ব্রাহ্মধর্ম্মের মত ও বিশ্বাস/প্রথম উপদেশ

ব্রাহ্মধর্ম্মের মত ও বিশ্বাস।


প্রথম উপদেশ।


ঈশ্বরের অস্তিত্ব এবং লক্ষণ।

 ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিষয়ে বাক্য ব্যয়ের কিছু মাত্র আবশ্যক করে না। বোধ-বিশিষ্ট ব্যক্তি মাত্রেই তাহা অঙ্গীকার করিয়া থাকেন। জগতের অস্তিত্বই তাঁহার অস্তিত্বের দেদীপ্যমান প্রমাণ। জগতে সকলই সুশৃঙ্খল সকলই কৌশলময়। ইহাতে কিছুই অসম্বদ্ধ বিশৃঙ্খল নহে। অনিচ্ছোৎপন্ন আকস্মিক ব্যাপার একটিও নাই। কোন পদার্থ— কোন নিয়মই নিরর্থক হয় নাই। এক সত্যকাম মঙ্গল সঙ্কল্প মহান্ পুরুষের ইচ্ছা এই বিশ্ব সংসারে দেদীপ্যমান: প্রকাশ পাইতেছে। ঈশ্বরের জনস্বরূপ ও মঙ্গল-ভাব। মনোমধ্যে ধারণ না করিয়া তাঁহার অস্তিত্ব মাত্র স্বীকার করলে কেবল শূন্য ঈশ্বর, এই মাত্র মুখে বলা হয়। তাঁহার অস্তিত্বের সঙ্গে সঙ্গে তাঁহার জ্ঞান এবং মঙ্গল-ভাবও এই জগতে সুব্যক্ত হইতেছে। সকল কৌশলে তাঁহার জ্ঞান জাজ্বল্যমান রহিয়াছে। সমস্ত ঘটনাতেই তাহার মঙ্গলভাব মুদ্রিত রহিয়াছে। মনুষ্য, পশু, পক্ষী, কীট, পতঙ্গ সকলে মিলিয়া তাঁহার জ্ঞান ও মঙ্গলাভিপ্রায়ের পরিচয় দিতেছে। তিনি আছেন, এই মাত্র বলিলে তাঁহার কিছুই বলা হয় না। তিনি আছেন, এবং তিনি জ্ঞান-স্বরূপ ও মঙ্গল-স্বরূপ। তাঁহার জ্ঞান ও মঙ্গল-ভাবের কি সীমা হয়? না, তিনি অনন্ত জ্ঞান—তিনি পূর্ণ মঙ্গল। জগতের কারণ ঈশ্বর আছেন, কিন্তু তাঁহার জ্ঞান নাই, এমন কথনই হয় না। জগতের কারণ জ্ঞানবান্ পুরুষ আছেন, কিন্তু তাঁহার মঙ্গল-ভাব নাই, ইহাও বলা যায় না। তিনি যে এই জগৎ সৃজন করিয়াছেন, তাহা অমঙ্গলের জন্য—তবে তিনি ঈশ্বর নহেন; কোন ভীষণ দৈত্য কিম্বা অসুর এই বিশ্বের রচয়িতা। ঈশ্বর আছেন তাহার সঙ্গে সঙ্গে এই দুইটা লক্ষণ স্পষ্ট রহিয়াছে যে তিনি জ্ঞান-স্বরূপ এবং মঙ্গলস্বরূপ। আমরা মনুষ্যের আকৃতি ও তাহার জ্ঞান ধর্ম্ম মনে না করিয়া মনুষ্যকে ভাবিলে, যেমন মনুষ্যের ভাব আমারদের মনে আইসে না, সেই রূপ ঈশ্বরের জ্ঞান এবং তাঁহার মঙ্গল-ভাব অবগত না হইলে ঈশ্বর শব্দের অর্থই বোধগম্য হয় না। তাঁহার জ্ঞান নাই, তবে তিনি জড়; তাঁহার মঙ্গল ভাব নাই, তবে তিনি নিষ্ঠ‌ুর অসুর বা নির্দয় দৈত্য। সমুদায় সৃষ্টি প্রক্রিয়াই তাঁহার জ্ঞান ও মঙ্গল সঙ্কল্প প্রচার করিতেছে। এমন নিয়ম নাই, যাহাতে তাঁহার দুর্ব্বিগাহ মঙ্গল অভিপ্রায় প্রকাশিত না রহিয়াছে। এমন কার্য্য নাই, যাহাতে তাঁহার অসীম জ্ঞান প্রকাশ না পাইতেছে। এই দুই লক্ষণ তাঁহার স্বরূপের প্রধান লক্ষণ। ঈশ্বরের স্বরূপ হইতে এই দুই লক্ষণ প্রত্যাহার করিয়া লইলে, তাঁহাতে ঈশ্বরের ভাব কিছুই থাকে না। তাঁহার অস্তিত্বের সঙ্গে সঙ্গে তাঁহার স্বরূপ লক্ষণ সর্ব্বত্রই সুব্যক্ত হইতেছে। সমুদয় জগৎ সংসারই কার্য্য, তাহার তিনি মূল কারণ। সমুদয় জগৎ শৃঙ্খলাই কৌশলময় এবং তিনিই সেই কৌশলের কারণ জ্ঞান-স্বরূপ পরব্রহ্ম। জগতের সমুদয় নিয়মই মঙ্গলাবহ এবং ইহার নিয়ন্তা মঙ্গল সঙ্কল্প।

