পঞ্চম সর্গ।

কানন।

রাত্রি।

অনিল, ললিতা; নলিনী সখীগণ; বিজয়, সুরেশ, বিনােদ,

প্রমােদ, অশােক, নীরদ।

(কাননের একপাশে ললিতার প্রতি অনিলের গান)
বউ! কথা কও!
সারাদিন বনে বনে ভ্রমিছি আপন মনে,
সন্ধ্যাকালে শ্রান্ত বড়—বউ, কথা কও!
শুনলো, বকুল ডালে লুকায়ে পল্লব জালে
পিক সহ পিক-বধূ মুখে মুখ মিলায়ে
দুজনেতে এক প্রাণ গাহিতেছে এক গান,
রাশি রাশি স্বর-সুধা বাতাসেরে বিলায়ে।
সারাদিন তপনের কিরণেতে তাপিয়া
সন্ধ্যাকালে নীড়ে ফিরে আসিয়াছে পাপিয়া।
প্রিয়ারে না দেখি তার ঢালিতেছে স্বর-ধার,
অধীর বিলাপ তার লতাপাতা ভিতরে,
গলি সে আকুল ডাকে বসি অতি দূর-শাখে
প্রাণের বিহগী তার “যাই যাই” উতরে।

অতি উচ্চ শাখে উঠি দেখলো কপোত দুটি
মুখে মুখে কানে কানে কত কথা বলিছে,
বুকে বুক মিলাইয়া—চঞ্চুপুট বুলাইয়া,
কপোতী সে কপোতের আদরেতে গলিছে!
এস প্রিয়ে, এস তবে, মধুর—মধুর রবে
জুড়াও শ্রবণ মোর—বউ! কথা কও!
যদি বড় হয় লাজ, আমার বুকের মাঝ
পাখার ভিতরে মুখ লুকাও তোমার!
অতি ধীরে মৃদু-মধু বুকের কাছেতে, বধু,
দুচারিটি কথা শুধু বল একবার!

(কিছুক্ষণ থামিয়া) তবে কি কবেনা কথা পূরাবেনা আশা? 
ভাল ভাল, কোয়োনাকো, মুখ ফিরাইয়া থাকো,
বুঝিনু আমার পরে নাই ভালবাসা।
ললিতা।—(স্বগত) কি কহিব কথা সখা? কহিতে না জানি! 
বুদ্ধি নাই—ক্ষুদ্র নারী—ফুটেনাকো বাণী।
মনে কত ভাব যুঝে, হৃদয় নিজে না বুঝে,
প্রকাশ করিতে গিয়া কথা না যোগায়।
হৃদয়ে যে ভাব উঠে হৃদয়ে মিলায়।
তবে কি কহিব কথা—ভেবে নাহি পাই—
কথা কহিবার, সখা, ক্ষমতা যে নাই!
কি এমন কথা কব, ভাল যা’ লাগিবে তব?
তুমি গো শুনাও মোরে কাহিনী বিরলে,
একমনে শুনি আমি বসি পদতলে।

মাথার উপর দিয়া তারাগুলি যত
একটি একটি করি হবে অস্তগত।
শ্রান্তি তৃপ্তি নাহি জানি ও মুখের প্রতি বাণী
তৃষিত শ্রবণে মোর শুনিতে শুনিতে
কখন্ প্রভাত হোল নারিব জানিতে।
অনিল।—জানত—জানত সখি, মানুষের মন? 
যে কথা সে ভালবাসে শত শতবার তা’সে
ঘুরে ফিরে শুনিবারে চায় প্রতিক্ষণ।
জানি, ভালবাস’ তুমি, ললিতা, আমারে,
তবু সখি প্রতিক্ষণে বড় সাধ যায় মনে
বাহিরে সে প্রেমের প্রকাশ দেখিবারে।
দুদিনে নীরব-প্রেম হয় পুরাতন।
বিচিত্রতা নাহি তায়, শ্রান্ত হয় মন।
আদর তরঙ্গ-মালা নিয়ত যে করে খেলা,
তাইতে দেখায় প্রেম নিয়ত-নূতন।
নিত্য নব নব উঠি আদরের নাম
নিয়ত নবীন রাখে প্রণয়ের ধাম।
আদর প্রেমের, সখি, বরষার জল—
না পেলে আদর-ধারা হয় সে যে বলহারা,
ভুমে নুয়াইয়া পড়ে মুমূর্ষু বিকল।
ওকি বালা, কেন হেন কাতর নয়ানে
এক দৃষ্টে চেয়ে আছ ভুমি-তল পানে!
হাসিতে হাসিতে, সখি; দুটা ক্ষুদ্র কথা
কহিনু, তা’তেই মনে পেয়েছ কি ব্যথা?

