মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র
মানবাধিকারের
সর্বজনীন
ঘোষণাপত্র
জাতিসংঘ তথ্য কেন্দ্র
ঢাকা, বাংলাদেশ
অনুবাদ: অধ্যাপক নূরুল মোমেন
সম্পাদনা: কাজী আলী রেজা
প্রথম প্রকাশ: অক্টোবর ২০১৮
পুনর্মুদ্রণ: অক্টোবর ২০১৯
চলতি সংস্করণ সম্পদনায়: মো. মনিরুজ্জামান, পিএইচডি
মো. জাহিদ হোসেন, জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারীর অফিস, ঢাকা
ইউনিক প্রকাশ ২০১৯/০৫-৩০০০
মুদ্রণ: প্রিন্টটাচ
ভূমিকা
১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ মানবাধিকারের যে সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গ্রহণ ও জারি করে তার পূর্ণ বিবরণ পরবর্তী পৃষ্ঠাসমূহে প্রকাশিত হলো। এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপের পর পরিষদ সকল সদস্যরাষ্ট্রকে ঘোষণাপত্রের বিষয়বস্তু প্রচার এবং ‘তা দেশ ও ভূখণ্ডসমূহের রাজনৈতিক মর্যাদাভিত্তিক পার্থক্য নির্বিশেষে প্রধানত বিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিতরণ, প্রদর্শন, পাঠ ও ব্যাখ্যা করার আহ্বান জানায়।’
জাতিসংঘ প্রত্যেক ব্যক্তির মানবাধিকার সমর্থন, এর বিকাশসাধন ও সংরক্ষণে অঙ্গীকারাবদ্ধ। জাতিসংঘ সনদ থেকে উদ্ভূত এই অঙ্গীকারের দ্বারা মৌল মানবাধিকার, মানুষের মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি বিশ্ববাসীর বিশ্বাস পুনর্ব্যক্ত হচ্ছে। যে অধিকারগুলো প্রত্যেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য, মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে জাতিসংঘ সুস্পষ্ট ও সহজ ভাষায় তা ব্যক্ত করেছে।
এসব অধিকার আপনারই সম্পদ।
এসব আপনারই অধিকার
এগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হোন।
নিজের জন্য এবং মানুষ হিসেবে অন্য মানুষের জন্য এগুলোকে উন্নীত ও রক্ষা করতে সাহায্য করুন।
মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র
মুখবন্ধ
যেহেতু মানব পরিবারের সকল সদস্যের সহজাত মর্যাদা ও সম-অবিচ্ছেদ্য অধিকারসমূহের স্বীকৃতি বিশ্বে স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও শান্তির ভিত্তি;
যেহেতু মানবিক অধিকারসমূহের প্রতি অবজ্ঞা ও ঘৃণা মানবজাতির বিবেকের পক্ষে অপমানজনক বর্বরোচিত কার্যকলাপে পরিণতি লাভ করেছে এবং সাধারণ মানুষের সর্বোচ্চ আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে এমন একটি পৃথিবীর সূচনা ঘোষিত হয়েছে, যেখানে মানুষ বাক ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা এবং ভয় ও অভাব থেকে নিষ্কৃতি ভোগ করবে;
যেহেতু চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসেবে মানুষকে অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হতে বাধ্য করা না হলে মানবিক অধিকারসমূহ অবশ্যই আইনের শাসনের দ্বারা সংরক্ষিত করা উচিত;
যেহেতু জাতিসমূহের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উন্নয়নে সহায়তা করা আবশ্যক; যেহেতু জাতিসংঘভুক্ত জনগণ সনদের মাধ্যমে মৌল মানবিক অধিকারসমূহ, মানুষের মর্যাদা ও মূল্য এবং নারী ও পুরুষের সম-অধিকারের প্রতি আস্থা পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং সামাজিক অগ্রগতি ও ব্যাপকতর স্বাধীনতার উন্নততর জীবনমান প্রতিষ্ঠাকল্পে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ;
