মুকুট/দ্বিতীয় অঙ্ক/দ্বিতীয় দৃশ্য
দ্বিতীয় দৃশ্য
ইশা খাঁর শিবির
ইন্দ্রকুমার ও ইশা খাঁ
ইন্দ্রকুমার। সেনাপতি সাহেব, আপনি দাদার উপর রাগ করবেন না। আজ রাত্রে সৈন্যেরা বিশ্রাম করুক, কাল আমরা যুদ্ধে জয়লাভ করব।
ইশা খাঁ। দেখো ইন্দ্রকুমার, আগুন যত শীঘ্র নেবানো যায় ততই মঙ্গল—তাকে সময় দিলে কিসের থেকে কী ঘটে কিছুই বলা যায় না। আজই আমরা জিতে আসতুম— কেবল তোমার দাদা নিতান্ত নির্বোধের মতো শত্রুদের মাঝখানে নিজেকে খামকা জড়িয়ে বসলেন, আমাদের সমস্ত পণ্ড হয়ে গেল।
ইন্দ্রকুমার। নির্বোধের মতো কেন বলছ, খাঁ সাহেব, বলো, বীরের মতো—তিনি সামান্য কয়জন সৈন্য নিয়ে—
ইশা খাঁ। যেখানে গিয়ে পড়েছিলেন সেখানে কেবল নির্বোধই যেতে পারে—
ইন্দ্রকুমার। (উত্তেজিতম্বরে) না, সেখানে বীর না হলে কেউ প্রবেশ করতে সাহস করতে পারে না।
ইশা খাঁ। আচ্ছা, বাবা, তোমার কথা মানছি। কিন্তু শুধু বীর নয়, নির্বোধ-বীর না হলে সেদিকে কেউ যেত না।
ইন্দ্রকুমার। কিন্তু, তাতে তোমার লড়াইয়ের তো কোনো ব্যাঘাত হয় নি।
ইশা খাঁ। খুব ব্যাঘাত হয়েছিল। আমার সৈন্যেরা খবর পেয়ে সকলেই চঞ্চল হয়ে উঠল, তাদের কি আর লড়াইয়ে মন ছিল। আমাদের সৈন্যের মধ্যে একজনও নেই যুবরাজের বিপদের খবর শুনে যে স্থির থাকতে পারে।
ইন্দ্রকুমার। কিন্তু, সেনাপতি সাহেব, আমাদের রাজধরের খবর কী।
ইশা খাঁ। আমি চারদিকেই দূত পাঠিয়েছিলুম, একজন ছাড়া সব দূতই ফিরে এসেছে, কোথাও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।
ইন্দ্রকুমার। হা হা হা হা, সে নিশ্চয় পালিয়েছে।
ইশা খাঁ। হাসির কথা নয়, বাবা।
ইন্দ্রকুমার। তা কী করব, সেনাপতি সাহেব, আমি খুশি হয়েছি। আমরা যুদ্ধ করে মরতুম আর যে আমাদের খ্যাতিতে ভাগ বসাত, সে আমার কিছুতে সহা হত না; তার চেয়ে ও ভেগে গেছে, সে ভালোই হয়েছে। এবারকার অস্ত্রপরীক্ষায় তো ফাঁকি চলবে না। ইশা খাঁ। কিন্তু, সেবার কী হয়েছিল তুমি আমার কাছে বল নি।
ইন্দ্রকুমার। সে বলবার কথা না, খাঁ সাহেব—সে আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা কোরো না, সেবার আমি হেরেছিলুম।
ইশা খাঁ। তীর ছুঁড়ে হার নি, বাবা, রাগ করে হেরেছিলে।