ললিতা।—(স্বগত) একা বােসে ভাবিয়াছি কত—কতবার, 
কোন গুণ নাই মোর, কি হবে আমার?
হা ললিতা! কি করিস্—দেখিস্ না চেয়ে?
শুধু দুটা কথা হা—রে—পারিস্ না কহিবারে?
দুটা আদরের কথা—বুদ্ধিহীন মেয়ে!
দেখিস্ না—দুটা কথা কহিলি না বোলে,
আদরের ধন তোর—প্রাণের সর্বস্ব তোর
হারায়—হারায় বুঝি—যায় বুঝি চোলে!
শুধু দুটা কথা তুই কহিলি না বোলে?
কি কহিবি? হা অবোধ! ভাবনা কি তায়?
মুক্তকণ্ঠে বল্—মন যা’ বলিতে চায়?
মনের গোপন ধামে ডাকিস্ যে শত নামে
সেই নামে মুখ ফুটে ডাক্‌রে তাহায়!
একবার প্রাণ খুলে বল্ প্রাণেশ্বরে—
“মোর প্রেম, চিন্তা, আশা সব তোমা পরে;
নির্ব্বোধ—নির্গুণ বোলে—নাথ—স্বামী–প্রভু,
অসহায় অবলারে ত্যজিওনা কভু!”
দিবস রজনী ভূলি বুকে তারে রাখ্ তুলি,
“ভালবাসি” “ভালবাসি” বল্ শতবার,
আলিঙ্গনে বেঁধে বেঁধে হৃদয় তাঁহার!
কিন্তু লজ্জা?—দূর হ’রে—লজ্জা, দূর হ’রে—
বিষময় বাহু তোর বাঁধি বাঁধি শত ডোর
জীর্ণ করিয়াছে মোর মন স্তরে স্তরে!
আর না—আর না লজ্জা—দুর হ’ এখন!

চূর্ণ চূর্ণ ভেঙ্গে আর ফেলিস্ না মন!
শিথিল কোরে দে তোর শতেক বন্ধন ডোর,
মুহূর্ত্তের তরে মুখ তুলি একবার;
বন্ধন-জর্জর মন শুধুরে মুহূর্ত্ত ক্ষণ
বাহিরে বাতাসে গিয়া বাঁচুক আবার!
অনিল।—আজি শুভদিনে ওকি অশ্রুবারি পাত? 
অশ্রুজলে কাটাবে কি ফুলশয্যা রাত?

(কাননের অপর পার্শ্বে অভিমান করিয়া বিজয়ের প্রতি) 
নলিনী।—মিছে বােলােনাকো মােরে ভালবাস’ ভালবাস’! 
নয়নেতে ঝরে বারি হৃদয়ে হৃদয়ে হাস’!
সারহীন—ভাবহীন দুটা লঘু কথা বোলে,
হেসে দুটা মিষ্টহাসি, দুই ফোঁটা অশ্রু ফেলে,
শূন্য রসিকতা করি দুই দণ্ড কাল হরি,
সরল-হৃদয় চাহ’ লভিবারে অবহেলে!
অবশেষে আড়ালেতে কহ হাসি হাসি কত
রমণীর ক্ষুদ্র মন লঘু তৃণটির মত!
ভালবাসা খেলা নয়, খেলেনা নহেগো হৃদি,
নারী বোলে, মন তার দলিতে সৃজেনি বিধি!
ভাল যদি বাস’, তবে ভালবাস’ প্রাণপণে—
ক্ষুদ্র মনে কোরে খেলা করিওনা মোর সনে!
হৃদয়ের অশ্রু ফেল’ দিবানিশি পদতলে,
মিছ হাসিওনা হাসি—কথা কহিওনা ছলে!
বিজয়।—কেন বালা, আমিত লাে দিনরাত্রি ভূলে 

