মালা/প্রাণের বেদন
প্রাণের বেদন।
অশ্রু বিসর্জ্জন, প্রাণের বেদন, সতত জীবন ভরিয়া রয়।
হৃদয়ের ভার, বহিবারে আর, নাহিক শকতি আর যে হয়॥
হইয়া হতাশ, নিরাশার শ্বাস, ব্যাপিয়া রয়েছে জীবন মোর।
অবনত শির, আঁখি রহে স্থির, শ্রান্ত এ শরীর বিষাদে ঘোর॥
নাহিক উৎসাহ, সুখের প্রবাহ, হ’য়েছে নিশ্চল জনম মত।
বিফল প্রয়াস, প্রাণে নাহি আশ, মুছিয়া গিয়াছে বাসনা যত॥
নাহি কোন কাজ, সদা গৃহ মাঝ, নীরব হইয়া বসিয়া রহি।
উদ্ভ্রান্ত হৃদয়, সতত যে হয়, কি যাতনা প্রাণে সতত সহি॥
জগতের সহ নাহিক সম্বন্ধ হ’য়েছে বিলীন সকলি হায়!
মরীচিকা সম, সেই স্মৃতি মম, হ’য়ে মনোরম পথ ভুলায়॥
আপনার প্রাণ, অরি সম জ্ঞান, তাহারে রাখিতে না চাহে মন।
কার লাগি আর, এ জীবন ভার, বহি অনিবার ছার জীবন॥
এ পোড় নয়নে, কি দৃশ্য দর্শনে, হবে তিরপিত কাহারে হেরি।
অন্ধ সে যে হায়, না হেরি তাহায়, অনুপম সেই রূপ মাধুরী॥
শ্মশানের চিতা, সদা প্রজ্বলিতা, র’য়েছে আমার হৃদয় মাঝে।
নাহিক আসক্তি, নাহি অনুরক্তি, বীতস্পৃহ রই সকল কাজে॥
গৃহ পরিজন, বিষ দরশন, সকলি হ’য়েছে বিষাদে ভরা।
অন্ধকারময়, হেরি সমুদয়, আলোকিত এই সুখের ধরা।৷
রবি শশী তারা, নীলাকাশ ঘেরা, কাননে কুসুম শোভিয়া রয়।
কোথা দিবা রাত্রি, অশান্তির যাত্রী, অশান্তির সহ ছুটি যে হায়!
পূর্ণিমা রজনী, দংশে যেন ফণী, বরিষে সুধাংশু অনল কণা।
অমাৱ আঁধারে, এ গুহা মাঝারে, রহি যে নীরবে দুঃখে মগনা।৷
দুঃখের সাগরে, অতল গভীরে, নিমজ্জিত হ’য়ে জীবন রয়।
এ হৃদয় তলে, গভীর কল্লোলে, দুঃখের প্রবাহ সতত বয়।৷
কোথা বষ মাস, তিথি বার রাশ, অনুভূতি কিছু হৃদয়ে নাই।
হৃদয়েতে ভরা, সে মোহ মদিরা, সেই স্মৃতি ঘেরা সকল ঠাঁই।৷
বিষাদ তামসী, রহে দিবানিশি উপলব্ধি কিছু নাহিক আর।
আলোকের রেখা, নাহি যায় দেখা, গভীর আঁধারে ব্যাপে সংসার।৷
গিয়াছে চলিয়া, প্রেম প্রীতি মায়া, বিষাদের ছায়া র’য়েছে ঘিরে।
করে আধিপত্য, প্রবল দৌরাত্ম্য, মম প্রাণে নৃত্য হতাশা করে।
অদৃশ্যে আঁধার, ব্যাপে চারি ধার, জগৎ সরিছে চরণ তলে।
শূন্যে করি বাস, রোধে যেন শ্বাস, কভু ভাসি দুঃখ-জলধি-জলে।৷
ক্ষিপ্ত বায়ু মত, ভুমি অবিরত, হাহারবে সদা ঘুরিয়া মরি।
বিশ্বের সীমানা, নাহি যায় জানা, কোন বা কামনা কোথা বিচরি।৷
নিষ্ফল প্রয়াস, জীবন নিরাশ, হৃদয় হয়েছে সাহারা মরু।
ছিন্ন আশালতা, হৃদয় দলিতা, ভাঙ্গিয়া গিয়াছে আশ্রয় তরু।
প্রাণের বেদন, ভুলিব তখন, যাইব যখন তাঁহার কাছে।
অশ্রু বিসর্জ্জন, দহে হুতাশন, হব বিস্মরণ যে জ্বালা আছে।৷
হায় কতদিনে, প্রাণেশের সনে, মিলি চিরতরে রহিব তথা।
কহিব নাথেরে, আমার অন্তরে, রহিয়াছে যত প্রাণের কথা॥
প্রাণে প্রাণে মিশি, রব দিবানিশি, ফেলিবনা আর পলক আঁখি
প্রাণের পিপাসা, মিটাইব আশা, কমনীয় সেই মূরতি দেখি॥
অতীতের স্মৃতি, দহিতেহে নিতি, দহিছে আমার হৃদয় হায়।
কত দিবসের প্রীতি প্রণয়ের, সুখের কাহিনী ধ্বনিছে তায়।৷
কত রজনীর, মিলন মদির, আকুল উচ্ছ্বাসে অধীর মন।
হৃদে ভালবাসা, নয়নেতে তৃষা, ভরা কত আশা এই জীবন॥
গিয়াছে সকলি, দিয়াছি অঞ্জলি, কালের কুটিল কঠিন পায়।
ভবিষ্যৎ আশা, বাঁধিতেছে বাসা, এ হৃদয় নীড়ে সেই আশায়॥
জীবনের শেষে, হেরিয়ে প্রাণেশে, অতীতের দুঃখ ভুলিব সব।
সেই পরপারে, মিলন-মন্দিরে, লইয়া নাথেরে সুখেতে বর!
রহি প্রতীক্ষায়, সে দিন আশায়, কাটে গণনায় আমার দিন।
কালের আবর্ত্তে, ঘুরিতে ঘূরিতে, সেই পদে পুনঃ হব বিলীন॥
এই দীর্ঘ পথ, করিয়া পশ্চাৎ, হব উপনীত সে সুখ-ধামে।
হৃদয়-দেবতা, নেহারিয়া তথা, বিভোর হইব তাঁহার নামে।৷