 কিন্তু ঈশ্বরের জ্ঞান ও মঙ্গল-ভাব পরিমিত কি অপরিমিত; তিনি কি কতক জানেন, কতক জানেন না—কতক দেশ দেখেন, কতক দেখেন না—তিনি বাহিরে আছেন, অন্তরে নাই; তাঁহার কতক সাধুভাব এবং কতক অসাধু ভাব? তিনি কি এই প্রকার অপূর্ণ? কখনই না। যে কিছু পরিমিত বস্তু, তাহাই সৃষ্ট বস্তু। যিনি জগদীশ্বর, তিনি অপরিমেয়— তিনি পরিপূর্ণ। এই সত্যটি সকলেরই বুদ্ধি ভূমিতে নিহিত আছে। ঈশ্বরকে অনন্ত অসীম অপরিমেয় না বলিলে তাঁহার কোন স্বরূপই বলা হয় না। ঈশ্বরের কোন বিষয়ের সীমা আছে—পরিমাণ আছে—তাঁহার কিছুরই খর্ব্বতা আছে, ইহা বলিলে তাঁহাকে ঈশ্বর বলা হয় না; অন্য কোন পরিমিত সৃষ্ট বস্তু বলিয়া নির্দ্দেশ করা হয়। ঈশ্বর যিনি, তিনি পূর্ণ। পূর্ণ যে কি তাহা সেই পূর্ণ-স্বরূপই জানেন; আমরা অপূর্ণ জীব হইয়া তাঁহার পূর্ণ ভাব মনে ধারণ করিতে পারি না। তবে তাঁহাকে অনন্ত অসীম অপরিমেয় বলাই আমারদের সাধ্য। তাঁহার যে কোন বিষয় মনে করি, সকলই অনন্ত। তিনি জ্ঞানেতে অনন্ত—তিনি শক্তিতে অনন্ত—তিনি মঙ্গলভাবে অনন্ত—তিনি দেশেতে অনন্ত— তিনি কালেতে অনন্ত।

 যখন তাঁহার জ্ঞানের সহিত অনন্ত ভাবকে মিলিত করি, তখন তাঁহাকে সর্ব্বজ্ঞ বলি। তিনি ভূত ভবিষৎ বর্তমান সকল কালের সকল ব্যাপার বিশেষ রূপে অবগত হইতেছেন। তিনি যেমন বাহিরের সমস্ত বিষয় জানিতেছেন, সেই প্রকার আমাদের অন্তরের প্রত্যেক কামনা ও প্রত্যেক ভাব সম্যক অবধারণ করিতেছেন। অন্ধকার তাঁহার নিকটে কোন কুকর্ম্মকে গোপন রাখিতে পারে না এবং কপটতাও তাঁহার জ্ঞান হইতে সত্যকে আচ্ছন্ন করিতে পারে না। তাঁহার অনন্ত জ্ঞানের গুরুভার পরিমাণ করিয়া শেষ করা যায়।

