মহুয়া/নববধূ
নববধূ
চ’লেছে উজান ঠেলি’ তরণী তোমার,
দিক্প্রান্তে নামে অন্ধকার।
কোন্ গ্রামে যাবে তুমি, কোন্ ঘাটে, হে বধূবেশিনী,
ওগো বিদেশিনী!
উৎসবের বাঁশিখানি কেন-যে কে জানে
ভ’রেছে দিনান্তবেলা ম্লান মূলতানে,
তোমারে পরালো সাজ মিলি সখীদল
গোপনে মুছিয়া চক্ষুজল॥
মৃদুস্রোত নদীখানি ক্ষীণ কলকলে
স্তিমিত বাতাসে যেন বলে—
“কত বধূ গিয়েছিলো কতকাল এই স্রোত বাহি’
তীর পানে চাহি’।
ভাগ্যের বিধাতা কোনো কহেন নি কথা,
নিস্তব্ধ ছিলেন চেয়ে লজ্জাভয়ে নতা
তরুণী কন্যার পানে, তরী ’পরে ছিলেন গোপনে
তরণীর কাণ্ডারীর সনে॥”
কোন্ টানে জানা হ’তে অজানায় চলে
আধো হাসি আধো অশ্রুজলে।
ঘর ছেড়ে দিয়ে তবে ঘরখানি পেতে হয় তা’রে
অচেনার ধারে।
ওপারের গ্রাম দেখো আছে ঐ চেয়ে,
বেলা ফুরাবার আগে চলো তরী বেয়ে,
ওই ঘাটে কত বধূ কত শত বর্ষ বর্ষ ধরি’
ভিড়ায়েছে ভাগ্য-ভীরু তরী॥
জনে জনে রচি’ গেল কালের কাহিনী,
অনিত্যের নিত্য প্রবাহিনী।
জীবনের ইতিবৃত্তে নামহীন কর্ম্ম উপহার
রেখে গেল তা’র।
আপনার প্রাণসূত্রে যুগযুগান্তর
গেঁথে গেঁথে চ’লে গেল না রাখি স্বাক্ষর,
ব্যথা যদি পেয়ে থাকে না রহিল কোনো তা’র ক্ষত,
লভিল মৃত্যুর সদাব্রত॥
তাই আজি গোধূলির নিস্তব্ধ আকাশ
পথে তব বিছাল আশ্বাস।
কহিল সে কানে কানে, প্রাণ দিয়ে ভরা যার বুক
সেই তা’র সুখ।
রয়েছে কঠোর দুঃখ, র’য়েছে বিচ্ছেদ,
তবু দিন পূর্ণ হবে, রহিবে না খেদ,
যদি ব’লে যাও, বধূ, আলো দিয়ে জ্বেলেছিনু আলো,
সব দিয়ে বেসেছি ভালো॥