর্জন করতে হলে জলবায়ুর এই পরিবর্তন রোধে আমাদের সবাইকেই উদ্যোগী হয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সকল পর্যায়ের এবং সকল স্তরের মানুষের সচেতনতা ছাড়া এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়।

জাতিসংঘ জলবায়ুর পরিবর্তনকে অগ্রাধিকার তালিকায় স্থান দিয়েছে। জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলন (UNFCCC) বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে বৈশ্বিক প্রয়াসের সাথে একযোগে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে।

জলবায়ুর এই পরিবর্তন সম্পর্কে বাংলাদেশের যুব ও ছাত্রসমাজকে সচেতন করে তোলার দেশে দেশে জলবায়ুর পরিবর্তন পুস্তিকাটি প্রকাশ করা হলো। সহজ ভাষায় সর্বসাধারণের বোধগম্যতার প্রতি লড়া রেখে এটি রচনা করা হয়েছে। এতে সরকারি, বেসরকারি ও জাতিসংঘের তথ্যউপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে। উদ্দেশ্য সকল স্তুরের মানুষকে জলবায়ুর পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন করা।

আমাদের এ কাজে উলেস্লখযোগ্য সহযোগিতা প্রদান করেছেন ঢাকাস্থ UNDP'র শিরীণ কামাল সৈয়দ। ছাত্র-ছাত্রীদের জলবায়ুর পরিবর্তন বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিতে এই পুস্তিকাটি সামান্যতম সহায়ক হলেও আমাদের শ্রম সার্থক হবে বলে মনে করি।

কাজী আলী রেজা
জাতিসংঘ তথ্য কেন্দ্র
ঢাকা, বাংলাদেশ


দেশে দেশে জলবায়ুর পরিবর্তন

পৃথিবীর উষ্ণায়ন বা ওয়ার্মিংয়ের কারণে দেশে দেশে জলবায়ুর যে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, তাতে সমগ্র পৃথিবী এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকেই ধাবিত হচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তন স্পষ্ট করে তুলছে বিশ্বব্যাপী আবহাওয়ার বৈরী আচরণ। প্রশ্ন হলো পৃথিবীর উষ্ণায়ন কেন হচ্ছে। এই উচ্চতা বাড়ার মূল কারণ গ্রিনহাউজ গ্যাসের ইফেক্ট ও উর্ধ্বাকাশে ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব কমে যাওয়া। ইউরোপের দেশগুলোতে অষ্টাদশ শতাব্দীর শিল্প পর থেকে কলকারখানা, যানবাহন, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, কৃষি ও পশুখামারগুলো কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও মিথেনসহ নানা গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করে চলেছে। কাঠ, কয়লা, তেল এবং পরবর্তীকালে গ্যাস পোড়ানোর ফলে কার্বন-ডাই অক্সাইড চলে এসেছে। এত দিন পৃথিবীর বনাঞ্চল ও সাগর এই গ্যাস আহরণ করে পৃথিবীকে মোটামুটি নিরাপদ রেখেছিল। কিন্তু বিশ্বের জনসংখ্যা বিপুলভাবে বেড়ে যাওয়ায় অনেক দেশে বন ধ্বংস করা হচ্ছে। এতে গাছপালা কমে যাওয়ায় কার্বন আহরণ প্রক্রিয়াও কমে গেছে। এ কারণে ক্রমাগত উষ্ণ হয়ে উঠছে এবং পৃথিবীতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় অনেক বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকায় খরা ও দাবানল, ব্রিটেনে প্রলয়ঙ্করী বন্যা, পাকিস্তানে আকস্মিক পাহড়ি ঢল ও ভূমিধস, চাঁনের অনেক অঞ্চলে বন্যা ও ভূমিধস, বাংলাদেশে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অবিরাম বৃষ্টির ফলে দীর্ঘ বন্যা জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক ফল।

এই পৃথিবীর মানুষ সীমাহীন লোভে কাতর। প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি পেতে চায় সে। এক হিসাবে দেখা যাচ্ছে গত ৫০ থেকে ১০০ বছরে মানুষ যে পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ ভোগ করেছে, তা এর আগে ১০ হাজার বছরেরও বেশি সময়ে ব্যবহারের মাত্রা অতিক্রম করেছে। সম্ভবত প্রকৃতি আমাদের এই সীমাহীন লোভের পাপ স্খলনের সুযোগ দেয়ার জন্যই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আবহাওয়ার পরিবর্তন তারই একটা নমুনা। এই স্তরে যদি মানুষ তার অতীত ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করে, প্রকৃতি হয়তো আর রূষ রূপ ধারণ করবে না।

১৯৮০’র দশক থেকে গ্রিনহাউজ গ্যাসের প্রভাবে প্রতি বছর পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়েছে গড়ে দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পৃথিবীর উষ্ণতা এই গতিতে বাড়তে থাকলে এ শতাব্দীর শেষের দিকে কুমেরম্নর বিস্তীর্ণ এলাকায় বরফ গলে যাবে। আমাদের কাছে হিমালয় অঞ্চলেও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন “গঙ্গোত্রী হিমবাহসংলগ্ন প্রায় ১০ কিলোমিটার বিস্তৃত এলাকায় বরফ গলে হিমবাহের গায়ে গর্ত বা ফাটল সৃষ্টি হয়েছে।