শ্রীযুত ডাক্তর এম, জে, ব্রমলি সাহেবের বক্তৃতার দ্বারা সংক্ষেপ আবেদন
শ্রীশ্রীঈশ্বরঃ
কলিকাতাস্থ বৈদ্যকপাঠশালা
স্থাপনান্তে
শ্রীযুত ডাক্তর এম, জে, ব্রমলি
সাহেবের বক্তৃতার
দ্বারা সংক্ষেপ আবেদন।
শ্রীযুত আই, এচ, ষ্টাকোএলর
সাহেবের অনুমত্যনুসারে
শ্রী উদয়চন্দ্র আঢ্য কর্ত্তৃক
বঙ্গভাষায় অনুবাদিত হইয়া
পূর্ণচন্দ্রোদয় যন্ত্রেমূদ্রিত হইল।
১২৪৩ সাল॥
শ্রীশ্রী পরমাত্মনেননমঃ।
শ্রীযুত ভূপতি ও সল্লোক বর্গেষু
সংক্ষেপ নিবেদন।
এই চত্তদ্দিগ্ বেষ্টিত বহুতর মান্যতম শ্রোতা দর্শনে আমার বোধ হইতেছে যে যেমতকর্ম্মে আমাকে প্রবিষ্ট হইতে হইতেছে তাহাতে আমি নিতান্তই অনুপযুক্ত, এবং আমার গতাগত কর্ম্মের চিন্তাকরিয়া অসাহস ও মনের উল্লাস আনন্দ পূর্ব্বক প্রকাশ করিতে ইচ্ছাকরি, যদি পরমেশ্বর জীবদ্দশায় সুস্থ রাখেন তবেই সম্পূর্ণ ইহার সম্ভাব না, কিন্তু জগদীশ্বর যদ্যপি আমার প্রতি উত্তম বক্তৃতা শক্তি অর্পণ করিতেন তবে ও এবিষয়ে মনের নিগূঢ়াভি প্রায় প্রকাশে অক্ষম হইতাম॥
বর্ত্তমানাবস্থায় যে কর্ম্মে প্রবিষ্ট হইয়াছি ইহাতে লোকের অনুরাগ জন্মাইতে যে পরিশ্রমাপেক্ষাকরে অদৃষ্টক্রমে আমি তাহা হইতে রক্ষা পাইয়াছি, কেননা এক্ষণে যে বিষয় আন্দোলিত হইতেছে ইহা কেবল একের নহে কিন্তু সাধারণের, সুতরাৎ ইউরোপীয় প্রয়োজনীয় বিদ্যা এবং এদেশস্থ দিগ্কে শিক্ষাইতে যাঁহারা সংশ্রিত নহেন তাঁহারা যখন বিবেচনা করিবেন যে কি উত্তম শিক্ষার নিমিত্ত এই পাঠশালা স্থাপিত হইয়াছে তখনি উল্লসিত হইবেন। অতএব এই পাঠশালা সাঙ্গ হওয়াতে চত্তদ্দিক অবস্থিত পাঠর্থিগণকে অবলোকন করতঃ আমি আপনাকে শ্লাঘ্য করিয়া অনুমান করিতেছি যে ইহার আরোউন্নতি হইবেক। এই বিষয়ে আনন্দ প্রকাশে অক্ষম হওয়াতে আমার দুঃখ বোধ হইয়াছিল কিন্তু আমার চত্তর্দ্দিকস্থ মহাশয়েরা তাহা বুঝিয়াছেন বুছিয়া আমার অন্তরের অস্থিরতা শান্তি হইল, এবং এইকর্ম্মে যদ্যপি অপরে আনন্দিত নাহইতেন তদ্দারা আমার যেদুঃখোদয় হইত তদপেক্ষা সুখ জন্মিয়াছে।
এতাদৃশ উপদেশের বিশেষ বিরণ বিস্তারিত রূপেব্যাখ্যায় অক্ষমতা প্রযুক্ত কেবল সকল বিষয়ের চুম্বক গ্রহণ করা যাইতে পারে, তাহাও যথার্থ রূপে ব্যাখ্যাকরণে অধিক সময়াপেক্ষাকরে, ফলতঃ বৈদ্যক বিদ্যার আবশ্যকতা স্বাভাবিক জ্ঞানেতেই লগ্ন হয়।
শারীরিক পীড়ানাশক এবং জীবন বৃদ্ধিকারি যে বৈদ্যক বিদ্যা তদপেক্ষা উৎকৃষ্ট আরকি বিদ্যা আছে, কেননা সদ্বৈদ্য হন জীবন বিষয়ক নিরাশার আশা এবং রোগীর বন্ধু অতএব সদ্বৈদ্য পরিশ্রম ও গুরুতর মনোযোগ পূর্ব্বক চিকিৎসা শাস্ত্রাভ্যাস করিয়া রোদনান্বিত ও ভরসা হীন পরিবারের অস্তঃ করণে আশাদান করেন, এবং লোকের প্রিয়পাত্রকে কালের হস্ত হইতে রক্ষাকরেন, কিম্বা যে স্থানে জীবনের ভরসা ও নাথাকে তথায় বিহিত শাস্ত্রের প্রমাণ দর্শাইয়া মৃত্যু যাতনা দূর করিয়া পরিবারকে এইরূপ প্রবোধ দেন যে, ঐ ব্যক্তির নিমিত্ত শোক না করিয়া তোমার দিগের আহ্লাদিত হওন উচিৎ, কারণ রোগীব্যক্তি তদ্বা তনা হইতে মুক্ত হইল, সুতরাং এমত ব্যক্তি যে প্রধানাগ্রগণ্য হয়েন ইহাতে কি আশ্চর্য্য বোধ হয়।
সকল দেশে দেবোপাখ্যানে লিখিত আছে যে, বৈদ্যক শাস্ত্র দেবতারা করিয়াছেন তাহা আশ্চর্য্য নহে। হে যুবা বন্ধুরা আমি নিশ্চয় জানি যে, ঔষধ দেবতারকৃত এমত হিন্দু শাস্ত্রে ব্যক্ত আছে এবং তোমরা শুনিয়া থাকিবে যে রোমানও গ্রীশীয়ান দিগের শাস্ত্রে এরূপ লিখিত। অপিচ লেটীন ভাষায় অতি প্রাজ্ঞ ওবিড নামক কবি পশ্চাল্লিখিত বাক্য এপলোর প্রমুখাৎ উক্তিরন্যায় ব্যক্ত করিয়াছেন, যাহা ড্রাইডেন কর্ত্তৃক নিম্নে লিখিত মত ভাষান্তরিত হুইয়াছে, এবং তদ্দ্বারা তোমরা উত্তম বুঝিবে।
