মা (ম্যাক্সিম গোর্কি, বিমল সেন)/দ্বিতীয় খণ্ড/তিন
—তিন—
তিনদিন পরে মজুরানীর ছদ্মবেশে শােফি আর মা মখন বেরিয়ে পড়লেন গ্রামের উদ্দেশে, তখন তাঁদের চেনাই দায় হল। মনে হল যেন তাঁরা আজীবন এই বেশেই ঘুরে বেড়াচ্ছে।
দু’পাশে গাছের সারি, মাঝখানে পথ। হাঁটতে হাঁটতে মা প্রশ্ন করলেন, হাঁটতে কষ্ট হবে না তাে?
শােফি হেসে বললো, এ পথে কি আমি এই নতুন বেরিয়েছি ভাবছ, মা? আমার এসব অভ্যেস আছে।···
তারপর মানুষ যেমন করে ছেলেবেলায় খেলা-ধুলাের কথা বর্ণনা করে তেমনি ক’রে বলে গেলো শােফি তার বিচিত্র বিপ্লব-কাহিনী। কখনাে সে রয়েছে নাম ভাঁড়িয়ে, দলিল-পত্র করেছে জাল। কখনো গােয়েন্দাদের চোখে ধুলি দিতে আত্মগােপন করেছে রকম-বেরকমের ছদ্মবেশে। শহরে শহরে চালান করেছে শত শত নিষিদ্ধ পুস্তক। নির্বাসিত সঙ্গীদের মুক্তির আয়োজন ক’রে দিয়েছে···সঙ্গে করে তাদের বিপদ সীমার বাইরে রেখে এসেছে। তার বাড়িতে একটা ছাপাখানা ছিল···পুলিস খানাতল্লাশ করতে এলে এক মিনিটের মধ্যে ভেল বদলে চাকরের সাজে আগন্তুকদের সামনে দিয়ে বেরিয়ে গেলো সে···তারপর গায়ে একখানা র্যাপার জড়িয়ে, মাথায় রুমাল বেঁধে, হাতে একটা কেরোসিনের টিন নিয়ে কেরোসিন-ওয়ালীর বেশে শীতের কনকনে হাওয়ায় শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চ’লে গেলো।··· আর একবার সে এসেছে নতুন এক শহরে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে···তাদের বাড়িতে ঢুকে সিঁড়ি বেয়ে উঠছে এমন সময় দেখতে পেলো তাদের ঘরে খানাতল্লাশ করছে পুলিস; ফেরা তখন নিরাপদ নয়···এক সেকেণ্ড ইতস্তত না করে নির্ভীকভাবে সে নিচের তলায় একটা ঘরের ঘণ্টা বাজিয়ে ব্যাগ হাতে অপরিচিত লোকদের মধ্যে ঢুকে পড়লো— তারপর সরলভাবে নিজের অবস্থার কথা ব্যক্ত ক’রে বললো, আমার ইচ্ছা হলে আপনারা পুলিসের হাতে দিতে পারেন; কিন্তু আমি জানি, আপনারা তা দেবেন না। লোকগুলো অত্যন্ত ভয় পেলো। সমস্ত রাত ঘুমোলোনা। প্রত্যেক মিনিট আশঙ্কা করে, এই বুঝি পুলিস এসে দরজা ঠেলে···কিন্তু তবু আমাকে ধরিয়ে দিতে মন উঠল না···পরদিন এই নিয়ে হাসাহাসি। ···তারপর আর একবার সে রেলগাড়িতে চলেছে একজন গোয়েন্দার সঙ্গে একই গাড়িতে, একই আসনে···তার সন্ন্যাসিনীর ছদ্মবেশ···গোয়েন্দাটি তখন তারই খোঁজে বেরিয়েছিল···তারই কাছে গোয়েন্দা গল্প জুড়ে দিলো, কেমন দক্ষতার সঙ্গে সে শোফিকে খুঁজে বের করেছে···শোফি নাকি ঐ গাড়িরই দ্বিতীয় শ্রেণীর এক কামরায় আছে···গাড়ি থামে, আর প্রত্যেকবার সে খুঁজে দেখে এসে শোফিকে বলে, না, তাকে দেখছি না,ঘুমোচ্ছে বোধ হয়। ওদের তো মেহনৎ কম নয়, আমাদের মতে। ওদেরও জীবন, বিপদসংকুল!···
মা তার কাহিনী শুনে প্রাণ খুলে হাসেন। শোফির দীর্ঘ উন্নত দেহ, গভীর কালো চোখ দিয়ে ফুটে বেরোয় একটা দীপ্তি, একটা সাহস, একটা অনাবিল আনন্দ। পাখির গান শুনতে শুনতে, পথের ফুল তুলতে তুলতে, নৈসর্গিক দৃশ্যের ওপর মুগ্ধ-দৃষ্টি বুলোতে বুলোতে দু’জন গ্রামের দিকে এগিয়ে চললো। শোফির আনন্দোজ্জ্বল মুর্তিখানির দিকে চেয়ে মা বললেন, তুমি এখনো তরুণ!
