ভগ্নহৃদয়/সপ্তবিংশ সর্গ

সপ্তবিংশ সর্গ।

কবি।

মুরলারে—মুরলা, কোথায়?
দেশে দেশে ভ্রমিতেছি কোথায়—কোথায়?
সম্মুখে বিশাল মাঠ ধুধু কবিতেছে,
সে মাঠেতে অন্ধকার—বিস্তারিয়া বাহু তার—
ভূমিতে রাখিয়া মুখ কেঁদে মরিতেছে!
কোথা তুই—কোথা মুরলারে—
কোথা তুই গেলি বল্—শুধাইব কারে?
উদিল সন্ধ্যার তারা ওইরে গগনে!
ওই তারা কত দিন দেখেছি দুজনে!
তা’কি তোর মুরলারে মনে আর পড়েনারে?
সে সকল কথা তুই ভূলিলি কেমনে?
কত দিন—কত কথা—কত সে ঘটনা—
মনের ভিতরে কি রে আকুলি ওঠেনা?
তবে তুই কি পাষাণে বেঁধেছিলি হিয়া?
কেমনে কবিরে তোর গেলি তেয়াগিয়া?
বিজন আকাশে মোর ছিলিরে সতত
স্থির-জ্যোতি ওই সন্ধ্যা তারাটির মত;—
যদিবে মুহূর্ত্ত তরে আপনারে ভূলে

মেঘ খণ্ড রেখে থাকি এহৃদয়ে তুলে
তাই কিরে অভিমানে অস্ত যেতে হয়?
এ জনমে আর কিরে হবিনে উদয়?
আজ আমি লক্ষ্যহীন দিক্‌ হারাইয়া!
অসীম সংসারে কোথা বেড়াই ভাসিয়া!
দেখিতে যে পাবনাক’ তোরে একেবারে—
সে কথা পারিনে কভু মনে করিবারে!
শব্দ কোন শুনিলেই আপনারে ছলি—
মুদিয়া নয়ন দুটি মনে মনে বলি—
“যদি এই শব্দ তারি পদশব্দ হয়!
যদি খুলিলেই আঁখি—অমনি তাহারে দেখি!
সুমুখে সে মুখ আসি হয় রে উদয়।”
কোথায় মুরলা! দেখা দেরে একবার,
খুঁজিয়া বেড়াতে হবে কত দূর আর?
মুরলারে—মুরলা কোথায়!
একেলা ফেলিয়া মোরে গেলিরে কোথায়।