,,জঙ্গল চত্বরে যেই বৃক্ষাদি সম্ভব।
তাহাদের গুণাগুণ জানি আমি সব॥
ঔষধ আমারকৃত জানিবে নিশ্চিত।
পৃথিবীতে বৈদ্য শাস্ত্রে আমিই পণ্ডিত॥,,
কিন্তু আমি বোধ করি যে গ্রীশীয়ান ও রোমান দেবতা দিগের উপন্যাস সৃষ্টির অগ্রেই রোগ উৎপত্তি কালীন এই বৈদ্যক শাস্ত্রের সৃজন হইয়া থাকিবেক।
ঔষধ বিষয়ে আমার দিগের বিবেচনাতে এস্কিউলে পিয়স নামক ব্যক্তিকে প্রথম বৈদ্য বোধহয়, কারণ চিকিৎসা শাস্ত্র ব্যবসায়ে তাঁহার বংশোদ্ভব ব্যক্তিরা ধন্নন্তরি স্বরূপে গণিত ছিলেন, ও তাঁহার দিগেরই কেবল বৈদ্যক শাস্ত্রের ব্যবসায় ছিল, যেহেতু গ্রীশদেশে বৈদ্যক শাস্ত্র ব্যবসায়ি কেবল তাঁহারাই ছিলেন এবং তাঁহার দিগের অনেক ধারা তোমার দিগের সহিত ঐক্য ছিল।
যে কর্ম্মে সংপ্রতি প্রবর্ত্ত হইয়াছি ইহাতে পোষকতা করণাবশ্যক, কিন্তু এস্কিউলেপিয়স নামক ব্যক্তির মৃত্যু অবধি হিপোক্রাটেস নামক ব্যক্তির জন্ম পর্য্যন্ত বৈদ্যক শাস্ত্রের কোন উপন্যাস দৃষ্ট হয়না। শেষোক্ত ব্যক্তি যাহা কে যথার্থরূপে বৈদ্যক শাস্ত্রের সৃজনকর্ত্তা বলা গিয়াছে তাহার জন্ম খ্রীষ্টের জন্মের ৪৬০ বত্সর পূর্ব্বে হইয়াছিল, তিনি অত্যন্ত সুখ্যাতি প্রাপ্তহইয়া ছিলেন যে নিমিত্ত তাহার প্রতি অদ্যাবধি আমার দিগের কর্ত্তৃক সন্মান প্রদানাপেক্ষা করে, যেহেতু পদার্থ বিদ্যানু যায়িক বৈদ্যক শাস্ত্র তিনিই করিয়াছিলেন তন্মধ্যে তাহার গুণজ্ঞতা পরোপকারিতা ও সততা সংযোগছিল। বৈদ্যক শাস্ত্র দেরতার কৃত বলিয়া লোকের দিগের যে বিশ্বাস ছিল তিনিই তাহার পরিচ্ছেদ করেন, যেহেতু তিনি পৌত্তলিকতা ও যাজক দিগের ধূর্ত্ততা হইতে বৈদ্যক শাস্ত্র প্রভেদ করতঃ কেবল জ্ঞান হইতে উৎপাদিত হওয়াই সাব্যস্ত করিয়া ছিলেন, এবং এই বৈদ্যক শাস্ত্র দেবতা হইতে উৎপাদিত নহে বলিয়া তিনি অনেক তর্ক করেন, পরন্তু স্বাভাবিক সুস্পষ্ট কারণ হইতে যে মানবের শারীরিক পীড়াজন্মে ইহা সপ্রমাণ করিয়াছিলেন এবং স্বাভাবিক কর্মের দ্বারাশারীরিক সুস্থতা বা অসুস্থতা জন্মে তাহা স্পষ্টই বর্ণনা করিয়াছিলেন।
তৎপরে শেলসস নামক ব্যক্তি যিনি খ্রীষ্টের জন্মকালে জন্মিয়াছিলেন তিনি ঐষধও শস্ত্র চিকিৎসা বিষয়ে এক পুস্তক প্রকাশ করেন তাহাতে তাঁহার লেখার দ্বারা আমার দিগের বোধহয় যে শস্ত্র চিকিৎসার সৃষ্টি তিনিই করিয়াছিলেন, কারণ শরীরে ও মস্তকের অস্থিসকলের বিষয়ে যাহা লিখিয়াছেন সে সকল অত্যাশ্চর্য্য এবং শস্ত্র চিকিৎসা বিষয়ে তিনি যাহা বর্ণনা করিয়াছেন তাহার অত্যল্প মতান্তর করণান্তন্তর এক্ষণে বৈদ্যরা চিকিৎসা করিয়া থাকেন। সেই সাময়িক অন্যান্য বৈদ্য দিগের নাম প্রকাশ করিতে অধিক সময়াপেক্ষা করে এজন্য ভাহা পরিত্যাগ করিয়া তাহার মধ্যে প্রধান যিনি শেলসস নামক ব্যক্তির ১৫০ বৎসর পরে জন্মিয়া গেলন নামে খ্যাত ছিলেন তাহার বিবরণ কহি, তিনি অতিশয় সুশিক্ষিত ও জ্ঞানবান ছিলেন, যেহেত্ত আধুনিক উত্তম বৈদ্যরা তাঁহার মতাবলম্বি হইয়া ই প্রায় চিকিৎসা করিয়া থাকেন এবং তিনি ব্যবচ্ছেদ বিদ্যায় সুশিক্ষিত হওতঃ রুম দেশে তদ্ব্যবসায়ী হইয়া শিক্ষাদান করিয়াছিলেন, তিনি অন্যের কৃত প্রমাণে বিশ্বাসযুক্ত নাহইয়া স্বীয় পরীক্ষার দ্বারা কর্ম্ম সম্পন্ন করিতেন, ফলতঃ ব্যবচ্ছেদ বিদ্যায় অতিশয় পারদর্শী ছিলেন।