যেহেতু সদস্যরাষ্ট্রসমূহ জাতিসংঘের সহযোগিতায় মানবিক অধিকার ও মৌল স্বাধিকারসমূহের প্রতি সর্বজনীন শ্রদ্ধা ও মান্যতা বৃদ্ধি অর্জনে অঙ্গীকারাবদ্ধ;
যেহেতু সকল অধিকার ও স্বাধিকারের ব্যাপারে একটি সাধারণ সমঝোতা উক্ত অঙ্গীকার সম্পূর্ণরূপে আদায় করার জন্য সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ;
এক্ষণে, তাই সাধারণ পরিষদ
সকল জাতি ও জনগোষ্ঠীর অগ্রগতির একটি সাধারণ মানদণ্ড হিসেবে জারি করছে এই
মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র
ঐ লক্ষ্যে প্রত্যেক ব্যক্তি ও সমাজের প্রত্যেক অঙ্গ মানবিক অধিকারসমূহের এই সর্বজনীন ঘোষণাপত্রটিকে সর্বদা স্মরণ রেখে শিক্ষাদান ও জ্ঞান প্রসারের মাধ্যমে এসব অধিকার ও স্বাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করতে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রগতিশীল ব্যবস্থাদির দ্বারা সদস্যরাষ্ট্রসমূহের জনগণ ও তাদের অধীনস্থ অঞ্চলসমূহের অধিবাসীবৃন্দ উভয়ের মধ্যে ঐগুলোর সর্বজনীন ও কার্যকর স্বীকৃতি ও মান্যতা অর্জনের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাবে।
ধারা-১
বন্ধনহীন অবস্থায় এবং সমমর্যাদা ও অধিকারাদি নিয়ে সব মানুষই জন্মগ্রহণ করে। তাঁরা বুদ্ধি ও বিবেক সম্পন্ন বিধায় ভ্রাতৃসুলভ মনোভাব নিয়ে তাদের একে অন্যের প্রতি আচরণ করা উচিত।
ধারা-২
যেকোনো প্রকার পার্থক্য যথা—জাতি, গোত্র, বর্ণ, নারী-পুরুষ ভাষা, ধর্ম, রাজনৈতিক বা অন্য মতবাদ, জাতীয় বা সামাজিক উৎপত্তি, সম্পত্তি, জন্ম বা অন্য মর্যাদা নির্বিশেষে প্রত্যেকেই ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত সব অধিকার ও স্বাধিকারে স্বত্ববান।
অধিকন্তু, কোনো ব্যক্তি যে দেশ বা অঞ্চলের অধিবাসী, তা স্বাধীন, অছিভুক্ত এলাকা, অস্বায়ত্তশাসিত অথবা অন্য যেকোনো প্রকার সীমিত সার্বভৌমত্বের মধ্যে থাকুক না কেন, তার রাজনৈতিক, সীমানাগত ও আন্তর্জাতিক মর্যাদার ভিত্তিতে কোনো পার্থক্য করা চলবে না।
ধারা-৩
প্রত্যেকেরই জীবনধারণ, স্বাধীনতা ও ব্যক্তি নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে।
ধারা-৪
কাউকে দাস হিসেবে বা দাসত্বে রাখা চলবে না; সকল প্রকার দাস-প্রথা ও দাস-ব্যবসা নিষিদ্ধ থাকবে।
ধারা-৫
কাউকে নির্যাতন অথবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক অথবা অবমাননাকর আচরণ অথবা শাস্তি ভোগে বাধ্য করা চলবে না।
ধারা-৬
আইনের সমক্ষে প্রত্যেকেরই সর্বত্র ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতিলাভের অধিকার রয়েছে।
ধারা-৭
আইনের কাছে সবাই সমান এবং কোনোরূপ বৈষম্য ব্যতিরেকে সবারই আইনের দ্বারা সমভাবে রক্ষিত হওয়ার অধিকার রয়েছে। এই ঘোষণাপত্রের লঙ্ঘনজনিত বৈষম্য বা এরূপ বৈষম্যের উস্কানির বিরুদ্ধে সমভাবে রক্ষিত হওয়ার অধিকার সবারই আছে।
ধারা-৮
যে কার্যাদির ফলে শাসনতন্ত্র বা আইন কর্তৃক প্রদত্ত মৌল অধিকারসমূহ লঙ্ঘিত হয়, সেসবের জন্য উপযুক্ত জাতীয় বিচার আদালতের মারফত কার্যকর প্রতিকার লাভের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে।
ধারা-৯
কাউকে খেয়ালখুশি মতো গ্রেফতার, আটক অথবা নির্বাসন করা যাবে না।
ধারা-১০
