সন্ধ্যা সঙ্গীত/পরিত্যক্ত
পরিত্যক্ত।
চলে গেল! আর কিছু নাই কহিবার!
চলে গেল! আর কিছু নাই গাহিবার!
শুধু গাহিতেছে আর শুধু কাঁদিতেছে
দীন হীন হৃদয় আমার,
শুধু বলিতেছে
“চলে গেল
সকলেই চলে গেল গো!”
বুক শুধু ভেঙ্গে গেল
দ’লে গেল গো!
সকলি চলিয়া গেলে
শীত কেঁদে কেঁদে বলে—
“ফুল গেল, পাখী গেল,
আমি শুধু রহিলাম, সবি গেল গো।”
দিবস ফুরালে রাতি স্তব্ধ হয়ে রহে,
শুধু কেঁদে কহে—
“দিন গেল, আলো গেল—রবি গেল গো,
কেবল একেলা আমি—সবি গেল গো।”
উত্তর বায়ুর সম
প্রাণের বিজনে মম
কে যেন কাঁদিছে শুধু
“চলে গেল” “চলে গেল”
“সকলেই চলে গেল গো!”
উৎসব ফুরায়ে গেলে ছিন্ন শুষ্ক মালা
পড়ে থাকে হেথায় হোথায়—
তৈলহীন শিখাহীন ভগ্ন দীপগুলি
ধূলায় লুটায়—
একবার ফিরে কেহ দেখেনাক ভুলি
সবে চলে যায়!
পুরানো মলিন ছিন্ন বসনের মত
মোরে ফেলে গেল,
কাতর নয়নে চেয়ে রহিলাম কত
সাথে না লইল।
তাই প্রাণ গাহে শুধু—
কাঁদে শুধু—কহে শুধু—
“মোরে ফেলে গেল—
সকলেই মোরে ফেলে গেল
সকলেই চ’লে গেল গো!”
একবার ফিরে তারা চেয়েছিল কি?
বুঝি চেয়ে ছিল।
একবার ভুলে তারা কেঁদেছিল কি?
বুঝি কেঁদেছিল।
বুঝি ভেবে ছিল—
“লয়ে যাই—
নিতান্ত কি একেলা কাঁদিবে?
না-না কি হইবে লয়ে?
কি কাজে লাগিবে?”
তাই বুঝি ভেবেছিল!
তাই চেয়েছিল।
তার পরে? তার পরে!
তার পরে বুঝি হেসেছিল!
হসিত কপোলে তারি
এক ফোঁটা অশ্রু বারি
মুহূর্ত্তেই শুকাইয়া গেল!
তার পরে? তার পরে!
চলে গেল!
হাসিল, গাহিল,
কহিল’ চাহিল,
হাসিতে হাসিতে গাহিতে গাহিতে
চলে গেল!
তার পরে? তার পরে!
ফুল গেল, পাখী গেল, আলো গেল, রবি গেল-
সবি গেল—সবি গেল গো—
হৃদয় নিঃশ্বাস ছাড়ি কাঁদিয়া কহিল—
“সকলেই চলে গেল গো!”
“আমারেই ফেলে গেল গো!”