পূর্ব্বোক্ত খ্যাত্যাপন্ন ব্যক্তিদিগের দ্বারা বৈদ্যক শাস্ত্র যেরূপ সুধারান্বিত হইয়াছিল তাহা এক্ষণকার শিক্ষার ধারার সহিত ঐক্যকরিলে ক্ষীণতা বোধহয় কারণ তৎ সাময়িক ব্যক্তিরা পরস্পরের অনুভবের প্রতি বিশ্বাস করিয়া পরীক্ষায় শিথিল ছিলেন। সুতরাং তদ্দ্বারা অনেক নিস্প্রয়োজনীয় ধারা সৃজন হইয়াছিল, কিন্তু সেসকল ভ্রম এক্ষণে নিশ্চিত রূপে ছেদন হইয়াছে। এবং পুরাতন লোকের ধারানু যায়িক হওয়াতে ব্যবচ্ছেদ বিদ্যার প্রতি ব্যাঘাত হইয়াছিল, যেহেত্ত গেলনের মৃত্যুর পর ভেসেলিয়স নামক ব্যক্তি যিনি খ্রীষ্টের জন্মের ১৬০০ বৎসর পরে জন্ম গ্রহণ করিয়াছিলেন তৎকাল অবধি ব্যবচ্ছেদ বিদ্যার প্রাবল্য সমভাবে ছিল, ফলতঃ গেলনের কৃত অপেক্ষা কিছুই সুধারান্বিত হয় নাই। ভেসেলিয়স পূর্ব্বকৃত ঔষধ ব্যবস্থা না শুনিয়া স্বহস্তে অস্ত্র ধারণ পূর্ব্বক জীবের শরীর ছেদনানন্তররোগ নির্ণয় করেন, এবং দেহ চ্ছেদন পূর্ব্বক পূর্ব্বকৃত ব্যবস্থার বিভিন্নতা প্রমাণ করিয়াছিলেন।
পিতৃ পিতামহ ও পূর্ব্বতন কালের লোকের প্রতি যে বিষয় সকল অপ্রকাশিত ছিল সৌভাগ্য ক্রমে আমরা সে সকল অবগত হইয়াছি, এবং তাঁহার দিগের অপেক্ষা আমরা অধিক শিখিয়াছি, কারণ শিক্ষাবিষয়ে এক্ষণে আমার দিগের যে রূপ সুযোগ হইয়াছে তাহাতৎকালে ছিল না। হে যুবা বন্ধুরা পুরাতনকালে বৈদ্যক শাস্ত্র সৃজন কারক দিগের দৃষ্টান্ত তোমার দিগের গ্রহণ করা কর্ত্তব্য, কারণ তাঁহারা তৎকালে পৌত্তলিক ও মূর্খ লোকের দিগের দ্বারা বেষ্টিত হইলে ও সাহসিক হুইয়া ও বৈদ্যক শাস্ত্রের আলোচনা করিয়া ছিলেন। এবং পূর্ব্ব২ ব্যক্তি দি গের দ্বারা দেবশাস্ত্র হইতে ঔষধ ধৃত জানিয়া তাহার কু নিয়ম দূরীকরতঃ ঔষধের ব্যবস্থা কেবল জ্ঞানেতেই উদ্ভব করিয়াছিলেন। অতএব এক্ষণে তোমার দিগের সেই মত রীতি গ্রহণ করাই কর্ত্তব্য হয়।
তোমার দিগের নিয়মিত শিক্ষার নির্মিত্ত যাহা স্বীয়২ মনে চিহ্নকরণ কর্ত্তব্য তাহা আমি বিশেষ রূপে কহি, তাহা এই যে এতদ্বিষয়ের যথার্থ লভ্য ওজ্ঞান ক্ষণিক পরিশ্রমে, মনোযোগে পূর্ব্বক পাঠে, বা মনোনিবেশ পূর্ব্বক পুস্তক দর্শনে, অথবা উপদেশ গ্রহণে হইতে পারেনা, কেবল শিক্ষিত বিষয়ের চিন্তা ও মনোমধ্যে সর্ব্বদা আন্দোলন করিবে। যে তোমার দিগের কি কত্তব্য এবং এমত জ্ঞানোপার্জ্জনে তোমার দিগের দৃঢ চেষ্টা থাকিবে যে যা হাতে স্বীয়২ ব্যবসায় রক্ষিতে পারহ, অপরন্তু সত্যের অনুশীলন সর্ব্বদা রাখিয়া স্বীয়২ উপদেশ জন্য দৃশ্যবিষয় পরীক্ষা করিয়া মনের সহিত ঐক্য করিবে ও যথার্থ বিষয় গ্রহণ পূর্ব্বক স্থির করিয়া রাখিবে, অপিচ শ্রুত কথায় বিশ্বাস করিবেনা। এক্ষণে যে সুযোগ পাইয়াছ তাহা তে জ্ঞানোপার্জ্জন ই প্রধান কর্ম্ম কেননা পরে এমত সুযোগ পাইবেনা এবং যদ্যপিও পাইতে পার তাহাতে বয়োধিক্যতা প্রযুক্ত এই প্রকারে কাল ক্ষেপণে অক্ষম হইবে। অপরন্তু ইহাও তোমার দিগের স্মরণীয় যে আমার দিগের বৈদ্যশাস্ত্রের স্থিরতা নাই কারণ বর্ত্তমান সময়ে যাহা আমরা স্থির ব্যবস্থা করিয়াছি তাহাপরীক্ষার দ্বারা পুনর্ব্বার সংশোধ্য হইতে পারিবেক অতএব যে ব্যক্তি আমার দিগের বৈদ্যশাস্ত্রে জ্ঞানার্থি হইবেন তাহাকে শেষাবস্থা অবধি শাস্ত্রালোচনা করিতে হইবেক কিন্তু উত্তরোত্তর সুশিক্ষিত ব্যক্তি দিগের বিদ্যার প্রভাব দৃষ্টে এমত মনে করিওনা যে একব্যক্তির অপেক্ষা অন্যব্যক্তি আর সুশিক্ষিত হইবেনা বরং আলোচনার স্বভাবেই উরোত্তর উন্নতি হইবেক যেহেত্ত স্বভাবের কর্মে ও মতান্তরে সর্ব্বদাই নূতন ও আশ্চর্য্যতা দৃশ্য হয়।
