ঊষসী

ভোরের আগের যে-প্রহরে
স্তব্ধ অন্ধকার ’পরে
সুপ্তি-অন্তরাল হ’তে দূর সূর্য্যোদয়
বনময়
পাঠায় নূতন জাগরণী,
অতি মৃদু শিহরণী
বাতাসের গায়ে;
পাখীর কুলায়ে
অস্পষ্ট কাকলি ওঠে আধো-জাগা স্বরে;
স্তম্ভিত আগ্রহভরে
অব্যক্ত বিরাট আশা ধ্যানে মগ্ন দিকে দিগন্তরে,—
ও কোন্‌ তরুণ প্রাণে করিয়াছে ভর,
অন্তর্গূঢ় সে প্রহর
আত্ম-অগোচর।
চিত্ত তা’র আপনার গভীর অন্তরে
নিঃশব্দে প্রতীক্ষা করে
পবিপূর্ণ সার্থকতা লাগি’।
সুপ্তিমাঝে প্রতীক্ষিয়া আছে জাগি’
নির্ম্মল নির্ভয়
কোন্ দিব্য অভ্যুদয়!

কোন্ সে পরমা মুক্তি, কোন্ সেই আপনার
দীপ্যমান মহা আবিষ্কার!
প্রভাত-মহিমা ওর সম্বৃত র’য়েছে নিশ্চেতনে,
তাহারি আভাস পাই মনে।
আমি ওই রথশব্দ শুনি,
সোনার বীণার তারে সঙ্গীত আনিছে কোন্ গুণী!
জাগিবে হৃদয়,
ভুবন তাহার হবে বাণীময়;
মানস-কমল একমনা
নবোদিত তপনের করিবে প্রথম অভ্যর্থনা।
জাগিবে নূতন দিবা উজ্জ্বল উল্লাসে
বর্ণে গন্ধে গানে প্রাণে মহোৎসবে তা’র চারিপাশে।
নিরুদ্ধ চেতন হ’তে হবে চ্যুত
লালসা-আবেশে জড়ীভূত
স্বপ্নের শৃঙ্খলপাশ।
বিলুপ্ত করিবে দূরে উন্মুক্ত বাতাস
দুর্ব্বল দীপের গাঢ় বিষতপ্ত কলুষ-নিশ্বাস।
আলোকের জয়ধ্বনি উঠিবে উচ্ছ্বসি’,—
—নাম কি ঊষসী?

নাম্নী, আশ্বিন-ভাদ্র, ১৩৩৫