মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র

মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র

মানবাধিকারের

সর্বজনীন

ঘোষণাপত্র


জাতিসংঘ তথ্য কেন্দ্ৰ
ঢাকা, বাংলাদেশ

মানবাধিকারের


সর্বজনীন
ঘোষণাপত্র


জাতিসংঘ তথ্য কেন্দ্র
ঢাকা, বাংলাদেশ
অনুবাদ: অধ্যাপক নূরুল মোমেন
সম্পাদনা: কাজী আলী রেজা
প্রথম প্রকাশ: অক্টোবর ২০১৮
পুনর্মুদ্রণ: অক্টোবর ২০১৯
চলতি সংস্করণ সম্পদনায়: মো. মনিরুজ্জামান, পিএইচডি
মো. জাহিদ হোসেন, জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারীর অফিস, ঢাকা


ইউনিক প্রকাশ ২০১৯/০৫-৩০০০

মুদ্রণ: প্রিন্টটাচ

ভূমিকা

১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ মানবাধিকারের যে সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গ্রহণ ও জারি করে তার পূর্ণ বিবরণ পরবর্তী পৃষ্ঠাসমূহে প্রকাশিত হলো। এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপের পর পরিষদ সকল সদস্যরাষ্ট্রকে ঘোষণাপত্রের বিষয়বস্তু প্রচার এবং ‘তা দেশ ও ভূখণ্ডসমূহের রাজনৈতিক মর্যাদাভিত্তিক পার্থক্য নির্বিশেষে প্রধানত বিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিতরণ, প্রদর্শন, পাঠ ও ব্যাখ্যা করার আহ্বান জানায়।’

জাতিসংঘ মহাসচিব

সকল মানুষই সম-অবিচ্ছেদ্য অধিকার ও মৌল স্বাধিকারসমূহ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।

জাতিসংঘ প্রত্যেক ব্যক্তির মানবাধিকার সমর্থন, এর বিকাশসাধন ও সংরক্ষণে অঙ্গীকারাবদ্ধ। জাতিসংঘ সনদ থেকে উদ্ভূত এই অঙ্গীকারের দ্বারা মৌল মানবাধিকার, মানুষের মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি বিশ্ববাসীর বিশ্বাস পুনর্ব্যক্ত হচ্ছে। যে অধিকারগুলো প্রত্যেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য, মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে জাতিসংঘ সুস্পষ্ট ও সহজ ভাষায় তা ব্যক্ত করেছে।

এসব অধিকার আপনারই সম্পদ।

এসব আপনারই অধিকার

এগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হোন।

নিজের জন্য এবং মানুষ হিসেবে অন্য মানুষের জন্য এগুলোকে উন্নীত ও রক্ষা করতে সাহায্য করুন।

মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র

মুখবন্ধ

যেহেতু মানব পরিবারের সকল সদস্যের সহজাত মর্যাদা ও সম-অবিচ্ছেদ্য অধিকারসমূহের স্বীকৃতি বিশ্বে স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও শান্তির ভিত্তি;

যেহেতু মানবিক অধিকারসমূহের প্রতি অবজ্ঞা ও ঘৃণা মানবজাতির বিবেকের পক্ষে অপমানজনক বর্বরোচিত কার্যকলাপে পরিণতি লাভ করেছে এবং সাধারণ মানুষের সর্বোচ্চ আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে এমন একটি পৃথিবীর সূচনা ঘোষিত হয়েছে, যেখানে মানুষ বাক ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা এবং ভয় ও অভাব থেকে নিষ্কৃতি ভোগ করবে;

যেহেতু চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসেবে মানুষকে অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হতে বাধ্য করা না হলে মানবিক অধিকারসমূহ অবশ্যই আইনের শাসনের দ্বারা সংরক্ষিত করা উচিত;

যেহেতু জাতিসমূহের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উন্নয়নে সহায়তা করা আবশ্যক; যেহেতু জাতিসংঘভুক্ত জনগণ সনদের মাধ্যমে মৌল মানবিক অধিকারসমূহ, মানুষের মর্যাদা ও মূল্য এবং নারী ও পুরুষের সম-অধিকারের প্রতি আস্থা পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং সামাজিক অগ্রগতি ও ব্যাপকতর স্বাধীনতার উন্নততর জীবনমান প্রতিষ্ঠাকল্পে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ;