হে যুবা বন্ধুরা আমি বোধকরি যে তোমরা বর্ত্তমান সময়ের গতিক অবশ্যই বিবেচনা করিয়া থাকিবে যে এক্ষণকার যুবারা জ্ঞানানু সন্ধানে রত হইয়াছেন এবং তা হাতে তোমারাও অংশ লইতেছ পরন্তু আমি সাহস পূর্ব্বক কহিতে পারি যে ভারত বর্ষীয় বিশেষতঃ কলিকাতাস্থ লোকের রীতি পরিবর্ত্তন হইতেছে এই পরিবর্ত্তন কিউত্তম ধারান্বিত কহা যাইতে পারেনা, কথিত প্রামাণ যদ্যপি গ্রহণীয় হয় তবে আমি তোমার দিগ্কে অনুরোধ করি যে শিক্ষা বিষয়ে অত্যন্ত অনু রাগী হও, এবং সর্ব্বদা সচেষ্টিত থাকহ যাহাতে হিন্দু কালেজ বা অন্যান্য বিদ্যা লয়স্থ ছাত্র দিগের অপেক্ষা অল্পশিক্ষিত না হইয়া সমতা বা উত্তম রূপে গণ্য হও কিন্তু এই বিষয়ে আমার আশঙ্কা নাই কারণ এপর্য্যন্ত শিক্ষা বিষয়ে তোমার দিগের যেরূপ দৃঢ়ানুরাগ দেখিতেছি তাহাতে অহঙ্কার ও আহ্লাদ পূর্ব্বক কহিতে পারি যে শিক্ষাবিষয়ে ভোমরা ক্রমাগত এইরূপে অনুরাগী থাকিয়া উৎসাহ প্রকাশ করিবে, এবং তোমরা স্মরণ করিবে যে বৈদ্যক শাস্ত্রের ব্যবসায়ি হওয়াতে বহুমতে দায়ি হইতে হয় কিন্তু নিশ্চয় জানিবা যেমত শিক্ষা করিবে তদ্রূপ তোমার দিগের সম্মান বৃদ্ধি হইবেক।
তোমরা সংপ্রতি জ্ঞাত হইয়া থাকিবে যে ব্যবচ্ছেদ বিদ্যা হয় বৈদ্যক শাস্ত্রের মূল। দুই সহস্র বৎসরাতীত হুইল হিপক্রাটিস নামক ব্যক্তি ব্যবচ্ছেদ বিদ্যা শিক্ষাইয়া ছিলেন তাহা আমরা স্বীকার করি। শরীরস্থ অস্থি মাংস পেশী (অর্থাৎ সির) শৃঙ্খল রক্ত প্রবাহক প্রণালী শিরা মাংসের থাক্ রগ চিটা ইত্যাদির বিবরণ ব্যবচ্ছেদবিদ্যায় পূর্ণজ্ঞানি ও ব্যবসায়ি ব্যক্তির সেই রূপ জানা আবশ্যক যেমত মাস্তরের সহিত লগ্ন কাষ্ট ও রজ্জু আদির সংযোগ নাবিক উত্তম জানে। যে ব্যক্তি দৃশ্য বিষয়ে পরিতোষ না হইয়া তৎকারণ অর্থাৎ রমেশ্বরকে অনুসন্ধান করেন ব্যবচ্ছেদ বিদ্যায় জানা যাইতেছে তাহার সন্তোষ হইতে পারে না॥
অপর ব্যবচ্ছেদ বিদ্যার যেফল তাহা কহা দূরেথাকুক কিন্তু শারীরিক গঠন দৃষ্ট করিলেই মনে কিরূপ আশ্চর্য্যতা হয় তাহ। কহিতে পারিনা। মনুষ্যেরা যে কোন যন্ত্র সৃজন করেন তাহা মনুষ্যাদি মন্দিরের সহিত তুলনা করিলে অতি সামান্য বোধ হয় এবং মনুষ্য যন্ত্র কেবল পূর্ণ এমত নহে ইহাতে কর্ম্ম করণ শাসন ও সহ্য করণ ক্ষমতা আছে, ক্ষুধা, বুদ্ধি, ইচ্ছা, ও আত্মাদির মন্দির যে রগ শিরা রক্ত প্রবাহক নাড়ী রক্তপাত্র এবং অদৃশ্য অস্থি ইত্যাদি পরীক্ষা করিলেই এসমস্তের প্রাণাত্মার সহিত যোগ দেখিতে পাই অপরন্তু মনুষ্যের শরীরস্থ অস্থি অতিকোমল ভার অবধি কঠিন পর্য্যন্ত এবং অন্যান্য ছোটবড় শ্রেণী ও যন্ত্র যাহা পরস্পর ভিন্ন প্রকার হওতঃ পরে একতা হইয়া পাক করে এসকল যখন বিবেচনা করি তখন নাটক কর্ত্তার (সেক্স পিয়র) ও কথায় আমরা বিশ্বাস করি, অর্থাৎ তিনি কহেন―
“মনুষ্য যন্ত্র হয় কি এক আশ্চর্য্য বিষয়,,