 যখন তাঁহার মঙ্গলস্বরূপ এবং অনন্ত ভাব একত্র করি, তখন তাঁহাকে পূর্ণ-মঙ্গল বলি। মন্দের সঙ্গে তাঁহার লেশমাত্র সম্পর্ক নাই। কোন দোষ বা গ্লানি বা কলঙ্ক তাঁহাকে স্পর্শ করিতে পারে না। আলোকের সীমা কি? না, অন্ধকার। জ্ঞানের সীমা কি? না, অজ্ঞান। সদ্ভাবের সীমা কি?, অসদ্ভাব। মঙ্গলের সীমা কি? না, অমঙ্গল ঈশ্বর কোন সীমা বিশিষ্ট পদার্থ নহে। মনুষ্যের বিষয়ে যখন আমরা এই প্রকার বলি যে এ ব্যক্তির এত গুলি গুণ আছে, তখনই ইহাও বলা হইল, যে তাহার এতটকু দোষও আছে। কিন্তু ঈশ্বরের মঙ্গল ভাবের সীমা করা যায় না। তাঁহার জ্ঞানের সীমা নাই বলিয়া তিনি সর্বজ্ঞ; তাঁহার মঙ্গলভাবের সীমা নাই বলিয়া তিনি পূর্ণ মঙ্গল।

 যখন তাঁহার শক্তির বিষয় বিবেচনা করি, তখন তাঁহাকে অয়ন্ত শক্তি ও সর্ব্বশক্তিমান্ বলিয়া প্রত্যয় যাই। আমাদের অভিপ্রায়ও যদি মঙ্গল হয়, তবে শক্তির অভাবে হয় তো তাহা সম্পন্ন হয় না। কিন্তু তাঁহার সে প্রকার নয়। তাঁহার ইচ্ছা মঙ্গলময়ী এবং তাঁহার যাহা ইচ্ছ তাহাই হইতেছে এবং পরেও তাহাই হইবে। তাঁহার অপরিসীম শক্তির প্রভাবে সমুদয় পদার্থ নিজ নিজ শক্তি ধারণ করিয়াছে। এখানে যত জড় রাশি, যত প্রাণি জঙ্গম, উপরে যত প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড লোক মণ্ডল, যত লোক-নিবাসী জীবপুঞ্জ, যত প্রকার সূক্ষ্মাণুসূক্ষ্ম কৌশল সমূহ, তাহাতেই যে তাঁহার শক্তির পরিসমাপ্তি হইয়াছে, এমত নহে। তাঁহার শক্তির ক্রটি নাই। তিনি বিচিত্র শক্তি এবং তিনি সর্ব্বশক্তিমান্। তিনি সৃষ্টি স্থিতি প্রলয়ের এক মাত্র কারণ। তিনি যাহা ইচ্ছা করেন, তাহাই করিতে পারেন।

 আবার যখন তাঁহার অনন্ত ভাব কালের সঙ্গে সংযোগ করি, তখন তাঁহাকে নিত্য শব্দে ব্যক্ত করি। তিনি পূর্ব্বেও ছিলেন, অদ্যও আছেন, তিনি পরেও থাকিবেন। যখন কিছুই সৃষ্টি হয় নাই, তখনও তিনি ছিলেন এবং যদি সমুদয়ই বিনাশ পায়, তথাপি তিনি থাকিবেন। কাল সহকাৱে তাঁহার স্বরূপের পরিবর্ত্তন নাই। তিনি ধ্রুব—তিনি অপরিবর্ত্তনীয়। তিনি সর্ব্বকালে সমভাবে স্থিতি করিতেছেন।

 তিনি সর্ব্বব্যাপী—দেশেতে তাঁহার সীমা হয় না। তিনি কোন এক দেশে বসিয়া রাজত্ব করিতেছেন, এমত নহে। সমুদয় জগৎই তাঁহার আবাস স্থান, আমাদের আত্মাও তাঁহার আসন। তিনি অচিন্ত্য-দূরস্থিত নক্ষত্রেও আছেন, এবং সকল অপেক্ষা নিকটের বস্তু যে আমি, আমাতেও তিনি আছেন। তাঁহাকে পাইবার জন্য স্থান বিশেষ অন্বেষণ করিতে হয় না, এবং স্থান বিশেষ হইতে দূরে গেলেও তাঁহা হইতে দূরস্থ হওয়া যায় না।