যেহেতু সদস্যরাষ্ট্রসমূহ জাতিসংঘের সহযোগিতায় মানবিক অধিকার ও মৌল স্বাধিকারসমূহের প্রতি সর্বজনীন শ্রদ্ধা ও মান্যতা বৃদ্ধি অর্জনে অঙ্গীকারাবদ্ধ;

যেহেতু সকল অধিকার ও স্বাধিকারের ব্যাপারে একটি সাধারণ সমঝোতা উক্ত অঙ্গীকার সম্পূর্ণরূপে আদায় করার জন্য সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ;

এক্ষণে, তাই সাধারণ পরিষদ

সকল জাতি ও জনগোষ্ঠীর অগ্রগতির একটি সাধারণ মানদণ্ড হিসেবে জারি করছে এই

মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র

ঐ লক্ষ্যে প্রত্যেক ব্যক্তি ও সমাজের প্রত্যেক অঙ্গ মানবিক অধিকারসমূহের এই সর্বজনীন ঘোষণাপত্রটিকে সর্বদা স্মরণ রেখে শিক্ষাদান ও জ্ঞান প্রসারের মাধ্যমে এসব অধিকার ও স্বাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করতে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রগতিশীল ব্যবস্থাদির দ্বারা সদস্যরাষ্ট্রসমূহের জনগণ ও তাদের অধীনস্থ অঞ্চলসমূহের অধিবাসীবৃন্দ উভয়ের মধ্যে ঐগুলোর সর্বজনীন ও কার্যকর স্বীকৃতি ও মান্যতা অর্জনের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাবে।

ধারা-১

বন্ধনহীন অবস্থায় এবং সমমর্যাদা ও অধিকারাদি নিয়ে সব মানুষই জন্মগ্রহণ করে। তাঁরা বুদ্ধি ও বিবেক সম্পন্ন বিধায় ভ্রাতৃসুলভ মনোভাব নিয়ে তাদের একে অন্যের প্রতি আচরণ করা উচিত।

ধারা-২

যেকোনো প্রকার পার্থক্য যথা—জাতি, গোত্র, বর্ণ, নারী-পুরুষ ভাষা, ধর্ম, রাজনৈতিক বা অন্য মতবাদ, জাতীয় বা সামাজিক উৎপত্তি, সম্পত্তি, জন্ম বা অন্য মর্যাদা নির্বিশেষে প্রত্যেকেই ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত সব অধিকার ও স্বাধিকারে স্বত্ববান।

অধিকন্তু, কোনো ব্যক্তি যে দেশ বা অঞ্চলের অধিবাসী, তা স্বাধীন, অছিভুক্ত এলাকা, অস্বায়ত্তশাসিত অথবা অন্য যেকোনো প্রকার সীমিত সার্বভৌমত্বের মধ্যে থাকুক না কেন, তার রাজনৈতিক, সীমানাগত ও আন্তর্জাতিক মর্যাদার ভিত্তিতে কোনো পার্থক্য করা চলবে না।

ধারা-৩

প্রত্যেকেরই জীবনধারণ, স্বাধীনতা ও ব্যক্তি নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে।

ধারা-৪

কাউকে দাস হিসেবে বা দাসত্বে রাখা চলবে না; সকল প্রকার দাস-প্রথা ও দাস-ব্যবসা নিষিদ্ধ থাকবে।

ধারা-৫

কাউকে নির্যাতন অথবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক অথবা অবমাননাকর আচরণ অথবা শাস্তি ভোগে বাধ্য করা চলবে না।

ধারা-৬

আইনের সমক্ষে প্রত্যেকেরই সর্বত্র ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতিলাভের অধিকার রয়েছে।

ধারা-৭

আইনের কাছে সবাই সমান এবং কোনোরূপ বৈষম্য ব্যতিরেকে সবারই আইনের দ্বারা সমভাবে রক্ষিত হওয়ার অধিকার রয়েছে। এই ঘোষণাপত্রের লঙ্ঘনজনিত বৈষম্য বা এরূপ বৈষম্যের উস্কানির বিরুদ্ধে সমভাবে রক্ষিত হওয়ার অধিকার সবারই আছে।

ধারা-৮

যে কার্যাদির ফলে শাসনতন্ত্র বা আইন কর্তৃক প্রদত্ত মৌল অধিকারসমূহ লঙ্ঘিত হয়, সেসবের জন্য উপযুক্ত জাতীয় বিচার আদালতের মারফত কার্যকর প্রতিকার লাভের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে।