শোফি হাসতে হাসতে বললো, আমার বয়স, মা, বত্রিশ বছর।
মা বললেন হোক, কিন্তু তোমার চোখ, তোমার কণ্ঠ এতো সজীব যে তোমাকে তরুণী বলে মনে হয়। এতো বিপদসংকুল জীবন তোমার অথচ প্রাণ তোমার হাসছে।
শোফি বললো, প্রাণ আমার হাসছে, চমৎকার বলেছো, মা, কিন্তু কষ্ট! কই, না তো! আমিতো মনে করি, এর চেয়ে সুন্দর, এর চেয়ে মজাব জীবন আর হ’তে পারে না!
মা বললেন, সব চেয়ে তোমাদের এই জিনিসটা আমার ভালো লাগে। তোমরা জান, মানুষের প্রাণে ঢুকতে হয় কোন্ পথ দিয়ে। নির্ভয়ে, নির্ভাবনায় মানব-প্রাণের সমস্ত কিছু তোমাদের সামনে খুলে যায়। পৃথিবীতে অন্যায়কে তোমরা জয় করেছো, সম্পূর্ণভাবে জয় করেছো।
শোফি জোর দিয়ে বললো, হাঁ, মা, আমরা জয়ী হব; কারণ আমরা মজুরদের সঙ্গে এক হ’য়ে দাঁড়িয়েছি। তাদের কাছ থেকেই আমরা পাই আমাদের কর্মশক্তি—সত্য যে জয়যুক্ত হবে এই স্থিরবিশ্বাস। তারাই হচ্ছে আমাদের সমস্ত দৈহিক এবং অলৌকিক শক্তির অফুরন্ত উৎস। তাদেরই মধ্যে নিহিত আছে সকল সম্ভাবনা, তাদেরই নিয়ে হ’চ্ছে সকল কিছু সম্ভব। শুধু উদ্বুদ্ধ করা চাই তাদের শক্তি, তাদের জ্ঞান, তাদের আশা, তাদের বর্ধিত হবার, বিকশিত হবার স্বাধীনতা।
মা বলেন, কিন্তু এর জন্য কি পুরস্কার পাবে তোমরা!
শোফি সগর্বে জবাব দিলো, পুরস্কারতো আমরা পেয়েই গেছি, মা! আমরা এমন এক জীবনের আস্বাদ পেয়েছি যা আমাদের তৃপ্তি করেছে—প্রসারিত, পরিপূর্ণ আত্মার শক্তিতে সমুজ্জ্বল আমাদের জীবন···দুনিয়ায় আর কি চাই আমাদের?
তিনদিনের দিন তাঁরা সেই গাঁয়ে এসে পৌঁছলো। মাঠে একজন চাষী কাজ করছিল। তার কাছ থেকে রাইবিনের ঠিকানা জেনে নিয়ে তাঁরা গাঁয়ের মধ্যে ঢুকে পড়লেন।
রাইবিন, ইয়াফিম্ এবং আরো দু’জন চাষী টেবিলে বসে খাচ্ছে। এমন সময় মা গিয়ে ডাক দিলেন, ভালো আছো, রাইবিন!
