ব্রজাঙ্গনা কাব্য।

প্রথম সর্গ।


[বিরহ।]

(বংশী ধ্বনি।)

নাচিছে কদম্ব মূলে, বাজায়ে মুরলী, রে,
রাধিকা রমণ!
চল, সখি, ত্বরা করি,  দেখিগে প্রাণের হরি,
ব্রজের রতন!
চাতকী আমি স্বজনি,   শুনি জলধর-ধ্বনি,
কেমনে ধৈরজ ধরি থাকিলে এখন্?
যাক্ মান, যাক্ কুল,   মন তরী পাবে কূল;
চল, ভাসি প্রেমনীরে, ভেবে ও চরণ!

মানস-সরসে, সখি, ভাসিছে মরাল, রে
কমল কাননে!

কমলিনী কোন্ ছলে,   থাকিবে ডুবিয়া জলে,
বঞ্চিয়া রমণে?
যে যাহারে ভাল বাসে, সে যাইবে তার পাশে—
মদন রাজার বিধি লঙ্ঘিব কেমনে?
যদি অবহেলা করি,  রুষিবে শম্বর অরি;
কে সম্বরে স্মর-শরে এ তিন ভুবনে।

ওই শুন, পুনঃ বাজে   মজাইয়া মন, রে,
মুরারির বাঁশী!
সুমন্দ মলয় আনে ও নিনাদ মোর কানে—
আমি শ্যাম-দাসী।
জলদ গরজে যবে,  ময়ূরী নাচে সে রবে;—
আমি কেন না কাটিব শরমের ফাঁসি?
সৌদামিনী ঘন সনে,   ভ্রমে সদানন্দ মনে;—
রধিকা কেন ত্যজিবে রাধিকাবিলাসী?

ফুটিছে কুসুমকুল মঞ্জুকুঞ্জ বনে, রে,
যথা গুণমণি!
হেরি মোর শ্যামচাঁদ,   পীরিতের ফল ফাঁদ,
পাতে লো ধরণী!

কি লজ্জা! হা ধিক্ তারে, ছয় ঋতু বরে যারে,
আমার প্রাণের ধন লোভে সে রমণী?
চল, সখি, শীঘ্র যাই, পাছে মাধবে হারাই,—
মণিহারা ফণিনী কি বাঁচে লো স্বজনি?

সাগর উদ্দেশে নদী ভ্রমে দেশে দেশে, রে,
অবিরাম গতি;—
গগনে উদিলে শশী,  হাসি যেন পড়ে খসি,
নিশি রূপবতী;
আমার প্রেম-সাগর, দুয়ারে মোর নাগর,
তারে ছেড়ে রব আমি? ধিক্ এ কুমতি!
আমার সুধাংশু নিধি—দিয়াছে আমায় বিধি—
বিরহ আঁধারে আমি? ধিক্ এ যুকতি।

নাচিছে কদম্ব মূলে, বাজায়ে মুরলী, রে,
রাধিকারমণ!
চল, সখি, ত্বরা করি,   দেখিগে প্রাণের হরি,
গোকুল রতন!
মধু কহে ব্রজাঙ্গনে,  স্মরি ও রাঙা চরণে,
যাও যথা ডাকে তোমা শ্রীমধুসূদন!

যৌবন মধুর কাল, আশু বিনাশিবে কাল,
কালে পিও প্রেমমধু করিয়া যতন।