ধারা-৯

কাউকে খেয়ালখুশি মতো গ্রেফতার, আটক অথবা নির্বাসন করা যাবে না।

ধারা-১০

প্রত্যেকেরই তার অধিকার ও দায়িত্বসমূহ এবং তার বিরুদ্ধে আনীত যেকোনো ফৌজদারি অভিযোগ নিরূপণের জন্য পূর্ণ সমতার ভিত্তিতে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার-আদালতের ন্যায্যভাবে ও প্রকাশ্যে শুনানি লাভের অধিকার রয়েছে।

ধারা-১১

ক. কোনো দণ্ডযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত হলে প্রত্যেকেরই আত্মপক্ষ সমর্থনের নিশ্চয়তা দেয় এমন প্রকাশ্য আদালত কর্তৃক আইন অনুযায়ী দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ বলে বিবেচিত হওয়ার অধিকার রয়েছে।
খ. কাউকেই কোনো কাজ বা ত্রুটির জন্য দণ্ডযোগ্য অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা চলবে না, যদি সংঘটনকালে তা জাতীয় বা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী দণ্ডযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য না হয়ে থাকে। আবার দণ্ডযোগ্য অপরাধ সংঘটনকালে যতটুকু শাস্তি প্রযোজ্য ছিল তার চেয়ে অধিক শাস্তি প্রয়োগ চলবে না।

ধারা-১২

কাউকে তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, পরিবার, বসতবাড়ি বা চিঠিপত্রের ব্যাপারে খেয়ালখুশি মতো হস্তক্ষেপ অথবা সম্মান এবং সুনামের ওপর আক্রমণ করা চলবে না।

ধারা-১৩

ক. নিজ রাষ্ট্রের সীমানার মধ্যে চলাচল ও বসতি স্থাপনের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে।
খ. প্রত্যেকেরই নিজ দেশসহ যেকোনো দেশ ছেড়ে যাওয়ার ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের অধিকার রয়েছে।

ধারা-১৪

ক. নির্যাতন এড়ানোর জন্য প্রত্যেকেরই অপর দেশসমূহে আশ্রয় প্রার্থনা ও আশ্রয় লাভ করার অধিকার রয়েছে।
খ. অরাজনৈতিক অপরাধসমূহ অথবা জাতিসংঘের উদ্দেশ্য ও মূলনীতিবিরোধী কার্যকলাপ থেকে সত্যিকারভাবে উদ্ভূত নির্যাতনের ক্ষেত্রে এই অধিকার না-ও পাওয়া যেতে পারে।

ধারা-১৫

ক. প্রত্যেকেরই একটি জাতীয়তার অধিকার রয়েছে।
খ. কাউকেই যথেচ্ছভাবে তার জাতীয়তা থেকে বঞ্চিত করা অথবা তাকে তার জাতীয়তা পরিবর্তনের অধিকার অস্বীকার করা চলবে না।

ধারা-১৬

ক. পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ও নারীদের জাতিগত, জাতীয়তা অথবা ধর্মের কারণে কোনো সীমাবদ্ধতা ব্যতিরেকে বিবাহ করা ও পরিবার গঠনের অধিকার রয়েছে। বিবাহের ব্যাপারে, বিবাহিত অবস্থায় এবং বিবাহ বিচ্ছেদকালে তাদের সম-অধিকার রয়েছে।
খ. কেবল বিবাহ-ইচ্ছুক পাত্র-পাত্রীর অবাধ ও পূর্ণ সম্মতির দ্বারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যাবে।
গ. পরিবার হচ্ছে সমাজের স্বাভাবিক ও মৌলিক একক গোষ্ঠী; সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক এর সংরক্ষিত হওয়ার অধিকার রয়েছে।

ধারা-১৭

ক. প্রত্যেকেরই একাকী এবং অপরের সহযোগিতায় সম্পত্তির মালিক হওয়ার অধিকার রয়েছে।
খ. কাউকেই তার সম্পত্তি থেকে খেয়ালখুশি মতো বঞ্চিত করা চলবে না।

ধারা-১৮

প্রত্যেকেরই চিন্তা, বিবেক ও ধর্মের স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে। নিজ ধর্ম অথবা বিশ্বাস পরিবর্তনের স্বাধীনতা এবং একাই অথবা অপরের সাথে যোগসাজশে ও প্রকাশ্যে বা গোপনে নিজ ধর্ম বা বিশ্বাস শিক্ষাদান, প্রচার, উপাসনা ও পালনের মাধ্যমে প্রকাশ করার স্বাধীনতা এই অধিকারে অন্তর্ভুক্ত।