প্রত্যেকেরই তার অধিকার ও দায়িত্বসমূহ এবং তার বিরুদ্ধে আনীত যেকোনো ফৌজদারি অভিযোগ নিরূপণের জন্য পূর্ণ সমতার ভিত্তিতে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার-আদালতের ন্যায্যভাবে ও প্রকাশ্যে শুনানি লাভের অধিকার রয়েছে।
ধারা-১১
ধারা-১২
কাউকে তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, পরিবার, বসতবাড়ি বা চিঠিপত্রের ব্যাপারে খেয়ালখুশি মতো হস্তক্ষেপ অথবা সম্মান এবং সুনামের ওপর আক্রমণ করা চলবে না।
ধারা-১৩
ধারা-১৪
ধারা-১৫
ধারা-১৬
ধারা-১৭
ধারা-১৮
প্রত্যেকেরই চিন্তা, বিবেক ও ধর্মের স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে। নিজ ধর্ম অথবা বিশ্বাস পরিবর্তনের স্বাধীনতা এবং একাই অথবা অপরের সাথে যোগসাজশে ও প্রকাশ্যে বা গোপনে নিজ ধর্ম বা বিশ্বাস শিক্ষাদান, প্রচার, উপাসনা ও পালনের মাধ্যমে প্রকাশ করার স্বাধীনতা এই অধিকারে অন্তর্ভুক্ত।
ধারা-১৯
প্রত্যেকেরই মতামতের ও মতামত প্রকাশের স্বাধিকার রয়েছে: বিনা হস্তক্ষেপে মতামত পোষণ এবং যেকোনো উপায়ে ও রাষ্ট্রীয় সীমানা নির্বিশেষে তথ্য ও মতামত সন্ধান, গ্রহণ ও জ্ঞাত করার স্বাধীনতা এই অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।
ধারা-২০
ধারা-২১
ধারা-২২
সমাজের সদস্য হিসেবে প্রত্যেকেই সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে; প্রত্যেকেই জাতীয় প্রচেষ্টা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এবং প্রতিটি রাষ্ট্রের সংগঠন ও সম্পদ অনুসারে তার মর্যাদা ও অবাধে ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য অপরিহার্য অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসমূহ আদায় করতে পারবে।
ধারা-২৩
ধারা-২৪
প্রত্যেকেরই বিশ্রাম ও অবসর বিনোদনের অধিকার রয়েছে। কাজের সময়ের যুক্তিসঙ্গত সীমা ও বেতনসহ নৈমিত্তিক ছুটি এ অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।
ধারা-২৫
ধারা-২৬
ধারা-২৭
ধারা-২৮
প্রত্যেকেই এমন একটি সামাজিক ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্য স্বত্ববান যেখানে এই ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত অধিকার ও স্বাধীনতাসমূহ পূর্ণভাবে আদায় করা যেতে পারে।
ধারা-২৯
ধারা-৩০
এই ঘোষণার উল্লিখিত কোনো বিষয়কে এরূপভাবে ব্যাখ্যা করা চলবে না যাতে মনে হয় যে এই ঘোষণার অন্তর্ভুক্ত কোনো অধিকার বা স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশে কোনো রাষ্ট্র, দল বা ব্যক্তিবিশেষের লিপ্ত হওয়ার অধিকার রয়েছে।
... ... ...
এই লেখাটি জাতিসংঘের প্রাতিষ্ঠানিক নথি থকে গ্রহণ করা হয়েছে। জাতিসংঘ প্রকাশনার সম্ভাব্য চিন্তাভাবনা যতদূর সম্ভব ছড়িয়ে দেওয়ার উদেশ্যে এই সংস্থা তাদের বেশির ভাগ নথি পাবলিক ডোমেইনে সকলের জন্য মুক্ত রেখেছে।
জাতিসংঘের প্রশাসনিক দিগ্নির্দেশনা (ইংরেজি) অনুসারে, নিম্নলিখিত নথিগুলি সারা বিশ্বব্যাপী পাবলিক ডোমেইনে মুক্ত:
- প্রাতিষ্ঠানিক রেকর্ড (সম্মেলনের কার্যবিবরণী, আক্ষরিক ও সারসংক্ষেপ, ...)
- জতিসংঘের চিহ্নযুক্ত জাতিসংঘের নথি
- জাতিসংঘের কার্যাবলী সম্বন্ধে জনগণকে অবহিত করার প্রাথমিক উদ্দেশ্যে তৈরি তথ্য উপাদান (বিক্রয়ের জন্য প্রযোজ্য তথ্য উপাদান নয়)।