পথবর্ত্তী

দূর মন্দিরে সিন্ধু কিনারে
পথে চলিয়াছ তুমি।
আমি তরু মোর ছায়া দিয়ে তা’রে
মৃত্তিকা তা’র চুমি।
হে তীর্থগামী, তব সাধনার
অংশ কিছু-বা রহিল আমার,
পথপাশে আমি তব যাত্রার
রহিব সাক্ষীরূপে।
তোমার পুজায় মোর কিছু যায়
ফুলের গন্ধধূপে॥

তব আহ্বানে বরণ করিয়া
নিয়েছি দুর্গমেরে।
ক্লান্তি কিছু-বা নিলাম হরিয়া
মোর অঞ্চল-ঘেরে।
যা ছিল কঠোর, যাহা নিষ্ঠুর
তা’র সাথে কিছু মিলাই মধুর,
যা ছিল অজানা, যাহা ছিল দূর
আমি তারি মাঝে থেকে
দিনু পথপরে শ্যাম অক্ষরে
জানার চিহ্ণ এঁকে॥

মোর পরিচয়ে তোমার পথের
কিছু রহে পরিচয়।
তব রচনায় তব ভকতের
কিছু বাণী মিশে রয়।
তোমার মধ্যদিবসের তাপে
আমার স্নিগ্ধ কিশলয় কাঁপে,
মোর পল্লব সে-মন্ত্র জপে
গভীর যা তব মনে,
মোর ফলভার মিলানু তোমার
সাধন-ফলের সনে॥

বেলা চ’লে যাবে, একদা যখন
ফুরাবে যাত্রা তব,—
শেষ হবে যবে মোর প্রয়োজন
হেথাই দাঁড়ায়ে রবো
এই পথখানি রবে মোর প্রিয়,
এই হবে মোর চির বরণীয়,
তোমারি স্মরণে রবো স্মরণীয়
না মানিব পরাভব।
তব উদ্দেশে অর্পিব হেসে
যা-কিছু আমার সব॥

১১ ভাদ্র, ১৩৩৫