ধারা-১৯

প্রত্যেকেরই মতামতের ও মতামত প্রকাশের স্বাধিকার রয়েছে: বিনা হস্তক্ষেপে মতামত পোষণ এবং যেকোনো উপায়ে ও রাষ্ট্রীয় সীমানা নির্বিশেষে তথ্য ও মতামত সন্ধান, গ্রহণ ও জ্ঞাত করার স্বাধীনতা এই অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।

ধারা-২০

ক. প্রত্যেকেই শান্তিপূর্ণভাবে সম্মিলিত হওয়ার অধিকার রয়েছে।
খ. কাউকেই কোনো সংঘভুক্ত হতে বাধ্য করা যাবে না।

ধারা-২১

ক. প্রত্যক্ষভাবে অথবা অবাধে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিজ দেশের সরকারে অংশগ্রহণের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে।
খ. প্রত্যেকেরই নিজ দেশের সরকারি চাকরিতে সমান সুযোগ লাভের অধিকার রয়েছে।
গ. জনগণের ইচ্ছাই হবে সরকারের ক্ষমতার ভিত্তি; এই ইচ্ছা সর্বজনীন ও সমান ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নৈমিত্তিকভাবে এবং প্রকৃত নির্বাচন দ্বারা ব্যক্ত হবে; গোপন ব্যালট অথবা অনুরূপ অবাধ ভোটদান পদ্ধতিতে এরূপ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

ধারা-২২

সমাজের সদস্য হিসেবে প্রত্যেকেই সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে; প্রত্যেকেই জাতীয় প্রচেষ্টা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এবং প্রতিটি রাষ্ট্রের সংগঠন ও সম্পদ অনুসারে তার মর্যাদা ও অবাধে ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য অপরিহার্য অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসমূহ আদায় করতে পারবে।

ধারা-২৩

ক. প্রত্যেকেরই কাজ করার, অবাধে চাকরি নির্বাচনের, কাজের জন্য ন্যায্য ও অনুকূল অবস্থা লাভের এবং বেকারত্ব থেকে রক্ষিত হওয়ার অধিকার রয়েছে।
খ. প্রত্যেকেরই কোনো বৈষম্য ব্যাতিরকে সমান কাজের জন্য সমান বেতন পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
গ. প্রত্যেক কর্মী তার নিজের ও পরিবারের মানবিক মর্যাদা রক্ষার নিশ্চয়তা দিতে সক্ষম এমন ন্যায্য ও অনুকূল পারিশ্রমিক এবং প্রয়োজনবোধে সেই সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তার জন্য অন্যান্য সুবিধা লাভের অধিকারী।
ঘ. প্রত্যেকেরই নিজ স্বার্থ রক্ষার্থে শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন ও এতে যোগদানের অধিকার রয়েছে।

ধারা-২৪

প্রত্যেকেরই বিশ্রাম ও অবসর বিনোদনের অধিকার রয়েছে। কাজের সময়ের যুক্তিসঙ্গত সীমা ও বেতনসহ নৈমিত্তিক ছুটি এ অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।

ধারা-২৫

ক. নিজের ও নিজ পরিবারের স্বাস্থ্য ও কল্যাণের নিমিত্ত পর্যাপ্ত জীবনমানের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সামাজিক সেবামূলক কার্যাদির সুযোগ এবং বেকারত্ব, পীড়া, অসক্ষমতা, বৈধব্য, বার্ধক্য অথবা অনিবার্য কারণে জীবনযাপনে অন্যান্য অপারগতার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা এই অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।
খ. মাতৃত্বকালে ও শৈশব অবস্থায় প্রত্যেকেরই বিশেষ যত্ন ও সহায়তা লাভের অধিকার রয়েছে। জন্ম বৈবাহিক বন্ধনের ফলে বা বৈবাহিক বন্ধনের বাইরে হোক, সব শিশুই অভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা ভোগ করবে।

