রাজসিংহ (১৮৮৫)/চতুর্দ্দশ পরিচ্ছেদ
চতুর্দ্দশ পরিচ্ছেদ।
এদিকে নির্ম্মলকুমারীর বড় গোলমাল বাঁধিল। চঞ্চল ত রত্নখচিত শিবিকারোহণে চলিয়া গেল—আগে পিছে দুই সহস্র কুমারপ্রতিম অশ্বারোহী আল্লার মহিমার শব্দে রূপনগরের পাহাড় ধ্বনিত করিয়া চলিল। কিন্তু নির্ম্মলের কান্না ত থামে না। একা—একা—একা—শত পৌরজনের মধ্যে চঞ্চল অভাবে নির্ম্মল বড়ই একা! নির্ম্মল উচ্চ গৃহচূড়ার উপর উঠিয়া দেখিতে লাগিল— দেখিতে লাগিল, পাদক্রোশ পরিমিত অজগর সর্পের ন্যায় সেই অশ্বারোহী সৈনিকশ্রেণী পার্ব্বত্যপথে বিসর্পিত হইয়া উঠিতেছে, নামিতেছে—প্রভাতসূর্যকিরণে তাহাদিগের উর্দ্ধোত্থিত উজ্জ্বল বর্ষাফলক সকল জ্বলিতেছে। কতক্ষণ নির্ম্মল চাহিয়া রহিল। চক্ষু জ্বালা করিতে লাগিল। তখন নির্ম্মল চক্ষু মুছিয়া, ছাদের উপর হইতে নামিল। নির্ম্মল একটা কিছু ভাবিয়া ছাদের উপর হইতে নামিয়াছিল। নামিয়া প্রথমে একজন সামান্য পরিচারিকার জীর্ণ মলিনবাস চুরি করিল—তাহার বিনিময়ে আপনার চারুদর্শন পরিধেয় রাখিয়া আসিল। নির্ম্মল সেই জীর্ণ মলিন বাস পরিল।—অলঙ্কার সকল খুলিয়া কোথায় লুকাইয়া রাখিল, কেহ দেখিতে পাইল না। সঞ্চিত অর্থমধ্যে কতিপয় মূদ্রা নির্ম্মল গোপনে সংগ্রহ করিল। কেবল তাহাই লইয়া সেই জীর্ণ মলিনবাসে নির্ম্মল একাকিনী, রাজপুরী হইতে নিষ্ক্রান্তা হইল। পরে দৃঢ়পদে অশ্বারোহী সেনা যে পথে গিয়াছে সেই পথে একাকিনী তাহাদের অনুবর্ত্তিনী হইল।