কেবল মনুষ্যযন্ত্র যখন আমরা বিবেচনা করি তখন নিগূঢ় প্রমাণ দেখি যে সেই কল মনুষ্যের জ্ঞান শক্তি ও চেষ্টাতে হইতে পারেনা, তাহাতে স্বকর্ম্মণ্য স্বশাসন ও সহ্যতাকরণ শক্তি আছে যাহাতে গণ্ডি শক্তি বহু কালাবধি থাকিবার সম্ভাবনা, মনুষ্যের জ্ঞানেতে সৃষ্ট বাষ্পীয় যন্ত্র আশ্চর্য্য বটে কিন্তু তাহা মনুষ্য যন্ত্রের আশ্চর্য্য কল ও শক্তির সহিত ওলনা করিলে অতি সামান্য বোধ হয়। আমি জিজ্ঞাসা করি জীবের অন্তর স্থিত জল ঘটিত যে কুণ্ড তাহার চাকা ও কল এক পলের মধ্যে ৬০ বার উত্তেজনা হইতেছে এবং ৭০ বৎসর পর্য্যন্ত সুচল থাকে তাহার শক্তির সহিত মনুষ্যের কৃত চাকা ছটকাকল ও চাড়া ইত্যাদির কি ত্তল্যতা হইতে পারে মনুষ্যের যন্ত্র যেমত অধিক কালবয় মনুষ্যের কৃত অন্য কোন যন্ত্র কি এতকাল বহিতে পারে, এবং মনুষ্য যন্ত্রস্থ অস্থি মাংস যে দীর্ঘকাল স্থায়ি থাকে তত্তুল্য কাল কি ইস্পাতের ছটকা কল, পিত্তলের পাত ও হিরার হুড়কা স্থায়ি হইতে পারে, এই সকল সুস্পষ্ট বিধি ও বস্তু ভিন্ন এক আত্মা এই মনুষ্য যন্ত্র মধ্যে আছেন। অরয়বি ভবন ও জীবন সম্বন্ধ বুঝাইবার চেষ্টার কল সম্পর্ক, দ্রব্যের গুণ ও বিচ্ছেদ, এবং জন্ম যন্ত্রীয় বিদ্যা দেখান গিয়াছিল কিন্তু এসকল চেষ্টা পূর্ণ হয় নাই। এইসকল কারণে মনুষ্যের আকারের সহিত দৃঢ় মিল দেখা যায় বটে কিন্তু ইহার মধ্যে যে এক মহদ্বস্তু আছে তাহার নাম নাজানাতে তাহাকেই জীবনের কারণ বলি যে হেত্ত তাহা নাথাকিলে দেহ নষ্ট হয় এবং তাহার স্বেচ্ছানুসারেই মৃত্যু সময়ের পূর্ব্ব অর্থাৎ যদবধি পঞ্চভূত পৃথক হইয়া নাযায় তদবধি তাবৎ কলকে বল পূর্ব্বক সচল রাখে।
পরিচ্ছেদ বিদ্যা ব্যবসায়ি ব্যক্তির যে ব্যবচ্ছেদ শাস্ত্র জানা উচিৎ ইহা কথনাধিক কিন্তু ঔষধ চিকিৎসকব্যক্তি ঐ শাস্ত্রে অনভিজ্ঞ হুইয়া ঔষধ চিকিৎসা ব্যবসায় করিলে তাহাকে দিগ্ বোধক যন্ত্র ও দেশের নক্সা বিহীন পৃথিবীস্থ চত্তর্দ্দিগ ভ্রমণ কারি নাবিকের ত্তল্য বোধকরা যাইতে পারে। এবং আমার ঘড়ীরকল বিযন্ত্র হইলে যদ্যপি রাজমেস্ত্রীকে পুনঃপ্রস্তুত করিতে দেই তাহাতে কি তোমরা আশ্চর্য্য হইবেনা, কিন্তু মনুষ্যের হাত্তডিয়া চিকিৎসার স্বভাৱ প্রযুক্ত এই রূপ অসম্ভব্যতা ব্যপার তোমার দিগের চত্তর্দ্দিগে দেখিতেছ, এবং অনেকেই মূর্খতা পূর্ব্বক কথিত অত্যন্ত প্রতারক ব্যক্তি দিগের হস্তে জীবনসমর্পণকরে সুতরাং তাহারা সুশিক্ষিত বৈদ্যদিগের নিয়মে নিতান্তই বিপরীত হন।
এই বিদ্যালয়ে তোমার দিগ্কে যাহা২ শিক্ষিতে হইবেক সেসকল সংপ্রতি বিস্তারিত রূপে কথনাবশ্যক নাই কেবল তোমার দিগ্কে এই কহি যে শরীরের তাবৎ আকার ও সেই সকল ব্যবস্থার ও পরস্পরের নির্ভর অর্থাৎ দ্রব্যের তত্ত্ব ব্যবচ্ছেদের মূল, এবং যে বস্তু যাহাতে নির্ভর করে বা যে বস্তুর গুণ যাহাতে দর্শে অর্থাৎ কি প্রকারে পঞ্চভূতে যোগ ও বিচ্ছেদ হয় এসমস্ত শিক্ষা করিয়া পশ্চাৎ ঔষধ বিষয়ে মনোযোগী হইবে॥
যে কোন আশ্চর্য্য বিষয়ে আমরা অনভিজ্ঞ আছি তাহার দর্শন ও যৌগিক বস্তু প্রভেদ বা প্রভেদিত বস্তু যৌগিক করিতে পারগ হওন এবং তত্ত্বদ্বস্তুর গুণ ভবিষ্যতে ব্যক্ত করণ যে ক্ষমতা অপেক্ষা করে তাহা এই বিদ্যার শক্তির দ্বারা হইতে পারে। মদীয় বন্ধু ও প্রতিযোগী শ্রীযুত ডাক্তর ওসা নেসি দ্বারা কথিত বিস্তীর্ণ ও ব্যবহার্য্য বিদ্যায় শিক্ষা পাইবা ফলতঃ ঐ বিদ্যার ফল ও সংখ্যাহীন গুণ এক্ষণে জ্ঞাত হওয়া তোমার দিগের পক্ষে দুর্ঘট! তৎপরে অস্মৎ জ্ঞানি বন্ধু শ্রীযুত ডাক্তর গুডেভ ও মৎ কর্ত্তৃক দ্রব্যের তত্ত্ব ঔষধ চিকিৎসা বিষয়ে ছেদ গৃহে উত্তম শিক্ষা পাইবা, এবং তদ্বারা শয্যাগত জীবের রোগের চিকিৎসা করিতে সক্ষম হইবে।
