শেষ সপ্তক/সতেরো
সতেরাে
শ্রীমান ধূর্জটিপ্রসাদ মুখােপাধ্যায়
কল্যাণীয়েষু
আমার কাছে শুনতে চেয়েছ
গানের কথা;
বলতে ভয় লাগে,
তবু কিছু বলব।
মানুষের জ্ঞান বানিয়ে নিয়েছে
আপন সার্থক ভাষা।
মানুষের বােধ অবুঝ, সে বােবা,
যেমন বােব বিশ্বব্রহ্মাণ্ড।
সেই বিরাট বােবা
আপনাকে প্রকাশ করে ইঙ্গিতে,
ব্যাখ্যা করে না।
বােবা বিশ্বের আছে ভঙ্গি, আছে ছন্দ,
আছে নৃত্য আকাশে আকাশে।
অণু পরমাণু অসীম দেশে কালে
বানিয়েছে আপন আপন নাচের চক্র,
নাচছে সেই সীমায় সীমায়;
গড়ে তুলছে অসংখ্য রূপ।
তার অন্তরে আছে বহ্নিতেজের দুর্দাম বােধ;
সেই বােধ খুঁজছে আপন ব্যঞ্জনা
ঘাসের ফুল থেকে শুরু ক'রে
আকাশের তারা পর্যন্ত।
মানুষের বােধের বেগ যখন বাঁধ মানে না
বাহন করতে চায় কথাকে-
তখন তার কথা হয়ে যায় বোবা;
সেই কথাটা খোঁজে ভঙ্গি, খোঁজে ইশারা,
খোঁজে নাচ, খোজে সুর,
দেয় আপনার অর্থকে উলটিয়ে,
নিয়মকে দেয় বাঁকা ক'রে।
মানুষ কাব্যে রচে বােবার বাণী
মানুষের বােধ যখন বাহন করে সুরকে
তখন বিদ্যুচ্চঞ্চল পরমাণুপুঞ্জের মতােই
সুরসংঘকে বাঁধে সীমায়,
ভঙ্গি দেয় তাকে,
নাচায় তাকে বিচিত্র আবর্তনে।
সেই সীমায়-বন্দী নাচন
পায় গানে-গড়া রূপ।
সেই বােবা রূপের দল মিলতে থাকে
সৃষ্টির অন্দরমহলে,
সেখানে যত রূপের নটী আছে
ছন্দ মেলায় সকলের সঙ্গে
নূপুর-বাঁধা চাঞ্চল্যের
দোলযাত্রায়।
‘আমি যে.জানি’
এ কথা যে মানুষ জানায়,
বাক্যে হোক, সুরে হােক, রেখায় হােক,
সে পণ্ডিত।
‘আমি যে রস পাই, ব্যথা পাই,
রূপ দেখি’
এ কথা যার প্রাণ বলে
গান তারই জন্যে,
শাস্ত্রে সে আনাড়ি হলেও
তার নাড়িতে বাজে সুর।
যদি সুযােগ পাও
কথাটা নারদমুনিকে শুধিয়াে-
ঝগড়া বাধাবার জন্য নয়,
তত্ত্বের পার পাবার জন্যে সংজ্ঞার অতীতে