একটি চাউনি

 গাড়িতে ওঠ্‌বার সময় একটুখানি মুখ ফিরিয়ে সে আমাকে তার শেষ চাউনিটি দিয়ে গেছে।

 এই মস্ত সংসারে ঐটুকুকে আমি রাখি কোন্‌‍খানে?

 দণ্ডপলমুহূর্ত্ত অহরহ পা ফেল্‌বে না এমন একটু জায়গা আমি পাই কোথায়?

 মেঘের সকল সোনার রঙ যে-সন্ধ্যায় মিলিয়ে যায় এই চাউনি কি সেই সন্ধ্যায় মিলিয়ে যাবে? নাগ-কেশরের সকল সোনালি রেণু যে-বৃষ্টিতে ধুয়ে যায় এও কি সেই বৃষ্টিতেই ধুয়ে যাবে?

 সংসারের হাজার জিনিসের মাঝখানে ছড়িয়ে থাক্‌লে এ থাক্‌বে কেন?—হাজার কথার আবর্জ্জনায়, হাজার বেদনার স্তূপে?

 তার ঐ এক চকিতের দান সংসারের আর-সমস্তকে ছাড়িয়ে আমারই হাতে এসে পৌঁছেচে। এ’কে আমি রাখ্‌ব গানে গেঁথে, ছন্দে বেঁধে; আমি এ’কে রাখ্‌ব সৌন্দর্য্যের অমরাবতীতে।

 পৃথিবীতে রাজার প্রতাপ ধনীর ঐশ্বর্য্য হয়েচে মরবারই জন্যে। কিন্তু চোখের জলে কি সেই অমৃত নেই যাতে একনিমেষের চাউনিকে চিরকাল বাঁচিয়ে রাখ্‌তে পারে?

 গানের সুর বল্‌লে, “আচ্ছা, আমাকে দাও! আমি রাজার প্রতাপকে স্পর্শ করিনে, ধনীর ঐশ্বর্য্যকেও না, কিন্তু ঐ ছোট জিনিসগুলিই আমার চিরদিনের ধন; ঐগুলি দিয়েই আমি অসীমের গলার হার গাঁথি।”