আমারদিগের করণীয় অবশিষ্ট যে কর্ম্ম আছে তাহা তোমরা অবিশ্রান্ত ও যত্ন পূর্ব্বক করিবে তাহাতে কোন সন্দেহ করিনা, যেহেত্ত শিক্ষক ও পাঠকেরা পরস্পর পরস্পরের সাহায্য কার স্পৃহা উৎসাহে ধৈর্য্য ও অবিশ্রান্ততা অবশ্যই প্রকাশ করিবে। হে দর্শক মহাশয়েরা তোমরা কএক জন কেবল সাধারণ লোকের দিগের প্রতিনিধি স্বরূপ আসিয়াছ অতএব তোমার দিগের এই বিষয়ে উৎসাহি হওয়া উচিত কারণ সাধারণের উৎসাহ না হইলে কোন কর্ম্ম ই সিদ্ধহয় না, অপিচএতদ্দেশীয় লোকের দিগের মধ্যে ধনি গুণি মান এবং পরাক্রম শালি ব্যক্তি দিগের প্রতি আমার সবিনয়ে নিবেদন এই যেউত্তম চিকিৎসার অভাবে তাহার দিগের দেশীয় সহস্র২ লোকের প্রতি নির্ব্বোধ ও মূর্খ বৈদ্য দিগের দ্বারা বার্ষিক প্রত্যাহিক ও ক্ষণিক যে সকল অনিবারণীয় দুঃখ বিঘটিত হইতেছে তাহা বিবেচনা করিবেন।
কথিত দুঃখ যে কেবল ক্লিষ্ট ব্যক্তি দিগের উপরি হইয়াথাকে এমৎ নহে বরং সর্ব্ব প্রকার লোকেরই হইয়া থাকে ইহাতে ন্যূনাধিক প্রভেদ মাত্র দেখ গত মড়কে যে সহস্র২ ব্যক্তিরা ঔষধ ও উপায় বিহীনে প্রাণত্যাগ করিয়াছেন তাহা এস্থানে কহা অতিরিক্ত হয় না এবং বসন্ত রোগে উত্তম বীজ ও ঔষধ ব্যবহার না করিয়া নির্ব্বোধিতা ও অবিচারিত নির্ণয় দ্বারা প্রাণের হানি করিতেছেন অপিচ বহুতর দুর্ঘট পীড়ায় যেরূপ চিকিৎসাকরাইয়া থা কেন তাহাতে অবয়বিভবন বিযন্ত্র বা জীবন নাশ হইয়া থাকে সুতরাং চক্ষু হীনের ন্যায় হইয়া মূর্খ বৈদ্যদ্বারা চিকিৎসা করাণ কি অবোধ যোগ্য কর্ম্ম নহে দেখ বাঙ্গালি দিগের শরীরে যেরূপ ভয়ানক ক্ষত হইয়া থাকে তাহাতে অবিজ্ঞতা ও শিথিলতা চিকিৎসার দ্বারা জীবনের বহু দুঃখ ও কখনমৃত্যু ও হইয়াথাকে দেখ এই ব্যবচ্ছেদ বিদ্যা কিরূপ বিস্তীর্ণ এবং ইহা কে জানে, শির ও রক্ত প্রবাহক প্রণালী কাহাকে বলে তাহা যে বৈদ্যেরা নাজানেন তাহারা কি ব্যবচ্ছেদ বিদ্যার কিছু বুঝেন এবং যদ্যপি একটা রক্ত পাত্র ফাটিয়া রক্ত স্ফুট হয় তাহ। বন্ধকরিতে পারেননা।
এতদ্দেশীয় সম্মানীয় ও ধনি মহাশয়েরা উৎকট পীড়ায় ইংরাজ বৈদ্য দ্বারা চিকিৎসা করাইয়াথাকেন তাহা বর্ত্তমান সময়ে তাঁহারদিগের স্মরণার্থ আমি বিনীতি পূর্ব্বক কহিতেছি কারণ এই লভ্য তাঁহারদিগের দেশস্থ দীন দিগের প্রতি প্রদানার্হ করেন। অপিচ প্রার্থনা করি ইংরাজী ধারায় বৈদ্যক শাস্ত্র যাহারা এক্ষণে শিক্ষিতে ইচ্ছক হুইয়াছেন তাহার দিগের প্রতি সর্ব্বপ্রকারে সাহায্য প্রদান পূর্ব্বক এই বিদ্যা চিরকালেরনিমিত্ত তাহার দিগের স্বীয়২ ক্ষমতায় রাখেন এবং আমি বিনীতি পূর্ব্বক প্রার্থনা করি যে গবর্ণমেণ্টের সাহায্যানুসারে এই যে বিদ্যালয় স্থাপিত হইয়াছে তাহাতে আপনারা সাহায্য প্রদানে সাধ্যানুসারে ক্রটী নাকরেন পরন্তু প্রত্যেকব্যক্তির কর্ত্তৃত্বের প্রতি আমি নম্র হইয়া আকাঙ্ক্ষা করি যে নির্বুদ্ধিও মূর্খতার প্রাবল্যে উত্তম ও খ্যাত্যাপন্ন বিদ্যার যে অনিষ্ট সম্ভাবনা তদ্বিপরীতে উপদেশ প্রদান ও তাচ্ছল্যতা প্রকাশ দ্বারা দূর করেন এবং একান্ত অনুনয় পূর্ব্বক তাঁহাদিগের নিকট বাসনা করি যে এই বিদ্যালয়স্থ দেশস্থ যুবা দিগ্কে কেবল পাঠকালে সাহায্য প্রদান নাকরিয়া যখন তাহারা সুশিক্ষিত হইয়া চিকিৎসা করিবেন তখনও সাহায্য প্রদান করেন।
হে যুবা বন্ধুরা অবশেষে কহি যে তোমরা ও অন্যান্য হিন্দুরা আমার কথ্য বিষয়ের প্রতি প্রতীতি করিবে যে গবর্ণ মেণ্ট এপর্য্যন্ত তোমার দিগের দেশের লোকের নিমিও যে সকল জ্ঞানিত্ব ও সৌজন্যতা ঘটিত কর্ম্ম করিয়াছেন তন্মধ্যে এই বৈদ্যক পাঠশালা মহোপকারক জানিবা।