রাইবিম ধীরে ধীরে উঠে গিয়ে মার দিকে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে চাইলো। মা বললেন, আমরা বেড়াতে বেরিয়েছি, রাইবিন। ভাবলুম পথে ভাইকে একবার দেখে যাই। এ আমার বন্ধু আনা।
রাইবিন শোফিকে অভিবাদন ক’রে মাকে বললো, কেমন আছো?···মিছে কথা বলো না···এ শহর নয়···সব আমাদেরই লোক এখানে···মিছে বলার দরকার নেই।
সবাই আগন্তুকদের দিকে চেয়ে আছে।
রাইবিন বললো, আমরা সন্ন্যাসীর মতো আছি এখানে···কেউ আমাদের কাছ দিয়ে ঘেঁসে না···কর্তাও বাড়ি নেই···কর্ত্রী গেছেন হাসপাতালে ···আমি হলুম এখন সুপারিণ্টেণ্ডেণ্ট···বস···নিশ্চয়ই ক্ষুধার্ত তোমরা··· ইয়াফিম, দুধ নিয়ে এসো ভাই!
ইয়াফিম ধীরে ধীরে উঠে গেলো দুধ আনতে। আর দু’জন সঙ্গীর পরিচয় দিলো রাইবিন···এই ইয়াকব, এই ইগ্নাতি!
তারপর জিগ্যেস করলে, পেভেল কেমন আছে?
মা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললেন, সে জেলে!
জেলে! আবার! জেল বুঝি ভারি ভালো লেগেছে তার!
ইয়াফিম মাকে বসালো। রাইবিন শোফিকে বললো, বস।
শোফি একটা গাছের গুঁড়ির ওপর ব’সে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে নিরীক্ষণ করতে লাগলো রাইবিনকে।
রাইবিন মাকে জিগ্যেস করলো, কবে নিয়ে গেলো পেভেলকে? তোমার দেখছি কপাল মন্দ···কি হ’য়েছিল?
মা সংক্ষেপে পয়লা মের ব্যাপার বর্ণনা ক’রে গেলেন! শুনে ইয়াফিম বললো, গাঁয়ে ও রকম শোভা যাত্রা করলে চাষীদের ওরা জবাই করবে।
ইগ্নাতি বললো, ত ঠিক।···কারখানাই ভালো, আমি শহরে যাবো।
রাইবিন জিগ্যেস করলো, পেভেলের বিচার হবে?
হাঁ!
কি শাস্তি হ’তে পারে? শুনেছো কিছু?
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা নির্বাসন—মা শান্ত কম্পিত কণ্ঠে উত্তর দিলেন। তিনজন চাষী একসঙ্গে বিস্মিত হয়ে মার দিকে চাইলো। রাইবিন মুখ নিচু করে ফের জিগ্যেস করলো, কাজে যখন নেবেছিল, তখন সে একথা জানতো?
মা বললেন, জানিনে, জান্তো বোধ হয়!
শোফিয়া হঠাৎ জোরগলায় ব’লে উঠলো, ‘বোধ হয়’ নয়, ‘ভালো করেই’ জানতো।
সবাই নীরব, নিশ্চল···যেন জমাট বেধে গেছে শীতে।
রাইবিন ধীরে ধীরে বললো, আমারও তাই মনে হয়, সে জানতো। খাঁটি লোক, না ভেবে কোনো কাজে নাবে না।···সে জানতো, তার সম্মুখে সঙিন, তার সম্মুখে নির্বাসন। জেনে শুনেই সে গেলো। যাওয়া দরকার, তাই সে গেলো। যদি মা তার পথ রোধ করে শুয়ে থাকতেন, সে ডিঙিয়ে চলে যেতো। নয় কি মা?
