দীনা

তোমারে সম্পূর্ণ জানি হেন মিথ্যা কখনো কহিনি,
প্রিয়তম, আমি বিরহিণী
পরিপূর্ণ মিলনের মাঝে।
মোর স্পর্শে বাজে
যে তন্ত্রটি তোমার বীণায়,
তাহারি পঞ্চম স্বরে তোমারে কি নিঃশেষে চিনায়
তোমার বসন্ত রাগে,
নিদ্রাহীন রজনীর পরজে বেহাগে?
সে তন্ত্র সোনার বটে,—বিভাসে ললিতে
যে কথা সে চেয়েছে বলিতে
তাইতে হ’য়েছে পূর্ণ এ আমার জীবন অঞ্জলি।

তবু সত্য ক’রে বলি,
ব্যথা লাগে বুকে
যখন সহসা আসি তোমার সম্মুখে
নিভৃত তোমার ঘরে
স্বপ্নভাঙা প্রথম প্রহরে,
—যখন জাগেনি পাখী, রক্তিম আকাশে
আসন্ন অরণ্যগাথা নব সূর্য্যোদয় আশে
র’য়েছে স্তম্ভিত,
পিঙ্গল আভায় দীপ্ত জটা বিলম্বিত
অরুণ সন্ন্যাসী
করজোড়ে আছে স্থির আলোক-প্রত্যাশী,—
তখন তোমার মুখ চেয়ে দেখিয়াছি ভয়ে ভয়ে
জেনেছি হৃদয়ে
তুমিই অচেনা।
কোনো দিন ফুরাবে না
পরিচয়, তোমারে বুঝিব আমি করি না সে আশা,
কথায় যা বলো নাই, আমি যে জানিনা তার ভাষা।
ভয় হয় পাছে
যে-সম্পদ চেয়েছিলে মোর কাছে
সে-যে মোর নাই, তাই শেষে পড়ে ধরা,
দেখো দূর হ’তে এসে জলাশয়ে জল নাই ভরা।

তখন নিয়ো না যেন অপরাধ মোর,
হ’য়ো না কঠোর,
তুমি যদি মুগ্ধ মনে ভুলে থাকো, তবু
গভীর দীনতা মোর গোপন করিনি আমি কভু।
মোর দ্বারে যবে এলে অন্যমনা,
সে কি মোর কিছু নিয়ে পূরাতে কামনা?
নহে নহে, হে রাজন, তোমার অনেক ধন আছে,
তাই তুমি আসো মোর কাছে
দেবার আনন্দ তব পূর্ণ করিবার লাগি
যদি তাই পূর্ণ হয়, তবে আমি নহি তো অভাগী॥

১৯ ভাদ্র, ১৩৩৫