 তিনি নিয়ন্তা, নিয়ন্তা ব্যতীত নিয়ম হয় না, নিয়ম কথন কোন কার্য্যের স্বয়ং কর্ত্তা হইতে পারে না। নিয়ম বলিলেই তাহার সঙ্গে সঙ্গে তাহার নিয়ন্তাকেও বলা হয়। ঈশ্বর এখানে কেবল উদাসীনের ন্যায় রহিয়াছেন, এমত নহে; তিনি সকলের নিয়ন্তা রূপে, সকলের যন্ত্রী রূপে বিদ্যমান আছেন। তাঁহার নিয়মের অধীনে থাকিয়া সকলেই তাঁহার আজ্ঞা পালন করিতেছে।

 তিনি সর্ব্বাশ্রয়, তাঁহাকে অবলম্বন করিয়া সকলে স্ব স্ব কার্য্যে নিযুক্ত রহিয়াছে। তিনি একাকী সকলেরই আধারভূত—আর সকলই তাঁহার আশ্রিত। পূর্ব্বে যখন ইহার কিছুই সৃষ্টি হয় নাই, তখনও তাহার সৃজন-শক্তি তাহাতেই অব্যক্ত রূপে নিহিত ছিল। এক্ষণে সেই শক্তি কার্য্যেতে পরিষ্ফ‌ুট হইয়া যাহা কিছু উৎপন্ন হইয়াছে, সে সকলই সেই শক্তিকে অবলম্বন করিয়া নিয়তই চলিতেছে। বৃক্ষ কখন মূল হইতে পৃথক্ থাকিতে পারে না। মা, জগৎ সংসারেও কখন জগৎ কর্ত্তা হইতে নিচ্ছিন্ন থাকিতে পারে না। তিনি লোক ভঙ্গ নিবারণের সেতু স্বরূপ হইয়াছেন। তাঁহার ইচ্ছার অসদ্ভাবে সমুদায়ই ধ্বংস হয়। তিনিই সমস্ত আধারের মূলাধার—তিনিই সকল শক্তির মূল শক্তি।

 তিনি নিরবয়ব। তিনি জ্ঞান-স্বরূপ, সুতরাং তাঁহার কোন অবয়ব নাই। জড় বস্তুরই অবয়ব আছে। যাহা খণ্ড খশু করা যায়—যাহার আকৃতি আছে—বিস্তৃতি আছে, তাহারই অবয়ব থাকা সম্ভব। সূর্য-কিরণে উদ্দীপ্ত অতি সূক্ষ্ম বালুকা রেণুও অবয়ব বিশিষ্ট। কিন্তু জ্ঞান পদার্থ নিরবয়ব। জড় বস্তু আকাশ অবলম্বন করিয়া আছে, কিন্তু জ্ঞান বস্তু সে রূপে নাই। আমাদের আত্মাও নিরবয়ব এবং পরমাত্মাও নিরবয়ব।

 তিনি নির্ব্বিকার। তিনি পূর্ণ-মঙ্গল স্বরূপ ইহা বলতেই, তিনি নির্ব্বিকার ইহা বলা হইয়াছে। মনুষ্যের শরীরের বিকার যে রোগ, তাহাও তাঁহাতে নাই, মনুষ্যের মনের বিকার যে পাপ, তাহাও তাঁহাতে নাই। পাপই অমঙ্গল; অত এব মঙ্গল স্বরূপেতে পাপ স্পর্শ করিতে পারে না। তিনি অকায় অব্রণ; তিনি পরিশুদ্ধ অপপ-বিদ্ধ।

 তিনি একমাত্র অদ্বিতীয়। সমুদায় বিশ্বব্যাপার এক প্রকাণ্ড কৌশল যন্ত্রের অন্তর্গত। ব্রহ্মাণ্ডান্তর্গত সমুদায় পদার্থের মধ্যে এক অভেদ্য সম্বন্ধ নিবদ্ধ রহিয়াছে। যিনি জ্যোতির সৃষ্টি করিয়াছেন, তিনিই নেত্রের সৃষ্টি করিয়াছেন। যিনি ক্ষুধা তৃষ্ণা দিয়াছেন, তিনিই অন্নপান পরিবেশন করিতেছেন। সমুদায় সৃষ্টিই একটী কৌশল যন্ত্র এবং তিনি মাত্র তাহার একই যন্ত্রী—অপর কাহারও হস্ত তাহাতে নাই।