হাঁ।
রাইবিন তার সঙ্গীদের দিকে চেয়ে চাপা গলায় বললো, এই হচ্ছে আমাদের আদর্শ নেতা।
আবার খানিকক্ষণ সবাই চুপচাপ বসে রইলো। তারপর ইয়াকব হঠাৎ বলে উঠলো, ইয়াফিমের সঙ্গে গিয়ে সৈন্য-বিভাগে যোগ দিলে আমাদের লেলিয়ে দেওয়া হবে এই পেভেলের মতো মানুষের ওপর।
রাইবিন গম্ভীর মুখে বললো, তবে আর কাদের ওপর লেলিয়ে দেবে মনে কর? আমাদেরই হাত দিয়ে ওরা আমাদেরই কণ্ঠরোধ করে। এইখানেই তো ওদের যাদু।
ইয়াফিম জেদের সুরে বললো, কিন্তু আমি সৈন্যদলে যোগ দেবোই! ইগ্নাতি বলে উঠলো, কে বারণ করছে তোমায়? যাও, মরোগে।···
তারপর হেসে বললো, গুলি যখন করবে আমাদের, মাথা লক্ষ্য ক’রে কোরো,···যেন এক গুলিতেই সাবাড় হই···আহত হ’য়ে মিছি-মিছি না ভুগি।
রাইবিন সঙ্গীদের লক্ষ্য ক’রে বললো, এই মাকে দেখ···ছেলেকে এঁর কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে, কিন্তু তাতে কি ইনি দমেছেন?—না, দমেন নি! ছেলের স্থান পূর্ণ করেছেন এসে তিনি নিজে।
তারপর সজোরে টেবিল চাপড়ে বললো, ওরা জানে না, অন্ধের মতো কিসের বীজ বুনে চলেছে ওরা! কিন্তু জানবে, সেদিন জানবে, যেদিন আমাদের শক্তি হ’বে পরিপূর্ণ···সেদিন এই বীজ পরিণত হ’বে বিষের ফসলে—আর আমরা কাট্ব সেই অভিশপ্ত ফসল।···
রাইবিনের রক্ত-চক্ষু থেকে যেন আগুন ঠিকরে বেরুচ্ছে, দুর্দমনীয় ক্রোধে মুখ হয়ে উঠেছে লাল। একটু থেমে আবার সে বলতে লাগলো, সেদিন এক সরকারী কর্মচারী আমাকে ডেকে ব’লে, এই পাজি, পুরুতকে তুই কি বলেছিস্? জবাব দিলুম, আমি পাজী হলুম কি ক’রে? কারো কোনো ক্ষতিও করিনে, আর খাইও মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, খেটে। বলতেই হুংকার দিয়ে উঠে লাগালো মুখে এক ঘুষি!···তিন-দিন তিনরাত রাখলো হাজতে পু’রে!···
অদৃশ্য সরকারী কর্মচারীর উদ্দেশে তর্জন ক’রে রাইবিন বললো, এম্নি ক’রে তোমরা লোকের সঙ্গে কথা কও— না? শয়তানের দল, মনে ভেবেছো ক্ষমা করব? না, ক্ষমা নেই। অন্যায়ের প্রতিশোধ নোবই নোব। আমি না পারি, আর কেউ নেবে। তোমাদের না পাই, তোমাদের ছেলেদের ধরব। মনে রেখো এ কথা। লোভের লৌহ-নখর দিয়ে মানুষকে তোমরা রক্তাক্ত করেছো, তোমরা হিংসার বীজ বপন করেছো, তোমাদের ক্ষমা নেই।
রাগ যেন রাইবিনের মনে গর্জাতে লাগলো। শেষটা সুর একটু নরম ক’রে সে বললো, আর, পুরুতকে আমি কি বা বলেছিলুম? গ্রাম্য পঞ্চায়েতের পর চাষীদের নিয়ে পথে বসে তিনি বোঝাচ্ছেন, মানুষ হচ্ছে মেষপাল, আর তাদের সব সময়ের জন্যই চাই একজন মেষ পালক! তা’ শুনে আমি ঠাট্টা করে বললুম, হাঁ, সেই যেমন এক বনে শেয়ালকে ক’রে দেওয়া হল পক্ষী-পালক। দু’দিন বাদে দেখা গেলো, রাশি রাশি পালকই পড়ে আছে বনে, পক্ষী আর নেই। পুরুত আমার দিকে একবার আড়নয়নে চেয়ে বলে যেতে লাগল, চাই ধৈর্য, ঈশ্বরের কাছে কেবল প্রার্থনা করো, প্রভু, আমার ধৈর্য দাও। আমি বললুম, প্রভুটির যে ফুরসুৎ নেই শোনার, নইলে ডাকতে কি আমরা কসুর করছি? পুরুত তখন অগ্নিশর্মা হ’য়ে বললেন, তুই ব্যাটা আবার কী প্রার্থনা ক’রে থাকিস্? আমি বললুম, করি ঠাকুর, একটা প্রার্থন। আমি করি,—যা শুধু আমি কেন, মানুষ মাত্রেই ক’রে থাকে। সেটা হচ্ছে এই, হে ভগবান, দুনিয়ার এই কর্তাগুলোকে দিয়ে একবার ইটের বোঝা বওয়াও, পাথর ভাঙাও, কাঠ ফাড়াও···পুরুত আমার কথাটাও শেষ করতে দিলে না।
তারপর আচম্কা শোফির দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলো, আপনি কি ভদ্রমহিলা?