অশ্রু ঢালিয়াছি তব প্রেমতরু মূলে,
আজিও ত কিছু তার হয়নিকো ফল,
ব্যর্থ হইয়াছে মোর এত অশ্রুজল!
নলিনী।—ওই যে সুরুচি হােথায় আছে, 
যাই একবার তাহার কাছে!
(দূরে গিয়া ফিরিয়া আসিয়া) দেখিনি এমন জ্বালা! 
হাত হোতে খসি পোড়েছে কোথায়
বেল ফুলে গাঁথা বালা!
(সহসা উপরে চাহিয়া) ওই দেখ হােথা কামিনী-শাখায় 
ফুটেছে কামিনীগুলি—
পাতাগুলি সাথে দুচারিটি, সখা,
দাওনা আমারে তুলি!
বিজয়।—কি পাইব পুরস্কার? 
নলিনী।—পুরষ্কার? মরি লাজে! 
একটি কুসুম যদি ঠাঁই পায়
আমার অলক মাঝে,—
একটি কুসুম নুয়ে পড়ে যদি
এ মোর কপোল পরে,
একটি পাপ্ড়ি ছিঁড়ে পড়ে পায়ে
শুধু মুহূর্ত্তের তরে,
ভূলে যদি রাখি একটি কুসুম
রচিতে এ কণ্ঠহার—
তার চেয়ে বল আছে ভাগ্যে তব
আর কিবা পুরষ্কার!


(বিজয়ের ফুল তুলিয়া দেওন ও তাহা চরণে দলিয়া) 
নলিনী।—এই তব পুরষ্কার! 
অনুগ্রহ করি এ চরণ দিয়া
ফুলগুলি তব দিলাম দলিয়া,
এই তব পুরষ্কার!
বিজয়।—আহা! আমি যদি হােতেম সজনি 
একটি কুসুম ওর,—
ওই পদতলে দলিত হইয়া
ত্যজিতাম দেহ মোর!

(গাছের দিকে চাহিয়া নলিনীর মৃদুস্বরে গান) 
খেলা কর্-খেলা কর্—
(তোরা) কামিনী-কুসুম গুলি,
দেখ্, সমীরণ লতাকুঞ্জে গিয়া
কুসুম গুলির চিবুক ধরিয়া
ফিরায়ে এ ধার—ফিরায়ে ও ধার
দুইটি কপোল চুমে বার বার
মুখানি উঠায়ে তুলি!
তোরা খেলা কর্—তোরা খেলা কর্
কামিনী কুসুম গুলি!
কভু পাতা মাঝে লুকারে মুখ,
কভু বায়ু কাছে খুলেদে বুক—
মাথা নাড়ি নাড়ি নাচ্ কভু নাচ্
বায়ু কোলে দুলি দুলি!

দুদণ্ড বাঁচিবি—খেলা’ তবে খেলা,’
প্রতি নিমেষেই ফুরাইছে বেলা,
বসন্তের কোলে খেলা-শ্রান্ত প্রাণ
ত্যেজিবি ভাবনা ভুলি!
অশােক।—(দূর হইতে দেখিয়া) ওই যে হােথায় নলিনী রােয়েছে 
বসি বিজয়ের সাথে!
কত কাছাকাছি!—কত পাশাপাশি!
হাত রাখি তার হাতে!
অসার-হৃদয়, লঘু, হীন-মন
কোন গুণ নাই যা’র—
শুধু ধন দেখে বিকাবি, নলিনী,
তারে দেহ আপনার?
কতবার প্রেম! যাস্ পলাইয়া
ভয়ে ফুল-ডোর দেখি,
ধনের সোণার শিকল হেরিয়া
আজ ধরা দিলি একি?
সুরেশ।—খুঁজিয়া খুঁজিয়া পাইনা দেখিতে 
নলিনী কোথায় আছে।
ওই যে হোথায় লতা-কুঞ্জতলে
বসিয়া বিজয় কাছে!
কি ভয় হৃদয়! জানি গো নিশ্চয়
সে আমারে ভালবাসে,
মন তার আছে আমারি কাছেতে
থাকুক্ সে যার পাশে!