 তিনি স্বতন্ত্র। তাঁহার কেহ নিয়ন্তা নাই, তিনি কাহরও অধীন নহেন। তিনি কাহারও সহায়তা গ্রহণ করিয়া সৃষ্টি করেন নাই; আমাদের সকলই তাঁহার সহায়তার অধীন। তিনি কাহারও মন্ত্রণা লইয়া জগৎ কার্য্য চালনা করিতেছেন, এমনও নহে। তিনি একাকী—তাঁহার যাহা ইচ্ছা হয়, তাহাই সম্পন্ন হয়। আমরা সকলে তাঁহার অধীনে থাকিয়া তাঁহারই অভিপ্রায় সম্পন্ন করিতেছি, কিন্তু তিনি একমাত্র স্বতন্ত্র।

 তিনি পরিপূর্ণ। তাঁহার কিছুই খর্ব্বতা নাই। তাঁহার কোন তত্ত্বের অন্ত হয় না—সীমা হয় না—পরিমাণ হয় না। তিনি অনন্ত, অপরিসীম, অপরিমেয় পূর্ণ পদার্থ। কাহারও সহিত তাঁহার উপমা হয় না।

 এই অনন্ত-জ্ঞান পূর্ণ মঙ্গল পুরুষের প্রতি স্থিরদৃষ্টি রাখিয়া আমরা যেন জীবন-যাত্রা নির্ব্বাহ করি। যিনি সর্বজ্ঞ, তিনি আমারদের অন্তর্যামী। তাঁহার নিকটে অন্ধকার ও আলোক উভয়ই তুল্য। নির্জনে পাপাচরণ করিলে, তাঁহার নিকট অপ্রকাশ থাকে না। আমরা তাঁহাকে অন্তস্থায়ী সর্ব্বসাক্ষী জ্ঞান করিয়া যেন তাঁহার প্রিয় কার্য্যসাধনে তৎপর থাকি। তিনি মঙ্গল স্বরূপ। তাঁহার শুভ অভিপ্রায় যাহাতে সম্পন্ন হয়, তাহার জন্য আমারদের প্রাণপণে যত্নবান থাকা উচিত। আমাদের ইচ্ছা যেন। তাঁহার মঙ্গলময়ী ইচ্ছার বিরোধিনী না হয়। তিনি আমাদিগকে এই শুভ উদ্দেশে এখানে প্রেরণ করিয়াছেন যে আমরা জ্ঞান ধর্ম্ম লাভ করিয়া তাঁহার সহবাসের উপযুক্ত হই। আমাদের ইচ্ছা ও চেষ্টা যদি সেই মহান উদ্দে- শের উপযােগিনী হয়, তবেই আমাদের মঙ্গল। তামরা ঈশ্বরের আদেশ পালন করিলে এবং তাহার প্রতি প্রেম ও অনুরাগ বদ্ধ করিলে, দুই মহংকার্য এক কালে সুসিদ্ধ হয়—তাহাতে ঈশ্বরের মঙ্গল অভিপ্রায় সম্পন্ন করা হয় এবং আমাদের আপনাদেরও অশেষ কল্যাণ সংসাধন করা হয়।


সত্যং শিবং সুন্দর।

অনন্ত, পরিপূর্ণ, অদ্বিতীয়, কাহারও সহিত
তঁহার উপমা হয় না।
অনন্ত জ্ঞান—অপরিমিত জ্ঞান, পূর্ণ-জ্ঞান, সর্ব্বজ্ঞ,
নিরবয়ব, একমাত্র।
অনন্ত মঙ্গল—অপরিমিত মঙ্গল-ভাব, পূর্ণ-মঙ্গল, নিষ্পাপ,
নির্বিকার, পবিত্র-স্বরূপ, নির্দোষ, সুন্দর,
আনন্দ-রূপ, প্রেম-স্বরূপ।
অনন্ত সক্তি—সর্বশক্তিমান, অপরিমিত শক্তি, সৃষ্টিস্থিতি
প্রলয়কর্ত্তা, স্বতন্ত্র, সাশ্রয়, সৰ্বনিয়ন্তা।
অনন্ত কালে—নিত্য, অনাদনন্ত, ধ্রুব, অপরিবর্তনীয়-
সবভাব।
অনন্তু দেশে—সর্ব্বব্যাপী, অপরিসীম।