তোমার দিগের বৈদ্যক শাস্ত্রের নিন্দা করিতেছি এমত মনে করিও না কেননা এমত কোন দেশ নাই যে সেস্থানে পরমাত্মা আনন্দ পূর্ব্বক বৈদ্যক শাস্ত্রের কিয়ৎ পরিমিত জ্ঞানোৎপত্তি না করিয়াছেন এবং আমি অনুমান করি যে তোমার দিগের দেশে কিছু উত্তম ঔষধ আছে বিশেষতঃ গাছড়ার কিছু আরো উত্তমগুণ আছে। অপরন্তু আমিকোন সন্দেহ করিনা যে ঔষধ চিকিৎসা বিষয়ক স্থান ও উল্কা বিদ্যা বর্ণন বিষয়ে তোমারদিগের শাস্ত্রে এমত কোন টীকা থাকিবে এবং ইংরাজী চিকিৎসা বিদ্যায় রোগ নিরূপণ কারিদিগের তদ্দারা কোন২ চিকিৎসায় উপকার দর্শিতে পারে বস্তুতঃ তোমার দিগের বৈদ্যক শাস্ত্র ব্যবসায়ি দিগের মধ্যে কেহ২ উত্তম জ্ঞানবান হইয়া থাকিবেন তাহা আমি সাহস পূর্ব্বক কহিতে পারি, কিন্তু অন্য অংশে বিবেচ্য যে তোমার দিগের ঔষধ শাস্ত্রে অনুভবনীয় নিষ্প্রয়োজনীয় ও সাংঘা ঠিক স্বাভাবিক অনেক উপদেশ আছে তদ্দ্বারা যে মন্দ ও বিপত্তি জনক কর্ম্ম উৎপত্তি হয় তাহ। তোমরা ইউরোপীয় বৈদ্যক শাস্ত্রে জ্ঞান প্রাপ্ত হইলে বুঝিতে পারিবে।
সংক্ষেপ বাচ্যে এক খ্যাত্যাপন্ন লেখক কহিয়াছিলেন যে যদ্যপি ইংরাজের। কল্যই ভারতবর্ষ পরিত্যাগ করেন তবে তাহার দিগের পশ্চাতে কোন চিরস্মরণীয় সৎকর্ম্মের ও দেশের লোকের সুশিক্ষা হওনের এবং উপকারজনক শক্তির কোন চিহ্ন রাখিতে পারিবেন না তাঁহার সময়ে এই কথন বক্তব্য বটে কিন্তু এক্ষণকার সময়ে তাহা স্বীকার্য্য নহে ফলতঃ ইহাই আশ্চার্য্যের বিষয় যে তদপেক্ষা ন্যূন খ্যাতপন্ন ব্যক্তিরা এক্ষণকার সময়ে ও ঐরূপ কর্ম্মের অপূর্ণতা বোধ করেন।
আমার জিজ্ঞাস্য এই যে পূর্ব্বোক্ত বাক্য কি সাব্যস্ত হইতে পারে, এক্ষণে যদ্যপি আমরা ভারতবর্ষ চ্যুত হই তবে আমার দিগের কৃত সৎ কর্ম্মের এবং পরোপকারের কোন অনন্তকল ওদেশের সাধারণের উন্নতির কি কোন চিহ্ণ থাকিবেনা, অবশ্যই থাকিবে কেননা কথিত নির্ব্বোধিতার উক্তি খণ্ডন করিতে যদ্যাপি অন্য কোন প্রমাণ না দর্শাইতে পারি তথাচ অনায়াসেই কহিতে পারি যে এই হিন্দুকালেজ এবং বৈদ্যক পাঠশালা তাহারদিগের উক্তির বিপরীত দৃষ্টান্তস্থল হইবে অপিচ তোমরা নিশ্চয় জানিবে যে আমরা কর গ্রহণ করাতে যদ্যপিও প্রজারা ভারাক্রান্ত হন তথাচ নির্ব্বুদ্ধি স্বরূপ অন্ধকূপে মগ্ন জ্ঞান এবং অবৈধ ক্রিয়ার দাসত্ব যদ্দ্বারা চিরকাল মূর্খতার সমভিবহারি, তাহা হইতে যে মোচন করিয়াছি আমারদিগের এই কর্ম্ম তাঁহারা বংশাবলীতে স্বীকার করিবেন।
হে যুবা বন্ধুরা অল্পকালের মধ্যে তোমরা যে জ্ঞান প্রাপ্ত হইয়াছ তাহাতে অবশ্যই স্বীকার করিবে যে তদ্দ্বারা তোমরা অনেক আনন্দ উৎপত্তি করিয়াছ এবং সেই জ্ঞানের দ্বারা তোমার দিগের অন্তরে এমত ভাব উদয় হইয়াছে যে পূর্ব্ব যে বিষয় যেমত বুঝিতে এক্ষণে সূক্ষ্মা জ্ঞানের কিরণে তাহার বিপরীত বঝিতেছ। দেখ কি অশ্চর্য্য অশিক্ষিত সাধারণ ব্যক্তিরা সন্মান বৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষা রাখেন না এবং যদ্দ্বারা জ্ঞানোপার্জ্জন হয় তাহাতে তাঁহারা নিতান্তই অযোগ্য, তৎপ্রমাণ দেখ যেমত প্রবাহ রহিত সলিল বিনাস্রোতে পচিয়া যায় তদ্রূপ অশিক্ষিত ব্যক্তির চিত্ত বিনা শিক্ষায় বর্দ্ধিত থাকিয়া তাহাতে জ্ঞানের প্রভাব নিশ্চল হয়, সুতরাং যেমত সলিল সদ্য রাখিতে হইলে নির্গত ও গহেরা হইতে উত্তোলন করিবার আবশ্যক হয় সেইরূপ মনের পারগতা সবল রাখিতে জ্ঞানের ও বিদ্যার আবির্ভাব প্রয়োজন করে। অশিক্ষিত ব্যক্তির মন শারীরিক আনন্দেই মগ্ন থাকে কিন্তু শিক্ষিত ব্যক্তিরা ঐরূপ আনন্দে কদাচ বর্দ্ধিত না থাকিয়া সর্ব্বদা জ্ঞানানন্দে মগ্ন থাকেন, সেই ব্যক্তির শার।