ধারা-২৬

ক. প্রত্যেকেরই শিক্ষালাভের অধিকার রয়েছে। অন্ততপক্ষে প্রাথমিক ও মৌলিক পর্যায়ে শিক্ষা অবৈতনিক হবে। প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক হবে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও সাধারণভাবে লভ্য থাকবে এবং উচ্চতর শিক্ষা মেধার ভিত্তিতে সবার জন্য সমভাবে উন্মুক্ত থাকবে।
খ. ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশ ও মানবিক অধিকার ও মৌলিক স্বাধিকারসমূহের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ দৃঢ় করার উদ্দেশে শিক্ষা পরিচালিত হবে। সমঝোতা, সহিষ্ণুতা ও সকল জাতি, বর্ণ ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে বন্ধুত্ব উন্নয়ন এবং শান্তি রক্ষার্থে জাতিসংঘ কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি করবে।
গ. যে প্রকার শিক্ষা তাদের সন্তানদের দেওয়া হবে তা পূর্ব থেকে বেছে নেওয়ার অধিকার পিতামাতার রয়েছে।

ধারা-২৭

ক. প্রত্যেকেরই গোষ্ঠীগত সাংস্কৃতিক জীবনে অবাধে অংশগ্রহণ, শিল্পকলা চর্চা করা এবং বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ও এর সুফলসমূহের অংশীদার হওয়ার অধিকার রয়েছে।
খ. প্রত্যেকেরই বিজ্ঞান, সাহিত্য অথবা শিল্পকলাভিত্তিক সৃজনশীল কাজ থেকে উদ্ভূত নৈতিক ও বৈষয়িক স্বার্থসমূহ সংরক্ষণের অধিকার রয়েছে।

ধারা-২৮

প্রত্যেকেই এমন একটি সামাজিক ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্য স্বত্ববান যেখানে এই ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত অধিকার ও স্বাধীনতাসমূহ পূর্ণভাবে আদায় করা যেতে পারে।

ধারা-২৯

ক. প্রত্যেকেরই সমাজের প্রতি কর্তব্যাদি রয়েছে কেবল যার অন্তর্গত হয়েই তার ব্যক্তিত্বের অবাধ ও পূর্ণ বিকাশ সম্ভব।
খ. স্বীয় অধিকার ও স্বাধীনতাসমূহ প্রয়োগকালে প্রত্যেকেরই শুধু ঐ ধরনের সীমাবদ্ধতা থাকবে যা কেবল অপরের অধিকার ও স্বাধীনতাসমূহের যথার্থ স্বীকৃতি ও শ্রদ্ধা নিশ্চিত করতে পারে। এরূপ সীমাবদ্ধতা একটি গণতান্ত্রিক সমাজে নৈতিকতা, গণশৃঙ্খলা ও সাধারণ কল্যাণের ন্যায্য প্রয়োজনসমূহ মেটানোর উদ্দেশ্যে আইনের দ্বারা নিরূপিত হবে।
গ. এই সব অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগকালে কোনো ক্ষেত্রেই জাতিসংঘের উদ্দেশ্যও মূলনীতি লঙ্ঘন করা চলবে না।

ধারা-৩০

এই ঘোষণার উল্লিখিত কোনো বিষয়কে এরূপভাবে ব্যাখ্যা করা চলবে না যাতে মনে হয় যে এই ঘোষণার অন্তর্ভুক্ত কোনো অধিকার বা স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশে কোনো রাষ্ট্র, দল বা ব্যক্তিবিশেষের লিপ্ত হওয়ার অধিকার রয়েছে।

... ... ...

এই লেখাটি জাতিসংঘের প্রাতিষ্ঠানিক নথি থকে গ্রহণ করা হয়েছে। জাতিসংঘ প্রকাশনার সম্ভাব্য চিন্তাভাবনা যতদূর সম্ভব ছড়িয়ে দেওয়ার উদেশ্যে এই সংস্থা তাদের বেশির ভাগ নথি পাবলিক ডোমেইনে সকলের জন্য মুক্ত রেখেছে।

জাতিসংঘের প্রশাসনিক দিগ্‌নির্দেশনা (ইংরেজি) অনুসারে, নিম্নলিখিত নথিগুলি সারা বিশ্বব্যাপী পাবলিক ডোমেইনে মুক্ত:

  1. প্রাতিষ্ঠানিক রেকর্ড (সম্মেলনের কার্যবিবরণী, আক্ষরিক ও সারসংক্ষেপ, ...)
  2. জতিসংঘের চিহ্নযুক্ত জাতিসংঘের নথি
  3. জাতিসংঘের কার্যাবলী সম্বন্ধে জনগণকে অবহিত করার প্রাথমিক উদ্দেশ্যে তৈরি তথ্য উপাদান (বিক্রয়ের জন্য প্রযোজ্য তথ্য উপাদান নয়)