শোফি এই আকস্মিক, অপ্রত্যাশিত প্রশ্ন শুনে মৃদুকণ্ঠে বললো, আমাকে ভদ্রমহিলা ব’লে মনে করার কারণ?
রাইবিন হেসে বললো, কারণ? কারণ, ছদ্মবেশও আপনাকে ঢেকে রাখতে পারেনি। ভিজে টেবিলে হাত পড়তেই আপনি শিউরে হাত টেনে নিলেন বিরক্তিভরে, তা’ছাড়া, আমাদের মেয়েদের মেরুদণ্ড অতো সোজা হয় না।
রাইবিন পাছে শোফিকে অপমান করে ফেলে এই ভয়ে মা বললেন, ইনি আমাদের দলের একজন নামজাদা কর্মী! এই কাজে ইনি মাথার চুল পাকিয়েছেন। তোমার ওসব বলা উচিত নয়।
রাইবিন বললো, কেন? আমি কি অপমানকর কিছু বলেছি, বলে শোফির দিকে চাইলো।
শোফি হেসে বললো, না কিন্তু কিছু বলতে চাও আমায়?
আমি বলবনা কিছু। ইয়াকবের এক ভাই কি যেন কি বলবে। তাকে ডাকব?
ডাকো।
রাইবিন তখন ইয়াফিমকে অনুচ্চকণ্ঠে বললো, তুমি যাও, বোলো, সন্ধ্যার সময় যেন আসে।
তারপর মা ও শোফি পোটলা খুলে মেলা বই এবং কাগজ বের ক’রে দিলেন রাইবিনকে। রাইবিন বই-কাগজ পেয়ে খুশি হল। শোফির দিকে চেয়ে বললো, কতোদিন ধরে একাজে আছেন আপনি?
বারো বছর।
জেলে গেছেন?
হাঁ।
অপরাধ নেবেন না এসব প্রশ্নে। ভদ্রলোক আর আমরা যেন আলকাতরা আর জল, মিশিনে সহজে!
শোফি হেসে বললে, আমি ভদ্র নই, আমি শুধু মানুষ।
রাইবিন, ইগ্নাতি, ইয়াকব বই-কাগজ নিয়ে সানন্দে ঘরের ভেতর চলে গেলো। তারপর পড়তে শুরু করলো অসীম আগ্রহে। শোফি দেখলে, সত্য জানার জন্য এদের কী বিপুল আগ্রহ—আনন্দদীপ্ত মুখে সে এসে দেখতে লাগলো, তাদের পাঠ।
ইয়াকব কি একটা প’ড়ে মুখ না তুলেই বললো, কিন্তু এসব কথায় আমাদের অপমান হয়।
রাইবিন বললো, না ইয়াকব, হিতাকাঙ্ক্ষীরা যাই বলুন, তাতে অপমান হতে পারে না।
ইগ্নাতি বললো, কি লিখছে শোনো, ‘চাষীরা আর মানুষ নেই’। থাকবে কি ক’রে? তোমরা এসে দু’দিন থাকে। আমাদের ভেল নিয়ে—দেখবে তোমরাও আমাদেরই মতো হয়ে গ্যাছো।
এমনিভাবে চললো পড়া।
মা ঘুমিয়ে পড়লেন। খানিকক্ষণ বাদে পড়া শেষ করে চাষীরাও চলে গেলো কাজে।