চব্বিশ

আমার ফুলবাগানের ফুলগুলিকে
বাঁধব না আজ তােড়ায়,
রঙবেরঙের সুতােগুলাে থাক্‌,
থাক্ পড়ে ওই জরির ঝালর।

শুনে ঘরের লােকে বলে,
‘যদি না বাঁধো জড়িয়ে জড়িয়ে
ওদের ধরব কী করে,
ফুলদানিতে সাজাব কোন্ উপায়ে।'

আমি বলি,
‘আজকে ওরা ছুটি-পাওয়া নটী,
ওদের উচ্চহাসি অসংযত,
ওদের এলােমেলাে হেলাদোলা
বকুলবনে অপরাহ্নে,
চৈত্রমাসের পড়ন্ত রৌদ্রে।
আজ দেখাে ওদের যেমন-তেমন খেলা,
শােনাে ওদের যখন-তখন কলধ্বনি—
তাই নিয়ে খুশি থাকো।'

বন্ধু বললে,
'এলেম তােমার ঘরে
ভরা পেয়ালার তৃষ্ণা নিয়ে।
তুমি খেপার মতাে বললে,
আজকের মতাে ভেঙে ফেলেছি
ছন্দের সেই পুরােনাে পেয়ালাখানা।
আতিথ্যের ত্রুটি ঘটাও কেন?'

আমি বলি, ‘চলাে-না ঝরনা-তলায়,
ধারা সেখানে ছুটছে আপন খেয়ালে,
কোথাও মােটা কোথাও সরু।
কোথাও পড়ছে শিখর থেকে শিখরে,
কোথাও লুকোলাে গুহার মধ্যে।
তার মাঝে মাঝে মােটা পাথর
পথ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে বর্বরের মতাে,
মাঝে মাঝে গাছের শিকড়
কাঙালের মতাে ছড়িয়েছে আঙুলগুলাে-
কাকে ধরতে চায় ওই জলের ঝিকিমিকির মধ্যে।'

সভার লোকে বললে,
‘এ যে তােমার আবাঁধা বেণীর বাণী,
বন্দিনী সে গেল কোথায়?'

আমি বলি, ‘তাকে তুমি পারবে না আজ চিনতে,
তার সাতনলী হারে আজ ঝলক নেই,
চমক দিচ্ছে না চুনি-বসানাে কঙ্কণে।'
ওরা বললে, 'তবে মিছে কেন?
কী পাব ওর কাছ থেকে?'

আমি বলি, 'যা পাওয়া যায় গাছের ফুলে
ডালে পালায় সব মিলিয়ে।
পাতার ভিতর থেকে
তার রঙ দেখা যায় এখানে সেখানে,
গন্ধ পাওয়া যায় হাওয়ার ঝাপটায়।
চার দিকের খােলা বাতাসে
দেয় একটুখানি নেশা লাগিয়ে।
মুঠোয় করে ধরবার জন্যে সে নয়,
তার অসাজানাে আটপহুরে পরিচয়কে
অনাসক্ত হয়ে মানবার জন্যে
তার আপন স্থানে।'