রিক ক্ষুধা ভক্ষণেই নির্ধারণ হয় কিন্তু সন্ধিগত ক্ষুধাভক্ষণে আরো বৃদ্ধি হয়, তিনি কখন আনন্দজনক কর্ম্ম শূন্য হইয়া একক থাকেন না কারণ এই পৃথিবীই তাঁহার আনন্দ স্থান এবং তদ্দ্বারা তাঁহার যে পরিশ্রম তাহার পুরস্কার ও হয়, অপরন্তু পৃথিবীস্থ লোকের স্বাভাবিক কর্ম্মে তাচ্ছল্যতা দ্বারা যদ্যপি বিরক্ত বা নিরানন্দ যুক্ত হয়েন তবে স্বীয়জ্ঞানের পরাক্রমে তৎক্ষণাৎ মৃত ব্যক্তির উপন্যাসের উত্তমতা অলোচনা করিয়া তাহা নিবারণ করেন।
হে সল্লোক মহাশয়েরা রাজার করণীয় অনেক বিষয় এক্ষণে অপূর্ণ আছে কিন্তু যিনি কহেন যে রাজা কিছু করেন নাই তাঁহার প্রতি বিশ্বাস করিওনা, তৎপ্রমাণ রাজা যে সকল বৃহৎ২ অট্টালিকা করিয়াছেন তাহা দেখাইতেছি না কিন্তু দেখ সর্ব্ববর্ণের নীতি শিক্ষা ও জ্ঞানোপার্জ্জনের জন্য কত২ বিদ্যা মন্দির স্থাপিত করিয়াছেন এবং এনগ্লো ইণ্ডিয়া সোসাইটীর অধ্যক্ষ দিগ্কে এই সকল উপকারক শিক্ষালয় সৃজন ও নির্ব্বাহ কর্ত্তা কহিতে পারি, পরন্তু আরো আনন্দের বিষয় এই যে এতদ্বিষয়ে পূর্ব্বে কেবল সাধারণ লোকের দিগের স্পৃহা ছিল এক্ষণে গবর্ণমেণ্টও মনোযোগী হইয়াছেন এবং লোকের দিগ্কে শিক্ষা দেওন যে রাজনীতীয় বিচার ও মনুষ্যতার কর্ম্ম তাহা নির্ধারিত করিয়াছেন।
যে আনন্দ জনক কর্ম্ম এক্ষণে প্রকাশ করিলাম তাহার বিশেষ কারণ এস্থানে এবং এক্ষণে প্রকাশ করিতে আমার শক্তি নাই, পরন্তু এই বিদ্যালয় যে রাজার সৌজন্যতার আকাঙ্ক্ষায় স্থাপিত হইয়াছে তাহা প্রকাশকরা যদ্যপি নিতান্তই প্রয়োজনীয় হয় তবে প্রমাণে দেখ যে, এই বঙ্গ দেশের বর্ত্তমান অধিপতি এতদ্বিষয়ে ঊপস্থিত হইয়াছেন এবং তদ্দ্বারা প্রমাণ হইতেছে যে এই জ্ঞান ঘটিত রাজনীতি ও তোমার দিগের শিক্ষা বিষয়ে তাঁহার বিলক্ষণ মনোযোগ এবং উৎসাহ আছে। এই আনুসঙ্গে রাজার সম্মতি সূচক যে চিহ্ণ এক্ষণে প্রকাশিত হইল তদ্দৃষ্টে আমি একান্ত রূপে ভরসা করি যে তোমার দিগের মনকে এই অতি প্রয়োজনীয় ও লভ্যজনক শিক্ষায় অবিশ্রান্ত রূপে পরিশ্রমে রত করিবে।
ভারতবর্ষে বিদ্যাদান হেত্ত শ্রীযুত লার্ড উলিএম বেণ্টিঙ্ক ও শ্রীযুত স্যর চারল্স মেটকাফ সাহেব দিগের নিকট দেশস্থ লোকেরা ঋণ গ্রন্থ আছেন, অতএব সেই মহাশয় দিগের উৎসাহের প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বীকার না করিয়া আবেদন সমাপ্ত করা বিবেচনা সিদ্ধ হয় না, তাঁহারদিগের নাম চিরস্মরণীয় হওনজন্য সংপ্রতি উপাখ্যানে গ্রন্থিত হইয়া ছে এবং বংশাবলী দ্বারা ঐ বিষয় আরো আন্দোলিত হইবেক, যেহেত্ত তাঁহারা পরোপকারি নীতি শিক্ষার যে পথ করিয়াছেন তদ্দ্বারা তোমরা সভ্যতার ও উচ্চতার পদ প্রাপ্ত হইবে।
সমাপ্তঃ।
এই লেখাটি ১ জানুয়ারি ১৯২৯ সালের পূর্বে প্রকাশিত এবং বিশ্বব্যাপী পাবলিক ডোমেইনের অন্তর্ভুক্ত, কারণ উক্ত লেখকের মৃত্যুর পর কমপক্ষে ১০০ বছর অতিবাহিত হয়েছে অথবা লেখাটি ১০০ বছর আগে প্রকাশিত হয়েছে ।
এই লেখাটি ১ জানুয়ারি ১৯২৯ সালের পূর্বে প্রকাশিত এবং বিশ্বব্যাপী পাবলিক ডোমেইনের অন্তর্ভুক্ত, কারণ উক্ত লেখকের মৃত্যুর পর কমপক্ষে ১০০ বছর অতিবাহিত হয়েছে অথবা লেখাটি ১০০ বছর আগে প্রকাশিত হয়েছে ।