দয়াময় নাম।

দয়াময় নাম তব সকলেই কয়।
মম প্রতি কেন তবে হ’য়েছ নিদয়?
নিক্ষেপিয়া শিয়োপরে দারুণ অশনি।
কাড়ি নিলে অভাগীর পতি গুণমণি॥

আধার করিয়া হায় আলোক-জীবন।
অকালে লইলে হরি উজ্জ্বল রতন॥
ছিল প্রাণ আলোকিত যাহার ছটায়।
সে রত্ন হরিয়া নিলে কেমনেতে হায়॥

যে হৃদয় ছিল হায় নন্দনকানন।
মরুভূমি সম এবে রহে অনুক্ষণ॥
সুখ-পারিজাত পুষ্প ছিল প্রস্ফুটিত।
ছিন্ন ভিন্ন হইয়াছে হৃদয় দলিত॥

হরিয়াছ জীবনের সার রত্ন নিধি।
এই কি তোমার দয়া হে দারুণ বিধি॥
বাণবিদ্ধা কুরঙ্গিনী সম সদা হায়।
ছট ফট্ করে প্রাণ বিষম জ্বালায়॥


জর্জ্জরিতা রহে প্রাণ বিরহের বিষে।
জীবন ভরিয়া রহে বিরহ হুতাশে॥
নাহি কি দয়ার লেশ ওহে দয়াময়।
দেখিয়া এ দুঃখ তব দহেনা হৃদয়॥

হারাইয়া শিরোমণি ফণিনী যেমন।
আছাড়ি বিছাড়ি তাহা করে অন্বেষণ॥
খুঁজিতেছি দিবানিশী আকুল হইয়ে।
কোথা মম শিরোমণি রেখেছ লুকায়ে॥

পাষাণে বাঁধিয়া প্রাণ হইয়া পাষাণ।
দয়াময় নাম ধর এ কোন বিধান॥
নাহিক তোমার মনে করুণার লেশ।
নাহিক মমতা কিছু ওহে পরমেশ॥

গলেনা হৃদয় তব এ দারুণ তাপে।
আসন চঞ্চল হয়ে নাহি কিগো কাঁপে॥
ঝরেনা নয়ন কিগো কভুও তোমার।
শ্রবণেতে কাতরতা নাহি যায় আর॥

পাষাণেতে ঝরে দেখ নির্ঝরের ধারা।
তিরপিতা করিতেছে তাপিতা এ ধরা॥
কাহার দয়ার সেই দেয় পরিচয়।
করুণার ধারা রূপে প্রস্রবণ বয়॥


মম প্রতি কেন হায় হ’য়ে প্রতিকূল।
হৃদয়ে হানিছ মম বিরহের শূল॥
জীবন-সর্ব্বস্ব ধন লইয়াছ হরি।
দারুণ যাতনা আর সহিতে না পারি॥

কোন কাজ নাহি আর অভাগী-জীবনে।
কেন বা রেখেছ মোরে কোন প্রয়োজনে
নাহিক সম্বন্ধ কিছু জগতের সহ।
জ্বলিছে অনল মম প্রাণে অহরহ॥

পরমেশ বল মোরে কত কাল আর।
বহিব দুঃখেতে ভরা এ জীবন-ভার॥
কর্ম্মফল আর কত সহিব নীরবে।
দুঃখিনীর প্রাণে আর কত জ্বালা সবে।৷

ওহে বিভু কর মোর নিয়তির শেষ।
ল’য়ে যাও পরপারে সেই মহাদেশ॥
জানি না সে কোন স্থান কত দূরে রয়।
তুমি না বলিলে প্রভু যেতে পাই ভয়।৷

রাখিয়াছ যথা মোর হৃদয়-দেবতা।
দয়াময় দয়া করে লও মোরে তথা।৷