বিনোদ।—কথা শুনে তার—ভাব দেখে তার 
কতবার ভাবি মনে—
নলিনী আমার—আমারেই বুঝি
ভালবাসে সঙ্গোপনে!
সত্য হয় যদি আহা!
সে আশ্বাস বাণী, সে হাসি মধুর
সত্য যদি হয় তাহা!
নীরদ।—কে আমার সংশয় মিটায়? 
কে বলি দিবে সে ভালবাসে কি আমায়?
তার প্রতি দৃষ্টি হাসি তুলিছে তরঙ্গ রাশি
এক মুহূর্ত্তের শান্তি কে দিবে গো হায়!
পারিনে পারিনে আর বহিতে সংশয় ভার,
চরণে ধরিয়া তার শুধাইব গিয়া,
হৃদয়ের এ সংশয় দিব মিটাইয়া!
কিন্তু এ সংশয়ো ভাল, পাছে গো সত্যের আলো
ভাঙ্গে এ সাধের স্বপ্ন বড় ভয় গণি;
হানে এ আশার শিরে দারুণ অশনি!
(নলিনীর নিকট হইতে বিজয়ের দূরে গমন, ও নলিনীর নিকটে 
গিয়া প্রমোদের গান)
আঁধার শাখা উজল করি,
হরিত পাতা ঘোমটা পরি’
বিজন বনে, মালতী বালা,
আছিস্ কেন ফুটিয়া?
শুনাতে তোর মনের ব্যথা,

শুনিতে তোর মনের কথা,
পাগল হোয়ে মধুপ কভু
আসেনা হেথা ছুটিয়া;
মলয় তব প্রণয় আশে
ভ্রমেনা হেথা আকুল শ্বাসে,
পায়না চাঁদ দেখিতে তোর
সরমে-মাখা মুখানি;
শিয়রে তোর বসিয়া থাকি
মধুর স্বরে বনের পাখী
লভিয়া তোর সুরভি-শ্বাস
যায় না তোরে বাখানি!
নলিনী।—(হাসিয়া) শুনিয়া ধীরে মালতী বালা 
কহিল কথা সুরভি-ঢালা,—
“আঁধার বনে আছিগো ভাল
অধিক আশা রাখি না!
তোদের চিনি চতুর অলি,
মনো-ভুলানো বচন বলি
ফুলের মন হরিয়া লোয়ে
রাখিয়া যাস্ যাতনা!
অবলা মোরা কুসুম-বালা
সহিব মিছা মনের জ্বালা
চিরটি কাল তাহার চেয়ে
রহিব হেথা লুকায়ে!
আঁধার বনে রূপের হাসি

ঢালিব সদা সুরভি রাশি,
আঁধার এই বনের কোলে
মরিব শেষে শুকায়ে!




নলিনী।—(অশােকের নিকটে গিয়া) অশোক, হোথায় দূরে কেন তুমি 
দাঁড়াইয়া এক ধার?
কত দিন হোল আমার কাছেতে
আস’নিত একবার!
ভূলেছ যে প্রেম, ভূলেছ যে মোরে
তোমার কি দোষ আছে?
এ মুখ আমার এ রূপ আমার
পুরাতন হইয়াছে?
ভাল, সখা, ভাল, প্রেম না থাকিলে
আসিতে নাই কি কাছে?
যেচে প্রেম কভু পাওয়া নাহি যায়
বন্ধুত্বে কি দোষ আছে?
যদি সারাদিন রহিয়া তোমার
প্রাণের রূপসী সাথে
কোন সন্ধ্যাবেলা মুহূর্ত্তের তরে
অবকাশ পাও হাতে,
আমাদের যেন পড়ে গো স্মরণে
এসো একবার তবে!
দু চারিটা গান গাব’ সবে মিলি
দু চারিটা কথা হবে!

