লিপিকা/বিদূষক
বিদূষক
১
কাঞ্চীর রাজা কর্ণাট জয় করতে গেলেন। তিনি হলেন জয়ী। চন্দনে, হাতির দাঁতে, আর সোনামাণিকে হাতি বোঝাই হল।
দেশে ফেরবার পথে বলেশ্বরীর মন্দির বলির রক্তে ভাসিয়ে দিয়ে রাজা পূজো দিলেন।
পূজো দিয়ে চলে আস্চেন—গায়ে রক্তবস্ত্র, গলায় জবার মালা, কপালে রক্তচন্দনের তিলক—সঙ্গে কেবল মন্ত্রী আর বিদূষক।
একজায়গায় দেখ্লেন, পথের ধারে আমবাগানে ছেলেরা খেলা করচে।
রাজা তাঁর দুই সঙ্গীকে বল্লেন, “দেখে আসি, ওরা কি খেল্চে।”
২
ছেলেরা দুই সারি পুতুল সাজিয়ে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেল্চে।
রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, “কার সঙ্গে কার যুদ্ধ?”
তারা বল্লে, “কর্ণাটের সঙ্গে কাঞ্চীর।”
রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, “কার জিত, কার হার?”
ছেলেরা বুক ফুলিয়ে বল্লে, “কর্ণাটের জিৎ, কাঞ্চীর হার।”
মন্ত্রীর মুখ গম্ভীর হল, রাজার চক্ষু রক্তবর্ণ, বিদূষক হা হা করে হেসে উঠ্ল।
৩
রাজা যখন তাঁর সৈন্য নিয়ে ফিরে এলেন, তখনো ছেলেরা খেল্চে।
রাজা হুকুম করলেন, “একেকটা ছেলেকে গাছের সঙ্গে বাঁধো, আর লাগাও বেত!”
গ্রাম থেকে তাদের মা-বাপ ছুটে এল। বল্লে, “ওরা অবোধ, ওরা খেলা কর্ছিল, ওদের মাপ কর।”
রাজা সেনাপতিকে ডেকে বল্লেন, “এই গ্রামকে শিক্ষা দেবে, কাঞ্চীর রাজাকে কোনো দিন যেন ভুল্তে না পারে।”
এই বলে শিবিরে চলে গেলেন।
৪
সন্ধ্যে বেলায় সেনাপতি রাজার সমুখে এসে দাঁড়াল। প্রণাম করে বল্লে, “মহারাজ, শৃগাল কুকুর ছাড়া এ গ্রামের কারো মুখে শব্দ শুন্তে পাবে না।”
মন্ত্রী বল্লে, “মহারাজের মান রক্ষা হল।”
পুরোহিত বল্লে, “বিশ্বেশ্বরী মহারাজের সহায়।”
বিদূষক বল্লে, “মহারাজ, এবার আমাকে বিদায় দিন্।”
রাজা বললেন, “কেন?”
বিদূষক বললে, “আমি মার্তেও পারিনে, কাট্তেও পারিনে, বিধাতার প্রসাদে আমি কেবল হাস্তে পারি। মহারাজের সভায় থাক্লে আমি হাস্তে ভুলে যাব।”