সন্ধ্যা সঙ্গীত/তারকার আত্মহত্যা

তারকার আত্মহত্যা।

জ্যোতির্ম্ময় তীর হ'তে আঁধার সাগরে
ঝাঁপায়ে পড়িল এক তারা,
একেবারে উন্মাদের পারা!
চৌদিকে অসংখ্য তারা রহিল চাহিয়া
অবাক্ হইয়া—
এই যে জ্যোতির বিন্দু আছিল তাদের মাঝে
মুহূর্ত্তে সে গেল মিশাইয়া!
যে সমুদ্র-তলে

মনোদুঃখে আত্মঘাতী,
চির-নির্ব্বাপিত ভাতি—
শত মৃত তারকার
মৃত-দেহ রয়েছে শয়ান,
সেথায় সে করেছে প্রয়ান!

কেন গো কি হয়েছিল তার?
একবার শুধালে না কেহ?
কি লাগি সে তেয়াগিল দেহ?

যদি কেহ শুধাইত
আমি জানি কি যে সে কহিত!
যত দিন বেঁচে ছিল
আমি জানি কি তারে দহিত!
সে কেবল হাসির যন্ত্রণা,
আর কিছু না!
মনে তার ছিলনাক' সুখ
মুখে তারে হাসিতে হইত!
প্রতি সন্ধ্যা বেলা
একেলা একেলা—
হাসির রাজ্যের মাঝে একটি বিষাদ শুধু

ম্লান-মনে হাসি-মুখে কেবলি ভ্রমিত!
জ্বলন্ত অঙ্গার-খণ্ড, ঢাকিতে আঁধার হৃদি
অনিবার হাসিতেই রহে,
যত হাসে ততই সে দহে!
তেমনি—তেমনি তারে হাসির অনল
দারুণ উজ্জ্বল—
দহিত—দহিত তারে—দহিত কেবল!
যে গান গাহিতে হ’ত
সে গান তাহার গান নয়,
যে কথা কহিতে হ'ত,
সে কথা তাহার কথা নয়!
জ্যোতির্ম্ময় তারা-পূর্ণ বিজন তেয়াগি,
তাই আজ ছুটেছে সে নিতান্ত মনের ক্লেশে
আঁধারের তারাহীন বিজনের লাগি!
তবে গো তোমরা কেন সহস্র সহস্র তারা
উপহাস করি তারে হাসিছ আমন ধারা?
কহিতেছ—“আমাদের কি হয়েছে ক্ষতি?
যেমন আছিল আগে তেমনি র'য়েছে জ্যোতি!”
হেন কথা বলিও না আর!
সে কি কভু ভেবেছিল মনে—

(এত গর্ব্ব আছিল কি তার?)
আপনারে নিভাইয়া তোমাদের করিবে আঁধার?
নিজের প্রাণের জ্বালা
আঁধারে সে ডুবাতে গিয়াছে।
নিজের মুখের জ্যোতি
আঁধারে সে নিভাতে গিয়েছে!
হৃদয় তাহার
চাহে না হইতে জ্যোতি,
চাহে শুধু হইতে আঁধার!
যেথায় সে ছিল, সেথা রাখে নাই চিহ্ণ লেশ,
থাকে নাই ভস্ম-অবশেষ!
ওই কাব্য-গ্রন্থ হ'তে নিজের অক্ষর
মুছিয়া ফেলেছে একেবারে,
উপহাস করিও না তারে!

গেল, গেল, ডুবে গেল, তারা এক ডুবে গেল,
আঁধার সাগরে—
গভীর নিশীথে,
অতল আকাশে!
হৃদয়, হৃদয় মোর, সাধ কিরে যায় তোর

ঘুমাইতে ওই মৃত তারাটির পাশে?
ওই আঁধার সাগরে!
এই গভীর নিশীথে!
ওই অতল আকাশে!