অশােক।—(স্বগত) পাষাণে বাঁধিয়া মন মনে করি যতবার 
কাছে তার যাবনাকো মুখ দেখিব না আর,
তার মুখ হোতে তিল আঁখি ফিরায়েছি যবে—
দূরে যেতে এক পদ শুধু বাড়ায়েছি সবে,
অমনি সে কাছে ঢেলে দু একটি কথা বোলে
পাষাণ প্রতিজ্ঞা মোর ধূলিসাৎ করিয়াছে;
শুধু দুটি কথা বোলে, একবার এসে কাছে!
জানিনা কি শুধু সেগো মন ভোলাবার কথা?
সে হাসি—সে মিষ্টহাসি—নিদারুণ কপটতা?
জানে জানে সব জানে—তবু মন নাহি মানে,
প্রতিবার ঘুরে ফিরে তবুও সে যায় তথা;
জেনে শুনে তবু তার ভাল লাগে কপটতা,
সেই মিষ্ট হাসি, সেই মন ভূলাবার কথা!
যবে ভূলাবার তরে কপট আদর করে,
মোর মুখ পানে চেয়ে গাহে প্রণয়ের গীত,
সাধ কোরে মন যেন হোতে চায় প্রতারিত!
হা হৃদয়! লঘু, নীচ, হীন—হীন অতি—
খেলেনার পরে তোর এতই আরতি?
কখনো না—কখনো না—হোক্ যা হবার,
এই যে ফিরানু মুখ ফিরিব না আর!
ধিক্—ধিক্—শিশু-হৃদি! ধিক্ ধিক্ তোরে—
লজ্জার পাথারে আর ডুবাসনে মোরে!
কপট রমণী এক, অধম, চপল,
নির্দ্দয়, হৃদয় হীন, অসার, দুর্ব্বল—

দুর্ব্বল হাতে সে তার যেথা ইচ্ছা সেই ধার
টলাইবে নুয়াইবে এ মোর হৃদয়?
তৃণ—শুষ্ক পত্র এক, দুর্ব্বলতা-ময়?
কাঁদাইবে, হাসাইবে—দূরে যেতে নাহি দিবে—
নিশ্বাসে উড়ায়ে দেবে প্রতিজ্ঞা আমার!
ইচ্ছা, সাধ, চিন্তা, আশা—দুঃখ, সুখ, ভালবাসা
সমস্ত রাখিবে চাপি পদতলে তার—
শিকলি, পশুর সম—বাঁধিবে গলায় মম
মুহূর্ত্ত নহিবে শক্তি মাথা তুলিবার,
ধূলিতে পড়িবে লুটি এ মাথা আমার!
হা হৃদয়, কি করিলি? তুই কি উন্মাদ হলি?
সমস্ত সংসার তুই দিলি বিসর্জ্জন,
ধন, মান, যশ, আশা—সখাদের ভালবাসা,
লুটিতে শুধু কি এক নারীর চরণ?
নিশ্বাসে প্রশ্বাসে তার উঠিতে পড়িতে?
কাঁদিতে হাসিতে তার কটাক্ষে ইঙ্গিতে?
খেলেনা হইতে তার ভ্রূকুটি হাসির?
কেন এত গেলি গোলে! শুধু রূপ আছে বোলে?
ক্ষণ—স্থায়ী জড়রূপ গঠিত মাটির!
কুঞ্চিত—কুন্তল তার, আরক্ত-কপোল,
সুদীর্ঘ নয়ন তার কটাক্ষ-বিলোল,
তাই কি ত্যজিলি তুই সমস্ত সংসার?
জীবনের উদ্দেশ্য করিলি ছারখার?
সমস্ত জগৎ হাসে ধিক্ ধিক্ বলি—

প্রতি ক্ষণে আত্মগ্লানি উঠে জ্বলি জ্বলি—
তবু তার পদতলে লুটাইবি গিয়া
শুধু তার আঁখি দুটি সুদীর্ঘ বলিয়া?
কি মদিরা আছে বালা নয়নে তোমার!
ফেলেছ বিহ্বল করি হৃদয় আমার!
ফিরাও—ফিরাও আঁখি—পাতা দিয়া ফেল ঢাকি—
হৃদয়েরে দূরে যেতে দাও একবার!—
কোরেছি দারুণ পণ করিবারে পলায়ন,
নিষ্ঠুর মধুর বাক্যে ফিরায়োনা আর!
ও অনল হোতে সাধ দূরে থাকিবার—
ফিরায়োনা মোরে সখি ফিরায়োনা আর!